শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

“চীফ স্কাউট অভ দি ওয়াল্ড”


“চীফ স্কাউট অভ দি ওয়াল্ড”
লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের জন্ম ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের ২২ ফেব্র“য়ারী লন্ডনের স্ট্যানহোক স্ট্রীটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে । ব্যাডেন পাওয়েলের প্রকৃত নাম ছিল রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ ব্যাডেন পাওয়েল সংেেপ তাকে বি.পি বলা হত। বাল্যকালে পড়াশুনায় খুব একটা ভাল ছিলেন না, কিন্তু নদীতে মাছ ধরা, ছবি আঁকা, নৌকা চালানো, ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা এবং অভিনয়ের প্রতি তার ছিল প্রবল আগ্রহ। শিা জীবন শেষে তিনি যোগ দেন সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে। প্রথমেই তার পোস্টিং হয় ভারতে ১৮৭৬ সালে। সেনাবাহিনীতে অসীম সাহসিকতা এবং তীè বুদ্ধির জন্য তার পদোন্নতি হয় । দণি আফ্রিকার এক উপনিবেশ রা নিয়ে ব্রিটিশ শক্তি বিপাকে পড়ে গেল । ডাক পড়ল ব্যাডেন পাওয়েে লর । দীর্ঘ ২১৭ দিন যুদ্ধ করে দুর্জয় উপজাতীয় জুলুদের হাত থেকে উদ্ধার করেন শফেকিং শহর। এ যুদ্ধে তিনি চমৎকার এক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। এলাকার ছোট ছেলে-মেয়েদের গুপ্তচর হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলেন। 
তাদের আনিত খবরের উপর ভিত্তি করেই আক্রমণ চালিয়ে ধ্বংস করতেন জুলুদের ঘাঁটি । এখান থেকেই তিনি একটি বালক সেনাদল গঠনের উৎসাহ পান। ১৯০১ সালে শফেকিং যুদ্ধ শেষে ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। যুদ্ধে থাকাকালে বি.পি রচিত ‘এইডস টু স্কাউটিং’ বইয়ে দেখিয়েছিলেন চরবৃত্তি অবলম্বন করে কিভাবে কাজ হাসিল করে নিরাপদে ফিরে আসা যায়। স্কাউট শব্দের অর্থ চর, গুপ্তচর। ১৯০৭ সালে তিনি প্রথম স্কাউট ক্যাম্প স্থাপন করেন ব্রাউন সি দ্বীপে। ১৯০৮ সালে স্কাউটদের জন্য সচনা করেন ‘স্কাউটিং ফর বয়েজ’ বইটি এবং ওই বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে বয় স্কাউটের প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যাডেন পাওয়েলের ছোট বোন অ্যাপনেস ব্যাডেন পাওয়েল বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ১৯১০ সালে বয় স্কাউটের অনুরুপ মেয়েদের জন্য একটি সংগঠন গার্লস গাইড মুভমেন্ট গড়ে তোলেন। ইতিমধ্যে ব্যাডেন পাওয়েল ব্রিটিশ রাজকীয় বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হয়েছেন। অতঃপর তিনি রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডেরপরামর্শক্রমে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি স্কউট আন্দোলনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯১৬ সালে ১২ বছর পর্যন্ত বয়সের ছেলেমেয়েদের নিে য় স্কাউটের নতুন শাখা ‘কাব স্কউট’ তৈরি করলেন । ‘কাব’ শব্দের অর্থ সিংহ শাবক। ব্যাডেন পাওয়েল কাবদের জন্য ‘উলফ কাবস হ্যান্ড বুক’ নামে একটি মূল্যবান বই রচনা করেন। এরপর তরুণদের জন্য গঠন করলেন ‘রোভার স্কাউট’ এবং তরুণীদের জন্য ‘রেঞ্জারিং’। মূলত কাব, স্কউট, রোভার, রেঞ্জার, গাইড একউ সংগঠন- শুধু ভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য ভিন্ন নাম। 
১৯২০ সালে অলিম্পিয়াতে সারা বিশ্বের স্কাউট ও গাউডদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাবেশ বা জাম্বুরী অনুষ্ঠিত হয়। 
এই জাম্বুরীতেই ব্যাডেন পাওয়েলকে চীফ স্কাউট অভ দি ওয়ার্ল্ড- এর সম্মান দেওয়া হয়। ১৯২৯ সালে ইংল্যান্ডের অ্যারো পার্কে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাম্বুরীতে ব্যাডেন পাওয়েলকে দেয়া হয় লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অভ দি গিলওয়েল উপাধি। সেই থেকে তার নাম হয় রবার্ট স্টিফেনসন স্মিথ লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল অভ দি গিলওয়েল। 
অ্যাডভ্যাঞ্চার প্রিয় ব্যাডেন পাওয়েল তার শেষ জীবন কেনিয়ায় কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন ১৯৩৮ সালের দিকে। সঙ্গী হলেন ব্যাডেন পাওয়েলের স্ত্রী লেডি অলিভ ব্যাডেন পাওয়েল। কেনিয়াতেই ১৯৪১ সালের ৮ জানুয়ারি বিশ্বের শান্তির দূত লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল পরলোক গমন করেন। তারই প্রতিষ্ঠিত স্কাউট আন্দোলন আজ সারা বিশ্বে এত ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, প্রতিটি দেশে যার গঠিত হয়েছে শাখা। যার কল্যাণে-আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের কোটি কোটি শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ