মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

(সুরা আন-নসর : আয়াত ১-৩) : যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়... (এ বিজয় মানে কোন একটি যুদ্ধ বিজয় নয়)

১. যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয় *১

১ ) বিজয় মানে কোন একটি যুদ্ধ বিজয় নয়। বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চূড়ান্ত বিজয় যার পরে ইসলামের সাথে সংঘর্ষ করার মতো আর কোন শক্তির অস্তিত্ব দেশের বুকে থাকবে না এবং একথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে , বর্তমানে আরবে এ দীনটিই প্রাধান্য বিস্তার করবে। কোন কোন মুফাসসির এখানে বিজয় মানে করেছেন মক্কা বিজয় । কিন্তু মক্কা বিজয় হয়েছে ৮ হিজরীতে এবং এ সূরাটি নাযিল হয়েছে ১০ হিজরীর শেষের দিকে। ভূমিকায় আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) ও হযরত সারাআ বিনতে নাবহানের (রা) যে হদীস বর্ণনা করেছি তা থেকে একথাই জানা যায়। এ ছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) যে একে কুরআন মজীদের সর্বশেষ সূরা বলেছেন , তাঁর এ বক্তব্যেও এ তাফসীরের (রা) বিরুদ্ধে চলে যায়। কারণ বিজয়ের মানে যদি মক্কা বিজয় হয় তাহলে সমগ্র সূরা তাওবা মক্কা বিজয়ের পর নাযিল হয়। তাহলে আন নসর কেমন করে শেষ সূরা হতে পারে ? নিসন্দেহে মক্কা বিজয় এ দিক দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় ছিল যে , তারপর আরবের মুশরিকদের সাহস ও হিম্মত নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল । কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি - সামর্থ ছিল। এরপরই অনুষ্ঠিত হয়েছিল তায়েফ ও হুনায়েনের যুদ্ধ । আরবে ইসলামের পূর্ণাংগ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে আরো প্রায় দু’বছর সময় লেগেছিল।

২.আর ( হে নবী ! ) তুমি (যদি দেখ যে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীন গ্রহণ করছে *২

২ ) অর্থাৎ লোকদের একজন দু’জন করে ইসলাম গ্রহণ করার যুগ শেষ হয় যাবে । তখন এমন এক যুগের সূচনা হবে যখন একটি গোত্রের সবাই এবং এক একটি বড় বড় এলাকার সমস্ত অধিবাসী কোন প্রকার যুদ্ধ - বিগ্রহ ও চাপ প্রয়োগ ছাড়াই স্বতষ্ফূর্তভাবে মুসলমান হয়ে যেতে থাকবে। নবম হিজরীর শুরু থেকে এ অবস্থার সূচনা হয়। এ কারণে এ বছরটিকে বলা হয় প্রতিনিধিদলের বছর । এ বছর আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে কাছে আসতে থাকে। তারা ইসলাম কবুল করে তাঁর মুবারক হাতে বাই’আত গ্রহণ করতে থাকে। এমনকি দশম হিজরীতে যখন তিনি বিদায় হজ্জ করার জন্য মক্কায় যান তখান সমগ্র আরব ভূমি ইসলামের ছাড়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল এবং সারাদেশে কোথাও একজন মুশরিক ছিল না।

৩. তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো *৩ এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও।*৪ অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী। 

৩ ) হামদ মানে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও । আর তাসবীহ মানে আল্লাহকে পাক - পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন এবং দোষ- ত্রুটিমুক্ত গণ্য করা। এ প্রসংগে বলা হয়েছে , যখন তুমি তোমার রবের কুদরতের এ অভিব্যক্তি দেখবে তখন তাঁর হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পাঠ করবে। এখানে হামদ বলে একথা বুঝানো হয়েছে যে , এ মহান ও বিরাট সাফল্য সম্পর্কে তোমার মনে যেন কোন সময় নিন্দুমাত্রও ধারণা না জন্মায় যে , এসব তোমার নিজের কৃতিত্বের ফল। বরং একে পুরোপুরি ও সরাসরি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও মেহেরবানী মনে করবে । এ জন্যে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। মনে ও মুখে একথা স্বীকার করবে যে , এ সাফল্যের জন্য সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য। আর তাসবীহ মানে হচ্ছে , আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হওয়ার বিষয়টি তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার ওপর নির্ভরশীল ছিল ---- এ ধরনের ধারণা থেকে তাঁকে পাক ও মুক্ত গণ্য করবে। বিপরীত পক্ষে তোমার মন এ দৃঢ় বিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকবে যে , তোমার প্রচেষ্টা ও সাধনার সাফল্য আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তিনি তাঁর যে বান্দার থেকে চান কাজ নিতে পারতেন। তবে তিনি তোমার খিদমত নিয়েছেন এবং তোমার সাহায্যে তাঁর দীনের ঝাণ্ডা বুলন্দ করেছেন , এটা তাঁর অনুগ্রহ । এছাড়া তাসবীহ অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ পড়ার মধ্যে বিস্ময়ের ও একটি দিক রয়েছে । কোন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলে মানুষ সুবহানাল্লাহ বলে। এর অর্থ হয় , আল্লাহর অসীম কুদরতে এহেন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। নয়তো এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাবার ক্ষমতা দুনিয়ার কোন শক্তির ছিল না।

৪ ) অর্থাৎ তোমার রবের কাছে দোয়া করো। তিনি তোমাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করতে গিয়ে তোমার যে ভুল - ত্রুটি হয়েছে তা যেন তিনি মাফ করে দেন। ইসলাম বান্দাকে এ আদব শিষ্টাচার শিখিয়েছে। কোন মানুষের দ্বারা আল্লাহর দীনের যতবড় খিদমতই সম্পন্ন হোক না কেন , তাঁর পথে সে যতই ত্যাগ স্বীকার করুক না এবং তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী করার ব্যাপারে যতই প্রচেষ্টা ও সাধনা চালাক না কেন , তার মনে কখনো এ ধরনের চিন্তার উদয় হওয়া উচিত নয় যে , তার ওপর তার রবের যে হক ছিল তা সে পুরোপুরি আদায় করে দিয়েছে। বরং সবসময় তার মনে করা উচিত যে তার হক আদায় করার ব্যাপারে যেসব দোষ - ত্রুটি সে করেছে তা মাফ করে দিয়ে যেন তিনি তার এ নগণ্য খেদমত কবুল করে নেন। এ আদব ও শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে । অথচ তাঁর চেয়ে বেশী আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনাকারী আর কোন মানুষের কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। তাহলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোন মানুষের পক্ষে তার নিজের আমলকে বড় মনে করার অবকাশ কোথায় ? আল্লাহর যে অধিকার তার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তা সে আদায় করে দিয়েছে এ অহংকার মত্ত হওয়ার কোন সুযোগই কি তার থাকে ? কোন সৃষ্টি আল্লাহর হক আদায় করতে সক্ষম হবে , এ ক্ষমতাই তার নেই।

মহান আল্লাহর এ ফরমান মুসলমানদের এ শিক্ষা দিয়ে আসছে যে , নিজের কোন ইবাদাত , আধ্যাত্মিক সাধনা ও দীনি খেদমতকে বড় জিনিস মনে না করে নিজের সমগ্র প্রাণশক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত ও ব্যয় করার পরও আল্লাহর হক আদায় হয়নি বলে মনে করা উচিত । এভাবে যখনই তারা কোন বিজয় লাভে সমর্থ হবে তখনই এ বিজয়কে নিজেদের কোন কৃতিত্বের নয় বরং মহান আল্লাহর অনুগ্রহের ফল মনে করবে। এ জন্য গর্ব ও অহংকারে মত্ত না হয়ে নিজেদের রবের সামনে দীনতার সাথে মাথা নত করে হামদ , সানা ও তাসবীহ পড়তে এবং তাওবা ও ইসতিগফার করতে থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ