সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১২

দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়


দুঃখ ও কষ্টবিহীন মানব জীবন কল্পনা মাত্র। অন্য কথায় দুঃখ-কষ্ট মানব জীবনের অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে বড় ধরনের কোনো সাফল্য লাভের জন্য কষ্ট-সহিষ্ণুতা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। বিনা পরিশ্রমে যেমন পাহাড়ের চূড়ায় উপনীত হতে পারেন না পর্বতারোহী তেমনি কষ্ট করা বা পরিশ্রম ছাড়া জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় । অনেক মানুষ ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট বা প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন বুদ্ধিদীপ্ত সংগ্রামের মাধ্যমে। আবার অনেকে সামান্য দুঃখ-কষ্টেই ভেঙ্গে পড়েন।
সংকট মোকাবেলার অন্যতম এবং মোক্ষম পন্থা হল, সংকটের প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে খুব ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করা। যেমন, দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য পরস্পরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা দূর্বল দিকগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
সংকট মোকাবেলার জন্য এর মূল কারণ বা মূল চালিকা শক্তিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখাও জরুরি। যেমন, দাঁতে ব্যাথা দেখা দিলে এর প্রতিকারের সবচেয়ে ভাল উপায় হল ব্যাথার মূল কারণ উদঘাটন করে ওই কারণ দূর করার চেষ্টা করা। প্রথমে প্রতিরোধের প্রাথমিক ব্যবস্থা অনুযায়ী দাঁতে লেগে থাকা ময়লা দূর করতে হবে এবং ময়লা জমে থাকার ফলে সৃষ্ট গর্তগুলো ভরাট করতে হবে। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় রোগ যদি স্নায়ু পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ব্যথা দূর করার জন্য ক্ষয়কারী চালিকাশক্তিগুলোকে প্রতিহত করার পাশাপাশি দাঁতের সাথে স্নায়ুর সংযোগও ছিন্ন করতে হবে, আর তা না করলে দাঁত নষ্ট হবার পর মাড়িও নষ্ট হতে শুরু করবে।

অন্য কিছু দুঃখ-বেদনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। যেমন, যারা টাকা-পয়সা খুব ভালবাসেন তারা কিছু টাকা হারালে খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েন। অথচ অন্য এক ব্যক্তি ওই অর্থের সমপরিমাণ অর্থ হারানোর কারণে কম দুঃখিত হন। কিংবা কোনো কোনো মানুষ খুব অল্প টাকা-পয়সা বা সম্পদে তুষ্ট থাকেন, আবার অন্য অনেক মানুষ ওই পরিমান অর্থের দ্বিগুণ অর্থ খর-পোষ ও বিনোদনের জন্য ব্যায় করা সত্ত্বেও জীবন সম্পর্কে সুখী নন। তাই অপেক্ষাকৃত বেশি দুঃখ পাওয়ার পেছনের মনস্তাত্বিক কারণ দূর করা হলে দুঃখের মাত্রা কমানো বা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসে মহান আল্লাহ বলেছেন,
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [١٠:٦٢] 
''মনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।"
দুঃখ-কষ্টের ব্যাপারে ওলি-আওলিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তারা কখনও ভীত হন না ও দুঃখিত বা চিন্তান্বিত হন না।
আসলে এই মাটির পৃথিবীতে বস্তুগত ও প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট এড়ানো সম্ভব নয়। যেমন, বার্ধক্য বা অসুস্থতার ফলে সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট এড়ানো সম্ভব নয়। তবে বস্তুগত কারণের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং ভুল মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পর্কিত- এমন সমস্যাগুলো আত্মসংশোধনের মাধ্যমে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষকে শক্তিশালী করে ও তার প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের দেহকে শক্তিশালী করে, আবার কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের আত্মা বা আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে শক্তিশালী করে।
স্কুলের একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের বোঝাচ্ছিলেন যে রেশমের কীট নিজ চেষ্টায় রেশমের গুটি থেকে বেরিয়ে আসে প্রজাপতি হয়ে। তার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সে শক্তি অর্জন করে। তাই ওই কীটকে সাহায্য করতে যাওয়া কারো উচিত নয়। শিক্ষকের এই বক্তব্য শোনার পরও এক ছাত্র শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে দয়া দেখিয়ে একটি রেশম কীটকে গুটি থেকে বের করে দেয়। প্রজাপতি আকারে কীট বেরিয়ে এল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে মারা গেল। শিক্ষক ক্লাসে ফিরে এলে ছাত্রটি রেশম কীটের মৃত্যুর ঘটনা বলে এর কারণ জানতে চাইল। শিক্ষক বললেন, বেরিয়ে আসার জন্য রেশম কীট নিজে যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় তা হচ্ছে এমন এক অনুশীলনের মত যা তার পাখা ও পশমকে শক্তিশালী করে এবং এর মাধ্যমে সে প্রকৃতিতে টিকে থাকার মত শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু তুমি যেহেতু তাকে নিজ প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দাওনি, তাই সে দূর্বল রয়ে গেছে এবং বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারেনি।
ওসমান বিন হানিফের কাছে লেখা চিঠিতে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, "মনে রেখ মরুভূমি বা শুস্ক প্রান্তরের গাছগুলোর কাঠ বেশি শক্ত হয়, অন্যদিকে জলাশয়ের বা নদীর পাশে থাকা গাছগুলোর কাঠ নরম হয়। শুস্ক প্রান্তরের গাছগুলো বৃষ্টির পানির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে এবং সেসবের কাঠ বেশিক্ষণ জ্বলে ও বেশি আগুন দেয়। "
এখানে আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) এট বোঝাতে চেয়েছেন যে কম পানির মধ্যে কষ্ট করে বড় হওয়া গাছ অন্য গাছগুলোর চেয়ে বেশি শক্ত বা মজবুত হয়। তিনি আরো বলেছেন, "মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে নানা ধরণের কঠিন দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে তাদের সংগ্রামী ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলেন। ফলে আরামপ্রিয় বা সুবিধাবাদী লোকদের বিপরীতে এ ধরনের মানুষ কখনও অহংকারী হন না বরং আল্লাহর প্রতি সব সময় নতজানু থাকেন তারা। ওইসব দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার মধ্য দিয়েই তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ বিস্তৃত হয়। "
অবশ্য আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) সংকটের কাছে মাথা নত করতে বলেছেন এমন ভাবাটা হবে ভুল । বরং সংকটের মোকাবেলায় দৃঢ়তা এবং ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায় তাঁর মহান জীবনে। তিনি কখনও ধৈর্যহীন ও নিরাশ হতেন না। ধৈর্য্যের ও সংগ্রামের ফল সাধারণতঃ খুবই মিষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু অল্প দুঃখেই ভেঙ্গে পড়া মানুষ এ সুমিষ্ট ফলের স্বাদ পায় না । বরং তার হা-হুতাশ ও অধৈর্য্য তাকে অকাল- বৃদ্ধ করে তুলে।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন," দুঃখ লালন মানুষের বার্ধক্য টেনের আনার চালিকা শক্তিগুলোর অর্ধেক বা অর্ধাংশ।" কিন্তু যারা পৃথিবী বা ইহকালীন জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন এবং দুঃখ -বিপদে ভেঙ্গে পড়ে না তারা কখনও হতাশায় বা দুঃখে কাতর হয়ে পড়েন না। কারণ, তারা জানেন, সুখ ও দুঃখ বা সাফল্য ও ব্যর্থতা দুইই ইহকালীন জীবনের অপরিহার্য অংশ।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " যারা ইহকালীন জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত তারা কখনও বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের জন্য যাতনা ভোগ করেন না।"
পর্ব-২
গত পর্বে আমরা বলেছিলাম সমস্যা মোকাবেলার জন্য সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়াও কোনো কোনো সংকট বাস্তবে সংকট না হওয়া সত্ত্বেও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সেগুলোকে সংকট বলে ধরে নেন অনেকেই। তাই সংকট মোকাবেলার জন্য ওই বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা অর্জন ছাড়াও নিজেকে জানা ও নিজের বিভিন্ন যোগ্যতা বা প্রতিভা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্প থাকাও জরুরি। যারা নিজেকে চেনেন না ও নিজেকে পুরোপুরো অযোগ্য মনে করেন তারা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ)'র ভাষায়-" যে নিজের মূল্য বোঝে না, হতভাগ্য হওয়াই তার পরিণতি। "
তবে অহংকার ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রকৃত যোগ্যতা সম্পর্কে বিশ্বাসই হল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে বাস্তব বা প্রকৃত যোগ্যতার চেয়েও নিজেকে বেশি যোগ্য হিসেবে তুলে ধরা হল অহংকার।
আত্মবিশ্বাস কোনো ব্যক্তি ও সমাজের অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। আত্মবিশ্বাসের অভাবেই কোনো ব্যক্তি, সমাজ বা জাতি সমস্যার মোকাবেলায় দূর্বলতা দেখায়। ফলে আত্মবিশ্বাসহীন ওইসব ব্যক্তি বা সমাজ কিংবা জাতি হয়ে পড়ে পর-নির্ভর ও অন্যের সিদ্ধান্তের শৃংখলে বন্দি।
মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা ও আত্মবিশ্বাস, এ দুটি বিষয় সাংঘর্ষিক নয়। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা বলতে হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকাকে বোঝায় না। তাওয়াক্কুল বা মহান আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ হল, যে কাজ যেভাবে করা উচিত সেভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। অন্য কথায় তাওয়াক্কুল চেষ্টা প্রচেষ্টার পরিপূরক মাত্র, বিকল্প নয়। তদ্রুপ সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও এর প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জন করে দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে যাওয়ার পরই আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে।
মহাপুরুষদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইস্পাত কঠিন মনোবল, দৃঢ়-সংকল্প বা অবিচলতা নিয়ে সংগ্রাম, কষ্ট সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য্য- এসবই তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা এনে দিয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, "কষ্ট সহিষ্ণু বা ধৈর্যশীল মানুষ বিজয় থেকে বঞ্চিত হন না, দেরিতে হলেও তার বিজয় অনিবার্য।" তিনি আরো বলেছেন, "আল্লাহ কোনো জাতিকেই সংশোধন করেন না যতক্ষণ না সেই জাতি নানা পরীক্ষা ও কষ্ট সহ্য করে।"
তাই এটা স্পষ্ট, মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও সংকট কল্যাণবিহীন বা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য নানা দুঃখ-কষ্টে ফেলেন। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ নবী-রাসূল এবং অলি-আওলিয়াদের বিভিন্ন কঠিন সংকটের মধ্যে ফেলে তাদের বহুমুখি যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংকটও এইসব পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) নিজ যুগের জালেম ও তাগুতি শাসক নমরুদের সৃষ্ট অনেক সংকট মোকাবেলা করেছেন। তদ্রুপ হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের ও হযরত ঈসা (আঃ) বহু কুচক্রীর সৃষ্ট অনেক সংকটের যাতন সহ্য করেছেন। একই কথা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত সম্পর্কেও প্রযোজ্য।
সুরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুসারী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে গিয়ে তাদের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তারা হেরে যায়নি, ক্লান্ত হয়নি, নিরুৎসাহিত হয়নি বা দমেও যায়নি। আর যারা ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।"
ধৈর্য হচ্ছে কষ্টের তীব্র যাতনা সহ্য করা, অসহ বেদনার চাপেও ভেঙ্গে না পড়া বা অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "কোনো নবী আমার মত উৎপীড়িত হননি।" শত্রুরা তাঁর মাথার ওপর ছাই ফেলেছে, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর তরবারির আঘাতে মহানবী (সাঃ)'র পবিত্র চেহারা হয়েছে রক্তাক্ত ও ভেঙ্গে গেছে দান্দান মোবারক, কিন্তু ধৈর্য হারাননি কখনও। বিশ্বনবী (সাঃ)'র সাহাবিরা প্রাণপ্রিয় রসূলের ওপর শত্রুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের তীব্রতা দেখে বলেছেন, " আপনি তাদেরকে অভিশাপ দিন যাতে আল্লাহর অভিশাপ বা কঠোর শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসে। "
জবাবে তিনি বলেছেন, " মানুষকে অভিশাপ দেয়ার জন্য আমার আমাকে নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি, বরং তাদেরকে মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানো ও তাঁর অনুগ্রহের দিকে পরিচালনার জন্যই আমাকে রসূল করা হয়েছে। মানুষের জন্য আল্লাহ রহমত বা অনুগ্রহের মাধ্যম হওয়ার জন্যই আমাকে রসূল করা হয়েছে, আল্লাহ রহমত থেকে মানুষকে দূর করার মাধ্যম হওয়ার জন্য নয়। হে আল্লাহ, তুমি আমার জাতিকে সুপথ দেখাও, কারণ, তারা বুঝতে পারছে না। " অবরোধ, যুদ্ধ ও অন্য অনেক সংকটের মোকাবেলায় অবিচল থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ)। তাঁর দৃঢ়তা ও মহানুভবতায় প্রভাবিত হয়ে বহু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা ধৈর্য, দৃঢ়তা বা অবিচলতা ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন বলেই বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছিল।
তাই সংকট মোকাবেলার জন্য দৃঢ়তা বা অবিচলতাও জরুরি। যাদের সংকল্প দূর্বল তারা সমস্যা ও কষ্ট এড়িয়ে যেতে চায়, ফলে সংকট কাটিয়ে ওঠার ভাগ্য তাদের হয় না। বিশ্বনবী (সাঃ)'র ইস্পাত-কঠিন সংকল্প প্রসঙ্গে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " তিনি কখনও এক পাও পিছু হটেননি এবং তাঁর সংকল্প কখনও দূর্বল হয়নি।"
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ সমস্যা ও বিপদগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করেন এবং সেগুলো হয়ে পড়ে তার সাফল্যের সিড়ি। অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তা থেকে শিক্ষা নিলে সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে পড়ে। সব সমস্যা বা বিপদ দূর করা কখনও সম্ভব নয়, কিন্তু সমস্যার মোকাবেলায় দৃঢ়তা সমস্যার মন্দ প্রভাব বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখে। অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিলে মনে এ সান্তনা জন্ম নেয় যে সমস্যা কেবল কোনো এক ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হয়নি, বিশ্বের বহু মানুষই সমস্যায় আক্রান্ত। আলী (আঃ) কোনো এক ব্যক্তির মৃত্যুতে ওই গোত্রের লোকদের সান্তনা দিয়ে বলেছেন, " মৃত্যু কেবল তোমাদেরকে দিয়ে শুরু হয়নি এবং কেবল তোমাদেরকে দিয়েই শেষ হবে না।" দুঃখ ও বিপদের মোকাবেলায় নবী-রাসূলদের ধৈর্য ও অবিচলতা সব যুগের মানুষের জন্যই আদর্শ। কষ্ট ও সুখ এবং পরাজয় ও সাফল্য পরস্পর হাত ধরে চলে পালাক্রমে। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " মানুষের দিন দু'টি। একদিন সে লাভবান হয়, অন্যদিন সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাভের দিনে অহংকারী হয়ো না, আর ক্ষতির দিনে ধৈর্য ধরবে।"
(নাহজুল বালাঘা, হেকমত-৩৫৭ ** প্রগুক্ত- ৩৯৬)

অপবাদ : যা ব্যক্তিত্ব বিনাশ করে


ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক অন্যায় কাজগুলোর একটি হলো অপবাদ। যে ব্যক্তি অন্যকে অপবাদ দেয় সে অন্যের ক্ষতি করার পাশাপাশি নিজেরও ক্ষতি করতো। নিজের আত্মাকে পাপের মাধ্যমে কলুষিত করে। এখন প্রশ্ন হলো, অপবাদ কি? কোন ব্যক্তির মধ্যে যে দোষ বা ত্রুটি নেই তাকে সে জন্য দোষী সাব্যস্ত করাকেই অপবাদ বলা হয়। কাউকে অপবাদ দেয়া কবিরা বা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কোরআনে কাউকে অপবাদ দেয়া থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া আছে। যে অপবাদ দেবে তাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলেও কোরআনে উল্লেখ করা আছে। ইমাম জাফর সাদেক (আ.) বলেছেন, একজন নিরপরাধকে অপবাদ দেয়ার পাপ, বড় পাহাড়গুলোর চেয়েও বেশি ভারী। 

অপবাদ বা কুৎসা রটনা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। এটা যদি ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে করা হয় তাহলে তা গীবত হিসেবেও বিবেচিত হয়। অর্থাৎ অপবাদ দেয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ প্রকৃতপক্ষে দুই ধরনের পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এক ব্যক্তি একদিন ইমাম সাদেক (আ.) এর সঙ্গে হেটে এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার কাজের লোকটিও ছিল। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে কাজের লোকটি পেছনে পড়ে যায়। এ অবস্থায় ইমামের সঙ্গী ব্যক্তিটি তার কাজের লোককে তার কাছে আসতে ডাক দিল। কিন্তু কাজের লোকটি কোন জবাব দিল না। এভাবে কয়েক বার ডাকাডাকির পরও যখন কাজের লোকটি কোন উত্তর দিল না তখন ওই ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে গালি দিল যা আসলে কাজের লোকটির মায়ের প্রতি এক ধরনের অপবাদ। 

ইমাম সাদেক ওই ব্যক্তির আচরণ ও কথা শুনে অসন্তুষ্ট হন এবং ব্যক্তিটি যে নিন্দনীয় আচরণ করেছে তা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ইমামের সঙ্গে চলা ব্যক্তিটি তার ভুল স্বীকার না করে নিজের আচরণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালায়। ইমাম যখন বুঝতে পারলেন যে, ওই ব্যক্তি অপবাদ দেয়ার ভুল স্বীকার করতেও রাজি নয় তখন তিনি ওই ব্যক্তিকে বললেন তোমার আর আমার কাছে আসার দরকার নেই।
এখন আমরা দেখব, অপবাদের তৃতীয় প্রভাব কি?
'অপবাদ' আগে বা পরে সামাজিক সুস্থতাকে বিনষ্ট করে। সামাজিক ন্যায়বিচার ধ্বংস করে। সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। অপবাদ মানুষকে কোন কারণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরে এবং সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কোন সমাজে যখন অপবাদ দেয়ার রীতি চালু থাকে এবং অপবাদকে মেনে নেয় ও অপবাদকে বিশ্বাস করে তখন মিথ্যাটাও সত্যের বেশ ধারণ করে সামনে আসে। ফলে সমাজে অনাস্থা,অবিশ্বাস এবং বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় যে কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে এবং যাকে তাকে অপবাদ দেয়ার সাহস পায়।
এর ফলে সমাজে বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার পরিবর্তে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার স্থান দখল করে নেয়। কে কখন অপবাদের শিকার হয় তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে অপবাদের মারাত্বক কুপ্রভাব রয়েছে। ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন, যখনই কোন ব্যক্তি কোন মুমিনকে অপবাদ দেয় তখন তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায় যেমনিভাবে লবন পানিতে গলে যায়।
যে অপবাদ দেয় তার ঈমান নষ্ট হবার কারণ হলো ঈমান সততা ও সত্যবাদিতার সঙ্গে পথ চলে এবং অপবাদের অর্থ হলো অন্যের বিষয়ে মিথ্যা বলা। সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যের বিষয়ে মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে সত্যের পথে থাকতে পারে না। এভাবেই অপবাদ দানকারী ব্যক্তির ঈমান আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। হৃদয়ে ঈমানের আলোর আর কোন অস্তিত্ব থাকে না এবং তার চূড়ান্ত স্থান হলো দোজখ বা নরক।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুমিন নারী বা পুরুষকে অপবাদ দেবে তাকে পরকালে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।
অপবাদ দুই ধরনের। এক ধরনের অপবাদ হলো, ব্যক্তিটি দোষী নয় এটা জেনেও তাকে কোন কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা বা নিজে অন্যায় করে তা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সে ব্যাপারে কুৎসা রটনা করা।
আরেক ধরনের অপবাদ হলো, অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে কাউকে কোন দোষের জন্য দায়ী করা। অন্যের বিষয়ে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণের প্রবণতা থেকেই এ ধরনের অপবাদের সূত্রপাত। অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে অপবাদ দেয়ার ঘটনাই সবচেয়ে বেশি ঘটে। এ কারণেই পবিত্র কোরআনের সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক বিষয়ে সন্দেহ বা ধারণা করা থেকে বিরত থাক কারণ কোন কোন ধারণা বা সন্দেহ গোনাহ।'
কাজেই সন্দেহের বশে কারো বিরুদ্ধে কোন দোষ চাপিয়ে দেয়া অপরাধ। সূরা ইসরাঈলের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, সেটার পেছনে যেও না।
ধারণা বা সন্দেহ অপুরণীয় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অনেকেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নিজের স্বামী বা স্ত্রীকে হত্যা করেছে। পরে দেখা গেছে হত্যাকারীর যে বিষয়ে সন্দেহ করেছিল তা সত্য নয়। ইমাম মূসা কাজেম (আ.) কে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, আমি বিশ্বাসযোগ্য একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছে এক মুসলিম ভাই আমার সম্পর্কে এমন কথা বলেছে যা আমার অপছন্দ। কিন্তু পরে আমি জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তি তা অস্বীকার করেছে। এখন আমার করণীয় কি?
ইমাম এর জবাবে বলেন, যদি ৫০ জন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিও তোমাকে বলে যে সে তোমার সম্পর্কে ভুল কথা বলেছে তাহলেও তুমি তা বিশ্বাস করো না যা তোমার মুসলিম ভাইয়ের জন্য সম্মানহানিকর তা তুমি করো না।
এখন আমরা দেখবো কোন অপবাদের কথা শোনার পর আমাদের করণীয় সম্পর্কে। সূরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন খরব আনে তাহলে তা পরীক্ষা করে দেখবে,যাতে অজ্ঞতাবশত: তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।
অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশ হলো, আমরা যখন কারো ব্যাপারে কোন কথা বা অপবাদ শুনব তখন আমাদের দায়িত্ব হলো প্রথমে তা পরীক্ষা করে এর সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হবো। কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক এবং প্রমাণ ও তদন্তবিহীন মূল্যায়ন নিষিদ্ধ।
ইসলাম অপবাদকে হারাম ঘোষণা করেছে এবং মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে একে অপরের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না করা হয়। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে কোন কিছুর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। পাশাপাশি এদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে যে, কেউ যাতে অপবাদ দিতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্দেহ সৃষ্টির আশংকা দূর করতে হবে। এ কারণেই ইসলামে পাপাচারীদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কারণ পাপাচারীদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে মানুষের মনে মুমিনদের বিষয়েও সন্দেহের জন্ম হতে পারে এবং পরিণতিতে অপবাদ দিতে পারে।
মোটকথা আমরা যদি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেই যে, অপবাদ দিতে অন্যের ক্ষতির পাশাপাশি নিজেরও ক্ষতি হয়। আধ্যাত্বিক দিক থেকে অপুরণীয় ক্ষতি হয়,তাহলে আমরা নিশ্চয় এ ধরনের বড় পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবো।

নামাজ: খোদা প্রেমের সুন্দরতম প্রকাশ


সম্প্রতি ইরানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশতম জাতীয় ‘নামাজ' সম্মেলন। এ উপলক্ষ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গুরুত্বপূর্ণ বাণী দিয়েছেন । এ ছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা। এ আলোচনায় নামাজ সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরার হল।
"মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর এবাদত বা তাঁর দাসত্বের মুখাপেক্ষী। নিজেকে বিনম্র চিত্তে সব সৌন্দর্য ও কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর কাছে নিবেদিত করাও মানুষের সহজাত স্বভাব। ঐশী বা খোদায়ি ধর্মগুলো নামাজের বিধান চালু করে মানুষের খোদাদত্ত বা সহজাত তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করেছে। তা না হলে মানুষ তাদের সহজাত এই তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে বিচ্যুতি বা বিভ্রান্তির অতলে হারিয়ে যেত। নামাজ মানুষকে সচেতন মন নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হওয়া এবং আত্মাকে মার্জিত বা শুদ্ধ করার সুযোগ দেয় যাতে আত্মা পায় ঔজ্জ্বল্য। মহান আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও প্রার্থনা যখন মানুষের সামাজিক জীবনের প্রশান্তির সাথে একাকার হয় তখন ইসলামের অলৌকিকত্ব এর ধর্মীয় বিধিবিধানের সুশৃঙ্খল বিন্যাসে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "
এ বক্তব্যগুলো ছিল ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনে পাঠানো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণীর অংশ বিশেষ। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বুশেহরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৬০০'রও বেশি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদ।
মানুষ অপরিপূর্ণ সত্তা হিসেবে উন্নতি ও পূর্ণতাকামী। ইসলামের সুন্দরতম এবাদত নামাজ মানুষকে এই মহান লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। তাই নামাজ মানুষের পূর্ণতাকামী সহজাত আকর্ষণের প্রকাশ। নামাজের ছায়ায় মানুষ নতুন নতুন উচ্চতর দিগন্ত পানে এগিয়ে যায়। এভাবে তারা এমন এক বাস্তবতার সাথে যুক্ত হয় যেখানে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা, অন্ধকার, পংকিলতা ও ত্রুটি, বরং রয়েছে আলোর বন্যা। আল্লামা ইকবাল লাহোরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"এবাদত ও নামাজ অতি গুরত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক একটি কাজ যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্বের ক্ষুদ্র দ্বীপ তার অবস্থানকে জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে আবিষ্কার করে। "
নানা ধর্মে এবাদত ও প্রার্থনার নানা রূপ দেখা যায়। যেমন, কেউ ভাষা বা কথার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও এবাদত করে । আবার অনেকেই নামাজ ও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইরানের নামাজ কায়েম সমিতির প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মুহসেন কারায়াতি এবাদতকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে বলেছেন, "কোনো কোনো এবাদত গোপনে সম্পন্ন করা ভাল। যেমন, "তাহাজ্জতের নামাজ গোপনে আদায় করা ভাল ও তৃপ্তিদায়ক। কোনো কোনো এবাদত গোপনে হোক্ বা প্রকাশ্যেই হোক্ত - উভয়ই উত্তম। যেমন, দরিদ্রদের সহায়তা করা ও নামাজ কায়েম করা। কোনো কোনো এবাদত অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনাময় এবং জাঁকজমকপূর্ণ। যেমন, আজান ও বারায়াত বা কাফের-মুশরিক বা অবিশ্বাসী ও অংশীবাদীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। ইসলাম নামাজকে তুলে ধরতে আগ্রহী। নামাজ ইসলামের প্রতীক ও স্তম্ভ। নামাজের রহস্যগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হলে আমরা বুঝতাম কেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজকে তাঁর "চোখের আলো" বলে উল্লেখ করেছেন এবং কেন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেছেন যে, তিনি নামাজের আশেক বা প্রেমিক।"
ানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশতম জাতীয় ‘নামাজ' সম্মেলন। এ উপলক্ষ্যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গুরুত্বপূর্ণ বাণী দিয়েছেন । এ ছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদরা। এ আলোচনায় নামাজ সম্পর্কে তাঁদের চিন্তাভাবনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরার হল।
"মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মহান আল্লাহর এবাদত বা তাঁর দাসত্বের মুখাপেক্ষী। নিজেকে বিনম্র চিত্তে সব সৌন্দর্য ও কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর কাছে নিবেদিত করাও মানুষের সহজাত স্বভাব। ঐশী বা খোদায়ি ধর্মগুলো নামাজের বিধান চালু করে মানুষের খোদাদত্ত বা সহজাত তৃষ্ণা নিবারণের ব্যবস্থা করেছে। তা না হলে মানুষ তাদের সহজাত এই তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে বিচ্যুতি বা বিভ্রান্তির অতলে হারিয়ে যেত। নামাজ মানুষকে সচেতন মন নিয়ে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হওয়া এবং আত্মাকে মার্জিত বা শুদ্ধ করার সুযোগ দেয় যাতে আত্মা পায় ঔজ্জ্বল্য। মহান আল্লাহর স্মরণ, নামাজ ও প্রার্থনা যখন মানুষের সামাজিক জীবনের প্রশান্তির সাথে একাকার হয় তখন ইসলামের অলৌকিকত্ব এর ধর্মীয় বিধিবিধানের সুশৃঙ্খল বিন্যাসে সমুজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "
এ বক্তব্যগুলো ছিল ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনে পাঠানো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণীর অংশ বিশেষ। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বুশেহরে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৬০০'রও বেশি বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদ।
মানুষ অপরিপূর্ণ সত্তা হিসেবে উন্নতি ও পূর্ণতাকামী। ইসলামের সুন্দরতম এবাদত নামাজ মানুষকে এই মহান লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। তাই নামাজ মানুষের পূর্ণতাকামী সহজাত আকর্ষণের প্রকাশ। নামাজের ছায়ায় মানুষ নতুন নতুন উচ্চতর দিগন্ত পানে এগিয়ে যায়। এভাবে তারা এমন এক বাস্তবতার সাথে যুক্ত হয় যেখানে নেই কোনো সীমাবদ্ধতা, অন্ধকার, পংকিলতা ও ত্রুটি, বরং রয়েছে আলোর বন্যা। আল্লামা ইকবাল লাহোরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
"এবাদত ও নামাজ অতি গুরত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক একটি কাজ যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিত্বের ক্ষুদ্র দ্বীপ তার অবস্থানকে জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে আবিষ্কার করে। "
নানা ধর্মে এবাদত ও প্রার্থনার নানা রূপ দেখা যায়। যেমন, কেউ ভাষা বা কথার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও এবাদত করে । আবার অনেকেই নামাজ ও রোজার মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইরানের নামাজ কায়েম সমিতির প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম মুহসেন কারায়াতি এবাদতকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করে বলেছেন, "কোনো কোনো এবাদত গোপনে সম্পন্ন করা ভাল। যেমন, "তাহাজ্জতের নামাজ গোপনে আদায় করা ভাল ও তৃপ্তিদায়ক। কোনো কোনো এবাদত গোপনে হোক্ বা প্রকাশ্যেই হোক্ত - উভয়ই উত্তম। যেমন, দরিদ্রদের সহায়তা করা ও নামাজ কায়েম করা। কোনো কোনো এবাদত অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনাময় এবং জাঁকজমকপূর্ণ। যেমন, আজান ও বারায়াত বা কাফের-মুশরিক বা অবিশ্বাসী ও অংশীবাদীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা। ইসলাম নামাজকে তুলে ধরতে আগ্রহী। নামাজ ইসলামের প্রতীক ও স্তম্ভ। নামাজের রহস্যগুলো আমাদের কাছে স্পষ্ট হলে আমরা বুঝতাম কেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজকে তাঁর "চোখের আলো" বলে উল্লেখ করেছেন এবং কেন হযরত ইমাম হোসাইন (আঃ) বলেছেন যে, তিনি নামাজের আশেক বা প্রেমিক।"

নামাজ মানুষের আত্মাকে প্রশান্ত ও গতিশীল করার এবং মনকে প্রফুল্ল করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন ও কর্মসূচি। মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষরা এই গঠনমূলক মহান এবাদতের মাধ্যমে সৃষ্ট আত্মিক প্রশান্তি ও আত্মিক যোগাযোগের ছায়াতলেই বিশ্বকে একত্ববাদ এবং আল্লাহর স্মরণের মিষ্টি মধুর সৌরভে ভরিয়ে দিয়েছেন। নামাজ ছিল তাঁদের আহ্বান বা দাওয়াতের প্রাণকেন্দ্র। নবী হিসেবে মনোনয়ন লাভের পর হযরত মূসা (আঃ)কে আল্লাহর স্মরণের জন্য নামাজ কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়। হযরত ইব্রাহীম (আঃ)ও তাঁর দোয়ায় বলেছেন,
"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা কবুল করুন আমাদের দোয়া"। 
হযরত ঈসা (আঃ)কেও দোলনায় থাকা অবস্থায় নামাজ কায়েমের কথা বলা হয়েছিল। সুরা মরিয়মের ৩১ নম্বর আয়াতে হযরত ঈসা (আঃ)'র বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন , "আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।"
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, "সব কিছুরই একটা চেহারা রয়েছে। ইসলামের চেহারা হল নামাজ। এই চেহারার পূর্ণতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা কর।"
বুশেহরের জুমা'র ইমাম আয়াতুল্লাহ সাফায়ি বুশেহরি বলেছেন," নামাজ সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও পূর্ণতম এবাদত এবং ধর্মের স্তম্ভ। নামাজ ইসলামের বাস্তবতার ঐশী রূপ এবং মানুষের বিভিন্ন কাজের খোদায়ি অনুমোদনের মাধ্যম। এ ছাড়াও নামাজ পাপের চোরাবালি থেকে মানুষের মুক্তির পথ এবং মহান আল্লাহর দয়া, প্রেম ও অনুগ্রহের সীমানায় উপস্থিত থাকার সমতুল্য।"
মানুষ নামাজ পড়ার মাধ্যমে সব ধরণের কল্যাণ ও সৌন্দর্যের প্রেমিকে পরিণত হয়। নামাজ মানুষকে বিভিন্ন ধরণের নৈতিক গুণ ও শিষ্টাচার শেখায়। যেমন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সময়-সচেতনতা, অন্যদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো, পবিত্রতাকামী ও মানবদরদী হওয়া। এসব বিষয় মানুষের মনকে প্রশান্ত করে।

হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (সাঃ) বেহশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর দীর্ঘকাল পৃথিবীতে চিন্তিত, অনুতপ্ত ও ক্রন্দনরত অবস্থায় ছিলেন। আল্লাহর দরবারে তওবা করার পর একদিন জিবরাইল (আঃ) তাঁদের কাছে আসলেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে দিন ও রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ উপহার হিসেবে নিয়ে আসার কথা তাঁদের জানালেন। পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই আদম ও হাওয়া নামাজ আদায় করেন এবং নামাজের মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহর সাথে আন্তরিক চিত্তে কথা বললেন। এ নামাজ শেষে তাঁরা পেলেন অসাধারণ প্রশান্তি।
সত্যিই নামাজ মানুষের জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার ও সবচেয়ে দামী উত্তরাধিকার।
ইরানের বিশতম জাতীয় নামাজ সম্মেলনের প্রধান শ্লোগান ছিল, "নামাজ, মসজিদ ও ইসলামের মানদণ্ড বা পাল্লা"। তাই বক্তারা নামাজ ও মসজিদের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেছেন। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মসজিদের বিষয়ে দায়িত্বশীল ও দূরদর্শী পরিচালনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং এ বিষয়টিকে মসজিদের প্রতি যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার মাধ্যম বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, "নামাজের বরকতে মসজিদ হয় আলোকোজ্জ্বল, সুবাসিত এবং এখানে সত্যের বাণী, ধর্মের শিক্ষা, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রনীতি অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে মন-প্রাণকে বেশি আকৃষ্ট করে। এভাবে নামাজ মানুষের জীবনকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে খোদামুখী করে।" 

ফরাসি জীব বিজ্ঞানী এ্যালেক্সিস ক্যারেল মানুষের মন ছাড়াও শরীর এবং রোগ-ব্যাধির ওপর প্রার্থনার বিস্ময়কর সুফল বা প্রভাবের কথা তুলে ধরেছেন। লর্ডসের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রার্থনার মাধ্যমে ২০০টিরও বেশি অসুখ বা রোগের উপশম হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করেছে বলে ক্যারেল জানিয়েছেন।
নামাজ সর্বশক্তিমান আল্লাহর তথা অশেষ শক্তি ও সব কল্যাণের উৎসের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে মানুষকে যোগায় অফুরন্ত শক্তি আর উদ্দীপনা। নামাজ প্রজ্ঞাময় বা বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দের অশেষ সাগরে অমূল্য রত্ন আহরণের আধ্যাত্মিক অভিযান।

ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ


বস্তুগত, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদ-এসবই মানুষের চাহিদার অংশ। যারা বস্তুগত সম্পদ ও বস্তুগত আনন্দ বা তৃপ্তি থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে মহান আল্লাহ তাদের তিরস্কার করেছেন। এ প্রসঙ্গে সূরা আরাফের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: "আপনি (রাসূল-সা.) বলুনঃ আল্লাহ সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টি করেছেন পবিত্র খাদ্রবস্তুগুলোকে-সেগুলোকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটি বা খাসভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতগুলো বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।"
যারা বস্তুগত সম্পদকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে চান তাদেরকেও যেমন ইসলাম সমর্থন করে না তেমনি যারা এ ধরণের সম্পদের প্রতি মোহগ্রস্ত ইসলাম তাদেরকেও বিভ্রান্ত বলে মনে করে।
সূরা আলে ইমরানের ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন: "মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত সোনা-রূপা, চিহ্নিত বা বাছাইকৃত ঘোড়া, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ-সামগ্রী। আল্লাহর কাছেই রয়েছে উত্তম আশ্রয়।" অন্য কথায় পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে ছয়টি বস্তুগত সম্পদের দিকেই রয়েছে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ। এ ৬টি সম্পদ হল, নারী, সন্তান, নগদ অর্থ বা সোনা-রূপা প্রভৃতি, উন্নত প্রজাতির ঘোড়া বা আধুনিক যুগের প্রেক্ষাপটে গাড়ি, গৃহপালিত পশু এবং ক্ষেত-খামার বা কৃষি-পণ্য। কিন্তু কোরআন এটাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এসব সম্পদই মানব-জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, বরং এসব সম্পদ হচ্ছে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের জন্য মাধ্যম মাত্র। তাফসিরে নমূনার ভাষ্য অনুযায়ী আসলে আল্লাহ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেছেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য যাতে তারা শিক্ষা নেয় এবং আত্মগঠন ও পরিশুদ্ধির মাধ্যমে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। দুর্নীতি ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আল্লাহ এসব সম্পদ মানুষকে দান করেননি।
তাই এটা স্পষ্ট বস্তুগত সম্পদের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ আকর্ষণই ইসলামের কাম্য। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত আকর্ষণ বা পুরোপুরি বর্জন-এসব চরমপন্থার বিরোধিতা করে ইসলাম। স্বচ্ছল জীবন-যাপনের জন্য প্রচেষ্টা চালানোর পক্ষে কথা বলে এ পবিত্র ধর্ম। কিন্তু ইসলাম দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অগ্রাহ্য করে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ জমাতে বা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে নিষেধ করে।
এখন প্রশ্ন হল, অস্থায়ী সম্পদ বা বস্তুগত সম্পদ কি মানুষের জন্য প্রকৃত সুখ ও শান্তির পাথেয় তথা প্রকৃত সঞ্চয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে? কাফের বা অবিশ্বাসীরা বস্তুগত সম্পদকেই জীবনের সবচেয়ে কাঙ্খিত বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে। কোরআন তাদের এ ধারণার অসারতা তুলে ধরেছে। অবিশ্বাসীরা মনে করে মানুষের বাহ্যিক সুন্দর চেহারা বা অবয়ব, দামি পোশাক, সম্পদ ও অর্থ-কড়ি প্রভৃতি ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী বিষয়গুলোই সবচেয়ে জরুরি সম্পদ। অথচ মানুষের জন্য সবচেয়ে জরুরি ও প্রকৃত স্থায়ী সম্পদ হল সৎ চরিত্র এবং সৎ গুণাবলী তথা প্রকৃত মানুষ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মত যোগ্যতা অর্জন। মানুষের এ সম্পদই অমূল্য বা কেনা-বেচার সাধ্যাতীত।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র আবির্ভাবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল সুন্দর ও উন্নত নৈতিক গুণের প্রসার ঘটানো। তিনি নিজেই বলেছেন: "নৈতিক গুণাবলীকে পরিপূর্ণতা দেয়ার উদ্দেশ্যেই আমাকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।"
কোরআনে বলা হয়েছে, "নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়" (আল আলা-১৩)। অথবা "যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করল সে-ই সফল হল এবং যে নিজেকে কলুষিত করে সে ব্যর্থ হয়। " (আশ-শামস ৮-৯)
অন্য সব প্রাণীর সাথে মানুষের পার্থক্য হল মানুষকে প্রাণপন চেষ্টায় মানুষ হতে হয়, কেবল জ্ঞানই ভাল মানুষ হওয়ার মানদণ্ড নয়। তাই মুসলিম জ্ঞানী-গুণীদের মধ্যে প্রচলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী হল, " জ্ঞানী হওয়া সহজ, কিন্তু মানুষ হওয়া কঠিন।" পরিশুদ্ধ ও পবিত্র অন্তর ছাড়া মানুষ পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। সৎ গুণগুলোকে ফুলে -ফলে বিকশিত করাই মানুষের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সাধনার মূল লক্ষ্য। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সৎকর্মশীল ও সদাচারীদের ব্যাপক প্রশংসা দেখা যায়। যেমন, সূরা আল ফোরকানের ৬৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, " রহমানের খাস বান্দা তো তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকরা যখন তাঁদের সাথে (অশালীন ভাষায়) কথা বলে বা সম্বোধন করে, তখন তাঁরা (মহানুভবতা ও ক্ষমাশীলতা নিয়ে) বলেন, তোমাদের সালাম বা তোমরা শান্তিতে থাক।"
ন্যায়কামী, সৎ মানুষ ও সদাচারী হওয়ার আরেকটি সুবিধা হল তাঁরা মানুষের শ্রদ্ধা পান এবং তাঁরা মানুষের মন জয় করেন। আর যাদের নৈতিক চরিত্র দূর্বল বা যারা নীতিহীন তারা ঈমানহীন মানুষের মতই অন্যের অধিকার পদদলিত করে। যেমন, এ ধরণের মানুষ অন্যকে দেয়া ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে। সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বিশ্বনবী (সা.)কে বলেছেন, "আল্লাহর রহমতেই আপনি মানুষের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, কিন্তু আপনি যদি রাগী ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো।"
বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে যার মূল কথা হল, মানুষের ব্যবহারই তার আসল পরিচয় তথা ভেতরের স্বরূপ ফুটিয়ে তোলে। তাই এটা স্পষ্ট চরিত্র বা নৈতিকতাই হল মানুষের জন্য সবচেয়ে দামী ও স্থায়ী সম্পদ। এ সম্পদের সাথে বস্তুগত সম্পদের কোনো তুলনাই হয় না।
অন্য সব কিছু হারিয়ে গেলেও বা সদগুণে বিভূষিত মানুষেরা মানবজাতির হৃদয়ে স্থায়িত্ব লাভ করেন। এখন কথা হল, সৎ গুণাবলী কিভাবে অর্জন করা যায়? খোদাভীতি বা আল্লাহর ভয় এবং ইসলামী শিক্ষা ও বিধানের অনুসরণ সৎ গুণাবলী অর্জনের অন্যতম পন্থা। বেশি বেশি সৎ কাজ ও সদাচারণ মানুষের খারাপ স্বভাবকে দমিয়ে রাখে ও ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেয়।
কোনো কোনো মানুষ ঘরের বাইরে অন্যদের সাথে ভাল আচরণ করলেও ঘরে এসে স্ত্রী-পুত্র এবং পরিবার পরিজনের সাথে রুক্ষ্ম ও অশোভনীয় আচরণ করে। এ ধরণের মানুষকে ভাল মানুষ বলা যায় না। প্রকৃত চরিত্রবান ও সদাচারী তাকে বলা যায় যে সব সময়ই ন্যায়-বিচার বজায় রাখেন এবং সবার সাথেই ভদ্র আচরণ করেন।
মহাপুরুষদের জীবনী পড়ে এবং তাদের কর্মপন্থা অনুসরণ করেও আমরা সদগুণের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। মৃত্যুর পর আমাদের আবার পুণরুত্থান হবে, তখন ইহজীবনের প্রতিটি কাজের জন্য হিসেব দিতে হবে, বিশেষ করে খারাপ বা অন্যায় কাজগুলোর জন্য কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, সে কথা সবারই মনে রাখা উচিত। আমাদের ভাবা উচিত, কবরের আযাবসহ পরকালের বা নরকের শাস্তি এত তীব্র ও দীর্ঘ যে তা সহ্য করার ক্ষমতা কোনো মানুষেরই নেই। তাই আমাদের উচিত মহাপুরুষদের দেখানো পথে চলে শ্রেষ্ঠ নৈতিক গুণগুলো অর্জনের চেষ্টা করা।

রেশম পোকা বানাবে মাকড়শার জালের সূতা


৩০ সেপ্টেম্বর (রেডিও তেহরান): বিজ্ঞানীরা জেনেটিক গঠন পরিবর্তন করে রেশমপোকা দিয়ে মাকড়শার জাল তৈরির সূতা তৈরি করতে পেরেছেন। এ ভাবে রেশমপোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতার মত যে সুতা তৈরি হয়েছে তার গুণাগুণ অবিকল প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাকড়শার সূতার মতই হয়েছে। চিকিৎসা ও বস্ত্রখাতে এ ধরণের সূতার ব্যাপক ব্যবহার সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে বিজ্ঞানীরা কেবল গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাকড়শার জালের মতো সূতা অতি সামান্য পরিমাণে তৈরি করতে পারতেন। সেগুলো গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হলেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব ছিলো না। গতকাল মার্কিন বিজ্ঞানীরা এ খাতে সাফল্যের খবর দিয়েছেন।
রেশম পোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতা তৈরির গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন, নটরড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার, উয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্রেইগ বায়োক্রাফট ল্যাবরেটরিজের বায়োকেমিষ্ট র্যা ন্ডি লুইস। চিকিৎসা ও চিকিৎসা বহির্ভূত খাতে উন্নত মানের রেশম সূতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ গবেষণা উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার। তিনি আরো বলেছেন, বস্তুবিজ্ঞান, অনেক দিন ধরেই মাকড়শার জালের সূতার গুণযুক্ত রেশম সূতা তৈরির চেষ্টা করে আসছে। এটি বিজ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো। এমন কাজ কেনো বিজ্ঞানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে মাকড়শার জালের সূতার গুণাগুণের দিকে তাকালেই তা বুঝা যাবে।
এ ধরণের সূতার অসাধারণ কিছু গুণ আছে। মাকড়শা জাল তৈরির জন্য যে সূতা তৈরি করে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি রেশম সূতার প্রসারণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা তার চেয়ে অনেক বেশি। যে সব বিজ্ঞানী এ গবেষণা প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন, তারা বলেছেন, জিনের পরিবর্তন করে রেশম পোকার মাধ্যমে মাকড়শার জালের সূতা পাওয়া গেছে তার মধ্যে প্রাকৃতিক সব গুণই রয়েছে।
নতুন এ সূতা ব্যবহারের কথা বলতে যেয়ে তারা জানান, নতুন এই সূতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষত স্থানে সেলাইয়ের কাজে চমৎকার উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিংবা ক্ষতস্থান মুড়ে দেয়ার জন্য উন্নতমানের ব্যান্ডেজ এ সব সূতা দিয়ে তৈরি করা যাবে। ট্যান্ডন বা লিগামেন্ট জোড়া দেয়ার কাজেও এ ধরণের সূতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রের বাইরেও এ ধরণের সূতা ব্যবহারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জাতীয় সূতা দিয়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক তৈরি করা যাবে। যা হবে ওজনে হালকা কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত এ জাতীয় পোশাকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এ ছাড়া এ সব সূতা দিয়ে মজবুত ও হালকা নানাধরণের কাঠামো বানানো যাবে। বানানো যাবে ক্রীড়াবিদদের জন্য নতুন জাতের পোশাক। এ ছাড়া দুর্ঘটনার হাত থেকে গাড়ির চালককে রক্ষার জন্য যে এয়ারব্যাগ তৈরি হয় তাও বানানো যাবে এ সূতা দিয়ে। নতুন জাতের এসব এয়ারব্যাগ প্রচলিত পণ্যের চেয়ে গুণে মানে অনেক ভাল হবে। এ প্রকল্পের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীরা কেবল যে তাদের তৈরি নতুন সূতার রকমারি ব্যবহারের দিকই তুলে ধরেছেন তা নয়। বরং তারা আরো জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ভাবে মাকড়শা জালের জন্য যে সূতা তৈরি করে, জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সে জাতীয় সূতা তৈরি করার সময় তার গুণ ও মানের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। নতুন এ সূতায় রেশম ও মাকড়শার সূতার গুণের সমন্বয় ঘটেছে। মাকড়শা জালের যে সূতা তৈরি করে তার চেয়ে মজবুত হয়েছে নতুন এ সূতা, এ ছাড়া স্থিতিস্থাপকতাও বেড়েছে বলে তারা জানান।

পাকস্থলির ক্যান্সার নিরাময়ে ইরানী চিকিৎসকদের হার্বাল ওষুধ উদ্ভাবন


পাকস্থলির ক্যান্সার নিরাময়ে ইরানী চিকিৎসকদের হার্বাল ওষুধ উদ্ভাবন
২৫ আগস্ট (রেডিও তেহরান): ইরানের গবেষকরা বিশ্বে প্রথমবারের মত পাকস্থলির ক্যান্সার নিরাময়ের ভেষজ বা হার্বাল ওষুধ উদ্ভাবন করেছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মিসেস মারজিয়েহ ওয়াহিদ দাস্তজেরদী জানিয়েছেন, "স্পাইনাল জেড" নামের এই ভেষজ ওষুধ পাকস্থলির ক্ষুদ্রান্তে ক্যান্সারের বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম। গত দশ বছরে এ নতুন ওষুধের উৎপাদন প্রক্রিয়ার সমস্ত ধাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। ঐতিহ্যবাহী ভেষজ ইরানী চিকিৎসা পদ্ধতিতে এই ওষুধ দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়েছে। ইরানে উৎপন্ন হয় এমন কয়েকটি উদ্ভিদ থেকে "স্পাইনাল জেড" ওষুধের উপাদান সংগ্রহ করা হয়। রক্তের শ্বেত-কনিকা কমিয়ে দেয়া ও রোগ-জীবানুর সংক্রমণ ঘটার মত কোনো গুরতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এ ওষুধে নেই, তবে এ ওষুধ ব্যবহারে কিছুটা বমির ভাব দেখা দেয়। ক্যাপসুল ও পিল আকারে এই ওষুধ এখন গোটা ইরানের বিভিন্ন ফার্মেসীতে পাওয়া যাচ্ছে। ইরানে এক বছরে প্রতি এক হাজার ব্যক্তির মধ্যে ২১ জন পাকস্থলির ক্যান্সারে মারা যান। ইরানের পশ্চিমা প্রদেশগুলোতে এই রোগের প্রকোপ বেশী এবং বুশেহরে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে কম।

কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের প্রচণ্ড ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন এক স্ফটিক এমওএফ

২২ জুলাই (রেডিও তেহরান) : মার্কিন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রসায়নবিদরা কৃত্রিম এমন এক জাতের স্ফটিক তৈরি করেছেন যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করতে ও জমা রাখতে পারবে। মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস বা এমওএফ এ সব ক্রিস্টাল নামের ধাতু থেকে তৈরি এবং এগুলো খুবই ছিদ্রবহুল। কাঠামোগতভাবে স্থিতিশীল এ সব কৃত্রিম স্ফটিক খুব অল্প জায়গায় বেশি পরিমাণ গ্যাস গ্রহণ ও সংকোচন করতে পারে। কৃত্রিম এ সব স্ফটিক ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা পরিবেশবান্ধব ইঞ্জিন তৈরির কথা ভাবছেন। ইঞ্জিন চালু থাকলে সেখানে কার্বন-ডাই অক্সাইড তৈরি হয় এবং পরে তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত এভাবে ব্যাপক পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড আবহমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে। এ সব কার্বন-ডাই অক্সাইড শেষ পর্যন্ত বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে সাগরের পানি ও পানির অম্লত্ব। ইউনির্ভাসিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলস বা ইউসিএলএর ন্যানো সিস্টেম ইন্সটিটিউটের ওমর ইয়াগির নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল এর আগে তৈরি এমওএফ-177 নামের কৃত্রিম স্ফটিকের উন্নয়ন ঘটিয়ে এমওএফ-200 এবং এমওএফ-210 নামের দু'টো নতুন জাতের স্ফটিক তৈরি করেন। নতুন এ দুই স্ফটিকে দ্বিগুণ পরিমাণ গ্যাস মজুদ রাখা যাবে। রসায়ন ও জৈব রসায়নের অধ্যাপক ওমর ইয়াগি বলেন, অল্প জায়গায় বেশি গ্যাস মজুদ করতে হলে স্ফটিককে ছিদ্রবহুল হতে হবে। আর এ কারণে স্ফটিক তৈরিকারী কণিকার বহির্ভাগের বদলে তার ভেতরেও গবেষকরা ড্রিল করে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি করলে এ সব কণিকার গ্যাস মজুদ করার ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী, সায়েন্স-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত নিবন্ধে অধ্যাপক ওমর উন্নত স্ফটিকের এ সব গুণের কথা জানান। এমওএফ-210 নকশা তৈরি করতে তাকে সাহায্য করেছেন সিউলের সুংসিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক জোহেওন কিম। তিনি জানান, এক গ্রাম এমওএফ আকারে চারটি চিনির বড়ির সমান এবং সমানভাবে এগুলোকে বিছিয়ে দেয়া হলে প্রতি গ্রাম এমওএফ ৫ হাজার বর্গমিটার সমপরিমাণ স্থানে ছড়িয়ে দেয়া যাবে। এ ছাড়া এক গ্রাম এমওএফ-200কে এভাবে ছড়িয়ে দেয়া হলে তা কয়েকটি ফুটবল মাঠের সমপরিমাণ স্থান দখল করবে। এমওএফ-200 এর এমন শুন্য স্থানে গ্যাস মজুদ করা হবে। এ দিকে, কিম জানান, এ সব উন্নত স্ফটিক অনেক কাজেই ব্যবহার করা যাবে। একদিকে এগুলো কার্বন-ডাই অক্সাইড মজুদের জন্য ব্যবহার হবে অন্যদিকে হাইড্রোজের মতো জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত গ্যাসও এমওএফে মজুদ রাখা যাবে। কোমল পানীয়ের জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতলে পাওয়া যায় টেরাপ্যাথালেট নামের সস্তা উপাদান ও জিংক অক্সাইড দিয়ে এমওএফ তৈরি করা যাবে

উইন্ডোজ সেভেনের গতি বাড়ান


উইন্ডোজ সেভেন ইন্সটল করার পর দেখতে পেলেন কম্পিউটারের গতি লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে। তখন কি করবেন? জার্মানির নলেজ পাবলিশিং গ্রুপ এ ধরণের সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার একটা সমাধান বাতলে দিয়েছে। আর এ সমাধানটি হল,কম্পিউটারের ডিভাইস ড্রাইভার আপটেড করুন। আপনার কম্পিউটারে যে সব ডিভাইস আছে তাদের নির্মাতার ওয়েব সাইটে যান এবং আপনার ডিভাইসের উপযোগী ড্রাইভার নামিয়ে নিন এবং তা ইন্সটল করুন। দেখবেন কম্পিউটারের গতি বেড়ে গেছে।
গোগলম্যাপ ব্যবহার করুন পথ বাতলে দেয়ার জন্যবন্ধুদেরকে নতুন একটি রেস্তোরায় দাওয়াত করবেন। কিন্তু সবাই পথ চেনে না। উপায়? হ্যাঁ গোগলম্যাপ এ ক্ষেত্রে আপনার মুশকিল আসান হতে পারে। www.google.com/maps-এ যেয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্থানে যাওয়ার সহজ রাস্তা ঠিক করুন তারপর ই-মেইল করে পাঠিয়ে দিন তা আপনার বন্ধুদের কাছে। গোগলম্যাপের ডান দিকেই সেন্ড অপশন রয়েছে এ কথা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দেয়ার দরকার নেই।
নতুন ইয়াহু! এন্ডরয়েড স্মার্ট ফোনের এ্যাপস 
এন্ডরয়েড অপারেটিং সিস্টেম যারা ব্যবহার করেন তাদের জন্য সুখবর। ইয়াহু এ সব স্মর্ট ফোনের জন্য এ্যাপস ছেড়েছে। ইয়াহু মেইল এবং ইয়াহু মেসেঞ্জার আগেই ব্যবহার করা যাচ্ছিলো। তবে নতুন যোগ হয়েছে সার্চ উইডগেট। নতুন এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে পোর্টবেল ডিভাইস থেকে অনায়াসে ইয়াহুর সকল সেবা পাওয়া যাবে। ফ্রি এই এ্যাপপস বিনা পয়সায় ডাউনলোড করা যাবে। ওএস ২.০ বা তার থেকে নতুন অপারেটিং সিস্টেমে এই এ্যাপস ব্যবহার করা যাবে।

দোয়া-ই-কুমাইল


দোয়াটির ইতিবৃত্ত ও ফজিলত
 
কুমাইল ইবনে জিয়াদ নাখাঈ ছিলেন আমিরুল মোমিনীন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। এই অসাধারণ দোয়াটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল হযরত আলী (আঃ) এর সমধুর অথচ যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে। আল্লামা মজলিসী (রহঃ) এর বর্ণনা অনুসারে বসরার মসজিদের যে মজলিসে হযরত আলী (আঃ) তাঁর ভাষণে ১৫ই শাবান রাতের তাৎপর্য সম্পর্কে বলছিলেন, সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন কুমাইল। হযরত আলী (আঃ) বলেছিলেন, " যে ব্যক্তি এই রাত জেগে এবাদত করবে এবং নবী খিজিরের দোয়া পড়বে নিঃসন্দেহে ঐ ব্যক্তির দোয়া কবুল হবে। "
মজলিস শেষে কুমাইল হযরত আলীর ঘরে এসে তাঁকে হযরত খিজিরের দোয়া শিখিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। হযরত আলী (আঃ) কুমাইলকে বসিয়ে দোয়াটি আবৃত্তি করেন এবং সেটা লিখে মুখস্থ করে রাখার নির্দেশ দেন।
তারপর হযরত আলী কুমাইলকে পরামর্শ দিলেন, প্রতি শুক্রবারের শুরুতে (অর্থাৎ আগের রাতে ) একবার করে কিংবা অন্ততঃ বছরে একবার এই দোয়াটি পড়তে যাতে করে "আল্লাহ তা'লা শত্রুর অনিষ্ট হতে এবং মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র হতে রক্ষা করেন।" তিনি আরও বলেন, হে কুমাইল! তোমার সাহচর্য এবং উপলব্ধির সম্মানে আমি এই দোয়াটি তোমার হেফাজতে উৎসর্গ করলাম।"

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহুমা সাল্লি আ'লা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মদ।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْ‏ءٍ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আকুতি জানাই তোমার ‘রহমত'-এর উসিলায় যা সমস্ত কিছুকে পরিবৃত করে রেখেছে।
وَ بِقُوَّتِكَ الَّتِي قَهَرْتَ بِهَا كُلَّ شَيْ‏ءٍ
আর তোমার পরাক্রমের উসিলায় যা দিয়ে তুমি সমস্ত কিছুকে পদানত করো।
وَ خَضَعَ لَهَا كُلُّ شَيْ‏ءٍ وَ ذَلَّ لَهَا كُلُّ شَيْ‏ءٍ
এবং যার কাছে সমস্ত বস্তুনিচয় আনত হয় ও আনুগত্য প্রদর্শন করে।
وَ بِجَبَرُوتِكَ الَّتِي غَلَبْتَ بِهَا كُلَّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার প্রতাপের উসিলায় যা দিয়ে তুমি সমস্ত কিছুকে বিজিত করেছো।
وَ بِعِزَّتِكَ الَّتِي لا يَقُومُ لَهَا شَيْ‏ءٌ
এবং তোমার মহামর্যাদার উসিলায় যার সম্মুখে কোন কিছুই দাঁড়াতে পারে না।
وَ بِعَظَمَتِكَ الَّتِي مَلَأَتْ كُلَّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার অপার মহিমার উসিলায় যা সমস্ত কিছুর উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আছে।
وَ بِسُلْطَانِكَ الَّذِي عَلا كُلَّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার শাসনের উসিলায় যা সমস্ত কিছুর উপর কর্তৃত্বশীল।
وَ بِوَجْهِكَ الْبَاقِي بَعْدَ فَنَاءِ كُلِّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার আপন সত্তার উসিলায় যা সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবার পরও স্থায়ী থাকবে।
وَ بِأَسْمَائِكَ الَّتِي مَلَأَتْ [غَلَبَتْ‏] أَرْكَانَ كُلِّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার নামসমূহের উসিলায় যা সমস্ত কিছুর উপর তোমার ক্ষমতা প্রকাশ করে।
وَ بِعِلْمِكَ الَّذِي أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْ‏ءٍ
এবং তোমার মহাজ্ঞানের উসিলায় যা সৃষ্টিজগতকে পরিবৃত করে রেখেছে।
وَ بِنُورِ وَجْهِكَ الَّذِي أَضَاءَ لَهُ كُلُّ شَيْ‏ء
এবং তোমার পবিত্র সত্তার নূরের উসিলায় যা সমস্ত কিছুকে আলোকিত করেছে।
يَا نُورُ يَا قُدُّوسُ يَا أَوَّلَ الْأَوَّلِينَ وَ يَا آخِرَ الْآخِرِينَ
হে নুর! হে পবিত্রময়! হে তুমি যে অনাদিকাল হতে বিরাজমান। হে তুমি যিনি সবকিছুর পরিসমাপ্তি।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيَ الذُّنُوبَ الَّتِي تَهْتِكُ الْعِصَم
হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা (গোনাহ থেকে) সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيَ الذُّنُوبَ الَّتِي تُنْزِلُ النِّقَمَ
হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা দুর্যোগ ডেকে আনে।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيَ الذُّنُوبَ الَّتِي تُغَيِّرُ النِّعَمَ
হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা তোমার নেয়ামতসমূহকে (গজবে) পরিবর্তন করে দেয়।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيَ الذُّنُوبَ الَّتِي تَحْبِسُ الدُّعَاءَ
হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা দোয়া কবুল হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيَ الذُّنُوبَ الَّتِي تُنْزِلُ الْبَلاءَ
হে আল্লাহ! আমার ঐ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দাও যা বিপদ (বা কষ্ট) ডেকে আনে।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي كُلَّ ذَنْبٍ أَذْنَبْتُهُ
হে আল্লাহ! আমি যত গোনাহ করেছি সব ক্ষমা করে দাও।
وَ كُلَّ خَطِيئَةٍ أَخْطَأْتُهَا
এবং ভুল বশত: করা সকল ত্রুটি ক্ষমা করে দাও।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَتَقَرَّبُ إِلَيْكَ بِذِكْرِكَ
হে আল্লাহ! আমি তোমাকে স্মরণের (জিক্‌র) মাধ্যমে তোমার নৈকট্য লাভের সাধনা করি।
وَ أَسْتَشْفِعُ بِكَ إِلَى نَفْسِكَ
আমি তোমাকেই তোমার কাছে শাফায়াতের জন্য উপস্থিত করছি।
وَ أَسْأَلُكَ بِجُودِكَ أَنْ تُدْنِيَنِي مِنْ قُرْبِكَ
এবং আমি তোমার অনুগ্রহ নিয়ে তোমার কাছেই প্রার্থনা করছি আমাকে তোমার নৈকট্যেরও নিকটবর্তী করে নাও।
وَ أَنْ تُوزِعَنِي شُكْرَكَ وَ أَنْ تُلْهِمَنِي ذِكْرَكَ
এবং তোমাকে কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবো আমাকে শিখিয়ে দাও এবং তোমার প্রতি মনোযোগ ও স্মরণকে আমার অন্তরে উদ্ভাসিত করো।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ سُؤَالَ خَاضِعٍ مُتَذَلِّلٍ خَاشِعٍ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে নিবেদন জানাই পূর্ণ আনুগত্যে, বিনয়াবনত চিত্তে ও ভীত-বিহ্বল অন্তরে ।
أَنْ تُسَامِحَنِي وَ تَرْحَمَنِي وَ تَجْعَلَنِي بِقِسْمِكَ رَاضِيا قَانِعا
যেন আমার প্রতি তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ার্দ্র হও এবং তোমার দেয়া বরাদ্দে খুশী ও পরিতৃপ্ত রাখো।
وَ فِي جَمِيعِ الْأَحْوَالِ مُتَوَاضِعا
এবং আমাকে যে কোন পরিস্থিতিতে বিনম্র ও বিনয়ী রাখো।
اللَّهُمَّ وَ أَسْأَلُكَ سُؤَالَ مَنِ اشْتَدَّتْ فَاقَتُهُ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা জানাই এমন এক ব্যক্তির মতো যে চরম সংকটে নিপতিত হয়েছে।
وَ أَنْزَلَ بِكَ عِنْدَ الشَّدَائِدِ حَاجَتَهُ
এবং একমাত্র তোমার দরবারে তার যন্ত্রণা নিবারণের জন্য ভিক্ষা চাচ্ছে।
وَ عَظُمَ فِيمَا عِنْدَكَ رَغْبَتُهُ
এবং তোমার কাছে যে অনন্তকালীন নেয়ামত আছে তা তার আশাকে বহুগুণ বর্ধিত করেছে।
اللَّهُمَّ عَظُمَ سُلْطَانُكَ وَ عَلا مَكَانُكَ وَ خَفِيَ مَكْرُكَ
হে আল্লাহ! বিশাল তোমার সাম্রাজ্য এবং মহিমান্বিত তোমার মর্যাদা এবং তোমার পরিকল্পনা দৃশ্যাতীত।
وَ ظَهَرَ أَمْرُكَ وَ غَلَبَ قَهْرُكَ وَ جَرَتْ قُدْرَتُكَ
অস্তিত্বজগতে তোমার ক্ষমতা স্পষ্ট, তোমার শক্তি সবকিছুর উপর বিজয়ী, তোমার কর্তৃত্ব সর্বব্যাপী।
وَ لا يُمْكِنُ الْفِرَارُ مِنْ حُكُومَتِكَ
এবং অসম্ভব তোমার সাম্রাজ্য থেকে পলায়ন।
اللَّهُمَّ لا أَجِدُ لِذُنُوبِي غَافِرا وَ لا لِقَبَائِحِي سَاتِرا
হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আমার পাপ ক্ষমা করার কিংবা আমার ঘৃণ্য কাজগুলো গোপন করে রাখার আর কেউ নেই।
وَ لا لِشَيْ‏ءٍ مِنْ عَمَلِيَ الْقَبِيحِ بِالْحَسَنِ مُبَدِّلا غَيْرَكَ
এবং আমার মন্দ কর্মগুলোকে সদ্‌গুণে রূপান্তরিত করার জন্যেও তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই।
لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَ بِحَمْدِكَ
তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই তুমি অতিশয় পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তোমারই।
ظَلَمْتُ نَفْسِي وَ تَجَرَّأْتُ بِجَهْلِي
আমি আমার নিজের উপর জুলুম করেছি এবং আমার এ ধৃষ্টতা জন্মেছে আমার অজ্ঞতার কারণে ।
وَ سَكَنْتُ إِلَى قَدِيمِ ذِكْرِكَ لِي وَ مَنِّكَ عَلَيَّ
(পাপ করতে গিয়ে) আমি নির্ভর করেছিলাম আমার প্রতি তোমার অতীত দয়া এবং তোমার অনুগ্রহের উপর।
اللَّهُمَّ مَوْلايَ كَمْ مِنْ قَبِيحٍ سَتَرْتَهُ
হে আল্লাহ! আমার কত জঘন্য পাপকে তুমি গোপন করেছো।
وَ كَمْ مِنْ فَادِحٍ مِنَ الْبَلاءِ أَقَلْتَهُ [أَمَلْتَهُ‏]
এবং আমার কত কঠিন বিপদকে তুমি সহনীয় করে দিয়েছো।
وَ كَمْ مِنْ عِثَارٍ وَقَيْتَهُ وَ كَمْ مِنْ مَكْرُوهٍ دَفَعْتَهُ
এবং কত বিচ্যুতি হতে আমাকে তুমি রক্ষা করেছো, কত নোংরা কাজ হতে আমাকে দুরে রেখেছো।
وَ كَمْ مِنْ ثَنَاءٍ جَمِيلٍ لَسْتُ أَهْلا لَهُ نَشَرْتَهُ
এবং আমার অসংখ্য সুন্দর প্রশংসা তুমি চতুর্দিকে ছড়িয়েছো যার উপযুক্ত আমি ছিলাম না।
اللَّهُمَّ عَظُمَ بَلائِي وَ أَفْرَطَ بِي سُوءُ حَالِي وَ قَصُرَتْ [قَصَّرَتْ‏] بِي أَعْمَالِي
হে আল্লাহ! আমার যাতনা হয়েছে অসহনীয় এবং দুর্দশা অপরিমেয়, অপরাধপ্রবণতা তীব্র অথচ সৎকর্ম নগণ্য
أَعْمَالِي وَ قَعَدَتْ بِي أَغْلالِي وَ حَبَسَنِي عَنْ نَفْعِي بُعْدُ أَمَلِي [آمَالِي‏]
এবং [পার্থিব আসক্তির] শিকল আমাকে ধরাশায়ী করে রেখেছে। আর মিথ্যে আশার মরীচিকা আমাকে আমার কল্যাণ থেকে দুরে রেখেছে।
وَ خَدَعَتْنِي الدُّنْيَا بِغُرُورِهَا
এবং দুনিয়া তার মোহন মায়ায় আমাকে আবিষ্ট করেছে।
وَ نَفْسِي بِجِنَايَتِهَا [بِخِيَانَتِهَا] وَ مِطَالِي يَا سَيِّدِي
এবং আমার আপন সত্তা পরিণত হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা ও ছলনাপ্রবণতার শিকারে, হে আমার প্রভু!
فَأَسْأَلُكَ بِعِزَّتِكَ
তোমার মহত্ত্বের নামে আমি কাতর মিনতি জানাই।
أَنْ لا يَحْجُبَ عَنْكَ دُعَائِي سُوءُ عَمَلِي وَ فِعَالِي
আমার পাপ ও অপকর্মগুলো যেন আমার দোয়াকে তোমার দুয়ারে পৌঁছুতে বাধাগ্রস্ত না করে।
وَ لا تَفْضَحْنِي بِخَفِيِّ مَا اطَّلَعْتَ عَلَيْهِ مِنْ سِرِّي
এবং তুমি কিছুতেই তোমার জানা আমার গোপন বিষয়গুলো প্রকাশ করে দিয়ে আমাকে অপমানিত করো না ।
وَ لا تُعَاجِلْنِي بِالْعُقُوبَةِ عَلَى مَا عَمِلْتُهُ فِي خَلَوَاتِي مِنْ سُوءِ فِعْلِي
এবং সেসব গোপন অপকর্মের কারণে আমার শাস্তি ত্বরান্বিত করো না।
وَ إِسَاءَتِي وَ دَوَامِ تَفْرِيطِي وَ جَهَالَتِي
আমার ঐসব অপরাধ, পাপাচার, মহা অন্যায় ও অজ্ঞাতবশত: কর্মসমূহ।
وَ كَثْرَةِ شَهَوَاتِي وَ غَفْلَتِي
অতিরিক্ত লালসা ও গাফিলতির কারণে।
وَ كُنِ اللَّهُمَّ بِعِزَّتِكَ لِي فِي كُلِّ الْأَحْوَالِ [فِي الْأَحْوَالِ كُلِّهَا] رَءُوفا
হে আল্লাহ! আমি তোমার মহত্ত্বের উসিলায় তোমার কাছে নিবেদন জানাই সর্বাবস্থায় আমার প্রতি করুণাময় হতে।
وَ عَلَيَّ فِي جَمِيعِ الْأُمُورِ عَطُوفا
এবং প্রতিটি বিষয়ে আমার প্রতি সদয় দৃষ্টি দিতে।
إِلَهِي وَ رَبِّي مَنْ لِي غَيْرُكَ
হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! তুমি ছাড়া কি আর কেউ আছে
أَسْأَلُهُ كَشْفَ ضُرِّي وَ النَّظَرَ فِي أَمْرِي
যার কাছে আমি বিপদ মুক্তির আবেদন করতে কিংবা আমার সমস্যা অনুধাবনের প্রার্থনা জানাতে পারি ?
إِلَهِي وَ مَوْلايَ أَجْرَيْتَ عَلَيَّ حُكْما
হে আমার উপাস্য! হে আমার অভিভাবক! তুমি আমার (জীবনে চলার) জন্য বিধান নির্ধারণ করেছো
اتَّبَعْتُ فِيهِ هَوَى نَفْسِي
কিন্তু তার পরিবর্তে আমি আমার হীন কামনার দাসত্ব করেছি
وَ لَمْ أَحْتَرِسْ فِيهِ مِنْ تَزْيِينِ عَدُوِّي
এবং আমি শত্রুর প্ররোচনার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকিনি।
فَغَرَّنِي بِمَا أَهْوَى وَ أَسْعَدَهُ عَلَى ذَلِكَ الْقَضَاءُ
সে আমাকে নিরর্থক আশার মায়াজালে বেঁধে নিয়েছে যা আমাকে টেনে নিয়েছে অধঃপাতে এবং নিয়তি তাকে সহায়তা দিয়েছে এ কর্মে ।
فَتَجَاوَزْتُ بِمَا جَرَى عَلَيَّ مِنْ ذَلِكَ بَعْضَ [مِنْ نَقْضِ‏] حُدُودِكَ
এইভাবে আমি তোমার দেয়া ঐবিধানসমূহের কিছু কিছু বিষয়ে সীমালংঘন করেছি ।
وَ خَالَفْتُ بَعْضَ أَوَامِرِكَ
এবং তোমার কিছু কিছু আদেশ অমান্য করেছি ;
فَلَكَ الْحَمْدُ [الْحُجَّةُ] عَلَيَّ فِي جَمِيعِ ذَلِكَ
অতএব ঐ সমস্ত বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে তোমার (যথার্থ) অভিযোগ রয়েছে
وَ لا حُجَّةَ لِي فِيمَا جَرَى عَلَيَّ فِيهِ قَضَاؤُكَ
এবং আমার প্রতি তোমার রায়ের বিরুদ্ধে কোন অজুহাত আমার নেই
وَ أَلْزَمَنِي حُكْمُكَ وَ بَلاؤُكَ
তাই আমি (যথার্থভাবেই) তোমার বিচারের যোগ্য হয়েছি এবং শাস্তির উপযুক্ততা অর্জন করেছি ।
وَ قَدْ أَتَيْتُكَ يَا إِلَهِي بَعْدَ تَقْصِيرِي
এখন আমি অপরাধে অপরাধী হওয়ার পর তোমার দরবারে এসেছি, হে আমার প্রভু!
وَ إِسْرَافِي عَلَى نَفْسِي
আমি আমার উপর জুলুম করেছি।
مُعْتَذِرا نَادِما مُنْكَسِرا مُسْتَقِيلا مُسْتَغْفِرا مُنِيبا
ক্ষমাপ্রার্থী ও অনুতপ্ত হয়ে ভগ্ন হৃদয়ে নত হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি ।
مُقِرّا مُذْعِنا مُعْتَرِفا
তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করছি নতশিরে অপরাধ স্বীকার করে
لا أَجِدُ مَفَرّا مِمَّا كَانَ مِنِّي وَ لا مَفْزَعا
কেননা আমার কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ হতে মুক্তির কোন উপায় আমি দেখছি না । না কোন আশ্রয়স্থল দেখছি
أَتَوَجَّهُ إِلَيْهِ فِي أَمْرِي غَيْرَ قَبُولِكَ عُذْرِي
যেখানে আশ্রয় নেবো। একমাত্র তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো
وَ إِدْخَالِكَ إِيَّايَ فِي سَعَةِ [سَعَةٍ مِنْ‏] رَحْمَتِكَ
এবং তোমার অনন্ত করুণার রাজ্যে প্রবেশের অনুমতি ব্যতিরেকে আমার কোন পথও নেই।
اللَّهُمَّ [إِلَهِي‏] فَاقْبَلْ عُذْرِي وَ ارْحَمْ شِدَّةَ ضُرِّي وَ فُكَّنِي مِنْ شَدِّ وَثَاقِي
হে আল্লাহ! আমার তওবা কবুল করো এবং আমার তীব্র যাতনার উপর দয়ার্দ্র হও এবং আমাকে আমার (পাপকাজের) ভারী শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করো।
يَا رَبِّ ارْحَمْ ضَعْفَ بَدَنِي وَ رِقَّةَ جِلْدِي وَ دِقَّةَ عَظْمِي
হে পালনকর্তা! আমার দুর্বল শরীরের উপর দয়ার্দ্র হও এবং আমার কোমল ত্বক ও ভঙ্গুর হাড়গুলোর উপর করুণা করো।
يَا مَنْ بَدَأَ خَلْقِي وَ ذِكْرِي وَ تَرْبِيَتِي وَ بِرِّي وَ تَغْذِيَتِي
যে তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আমাকে ব্যক্তিত্ব দিয়েছো এবং আমার সুষ্ঠ প্রতিপালন নিশ্চিত করেছো এবং আমাকে জীবিকা দিয়েছো
هَبْنِي لابْتِدَاءِ كَرَمِكَ وَ سَالِفِ بِرِّكَ بِي
দয়া করে আমার উপর তোমার সেই পরিমাণ রহমত ও বরকত বর্ষণ পুনরারম্ভ করো, যে পরিমাণ ছিলো আমার জীবনের সূচনালগ্নে ।
يَا إِلَهِي وَ سَيِّدِي وَ رَبِّي
হে আমার ইলাহ্‌! হে আমার মালিক! হে আমার প্রভু!
أَ تُرَاكَ مُعَذِّبِي بِنَارِكَ بَعْدَ تَوْحِيدِكَ
তুমি কি প্রজ্জ্বলিত অগ্নিতে আমাকে দগ্ধ হয়ে শাস্তি পেতে দেখবে যদিও আমি তোমার একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেছি?
وَ بَعْدَ مَا انْطَوَى عَلَيْهِ قَلْبِي مِنْ مَعْرِفَتِكَ
যদিও আমার অন্তর পরিপূর্ণ তোমার (পবিত্র) জ্ঞানে
وَ لَهِجَ بِهِ لِسَانِي مِنْ ذِكْرِكَ
এবং আমার জিহ্বা বারংবার তোমাকে যিকির করেছে
وَ اعْتَقَدَهُ ضَمِيرِي مِنْ حُبِّكَ
তোমার ভালবাসায় আমার অন্তর হয়েছে প্রেমার্ত ?
وَ بَعْدَ صِدْقِ اعْتِرَافِي
এবং যখন আমি তোমার কর্তৃত্বের কাছে একান্ত হৃদয়ে ভুল স্বীকার করেছি
وَ دُعَائِي خَاضِعا لِرُبُوبِيَّتِكَ
এবং বিনয়ের সাথে আকুল হৃদয়ে তোমাকে প্রতিপালক স্বীকার করেছি
هَيْهَاتَ أَنْتَ أَكْرَمُ مِنْ أَنْ تُضَيِّعَ مَنْ رَبَّيْتَهُ
না, যাকে তুমি নিজেই লালন-পালন করেছো তাকে ধ্বংস করা থেকে তুমি অনেক মহান
أَوْ تُبْعِدَ [تُبَعِّدَ] مَنْ أَدْنَيْتَهُ أَوْ تُشَرِّدَ مَنْ آوَيْتَهُ
কিংবা যাকে তুমি নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করেছো তাকে তোমার থেকে দুরে তাড়িয়ে দেয়া থেকে তুমি অনেক মহান
أَوْ تُسَلِّمَ إِلَى الْبَلاءِ مَنْ كَفَيْتَهُ وَ رَحِمْتَهُ
কিংবা যাকে তুমি আদর-যত্ম করেছো এবং যার প্রতি তুমি দয়ার্দ্র থেকেছো, তাকে যন্ত্রণার মাঝে ত্যাগ করে ফেলে রাখার মতো তুমি নও ।
وَ لَيْتَ شِعْرِي يَا سَيِّدِي وَ إِلَهِي وَ مَوْلايَ
হে আমার মালিক! আমার ইলাহ্‌ ! আমার প্রভু !
أَ تُسَلِّطُ النَّارَ عَلَى وُجُوهٍ خَرَّتْ لِعَظَمَتِكَ سَاجِدَةً
আমার জানতে ইচ্ছে করে তুমি কি ঐসব মুখকে অগ্নিতে প্রজ্জ্বলিত করবে যেসব মুখ তোমার মহত্ত্বের সম্মুখে সিজদাবনত হয়েছে
وَ عَلَى أَلْسُنٍ نَطَقَتْ بِتَوْحِيدِكَ صَادِقَةً
কিংবা ঐসব জিহ্বাকে যেগুলো একনিষ্ঠভাবে তোমার একত্ব ঘোষণা করেছে
وَ بِشُكْرِكَ مَادِحَةً وَ عَلَى قُلُوبٍ اعْتَرَفَتْ بِإِلَهِيَّتِكَ مُحَقِّقَةً
এবং সব সময় তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে অথবা ঐ সব হৃদয়কে দগ্ধ-বিদগ্ধ করবে যেগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে তোমার প্রভুত্বকে মেনে নিয়েছে
وَ عَلَى ضَمَائِرَ حَوَتْ مِنَ الْعِلْمِ بِكَ حَتَّى صَارَتْ خَاشِعَةً
কিংবা ঐ অন্তরসমূহ আগুনে ফেলবে, যেগুলো জ্ঞান ও পরিচিতির কারণে তোমার প্রতি অনুগত হয়েছে
وَ عَلَى جَوَارِحَ سَعَتْ إِلَى أَوْطَانِ تَعَبُّدِكَ طَائِعَةً
কিংবা ঐসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রজ্জ্বলিত করবে যেগুলো তোমার ইবাদতের স্থানগুলোয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আনুগত্যের জন্য যেতো
وَ أَشَارَتْ بِاسْتِغْفَارِكَ مُذْعِنَةً
এবং তোমার প্রতি আস্থা রেখে তোমার ক্ষমা ভিক্ষার কঠোর প্রয়াস চালিয়েছে ?
مَا هَكَذَا الظَّنُّ بِكَ
এ তোমার কাছ থেকে কিছুতেই আশা করা যায় না
وَ لا أُخْبِرْنَا بِفَضْلِكَ عَنْكَ يَا كَرِيمُ
কেননা তোমার থেকে এমন কোন বৈশিষ্ট্য আমরা দেখিনি হে দয়াবান ।
يَا رَبِّ وَ أَنْتَ تَعْلَمُ ضَعْفِي عَنْ قَلِيلٍ مِنْ بَلاءِ الدُّنْيَا وَ عُقُوبَاتِهَا
হে প্রতিপালক! তুমি তো জানো যে এ দুর্বলের জন্য এই দুনিয়ার সামান্য কষ্ট ও শাস্তিই কত অসহনীয়
وَ مَا يَجْرِي فِيهَا مِنَ الْمَكَارِهِ عَلَى أَهْلِهَا
আর সেখানে যা ঘটবে কি ভয়ানক অবস্থা হবে তার অধিবাসীদের উপর
عَلَى أَنَّ ذَلِكَ بَلاءٌ وَ مَكْرُوهٌ قَلِيلٌ مَكْثُهُ يَسِيرٌ بَقَاؤُهُ قَصِيرٌ مُدَّتُهُ
যদিও পৃথিবীর কষ্ট ও আযাব স্বল্পস্থায়ী সামান্য ও দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়
فَكَيْفَ احْتِمَالِي لِبَلاءِ الْآخِرَةِ وَ جَلِيلِ [حُلُولِ‏] وُقُوعِ الْمَكَارِهِ فِيهَا
তাহলে আমি কেমন করে পরকালের কষ্ট আর সেখানকার শাস্তি সইবো
وَ هُوَ بَلاءٌ تَطُولُ مُدَّتُهُ وَ يَدُومُ مَقَامُهُ
যে শাস্তির মেয়াদ দীর্ঘ, যেখানে অনন্তকাল অবস্থান করতে হবে।
وَ لا يُخَفَّفُ عَنْ أَهْلِهِ
যার অধিবাসীদের থেকে শাস্তি কমানো হবে না
لِأَنَّهُ لا يَكُونُ إِلا عَنْ غَضَبِكَ وَ انْتِقَامِكَ وَ سَخَطِكَ
কেননা এ শাস্তি একমাত্র তোমার ক্রোধ ও কঠোর ন্যায়বিচারের পরিণতি
وَ هَذَا مَا لا تَقُومُ لَهُ السَّمَاوَاتُ وَ الْأَرْضُ
যা আসমান ও জমিন সহ্য করতে অক্ষম?
يَا سَيِّدِي فَكَيْفَ لِي [بِي‏] وَ أَنَا عَبْدُكَ الضَّعِيفُ الذَّلِيلُ
হে প্রভু! তবে আমার কি হবে, যে আমি তোমার দুর্বল হীন বান্দা
الْحَقِيرُ الْمِسْكِينُ الْمُسْتَكِينُ يَا إِلَهِي وَ رَبِّي وَ سَيِّدِي وَ مَوْلايَ
ক্ষুদ্র, নগণ্য ও ম্রিয়মান দাসানুদাস? হে আমার উপাস্য! আমার মালিক! আমার প্রভু! আমার পালনকর্তা!
لِأَيِّ الْأُمُورِ إِلَيْكَ أَشْكُو
কোন্‌ বিষয়ে আমি তোমার কাছে অভিযোগ জানাবো
وَ لِمَا مِنْهَا أَضِجُّ وَ أَبْكِي
আর কোনটা নিয়ে আমি অশ্রু ঝরাবো, আর বিলাপ করবো
لِأَلِيمِ الْعَذَابِ وَ شِدَّتِهِ أَمْ لِطُولِ الْبَلاءِ وَ مُدَّتِهِ
শাস্তির যাতনা ও তার তীব্রতার জন্য নাকি শাস্তির মেয়াদের দীর্ঘতার জন্যে ?
فَلَئِنْ صَيَّرْتَنِي لِلْعُقُوبَاتِ مَعَ أَعْدَائِكَ
অতএব যদি তুমি আমাকে তোমার শত্রুদের সাথে শাস্তি দিতে নিয়ে যাও
وَ جَمَعْتَ بَيْنِي وَ بَيْنَ أَهْلِ بَلائِكَ
এবং তোমার আযাব ভোগকারী লোকদের সাথে আমাকেও একত্র করো
وَ فَرَّقْتَ بَيْنِي وَ بَيْنَ أَحِبَّائِكَ وَ أَوْلِيَائِكَ
আর তোমার প্রেমিক ও অলী-আওলীয়াদের কাছ থেকে আমাকে পৃথক করে নাও
فَهَبْنِي يَا إِلَهِي وَ سَيِّدِي وَ مَوْلايَ وَ رَبِّي
তাহলে হে আমার উপাস্য! হে আমার মালিক! হে আমার অভিভাবক! হে প্রতিপালক!
صَبَرْتُ عَلَى عَذَابِكَ فَكَيْفَ أَصْبِرُ عَلَى فِرَاقِكَ
আমি তোমার এ শাস্তি সয়ে নেবো, কিন্তু তোমার থেকে এ বিচ্ছিন্নতা আমি কীভাবে সহ্য করবো ?
وَ هَبْنِي [يَا إِلَهِي‏] صَبَرْتُ عَلَى حَرِّ نَارِكَ
কিংবা ধরা যাক আমি তোমার আগুনের প্রজ্জ্বলন সইতে পারলাম
فَكَيْفَ أَصْبِرُ عَنِ النَّظَرِ إِلَى كَرَامَتِكَ
কিন্তু কেমন করে আমি তোমার ক্ষমা ও দয়ার বঞ্চনা সয়ে নেবো?
أَمْ كَيْفَ أَسْكُنُ فِي النَّارِ وَ رَجَائِي عَفْوُك
কেমন করে আমি আগুনের মাঝে বসবাস করবো যখন তোমার ক্ষমার উপর ভরসা করে আমি আশায় বুক বেঁধেছি?
فَبِعِزَّتِكَ يَا سَيِّدِي وَ مَوْلايَ
হে আমার প্রভু! আমার অভিভাবক! তোমার মহামর্যাদার শপথ
أُقْسِمُ صَادِقا لَئِنْ تَرَكْتَنِي نَاطِقا
আমি বিশ্বস্ত অন্তরের শপথ করে বলছি, তুমি যদি দোজখের আগুনের মধ্যেও আমার বাক্‌শক্তি রক্ষা কর
لَأَضِجَّنَّ إِلَيْكَ بَيْنَ أَهْلِهَا ضَجِيجَ الْآمِلِينَ [الْآلِمِينَ‏
তাহলেও আমি সেখান থেকে একজন দৃঢ় আশাবাদীর মতো আশা নিয়েই তোমার কাছে কাতর আকুতি জানাতে থাকবো।
لَأَصْرُخَنَّ إِلَيْكَ صُرَاخَ الْمُسْتَصْرِخِينَ
আমি তোমার কাছে একজন সহায়হীনের মতোই সাহায্য প্রার্থনা করবো
وَ لَأَبْكِيَنَّ عَلَيْكَ بُكَاءَ الْفَاقِدِينَ
একজন নিঃস্ব ব্যক্তির মতোই আমি তোমার কাছে আকুল হয়ে কাঁদবো
وَ لَأُنَادِيَنَّكَ أَيْنَ كُنْتَ يَا وَلِيَّ الْمُؤْمِنِينَ
আর তোমাকে ডাক ছেড়ে বলবো, হে মু'মিনদের অভিভাবক তুমি কোথায় ?
يَا غَايَةَ آمَالِ الْعَارِفِينَ يَا غِيَاثَ الْمُسْتَغِيثِينَ
হে সাধকদের সাধনার চুড়ান্ত লক্ষ্য, হে সাহায্য প্রার্থীদের সাহায্যকারী
يَا حَبِيبَ قُلُوبِ الصَّادِقِينَ وَ يَا إِلَهَ الْعَالَمِينَ
হে সত্যপথিকদের প্রাণপ্রিয় প্রেমিক, হে জগতসমূহের প্রভু, কোথায় তুমি ?
أَ فَتُرَاكَ سُبْحَانَكَ يَا إِلَهِي
হে খোদা! তুমি সমস্তকিছু থেকে অতিশয় পবিত্র
وَ بِحَمْدِكَ تَسْمَعُ فِيهَا صَوْتَ عَبْدٍ مُسْلِمٍ سُجِنَ [يُسْجَنُ‏] فِيهَا بِمُخَالَفَتِهِ
আর সকল প্রশংসা একমাত্র তোমারই, তুমি কি একবারও ফিরে দেখবে না যে, একজন আত্মসমর্পণকারী দাস তার অবাধ্যতার কারণে দোযখের আগুনে বন্দী
وَ ذَاقَ طَعْمَ عَذَابِهَا بِمَعْصِيَتِهِ
এবং অন্যায় আচরণের কারণে এর শাস্তি ভোগ করছে
وَ حُبِسَ بَيْنَ أَطْبَاقِهَا بِجُرْمِهِ وَ جَرِيرَتِهِ
আর পাপ ও অপরাধের কারণে সে জাহান্নামের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে
وَ هُوَ يَضِجُّ إِلَيْكَ ضَجِيجَ مُؤَمِّلٍ لِرَحْمَتِكَ
তোমার দয়ার উপর দৃঢ় আস্থা নিয়ে তোমার প্রতি সুতীব্র আবেদন জানাচ্ছে।
وَ يُنَادِيكَ بِلِسَانِ أَهْلِ تَوْحِيدِكَ
তোমার তাওহীদে দৃঢ় বিশ্বাসী ব্যক্তির মতো তোমাকে ডাকছে
وَ يَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِرُبُوبِيَّتِكَ يَا مَوْلايَ
এবং তোমার প্রভুত্বের প্রতি ভরসা করে তোমার প্রতি চেয়ে আছে, হে আমার অধিকর্তা!
فَكَيْفَ يَبْقَى فِي الْعَذَابِ وَ هُوَ يَرْجُو مَا سَلَفَ مِنْ حِلْمِكَ
তোমার অতীত ক্ষমা, অনুকম্পা ও রহমতের উপর পূর্ণ ভরসা রাখার পরও কেমন করে সেই বান্দা কঠিন আযাবের মাঝে নিমজ্জিত থাকবে ?
أَمْ كَيْفَ تُؤْلِمُهُ النَّارُ وَ هُوَ يَأْمُلُ فَضْلَكَ وَ رَحْمَتَكَ
কিংবা কেমন করে দোযখের আগুন তাকে কষ্ট দিবে যখন সে তোমার মহত্ব ও দয়ার প্রতি বুক বেঁধে আছে?
أَمْ كَيْفَ يُحْرِقُهُ لَهِيبُهَا وَ أَنْتَ تَسْمَعُ صَوْتَهُ
কিংবা কেমন করে দোযখের আগুনের লেলিহান শিখায় সে প্রজ্বলিত হবে অথচ তুমি তার আর্তনাদ শুনতে পাবে?
وَ تَرَى مَكَانَهُ أَمْ كَيْفَ يَشْتَمِلُ عَلَيْهِ زَفِيرُهَا
এবং আগুনের মধ্যে তাকে দেখতে পাবে তাহলে কিভাবে আগুনের শিখা তাকে গ্রাস করে নিবে?
وَ أَنْتَ تَعْلَمُ ضَعْفَهُ أَمْ كَيْفَ يَتَقَلْقَلُ بَيْنَ أَطْبَاقِهَا
অথচ তুমি তো জানো সে কি ভীষণ দুর্বল তাহলে কিভাবে সে দোযখের স্তরগুলোর চাপে নিষ্পিষ্ট হতে থাকবে?
وَ أَنْتَ تَعْلَمُ صِدْقَهُ أَمْ كَيْفَ تَزْجُرُهُ زَبَانِيَتُهَا
তুমি তো তার নিষ্ঠার কথা জানো তাহলে কেমন করে দোযখের প্রহরীরা তাকে কষ্ট দেবে
وَ هُوَ يُنَادِيكَ يَا رَبَّهْ
অথচ সে কেবলই ডাকছে ‘ইয়া রব্ব'! ‘ইয়া রব্ব'! বলে ?
أَمْ كَيْفَ يَرْجُو فَضْلَكَ فِي عِتْقِهِ مِنْهَا فَتَتْرُكُهُ [فَتَتْرُكَهُ‏] فِيهَا
কেমন করে তুমি তাকে ফেলে রাখবে (দোযখের মাঝে) যখন তার দৃঢ় বিশ্বাস যে, তোমার অপার করুণা তাকে এখান থেকে মুক্ত করবে?
هَيْهَاتَ مَا ذَلِكَ الظَّنُّ بِكَ
হায়! এমনটা তোমার কাছে কখনো আশা করা যায় না ।
وَ لا الْمَعْرُوفُ مِنْ فَضْلِكَ
তোমার করুণার রূপও এমনটা নয়
وَ لا مُشْبِهٌ لِمَا عَامَلْتَ بِهِ الْمُوَحِّدِينَ مِنْ بِرِّكَ وَ إِحْسَانِكَ
কিংবা তোমার একত্বে বিশ্বাসীদের প্রতি তুমি যে করুণা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করো তার সাথেও এর কোন মিল নেই
فَبِالْيَقِينِ أَقْطَعُ لَوْ لا مَا حَكَمْتَ بِهِ مِنْ تَعْذِيبِ جَاحِدِيكَ
অতএব আমি নিশ্চিত হয়ে ঘোষণা করছি যে, যদি তুমি অবিশ্বাসীদের জন্য শাস্তি নির্ধারণ না করতে
وَ قَضَيْتَ بِهِ مِنْ إِخْلادِ مُعَانِدِيكَ
এবং তোমার শত্রুদের আবাস হিসাবে দোযখকে নির্ধারিত না করতে
لَجَعَلْتَ النَّارَ كُلَّهَا بَرْدا وَ سَلاما
তাহলে তুমি দোযখকে শীতল ও প্রশান্তিময় করে তুলতে
وَ مَا كَانَ [كَانَتْ‏] لِأَحَدٍ فِيهَا مَقَرّا وَ لا مُقَاما [مَقَاما]
এবং কোন মানুষকেই দোযখে থাকতে ও বসবাস করতে হতো না ;
لَكِنَّكَ تَقَدَّسَتْ أَسْمَاؤُكَ
অথচ পবিত্র তোমার নামসমূহ
أَقْسَمْتَ أَنْ تَمْلَأَهَا مِنَ الْكَافِرِينَ
তুমি শপথ করেছো যে অবিশ্বাসীদের দিয়ে দোযখ পূর্ণ করবে
مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ أَجْمَعِينَ
জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা অবিশ্বাসী
وَ أَنْ تُخَلِّدَ فِيهَا الْمُعَانِدِينَ
এবং একে তোমার বিরুদ্ধবাদীদের চিরস্থায়ী নিবাসে পরিণত করবে
وَ أَنْتَ جَلَّ ثَنَاؤُكَ قُلْتَ مُبْتَدِئا وَ تَطَوَّلْتَ بِالْإِنْعَامِ مُتَكَرِّما
আর মহিমান্বিত তোমার গুণাবলী তুমি নিজেই সূচনালগ্নে তোমার অপার অনুগ্রহে তুমি ঘোষণা করেছো, সমগ্র সৃষ্টিকে তুমি নেয়ামত ও করুণা দিয়েছো।
أَ فَمَنْ كَانَ مُؤْمِنا كَمَنْ كَانَ فَاسِقا لا يَسْتَوُونَ
একজন মুমিন আর একজন দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ কি সমান? তারা সমান হতে পারে না
إِلَهِي وَ سَيِّدِي فَأَسْأَلُكَ بِالْقُدْرَةِ الَّتِي قَدَّرْتَهَا
হে আমার প্রভু ও অভিভাবক! তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করছি তোমার ঐ শক্তির নামে যা সমগ্রবিশ্বের ভাগ্য নির্ধারণ করে
وَ بِالْقَضِيَّةِ الَّتِي حَتَمْتَهَا وَ حَكَمْتَهَا
এবং তোমার চূড়ান্ত ও কার্যকরী শক্তির নামে
وَ غَلَبْتَ مَنْ عَلَيْهِ أَجْرَيْتَهَا
এবং যা দ্বারা তুমি সবকিছুর উপর সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর কর
أَنْ تَهَبَ لِي فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَ فِي هَذِهِ السَّاعَةِ
দয়া করে আমাকে এই রাতের এই প্রহরে ক্ষমা করে দাও
كُلَّ جُرْمٍ أَجْرَمْتُهُ وَ كُلَّ ذَنْبٍ أَذْنَبْتُهُ
আমি যেসব অপরাধে অপরাধী এবং যেসব পাপে পাপী হয়েছি
وَ كُلَّ قَبِيحٍ أَسْرَرْتُهُ وَ كُلَّ جَهْلٍ عَمِلْتُهُ
সেই সমস্ত ঘৃণ্য কাজের জন্য যা আমি গোপন রেখেছি, সেই সমস্ত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অপকর্মের জন্য যা আমি করেছি
كَتَمْتُهُ أَوْ أَعْلَنْتُهُ أَخْفَيْتُهُ أَوْ أَظْهَرْتُهُ
অন্ধকারে কিংবা দিবালোকে এবং যা স্বীকার কিংবা অস্বীকার করেছি
وَ كُلَّ سَيِّئَةٍ أَمَرْتَ بِإِثْبَاتِهَا الْكِرَامَ الْكَاتِبِينَ
এবং সেই সকল মন্দ কাজের জন্য যা লিপিবদ্ধ হয়েছে সম্মানিত লিপিকারদের দ্বারা যাদের তুমি আদেশ করেছো
الَّذِينَ وَكَّلْتَهُمْ بِحِفْظِ مَا يَكُونُ مِنِّي
যাদের তুমি দায়িত্ব দিয়েছো আমার সমস্ত ক্রিয়া-কর্ম লিপিবদ্ধ করতে
وَ جَعَلْتَهُمْ شُهُودا عَلَيَّ مَعَ جَوَارِحِي
এবং তাদেরকে তুমি নিয়োগ করেছো আমার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো আমার কার্যকলাপের সাক্ষী হতে
وَ كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيَّ مِنْ وَرَائِهِمْ
এবং ঐসকল ফেরেশতাদের উর্ধ্বে তুমি নিজেই আমার কার্যকলাপের মহাপর্যবেক্ষক
وَ الشَّاهِدَ لِمَا خَفِيَ عَنْهُمْ وَ بِرَحْمَتِكَ أَخْفَيْتَهُ
এবং তোমার অশেষ করুণায় তুমি যেসব মন্দ কর্ম ওদের কাছে গোপন রাখো তার সবই তো তোমার কাছে পরিষ্কার
وَ بِفَضْلِكَ سَتَرْتَهُ وَ أَنْ تُوَفِّرَ حَظِّي
এবং তোমার মহত্বের দ্বারা পরিবৃত করেছো [আমার অপরাধগুলো] এবং আমাকে একটি বিরাট অংশ দান করো।
مِنْ كُلِّ خَيْرٍ أَنْزَلْتَهُ [تُنْزِلُهُ‏]
তোমার দেওয়া প্রতিটি কল্যাণ হতে
أَوْ إِحْسَانٍ فَضَّلْتَهُ [تُفَضِّلُهُ‏]
এবং প্রতিটি সুমহান অনুগ্রহ
أَوْ بِرٍّ نَشَرْتَهُ [تَنْشُرُهُ‏] أَوْ رِزْقٍ بَسَطْتَهُ [تَبْسُطُهُ‏]
এবং যেসব কল্যাণ তুমি প্রকাশ ঘটিয়েছো ও প্রতিটি জীবিকা যা তুমি বৃদ্ধি করেছো
] أَوْ ذَنْبٍ تَغْفِرُهُ أَوْ خَطَإٍ تَسْتُرُهُ
এবং যেসব অপরাধ তুমি ক্ষমা করবে ও ত্রুটিসমূহ তুমি গোপন করে রাখবে।
‏ يَا رَبِّ يَا رَبِّ يَا رَبِّ
"ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"!
يَا إِلَهِي وَ سَيِّدِي وَ مَوْلايَ وَ مَالِكَ رِقِّي
হে উপাস্য প্রভু! হে মনিব! হে মাওলা! হে আমার মুক্তির মালিক
يَا مَنْ بِيَدِهِ نَاصِيَتِي
হে যিনি আমার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক
يَا عَلِيما بِضُرِّي [بِفَقْرِي‏] وَ مَسْكَنَتِي يَا خَبِيرا بِفَقْرِي وَ فَاقَتِي
হে যিনি আমার যাতনা ও নিঃস্বতা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত, যিনি আমার দুঃসহায়তা ও অনাহার সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন
يَا رَبِّ يَا رَبِّ يَا رَبِّ
"ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"!
أَسْأَلُكَ بِحَقِّكَ وَ قُدْسِكَ وَ أَعْظَمِ صِفَاتِكَ وَ أَسْمَائِكَ
তোমার মহামর্যাদা ও বিশুদ্ধ সত্তা এবং পরিপূর্ণ নিখুঁত গুণাবলী ও নাম সমূহের উসিলায় আমি তোমার কাছে মিনতি করছি ।
أَنْ تَجْعَلَ أَوْقَاتِي مِنَ [فِي‏] اللَّيْلِ وَ النَّهَارِ بِذِكْرِكَ مَعْمُورَةً
আমার সমস্ত প্রহর, দিবা ও রাত্রি যেন তোমাকে স্মরণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়
وَ بِخِدْمَتِكَ مَوْصُولَةً وَ أَعْمَالِي عِنْدَكَ مَقْبُولَةً
এবং একাধারে যেন তোমার উপাসনায় থাকতে পারি এবং আমার সকল কর্মকে তোমার গ্রহণযোগ্য করে তোলো
حَتَّى تَكُونَ أَعْمَالِي وَ أَوْرَادِي [إِرَادَتِي‏] كُلُّهَا وِرْدا وَاحِدا
যেন আমার আচরণ ও কথোপকথন সবই একই লক্ষ্যে বিশুদ্ধভাবে তোমার জন্যই সম্পাদিত হয়
وَ حَالِي فِي خِدْمَتِكَ سَرْمَدا
এবং আমার সমগ্রজীবন যেন ব্যয়িত হয় তোমার আনুগত্য চর্চায়।
يَا سَيِّدِي يَا مَنْ عَلَيْهِ مُعَوَّلِي يَا مَنْ إِلَيْهِ شَكَوْتُ أَحْوَالِي
হে আমার মালিক! যার উপর আমার সমস্ত ভরসা, যার কাছে আমি আমার সমস্ত দুর্দশার কথা খুলে বলি
يَا رَبِّ يَا رَبِّ يَا رَبِّ
"ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"! "ইয়া রব্ব"!
قَوِّ عَلَى خِدْمَتِكَ جَوَارِحِي وَ اشْدُدْ عَلَى الْعَزِيمَةِ جَوَانِحِي
তোমার দাসত্বের জন্য আমার দেহকে শক্তিশালী করে তোলো এবং লক্ষ্যের প্রতি আমার মনোবলকে দৃঢ় রাখো ;
وَ هَبْ لِيَ الْجِدَّ فِي خَشْيَتِكَ
আর আমার মধ্যে প্রদান কর খোদাভীতি
وَ الدَّوَامَ فِي الاتِّصَالِ بِخِدْمَتِكَ
এবং সর্বক্ষণ তোমার খেদমতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা
حَتَّى أَسْرَحَ إِلَيْكَ فِي مَيَادِينِ السَّابِقِينَ
যেন আমি তোমাকে আনুগত্যের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে তোমার পানে অগ্রসর হতে পারি
وَ أُسْرِعَ إِلَيْكَ فِي الْبَارِزِينَ [الْمُبَادِرِينَ‏]
এবং তোমার দিকে ধাবমান সকল দ্রুতগামীর চেয়ে দ্রুততর তোমার কাছে পৌঁছাতে পারি
وَ أَشْتَاقَ إِلَى قُرْبِكَ فِي الْمُشْتَاقِينَ
আর যারা একাগ্রনিষ্ঠায় তোমার নৈকট্য লাভ করেছে তাদের মতোই যেন আমি নিজেকে তোমার নৈকট্য লাভের সাধনায় নিয়োজিত করতে পারি
‏ وَ أَدْنُوَ مِنْكَ دُنُوَّ الْمُخْلِصِينَ
এবং বিশুদ্ধ ব্যক্তিদের মতোই যেন আমি তোমার নৈকট্যপ্রাপ্ত হতে পারি
وَ أَخَافَكَ مَخَافَةَ الْمُوقِنِينَ
এবং বিশ্বস্ত মনের অধিকারীগণ যেভাবে তোমাকে ভয় করে আমিও যেন সেভাবে ভয়ে চলতে পারি
وَ أَجْتَمِعَ فِي جِوَارِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
এবং আমি যেন মুমিনদের সাথে তোমার অপার করুণার ছায়াতলে থাকতে পারি।
اللَّهُمَّ وَ مَنْ أَرَادَنِي بِسُوءٍ فَأَرِدْهُ
হে আল্লাহ্‌ ! যে আমার অনিষ্ট চায় তুমি তারই অনিষ্ট কর !
وَ مَنْ كَادَنِي فَكِدْهُ
আর যে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকেই ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত কর !
وَ اجْعَلْنِي مِنْ أَحْسَنِ عَبِيدِكَ نَصِيبا عِنْدَكَ
এবং আমাকে তোমার শ্রেষ্ঠ দাসদের সঙ্গে স্থান দান কর যা তোমার অনুগ্রহ ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়
وَ أَقْرَبِهِمْ مَنْزِلَةً مِنْكَ وَ أَخَصِّهِمْ زُلْفَةً لَدَيْكَ
এবং আমাকে দান কর তোমার সর্বনিকটতম দাসদের ও একান্ত বিশেষ বান্দাদের অবস্থান
فَإِنَّهُ لا يُنَالُ ذَلِكَ إِلا بِفَضْلِكَ
নিশ্চয় তোমার অনুগ্রহ ও করুণা ব্যতীত এ স্থান লাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়
وَ جُدْ لِي بِجُودِكَ وَ اعْطِفْ عَلَيَّ بِمَجْدِكَ
তোমার অনুগ্রহ থেকে আমাকে [ক্ষমা] দান কর এবং তোমার নিঃশর্ত করুণা থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না
وَ احْفَظْنِي بِرَحْمَتِكَ وَ اجْعَلْ لِسَانِي بِذِكْرِكَ لَهِجا
এবং তোমার অপার করুণায় আমাকে [দুনিয়া ও আখেরাতে] রক্ষা কর এবং আমার জিহ্বাকে সর্বক্ষণ তোমার গুণকীর্তনে পরিচালিত করো
وَ قَلْبِي بِحُبِّكَ مُتَيَّما
এবং আমার অন্তর যেন তোমার প্রেমে কাতর ও অস্থির হয়ে ওঠে
وَ مُنَّ عَلَيَّ بِحُسْنِ إِجَابَتِكَ
করুণা কর আমার প্রতি একটি দয়ার্দ্র প্রত্যুত্তর দিয়ে
وَ أَقِلْنِي عَثْرَتِي وَ اغْفِرْ زَلَّتِي
আমার পদস্খলনগুলো মুছে দাও এবং আমার ত্রুটিগুলো মার্জনা করে দাও!
فَإِنَّكَ قَضَيْتَ عَلَى عِبَادِكَ بِعِبَادَتِكَ
কেননা তুমিই তো তোমার বান্দাদের জন্য দয়া করে নির্ধারণ করেছো উপাসনাকে
وَ أَمَرْتَهُمْ بِدُعَائِكَ وَ ضَمِنْتَ لَهُمُ الْإِجَابَةَ
আদেশ করেছো প্রার্থনা জানাতে এবং নিশ্চয়তা দিয়েছো এসবের জবাব দানের
فَإِلَيْكَ يَا رَبِّ نَصَبْتُ وَجْهِي
তাই তোমার পানেই হে প্রতিপালক আমি মুখ ফিরিয়েছি
وَ إِلَيْكَ يَا رَبِّ مَدَدْتُ يَدِي
এবং তোমার দিকে ভিক্ষার হাত উঠিয়েছি, হে প্রতিপালক!
فَبِعِزَّتِكَ اسْتَجِبْ لِي دُعَائِي
অতএব তোমার মহামর্যাদার উসিলায় আমার দোয়া কবুল কর
وَ بَلِّغْنِي مُنَايَ وَ لا تَقْطَعْ مِنْ فَضْلِكَ رَجَائِي
এবং আমার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ কর। কিছুতেই আমাকে হতাশ করো না
وَ اكْفِنِي شَرَّ الْجِنِّ وَ الْإِنْسِ مِنْ أَعْدَائِي
এবং তুমি আমায় রক্ষা কর জ্বীন ও মানুষের মধ্যে যারা আমার শত্রু তাদের অনিষ্ট হতে
يَا سَرِيعَ الرِّضَا اغْفِرْ لِمَنْ لا يَمْلِكُ إِلا الدُّعَاءَ
হে [প্রভু ] যে তুমি দ্রুত সন্তুষ্ট হও! তাকে তুমি ক্ষমা কর দোয়া ছাড়া যার অন্য কোন সম্বল নেই
فَإِنَّكَ فَعَّالٌ لِمَا تَشَاءُ يَا مَنِ اسْمُهُ دَوَاءٌ
কেননা তোমার যা ইচ্ছা তুমি তো তাই করতে পার। হে [প্রভু ] যার নামে দূর্গতির মুক্তি
وَ ذِكْرُهُ شِفَاءٌ وَ طَاعَتُهُ غِنًى
যার স্মরণেই সমস্ত কষ্টের প্রতিকার এবং যার আনুগত্যেই সম্পদ
ارْحَمْ مَنْ رَأْسُ مَالِهِ الرَّجَاءُ وَ سِلاحُهُ الْبُكَاءُ
রহম করো তার উপর যার মূলধন শুধু আশা আর অবলম্বন শুধুই কান্না
يَا سَابِغَ النِّعَمِ يَا دَافِعَ النِّقَمِ
হে সমস্ত নেয়ামতের পূর্ণতাদানকারী ও সমস্ত দুর্যোগের ত্রাণকর্তা
يَا نُورَ الْمُسْتَوْحِشِينَ فِي الظُّلَمِ
হে অন্ধকারে পথভ্রান্ত একাকীদের দিশা আলোক!
الظُّلَمِ يَا عَالِما لا يُعَلَّمُ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ
হে সর্বজ্ঞ! যাকে কখনো শিখানো হয়নি! মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরদের উপর শান্তি বর্ষণ করো
وَ افْعَلْ بِي مَا أَنْتَ أَهْلُهُ
এবং আমার প্রতি তা-ই করো যা করা তোমাকে মানায়
وَ صَلَّى اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ وَ الْأَئِمَّةِ الْمَيَامِينِ مِنْ آلِهِ [أَهْلِهِ‏] وَ سَلَّمَ تَسْلِيما [كَثِيرا]
শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের উপর এবং তাঁর বংশধরদের মধ্য হতে পবিত্র ইমামদের উপর এবং তাঁদের দান করো অপার ও অসীম প্রশান্তি ।

পৃষ্ঠাসমূহ