সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১২

রেশম পোকা বানাবে মাকড়শার জালের সূতা


৩০ সেপ্টেম্বর (রেডিও তেহরান): বিজ্ঞানীরা জেনেটিক গঠন পরিবর্তন করে রেশমপোকা দিয়ে মাকড়শার জাল তৈরির সূতা তৈরি করতে পেরেছেন। এ ভাবে রেশমপোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতার মত যে সুতা তৈরি হয়েছে তার গুণাগুণ অবিকল প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাকড়শার সূতার মতই হয়েছে। চিকিৎসা ও বস্ত্রখাতে এ ধরণের সূতার ব্যাপক ব্যবহার সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে বিজ্ঞানীরা কেবল গবেষণাগারের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাকড়শার জালের মতো সূতা অতি সামান্য পরিমাণে তৈরি করতে পারতেন। সেগুলো গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হলেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব ছিলো না। গতকাল মার্কিন বিজ্ঞানীরা এ খাতে সাফল্যের খবর দিয়েছেন।
রেশম পোকা দিয়ে মাকড়শার জালের সূতা তৈরির গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন, নটরড্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার, উয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্রেইগ বায়োক্রাফট ল্যাবরেটরিজের বায়োকেমিষ্ট র্যা ন্ডি লুইস। চিকিৎসা ও চিকিৎসা বহির্ভূত খাতে উন্নত মানের রেশম সূতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ গবেষণা উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ম্যালকম ফ্রেসার। তিনি আরো বলেছেন, বস্তুবিজ্ঞান, অনেক দিন ধরেই মাকড়শার জালের সূতার গুণযুক্ত রেশম সূতা তৈরির চেষ্টা করে আসছে। এটি বিজ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো। এমন কাজ কেনো বিজ্ঞানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে মাকড়শার জালের সূতার গুণাগুণের দিকে তাকালেই তা বুঝা যাবে।
এ ধরণের সূতার অসাধারণ কিছু গুণ আছে। মাকড়শা জাল তৈরির জন্য যে সূতা তৈরি করে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি রেশম সূতার প্রসারণ ক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা তার চেয়ে অনেক বেশি। যে সব বিজ্ঞানী এ গবেষণা প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন, তারা বলেছেন, জিনের পরিবর্তন করে রেশম পোকার মাধ্যমে মাকড়শার জালের সূতা পাওয়া গেছে তার মধ্যে প্রাকৃতিক সব গুণই রয়েছে।
নতুন এ সূতা ব্যবহারের কথা বলতে যেয়ে তারা জানান, নতুন এই সূতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্ষত স্থানে সেলাইয়ের কাজে চমৎকার উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিংবা ক্ষতস্থান মুড়ে দেয়ার জন্য উন্নতমানের ব্যান্ডেজ এ সব সূতা দিয়ে তৈরি করা যাবে। ট্যান্ডন বা লিগামেন্ট জোড়া দেয়ার কাজেও এ ধরণের সূতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ ছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রের বাইরেও এ ধরণের সূতা ব্যবহারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ জাতীয় সূতা দিয়ে বুলেটপ্রুফ পোশাক তৈরি করা যাবে। যা হবে ওজনে হালকা কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত এ জাতীয় পোশাকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। এ ছাড়া এ সব সূতা দিয়ে মজবুত ও হালকা নানাধরণের কাঠামো বানানো যাবে। বানানো যাবে ক্রীড়াবিদদের জন্য নতুন জাতের পোশাক। এ ছাড়া দুর্ঘটনার হাত থেকে গাড়ির চালককে রক্ষার জন্য যে এয়ারব্যাগ তৈরি হয় তাও বানানো যাবে এ সূতা দিয়ে। নতুন জাতের এসব এয়ারব্যাগ প্রচলিত পণ্যের চেয়ে গুণে মানে অনেক ভাল হবে। এ প্রকল্পের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীরা কেবল যে তাদের তৈরি নতুন সূতার রকমারি ব্যবহারের দিকই তুলে ধরেছেন তা নয়। বরং তারা আরো জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ভাবে মাকড়শা জালের জন্য যে সূতা তৈরি করে, জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সে জাতীয় সূতা তৈরি করার সময় তার গুণ ও মানের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। নতুন এ সূতায় রেশম ও মাকড়শার সূতার গুণের সমন্বয় ঘটেছে। মাকড়শা জালের যে সূতা তৈরি করে তার চেয়ে মজবুত হয়েছে নতুন এ সূতা, এ ছাড়া স্থিতিস্থাপকতাও বেড়েছে বলে তারা জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ