রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বান্দরবানে ছয় কীর্তিমান পেলেন গুণীজন সম্মাননা

নিজ কর্ম দিয়ে সমাজ ও জাতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখার জন্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৬ কীর্তিমানকে গুণীজন সম্মাননা দিয়েছে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সম্মাননাপ্রাপ্ত কীর্তিমান এবং তাদের উত্তরাধিকারদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি।
অনুষ্ঠানে বান্দরবানস্থ ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস-উল হুদা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এবং জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মনিরুল ইসলাম মনু।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে পৃষ্টপোষকতা, সরাসরি অংশগ্রহণ এবং শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখার জন্যে প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রয়াত ১৪তম বোমাং রাজা মং শৈ প্রু চৌধুরীকে এবার শিক্ষা সম্মাননা প্রদান করা হয়।
তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করে রাজপুত্র মং ঞৈ প্রু বলেন, পিতার অবদানের স্বীকৃতি তাদেরকেও মানবতার কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগাবে।
প্রথমবারের মত কৃষি সম্মাননা অর্জন করেছেন কৃষিবিদ আবদুল কুদ্দুস। কর্মজীবনের শুরু থেকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে এ অঞ্চলের সার্বিক কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, চাষি পর্যায়ে অধিক ফলনশীল আম্রপালি জাতের আম চাষ সমপ্রসারণ এবং কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরে খাদ্য-শষ্য উইং-এর পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত থাকাকালে অধিক খাদ্য উৎপাদন এবং উন্নত ফলনশীল ধানের আবাদ বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রবর্তিত কৃষি সম্মাননা ২০১২ প্রদান করা গেল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কৃষিবিদ আবদুল কুদ্দুস সম্মাননা গ্রহণ করেন। অভিব্যক্তি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, একজন কর্মজীবী হয়েও কৃষি ৰেত্রে তাকে যে সম্মাননা দেয়া হয়েছে, ভবিষ্যৎ পথ চলায় তা আরো সাহস যোগাবে।
সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে এবার সম্মাননা পেলেন ক্রামাদি মেনলে ম্রো (নিরুদ্দেশ)।
বান্দরবান সদর উপজেলার সাধারণ একটি গ্রামে জন্ম এবং পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হওয়া মেনলে ম্রো নিজ জাতির জন্যে বর্ণমালা উদ্ভাবন করে ১৯৮৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন। তিনি 'ক্রামা' নামে একটি নতুন ধর্মমত প্রবর্তন করেন। একই সাথে এ দু'টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্যে তাকে সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্মানা ২০১২ প্রদান করা হয়।
মেনলে ম্রোর এক সময়কার সহপাঠী বিশিষ্ট ম্রো লেখক সিং ইয়ং ম্রো তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
এবার সমাজসেবা সম্মাননা পেলেন রেড ক্রিসেন্ট সংগঠক এবং সমাজ কর্মী মাহবুবুর রহমান (মরণোত্তর)।
বান্দরবান জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রবর্তিত সমাজসেবা সম্মাননা ২০১২ প্রদান করা হয়।
তার পক্ষে রোটারিয়ান জামাল আবু নাসের সম্মাননা গ্রহণ করেন।
মহিলা ক্রীড়া সংগঠক মিজ ক্য চিং প্রুকে এবার মরণোত্তর ক্রীড়া সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননাপত্রে বলা হয়, পিছিয়ে পড়া বান্দরবানের নারীদের উদ্বুদ্ধ করে ক্রীড়াচর্চায় নিয়ে আসা, তাদেরকে সংগঠিত করে জেলার জন্যে জাতীয়পর্যায়ে একাধিকবার স্বর্ণপদক অর্জন এবং বান্দরবান জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্রীড়া ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্যে তাকে ক্রীড়া সম্মাননা ২০১২ প্রদান করা হয়।
ছোট বোন মেনি প্রু তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
সাংবাদিক সম্মাননা ২০১২ পেয়েছেন প্রয়াত শ্রীমন্ত চৌধুরী। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সাংবাদিকতা চর্চা ও বিকাশ এবং বান্দরবান প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় সে সময়কার দৈনিক ইত্তেফাকের বান্দরবান জেলা সংবাদদাতা প্রয়াত শ্রীমন্ত চৌধুরী (স্বপন কুমার চৌধুরী) বান্দরবান সাংবাদিক সম্মাননা ২০১২ ভূষিত হন।
শিক্ষা সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্যান্য কীর্তিমান ব্যক্তিরা হচ্ছেন: ক্রামাদি মেনলে ম্রো, ১৯৫২ সালে বম মাতৃভাষার প্রাইমার প্রকাশের জন্যে এল. দৌলিয়ান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক থানজামা লুসাই, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মং চি নু চৌধুরী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি।
কৃষি সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্য কীর্তিমানরা হচ্ছেন: বোমাং রাজপুত্র মং প্রু টমি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি'র বান্দরবান অফিস, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, ফাতিমা রানী ধর্মপল্লী (রোমান ক্যাথলিক মিশন) এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ডভিশন, বান্দরবান অফিস
সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্য কীর্তিমানরা হচ্ছেন: অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, লেখক-গবেষক ক্য শৈ প্রু খোকা, গীতিকার-সুরকার উঃ পঞঞা জোতথের (গৃহি নাম উ চ হ্লা), শিল্পী, সংগীত পরিচালক, সংগঠক প্রয়াত অরুণ সারকী, বান্দরবান উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক প্রয়াত এস এ প্রু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মী দীপ্তি কুমার বড়ুয়া, অভিনয় শিল্পী এবং শিল্প সংগঠক প্রয়াত মুনীন্দ্র লাল ভট্টাচার্য, আবৃত্তি শিল্পী মিজ ডলি প্রু, স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মিস রীনা সারকী (মাথিন), অধ্যাপক এবং ক্লাসিকেল সংগীত সাধক প্রয়াত ওস্তাদ অহিদুল আলম, অভিনয় শিল্পী ও শিল্প সংগঠক মরহুম শামসুল ইসলাম এবং অভিনয় শিল্পী, নাট্য নির্দেশক ও শিল্প সংগঠক দিলীপ চক্রবর্তী।
সমাজসেবা সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্যান্য কীর্তিমানরা হচ্ছেন: প্রয়াত রাজা মং শৈ প্রু চৌধুরী,সমাজসেবক এবং রাজপুত্র কে এস প্রু, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি এবং ফাতিমা রানী ধর্মপল্লী, বান্দরবান।
ক্রীড়া সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্য কীর্তিমানরা হচ্ছেন: বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, খ্যাতিমান খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া সংগঠক রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী, ক্রীড়াবিদ, বিদেশে বাংলাদেশ ক্রীড়া মিশন প্রধান এবং স্বনামখ্যাত রেফারি বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক থানজামা লুসাই, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্রীড়া সংগঠক, কারাতে ওস্তাদ ক্য শৈ হ্লা, বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে স্বর্ণপদক জয়ী মিস তিং তিং মে, সাফ গেমসে কারাতে প্রতিযোগিতায় একাধিক স্বর্ণপদক জয়ী মিস জ উ প্রু এবং বান্দরবান পৌরসভার কাউন্সিলর ও ক্রীড়া সংগঠক মং হ্নৈ চিং।
সাংবাদিকতা সম্মাননার জন্যে মনোনীত অন্য কীর্তিমানরা হলেন: বান্দরবান থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগরবির সাবেক বার্তা সম্পাদক মরহুম এম এ হাশেম, বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও মাসিক চিম্বুক সম্পাদক মোহাম্মদ বাদশা মিঞা এবং মনিরুল ইসলাম মনু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ