বুধবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সাগর-রুনি হত্যা বিরোধীদলীয় নেত্রীর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন: হাইকোর্ট

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে হাইকোর্ট বিভাগ। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে সরকারকে নির্দেশ দিতে বিভাগে দায়েরকৃত একটি আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার এ মন্তব্য করে একটি দ্বৈত বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, সোমবার লালমনিরহাটে এক জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘খুনি ঠিকই ধরা পড়েছে। কিন্তু সরকারের লোক হওয়ায় তাদের পার করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সরকার জড়িত। সরকারের অনেক গোপন তথ্য তাদের কাছে ছিল। হত্যার পর কেবল ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে অনেক তথ্য ছিল। দেশে-বিদেশে তথ্য প্রকাশ হওয়ার ভয়ে এই হত্যা হয়েছে।’’
মঙ্গলবার সকালে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ও হত্যার কারণ নির্ণয়ে সরকারকে নির্দেশ দিতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরে দুপুর ১২.৪০ মিনিটে বিভাগের বিচারক এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
আবেদনকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের বক্তব্য শোনার পর কক্ষে উপস্থিত ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালেহ উদ্দিনকে ডেকে আদালত খালেদা জিয়ার বক্তব্য বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে আদালত বলেন, এ বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেন সে বিষয়ে কি বলবেন? এমন বক্তব্য দেয়া কি উচিত?
জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, আইনজীবী হিসেবে আমি আপনার সঙ্গে একমত। এমন বক্তব্য দেয়া উচিত নয়।
দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালেহ উদ্দিনকে আদালত ‘খালেদা জিয়ার কাণ্ডজ্ঞানহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য’ বিষয়ে মন্তব্য করতে বলেন। জবাবে সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর আগে বেডরুমে গিয়ে পাহারা দিতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন। আবার বিরোধীদলীয় নেত্রীর এরকম বক্তব্য দেয়া হচ্ছে ঘটনার রাজনীতিকরণ। আমরা এমন রাজনীতিকরণ চাই না।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশেষজ্ঞ না হলেও কমনসেন্সে আশি শতাংশ বুঝি। আর কমনসেন্সে এতটুকু বুঝতে পারি যে তদন্ত কর্মকতারা তাদের দায়সারা গোছের বক্তব্য দিচ্ছেন। তদন্তকারীরা যা বলছেন, তা সাংবাদিকরা পর্যালোচনা করছেন, এর বেশি কিছু নয়। আমরা সাগর-রুনি দম্পতি হত্যা নিয়ে রাজনীতি চাই না। তবে প্রকৃত খুনীদের খুঁজে বের করুক- এটাই চাই। ’’
এ সময় আদালত বলেন, ‘‘বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যদি বিধান, প্রবিধান ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে তাহলে তিনি এমন মন্তব্য করে বক্তব্য দিতে পারেন না।’’
আদালত আরো বলেন, ‘‘আমরা সহনশীল না হলে এমন ঘটনায় মন্তব্যকারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হতো। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় হলে এ বক্তৃতায় অবশ্যই জেলে যেতে হতো।’’
পরে আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল, অ্যাডভোকেট এমএম আমিনুদ্দিন ও অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি আদালতের এ বক্তব্যের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে কেউ বক্তব্য রাখেননি।
শুনানি শেষে দেয়া আদেশে আদালত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের কেন গ্রেফতার করা হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। রুলের জবাব দিতে সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে আদালত। এ রুল জারি করার পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে দুটি অন্তর্বতী আদেশ দেয়া হয়।
আদেশে তথ্যমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়, তদন্ত শেষ হবার আগে এ হত্যা নিয়ে ‘জজ মিয়া খোঁজা হচ্ছে’ ধরনের কোনো অনুমাননির্ভর খবর যাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না হয়- সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ