শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

History ... of knowledge


বেশ কিছুক্ষণ থেকেই দুর থেকে ভেসে আসছে দুমদুম শব্দ। শব্দটা বাড়তে বাড়তে এখন এমন হয়েছে যেন মাটিও কেঁপে উঠছে সে আওয়াজে। একটু পরেই অবশ্য বোঝা গেল এর কারণ। বুনো ঘোড়ার মস- একটা পাল ছুটে আসছে। ওদের খুরের আঘাতেই উঠছে এ আওয়াজ। ঘোড়ার পালকে ধাওয়া করে আসছে একদল মানুষ। মানুষ গুলোর হাতে ধরা আছে পাথরের টুকরো। কারো কারো হাতে আছে লাঠির আগায় বাধা ছুচাঁলো পাথর । ওই সামান্য হাতিয়ারকে সম্বল করেই তারা ছুটে চলেছে বুনো ঘোড়ার পালের পেছনে। পালের পিছিয়ে পড়া একটা গুটো ঘোড়াকেও যদি ঘায়েল করা যায়,তাহলেই ওরা খুশি। অবশ্য এত কষ্ট করে বুনো জানোয়ারের পালের পেছনে না ছুটেই বা তারা করবে কি।পেটের দায় বলে কথা। পশু শিকার করতে না পারলে তো না খেয়েই মরতে হবে তাদেরকে। 
আজ থেকে পনেরো, কুড়ি বা পঁচিশ হাজার বছর আগেও এমন দৃশ্য পৃথিবীর নানা জায়গাতে দেখা যেত। খুব আদিম ধরনের পাথরের হাতিয়ারের ওপর র্নিভর করে সে যুগের মানুষ পশু শিকার করে কোন রকমে জীবন ধারন করত বলে ওই যুগকে বলা হয় পুরাতন পাথরের যুগ। এযুগের শেষ দিকে মানুষ বেশ কিছু বিষয়ে উন্নতি করলেও প্রথম দিকে তারা বুনো পশুর মতই জীবন-যাপন করত। সভ্যতা-ভদ্রতা ইত্যাদি বিষয়ে কোন ধারনাই তাদের ছিলনা। এমনকি পোশাক পড়তেও তারা জানতনা।
মানুষ প্রথম যখন পোশাক পড়তে শিখেছে তখন কিন' সে লজ্জা নিবরণের জন্য তা পরেনি। বরং বাধ্য হয়েই পরেছে। আগে সে পশুর মত জীবন-যাপন করত বটে,কিন' বুনো জন'-জানোয়ারের সাথে তার বিরাট ফারাক ছিল । ওদের গায়ে ছিল পশমের পরু কম্বল চাপানো। কিন' মানুষের তা ছিল না । ফলে হাঁড় কাঁপানো শীতেও পশুর পাল যখন দিব্যি ঘুরে বেড়াত,মানুষ তখন গুহায় বসেও কাঁপতে থাকত। সেই বিপদের দিনে সে শীত থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্যে শিকার করা পশুর শুকনো চামড়া গায়ে জড়িয়ে রাখত। পশুর চামড়া ছাড়াও গাছের ছাল-বাকল যাই পেত, তাই গায়ে দিয়ে আত্মসক্ষার চেষ্টা করত মানুষ। ওগুলোই ছিল তাদের প্রথম পোশাক। আদ্যিকালের সেই পোশাক তৈরীতে তেমন কোন যন্ত্রপাতি লাগত না বটে, কিন' ওই পোশাক পড়ে থাকা ছিল ভীষণ কষ্টের। আস- একটা চামড়া র্সবক্ষণ গায়ে জড়িয়ে রাখা কি আর আরামের ব্যাপার নাকি। তাছাড়া গরমের দিনে তো ওই পোশাক একেবারেই অচল হয়ে পড়ত। কিন' ধীরে ধীরে মানুষের মনে শখ জাগল প্রবল শীত ছাড়াও পোশাক পরার। কারন দিনে দিনে মানুষ বুঝতে পারল যে, বুনো জানোয়ার আর তার মধ্যে ফারাক আছে। তার মধ্যে জাগল লজ্জাবোধ। সে ভাবতে লাগল, চামড়া ছাড়া আর কি দিয়ে পোশাক বানানো যায় ।
আজ থেকে দশ-বারো হাজার বছর আগে মানুষের নজর পড়েছিল শন গাছের ওপর। প্রথম প্রথম তারা শনের আঁশগুলোতে খেয়ালের বশেই পাক দিয়েছিল । পাকাতে পাকাতে তারা এক সময় সুতোও বানিয়ে ফেলেছিল । উত্তর আফ্রিকার দেশ মিশর এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরাকের অনর্-গত মেসোপটেমিয়ার মানুষ শন গাছের দেখা পেয়েছিল অন্য অনেক মানুষের আগেই। তারাই প্রথম শনের আাঁশের সুতো হাত দিয়ে বুনে কাপড় বানাতে শিখেছিল । কিন-ু এভাবে কাপড় বানানো ছিল ভীষণ কষ্টের ব্যাপার। বুদ্ধি খাটিয়ে তারা গাছের লম্বা ডাল বা বাঁশ দিয়ে বর্তমানের গ্রাম-বাংলার কাপড় শুকোতে দেয়ার বাঁশের দন্ডের মতো একটা কাঠামো বানিয়েছিল । দ’পাশে দু'টো খুঁটি পুঁতে তার ওপরে আড়াআড়ি ভাবে আরেকটা কাঠ,বাঁশ বা ডাল বেঁধে তৈরী করেছিল সেই কাঠামো। টোর সাথে সুতো বেঁধে পাথর বা পোড়ামাটির টুকরোকে মাকু হিসেবে ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো তাঁতে কাপড় বুনতে শিখেছিল মানুষ । সেই তাঁতে সুতো পাকানো েযন্ত্র বা টেকোর ধার থেকে পোঁড়ামাটি বা পাথরের টুকরো ঝুলিয়ে দেয়া হতো। 
আসে- আসে- মানুষ বুঝল যে,শুধু শনের আঁশই নয়,ভেড়ার লোম দিয়েও কাপড় বানানো যায়। আজ থেকে হাজার পাঁচেক বছর আগে সিন্ধু সভ্যতার মানুষ কাপড় বোনার জন্য চাষ করত তুলো। আজও মানুষ তুলোর তৈরি সুতি কাপড় পরে। 
অবশ্য হরেক রকমের সিনথেটিক কাপড়ের সাথেও মানুষ এখন পরিচিত। তাঁতও আর আগের মতো নেই। এর অনেক উন্নতি হয়েছে। তবুও একথা খুবই সত্যি যে,হাত দিয়ে কাপড় বুনতে বুনতেই মানুষ এক সময় তাঁত আবিষ্কার করে ফেলেছিল । আর এভাবেই মানুষ শিখেছিল কাপড় বোনা। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ