শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

কিংবদন্তীর রবিন হুড


কিংবদন্তীর রবিন হুড
রুপকথার গল্পের এক নায়ক। তার নাম রবিন হুড ( Robin Hood )। গল্প ও কবিতার এক কিংবদন্তী নায়ক। এক মস্ত বড় ডাকাত। কিন্তু ডাকাতের সাথে আছে এর মৌলিক পার্থক্য। ডাকাতদের সাধারণ মানুষ ঘৃণা করে, কিন্তু রবিন হুডকে সাধারণ মানুষ ঘৃণা করত না। 
তিনি ডাকাতি করতেন বড়লোকদের ঘরে, যার প্রচুর আছে তাদের কাছ থেকে কেড়ে আনতেন ধন-সম্পদ। কিন্তু তা নিজে ভোগ করতেন না। বিলিয়ে দিতেন গরিবদের মাঝে। দেশের গরিব এবং অসহায় মানুষের কাছে রবিন হুড ছিলেন দেবতাদের মত। 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জুলুম আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর এক মূর্ত প্রতীক ছিলেন রবিন হুড। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই রবিন হুডকে নিয়ে রচিত হয়েছে হাজারও গাথা ( Ballads ) এবং গল্প। আজও এই রবিন হুডকে নিয়ে লেখা হচ্ছে গল্প, উপন্যাস। তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিয়াল। সেগুলো প্রাচীনকালে যেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, এখনও তেমনি জনপ্রিয় হচ্ছে। 
কিন্তু এই যে কিংবদন্তী মহা নায়ক রবিন হুড, আসলে এই রবিন হুড বলতে সত্যি কেউ ছিলেন কি না কেউ জানে না। এটি কি কাল্পনিক চরিত্র? আধুনিক টারজান, কিংবা প্রাচীন হারকিউলিস, মহাবীর রুস্তমের মত নিছক কোন সাহিত্যের নায়ক?
কিন্তু ঐতিহাসিকরা বলেন রবিন হুড একেবারে কাল্পনিক নয়। রবিন হুড বলে সত্যি এমন বীরযোদ্ধা অজ্ঞাত একজন কেউ ছিলেন। তবে তার সত্যিকারের কাহিনী হয়তো লেখা হয়নি সব। তাকে নিয়ে কল্পনার জাল বুনে রচিত হয়েছে হাজারও রুপকথার গল্প-কাহিনী। সেই গল্পগুলো হয়তো সত্যি নয়, ইতিহাস নয়, কিন্তু ওই নামে অনেক দরদী পুরুষের অস্তিত্ব ছিল।
ঐতিহাসিকেরা কেউ কেউ বলেন রবিন হুড নামে একটি দল ছিল। তাদের আবির্ভাবকাল সম্ভবত দ্বাদশ শতাব্দী। ১৫২১ সালে লিখিত একটি ল্যাটিন ইতিহাস স¤প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই ইতিহাসে বর্ণনা আছে রবিন হুড নামে একজন দরদী দস্যুর। তার দুর্ধর্ষ অভিযান কাহিনীরও অনেক গল্প আছে এতে। 
এই ল্যাটিন ইতিহাসেই লেখা হয়েছে যে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম রিচার্ডের ( Richard-L ) সময় এদেশে দু’জন বিখ্যাত দস্যু ছিল। এরা ছিলেন রবিন হুড এবং তার সহকারী লিটল জন ( Little John)। এদের দস্যুবৃত্তির মধ্যে বৈশিষ্ট্য ছিল, এরা শুধু ধনীদের গৃহে ডাকাতি করতেন। এবং তাদের প্রচুর ধন সম্পদের অংশ বিশেষ কেড়ে নিয়ে এসে বিতরণ করে দিতেন দরিদ্র শ্রেণীর লোকদের মাঝে। 
এরা কখনও মানুষ হত্যা করতেন না। তবে কেউ যদি তাদের বাধাদান করত বা আক্রমণ করত, তখন তারা আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতেন। রবিন হুড ছিলেন অসম্ভব রকমের দ তীরন্দাজ। তার ধনুকের তীর বন্দুকের গুলির চেয়েও ল্যভেদী ছিল। শোনা যায় তিনি চোখ বেঁধেও ল্যভেদ করতে পারতেন তীর দিয়ে। তার পৃষ্ঠদেশে ঝোলানো থলেতে সর্বণ ১০০টি করে তীè তীর থাকত। তার গায়ে ছিল অসম্ভব রকমের শক্তি। যে কোন রকমের যুদ্ধকৌশলে তিনি ছিলেন পারদর্শী।
ইংল্যান্ডের সমস্ত সাধারণ মানুষ ছিল তার গুণমুগ্ধ। তার নামে লোকেরা ছড়া গান গেয়ে বেড়াত। তিনি কখনও মেয়েদের গায়ে আঘাত করতেন না। সমস্ত যুবকদের তিনি ছিলেন আশা-আকাক্সা ও শক্তির প্রতীক। সকলের স্বপ্নের পুরুষ। কেউ কেউ বলেন তিনি জাতিতে ছিলেন স্যাকসন। ভাইকিং জলদস্যুরা যখন বারবার ইংল্যান্ড আক্রমণ ও লুটপাট করছিল তিনিই তখন তার সাঙ্গীদের নিয়ে দাড়িয়েছিলেন দস্যুদের বিরুদ্ধে।
তবে কিংবদন্তীর নায়ক রবিন হুডের সত্যিকার জীবন কাহিনী জানবার কোন উপায় নেই। কারণ তিনি কখনও মানুষের সাথে মিশতেন না। থাকতেন অধিকাংশ সময়েই গভীর অরণ্যে। তার সম্পর্কে যে সব কাহিনী প্রচলিত আছে তার সবই কিংবদন্তী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ