শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

বিজ্ঞানের জনক ‘থ্যালিস’

বিজ্ঞানের জনক ‘থ্যালিস’
আধুনিক জীবন বিজ্ঞান দ্বারা পরিচালিত। বিজ্ঞানের সুফল আমরা খুব সহজেই পেয়ে যাই আধুনিক জীবনে। বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে করেছে সহজ থেকে সহজতর। কিন্তু এই বিজ্ঞান আবিষ্কার কে করেন। বিজ্ঞানের জনকই বা কে। খৃষ্টপূর্ব ৫৮৫ সাল, বর্তমান তুরস্কের মিলেটাস শহর তখন গ্রীকদের দখলে ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে মিলেটাস শহর সমৃদ্ধ ছিল। সে সময় ঘটল এক অদ্ভুত কাণ্ড। শহরের এক গ্রীক পণ্ডিত ঘোষণা করলেন যে, মে মাসের আটাশ তারিখ শহরে দেখা যাবে সূর্যগ্রহণ।
সূর্যগ্রহণ!!!! ভারী অবাক হলো মানুষ। এ আবার কী কথা! এমন ঘটনা তো কখনও ঘটেনি আর।
গ্রীক পণ্ডিত বোঝালেন চাঁদের মধ্যবর্তী অবস্থানের কারণে ঢাকা পড়ে যাবে সূর্য। অর্থাৎ পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে যখন চাঁদ এসে পড়বে, তখন পৃথিবীর কোন কোন জায়গা হতে সূর্যকে দেখা যাবে না। আর এটাই হলো সূর্যগ্রহণ।
হুহ! বললেই হলো....সূর্য ঢাকা পড়ে যাবে নাকি চঁাঁদের কারণে...আরে ওসব কিছু নয়, সব ফালতু......।
কিন্তু নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে সত্যি সত্যিই আটাশে মে তারিখে ঘটল সূর্যগ্রহণ। অবাক মিলেটাসবাসী। আলোড়ন শুরু হলো সারা দেশে। জন্ম হলো বিজ্ঞানের। বিজ্ঞানের জন্ম দিলেন সেই গ্রীক পণ্ডিত, নাম তার থ্যালিস।
তুরস্কের পশ্চিম তীরের প্রাচীন মিলেটাস শহরে ৬২৪ খৃষ্ট পূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেন থ্যালিস। সভ্য দেশ হিসাবে শীর্ষস্থানীয় আসনটি দখলের মালিক তখন মিশর, গ্রীস ও ব্যাবিলনিয়া। কিশোর থ্যালিস মিশরে এসে গণিত শাস্ত্র, বিশেষ করে জ্যামিতিতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন। বর্তমান জ্যামিতির মূল সূত্রগুলো ( রেখা, কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভূজ, সমকোণী ত্রিভূজ, কোণ উৎপন্ন হয় দুটি রেখার মিলনে ইত্যাদি) থ্যালিসই দিয়ে গেছেন। পরে তার সূত্র অনুসারে পিথাগোরাস, হিপোক্রেটিস, ইউক্লিড এরা একে আরও উন্নত করেছেন।
থ্যালিসই প্রথম আবিষ্কার করেন, বস্তুর ঘর্ষণের দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। একদিন নদীর ধারে হাটবার সময় থ্যালিস একটি আশ্চর্য পাথর কুড়িয়ে পান । তিনি লক্ষ করলেন ছোট ছোট পাখির পালক ও খড়কুটাকে আকর্ষণ করে এই পাথর । এই পাথরের নাম দেন ‘ইলেকট্রন’। ‘ইলেকট্রন’ গ্রীক শব্দ। থ্যালিস আরও একজাতের পাথর নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে, এই পাথর ছোট ছোট লোহাকে আকর্ষণ করে। এটা আসলে চুম্বক পাথর। থ্যালিস বলেন, ইলেকট্রন পাথর ও চুম্বক পাথরের এই আকর্ষণ একই।
কিন্তু আসল ব্যাপারটা তিনি ধরতে পারলেন না । আর তার এই আবিষ্কারকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে তার মৃত্যুর দু’হাজার বছরের মধ্যেও এই ভুল ধরা পড়েনি। খৃষ্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে মহান দার্শনিক ও বিজ্ঞানের আদি জনক, মহাবিজ্ঞানী থ্যালিসের মৃত্যু হয়। থ্যালিস আজ নেই। বিজ্ঞানের সূচনা করে দিয়েছেন যিনি তিনি বেঁচে থাকবেন বিজ্ঞানের মাঝে। আমরা সবাই কৃতজ্ঞ, সবাই ঋণী এই মহাবিজ্ঞানীর কাছে যার নাম ‘থ্যালিস’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ