বুধবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

একটি শিশুকে পায়ে শেকল আর ঘাড়ে গাছের গুঁড়ি দিয়ে টানা তিন দিন শাস্তি দেওয়া হলো!

 ছোট্ট শিশু। বয়স দশের মতো হবে। দেখলেই যে কারো মায়া লেগে যাওয়ার কথা। ঠিকমতো পড়াশোনা না করার অপরাধে সেই শিশুকেই কিনা পায়ে শেকল আর ঘাড়ে গাছের গুঁড়ি দিয়ে টানা তিন দিন শাস্তি দেওয়া হলো!

মঙ্গলবার সকালে কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সংলগ্ন মহিপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে এই অমানবিক শাস্তির শিকার আউয়াল হোসেন নামে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

মহিপুর তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মোহাম্মদ আবুল কাসেম হাওলাদার বলেন, “মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পায়ে শেকল ও ঘাড়ে ১৫-২০ কেজি ওজনের গাছের গুঁড়ি বাঁধা অবস্থায় মাদ্রাসার পুকুরে গোছল করতে দেখে মহিপুর এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান খান তাদের খবর দেন। পরে শিশুটিকে উদ্ধার জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ আনোয়ার জাহিদ ও নেছার উদ্দিন (১৫) নামের অপর এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নেছারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিন মাস আগে মহিপুর নূরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় আউয়ালকে ভর্তি করান তার বাবা জেলে বেল্লাল। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি।

পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কাসেম হাওলাদার বলেন, “ঠিকমত মাদ্রাসায় না যাওয়ার অপরাধে গত ২৬ ফেব্র“য়ারি থেকে টানা তিন দিন এই শিশুটির উপর নির্মম নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছে।”

অবশ্য মাদ্রাসা সুপার আনোয়ার জাহিদের দাবি, শিশুটির অভিভাবকই পায়ে শেকল ও ঘাড়ে গাছের গুঁড়ি বেঁধে মাদ্রাসায় রেখে গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, “শিশুটি বখাটে প্রকৃতির বলে তার বাবা আমাকে বলে- হুজুর আমার ছেলেকে কুরআনে হাফেজ বানাতে হবে, তাতে ওকে যত শাস্তি দিতে হয় দিন। তিন দিন আগে তার বাবা বেল্লালই মাদ্রাসায় এসে শেকল দিয়ে ছেলেকে বেঁধে রেখে গেছে।”

“গত ২৫ বছর ধরে এ মাদরাসার খেদমত করছি। আমার কোনো কাজে ক্রটি কেউ কোনো দিন দেখে নাই”, যোগ করেন আনোয়ার জাহিদ।

শিশুটির মা ফাহিমা সাংবাদিকদের বলেন, “মাদ্রাসায় ফাঁকি দেয় বলে আমিই ওর বাবাকে মাদ্রাসায় গিয়ে হুজুরের কাছে বেঁধে রেখে আসতে বলেছিলাম।”

তবে কলাপাড়া থানার ওসি মোহাম্মদ ইসহাক আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মারধর ও বেত্রাঘাত আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ