রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশীরা বৈষম্যের শিকার


সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী কর্মীরা নানা বঞ্চনার শিকার। অনেক কোম্পানি নিয়মিত বেতন দেয় না। বেশিরভাগ কোম্পানিতে সমান কাজ করেও বাংলাদেশীরা পান ভারতীয় ও চীনা কর্মীর তুলনায় অর্ধেকেরও কম মজুরি। ওভারটাইম সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। অন্য দেশের দূতাবাস ও মিশন তাদের শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সচেষ্ট এবং সফল হলেও বাংলাদেশ মিশন এ ব্যাপারে একেবারেই নির্লিপ্ত এবং উদাসীন। ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। এ অসন্তোষ বিক্ষোভ ও ধর্মঘট পর্যন্ত গড়াচ্ছে, যা সিঙ্গাপুরের আইনেশৃঙ্খলা পরিপন্থী। অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে নতুন বিপদে পড়তে পারে বাংলাদেশী শ্রমিকরা। সম্প্রতি বেতনের দাবিতে সিঙ্গাপুরে দুটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ বাংলাদেশী শ্রমিক দিনভর অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। 

সিঙ্গাপুরে নিয়োজিত একাধিক বাংলাদেশী শ্রমিক জানিয়েছেন, স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে গিয়ে ডলার রোজগারের জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করেছেন তারা। কিন্তু যেসব দালাল-এজেন্টের মাধ্যমে তারা সিঙ্গাপুর পৌঁছেন তাদের প্রতিশ্রুত কাজের ব্যবস্থা না করেই দালালরা সটকে পড়ে। ফলে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করার পর শেষ পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের একটি কাজ জুটিয়ে নেয় নামমাত্র মজুরিতে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয় বিশেষ করে নির্মাণ কোম্পানিগুলো। কতিপয় অসাধু কোম্পানি অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ মজুরিতে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ করেও সময়মত বেতন পরিশোধ করে না। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া পড়লে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় হতভাগ্য কর্মীদের।


অবশ্য সিঙ্গাপুরে নিয়োজিত লক্ষাধিক বাংলাদেশীর মধ্যে অনেকে বেশ ভালো আছেন। সিঙ্গাপুরী হাজার-বারশ’ ডলার উপার্জন করলে বাংলাদেশের প্রায় লাখ টাকা হয়ে যায় মাসে। এমন সৌভাগ্যবানের সংখ্যা দুর্ভাগাদের তুলনায় নিতান্তই কম। তাদেরও অভিযোগ, ভারত, চীন এমনকি নেপাল, ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকরা সমান কাজ করে দ্বিগুণ বেতন পায়। কারণ, তাদের দেশের প্রবাসী মন্ত্রণালয় ও মিশন কর্মকর্তারা লবিং করে নিশ্চিত করেন যাতে তাদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই। হাইকমিশনের অনেকেই নানা ব্যবসায়িক ধান্ধায় ব্যস্ত বকেয়া বেতনের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করে সম্প্রতি বিশ্ব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। 

গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় আবাসিক এলাকা তামপাইনে কয়েকশ’ শ্রমিক সাত ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহুর নিউজে স্থান পায় এ সংবাদ। ইয়াহুর সিঙ্গাপুর প্রতিনিধির রিপোর্টে জানানো হয়. নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সানওয়ে কনক্রিট লিমিটেড ও টেককম কনস্ট্রাকশনের দু’শতাধিক বাংলাদেশী কর্মী বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় তামপাইনস ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্ট্রিট ৬২-এর একটি খোলা মাঠে কর্মসূচি শুরু করে। গত নভেম্বর থেকে বেতন দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। এছাড়া তাদের যেখানে খাবার খেতে দেয়া হয় সে জায়গাও অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানান তারা।

সিঙ্গাপুরের সরকারি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (এইচডিবি) ভবন নির্মাণের জন্য সানওয়েকে প্রধান কন্ট্রাক্টর ও টেককমকে সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে। প্রমিকরা বলেন, এই কোম্পানিগুলো বিদেশি শ্রমিকদের বেতন এবারই প্রথম আটকায়নি। এর আগেও তারা কয়েকবার একই কাজ করেছে। কে রবকুমার নামের এক বিক্ষোভকারী ইয়াহুকে বলেন, ‘সবারই একই সমস্যা। চার মাস ধরে কাউকে বেতন দেয়া হচ্ছে না।’ ৩৫ বছর বয়সী এই শ্রমিক বলেন, তাদের নিয়মিত সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যদিও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে দিনে আট ঘণ্টা কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যস্ত সময়ে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করলেও কোনো ওভারটাইম দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। রব কুমার জানান, তারা দৈনিক ১৮ ডলার মজুরি পান।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন দেয়ার আশ্বাস দেয়া হলে বিকাল ৩টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন বাংলাদেশী শ্রমিকরা। ছোট্ট দেশ সিঙ্গাপুরে এই ঘটনা ঘটলেও সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ