মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

তুমি যদি আনন্দকে অপরাধ ঘোষণা করো তবে একদিন অপরাধেই আনন্দ পেতে হবে

(কারও কারও কাছে এই লম্বা শিরোনামটিকেও যথেষ্ট সংক্ষিপ্ত মনে হতে পারে, তাই এ সম্পর্কে গোটা দুয়েক লাইন অপচয় করি। মানুষের মনের মধ্যে যেসব স্বাভাবিক স্ব-ভাব আপনা থেকেই আসে, সেগুলোকে গড়ের দরে অথবা কয়েকটিকে যদি কোনও ভাবে খারাপ কাজের অভিধা দেয়া হয় এবং তা মানতে বাধ্য করা হয়, তবে এক সময় আসবে যখন আদতেই যেগুলো খারাপ স্বভাব এবং যেগুলো স্বাভাবিক স্বভাব তাদের মধ্যে যে পার্থক্য তা ওই বাধ্যগত লোকজন ভুলতে শুরু করবে। এর ফলাফল যে কী রকম বিভৎস, তা কল্পনা করাই দু:স্বপ্ন।)

কিন্তু এই দু:স্বপ্ন আজকের বাংলাদেশের বড় বাস্তব সত্য। দেশকে আমরা সবাই কমবেশি ভালবাসি (কমবেশি কেন বললাম? ভেবে দেখুন তো খুব অবাস্তব মন্তব্য করে ফেলেছি কি?)। আমাদের সংস্কৃতি আছে, আমাদের গান আছে, আমাদের সুর আছে, রঙ আছে, নাচ আছে, প্রেম আছে, বিচ্ছেদও আছে। আছে আরও যত মানবীয় কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত অনুভূতি প্রকাশের বাঙালী রীতি। আমরা ভালবাসি, আমরা ভয় পাই, আমরা স্বজন হারানোর বেদনায় কাঁদি, আমরা আমাদের দু:সাহসী পূর্বসুরী সৈনিকদের স্মৃতির বেদীতে ফুল দেই - মনে মনে বাংলায় অশ্রুপাত করি। আবার বাংলায় সাহস পাই। ভুলে যেন না যাই কোনও দিন। এ প্রতিজ্ঞাও করি বাংলায়।

বাইশ তারিখে এসে কেন এই প্রভাত ফেরী কেতার রচনার চাটাই খুলে বসলাম, এই তো মনে প্রশ্ন এখন? উত্তর দিচ্ছি। বাংলায়।

তোমার মনের অজানা ক্ষোভ কেন? তোমার কেন নিজের দেশের প্রতি ঘৃণা? তুমি বললে এই ঘৃণা দেশের জন্যে নয়...। এই ঘৃণা ঘৃণ্য রীতি নীতির প্রতি ঘৃণা। এবং তুমি বললে তোমার সংজ্ঞায় ঘৃণ্য প্রথা হলো সর্বশক্তিমানের কোনও সমতুল্য প্রতীকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এ যে অগ্রহন যোগ্য। শ্রেষ্ঠ জীবের এহেন অধ:পতন তুমি মানবেই বা কেন। তাই নিজের হাতে স্বর্গতম উদাহরণ তৈরী করলে।

তোমার বা তোমাদের একবারও মনে হলো না, যে, যে ভাষায় তুমি তোমার উদাহরণ তৈরী করার জন্য দাবার বড়ে গুলোকে প্রাণিত করলে। ঐ ভাষার জন্যই সেই ক্ষুদ্র ঘৃণ্য রীতি অথবা তোমার জন্য অগ্রহনযোগ্য প্রথা। তোমার জন্য এবং তোমার দাবার বড়ে গুলোর জন্য, কয়েক শত তোমার মতই লাল রক্তের মানুষ এমন একদিন অসাধারণ হয়ে উঠেছিল। সেই অসাধারণের স্বরণ করতে এই যে অগ্রহনযোগ্য প্রথা, তাকে কি তুমি একটু অন্য চোখে দেখতে পারোনি?

নাকি তুমি আজও চাও মায়ের কাছে শোনা রূপকথার ভাষা ত্যাগ করে যারা তোমাকে মরুভূমির স্বপ্নের লোভ দেখিয়েছিলো উর্বর পলল সমভূমিতে তাদের দাসত্বের ভাষায় কথা বলতে? অথবা স্বপ্ন দেখতে? কেননা তুমি ভেবে দেখো শত চেষ্টা করলেও তুমি রাজা হতে পারবেনা উৎকট ভাষা পেটে নিয়ে। তুমি হয়ত জানো না কিন্তু তোমার মনের মধ্যে যা কিছু উৎকৃষ্ট বলে তুমি জানো তার সবটাই বাংলায়।

এবং তুমি যে তোমার দাবার বড়ে গুলোকে লেলিয়ে দিয়েছিলে যে অপরাধের আনন্দে তা-ও বাংলায়। তুমি হয়তো বোঝ না। কিন্তু তোমার মত 'গাদ্দার' বাংলায় আর দুটি হতে পারেনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ