রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

টরন্টোর শতাধিক বাংলাদেশী প্রতারণার শিকার: দৌলত খান দেউলিয়া


দৌলত এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার দৌলত খান
কথিত ম্যানজার মঞ্জুরে এলাহী
দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে আবােরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন টরন্টোর শতাধিক বাংলাদেশী। প্রেরণকারীদের অভিযোগ- প্রাপকের কাছে টাকা না পাঠিয়ে প্রায় এক িমলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করে ফেলেছে দৌলত এন্টারপ্রাইজ নামক কথিত মানি েরমিটেন্স কোম্পানী। ইতিমধ্যে েকাম্পানীর মালিক দৌলত খান নিজেকে েদউিলয়া ঘোষণা করেছেন। প্রাপকদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠােনা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২৪ জনের কাছে পাঠােনা উল্লিখিত চিঠিতে ৪,৯৮,৩৬৯ ডলােরর দেনা দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেও প্রায় একই অেঙ্কর দেনা এবং তালিকার বাইরেও অনেকের বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।  টরন্টোর ভিক্টোরিয়া পার্ক এবং ড্যানফোর্থের কর্ণারে অবস্থিত দৌলত এন্টারপ্রাইজের দরজায় তালা ঝুলছে। পাওনাদারদের অনেকে প্রতিদিন এখানে এসে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, গত এক বছর ধরে দৌলত খান টাকা প্রেরণকারীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। 
দেেশ িবদেশের কাছে দৌলত খান বলেন, দেেশ এক ব্যক্তি তার প্রায় বিরাট অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করার ফলে তিনি সর্বস্রান্ত হয়ে গেছেন এবং দেউলিয়া ঘোষণা ছাড়া তার আর পথ িছল না। 
এদিকে পাওনাদাররা বলছেন অন্য কথা। তারা বলেন, ''প্রথম থেকেই দৌলত খান দুই নম্বরী ব্যবসা চালু করেন। তিনি প্রথমে েসানালী ব্যাংকের শাখা হিসেবে ব্যাংকের লগো ব্যববহার করে নিজেকে একজন ৈবধ এজেন্সী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জানাজানি হয়ে গেলে পরে েস সাইনবোর্ড সরিয়ে লিখেন সোনালী এক্সচেঞ্জ। সাধারণ প্রবাসীদের বোকা বানানোনা ঐ প্রচেষ্টাতে তিনি সফলতা লাভ করেন। মূলতঃ এ সাইনবোর্ডের আড়ালে তিনি হুন্ডি ব্যবসা করতেন। তার সাথে যোগাযোগ ছিল পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের কুখ্যাত সব চোরাকারবারীদের।''
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাওনাদার বলেন, ‌'' আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে মহাধুমধামের সাথে তার ছেলের বিয়ে করায়। হজ্ব করে মুসল্লী সাজে এবং মসজিদ কমিটির ফাউন্ডার মেম্বার হয়। ভণ্ডামী আর কাকে বলে!'' 
‌‌''গত এক বছর ধরে দৌলত খান প্রতারণা করে আসছেন তারপরও লোকেরা তার মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলো কেনো'' এ প্রশ্ন করলে টাকা েপ্ররণকারীদের একেকজন একেক ধরনের উত্তর দেন। কেউ বলেন, তারা জানতেন না এিরমধ্যে দৌলত মানুষের টাকা মেরে দিয়েছে। কেউ বলেন, একবার যখন প্রচার হলো দৌলত টাকা মেরে দিয়েছে তারপর তিনি যখন হজ্ব করে ফিরে এলেন এবং কিছু মানুষের টাকা ফেরতও দিলেন তখন তার উপর বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। 
অনেক প্রেরণকারী অজানা ভয়ে মুখ খুলতে চান না। যাদের অধিকাংশই মহিলা। তাদের কেউ কেউ স্বামীর অজান্তে টাকা প্রেরণ করেছেন। আবার অনেকে ট্যাক্স এজেন্সীর ভয়েও মুখ খুলতে চান না। জানা েগছে, এদের কেউ কেউ আন্ডার টেবিল উপার্জনকারী অথবা সরকারী বেনিফিট গ্রহীতা। 
সর্বশেষ কিছু পাওনাদার পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। নগরীর ৫৪ ডিভিশনের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ম্যাককোনািচ বিষয়টি তদারকি করছেন। 
এখনেই কাহিনীর শেষ নয়। সোনালী মানি এক্সচেঞ্জটি বন্ধ হওয়ার কয়েক মাস আেগ থেেক দৌলত খান তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বসতেন না। তার বদলে মঞ্জুরে এলাহী নােম একজনকে তিনি নিয়োগ দেন। বেশ কিছু পাওনাদার অভিযোগ করেন েয, তারা মঞ্জুের এলাহীর কাছে টাকা দিয়েছেন। মঞ্জুর এলাহী ঐ টাকা না পাঠিয়ে মেরে দিয়েছে। কারো আংশিক, কারো পুরোটা। এ বিষয়ে মঞ্জুের এলাহীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্বীকার করেন প্রায় ত্রিশ হাজার ডলার তিনি মানুষের কাছ েথকে নিয়েছেন এবং এ অর্থ দৌলত খানকে তিনি দিয়েছেন। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের টাকা পাঠানো হচ্ছে না জেনেও কেন তিনি টাকা নিতে গেলেন এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ''আিম একজন কর্মচারী মাত্র, আমার বস আমাকে েযভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমি সেভাবেই কাজ করেছি।''
এ প্রসঙ্গে দৌলত খানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ''আমার বিজনেসটা বিক্রি করার জন্য এটা খোলা রাখার প্রয়োজন ছিল বিধায় আমি মঞ্জুরকে ওখানে বসিয়েছিলাম। বিক্রি হলে তার একটা স্থায়ী চাকুরি হতো। সে ছিল সম্পূর্ণ অৈবতনিক। আমি কারো কাছ থেকে টাকা না নেয়ার জন্য বারবার তাকে সাবধান করি। যে কারণে কোম্পনীর লেটারহ্যাড, িসল, সব বাসায় নিয়ে আসি এবং কম্পিউটারের পে্রাগ্রামটা পর্যন্ত লক করে দিই। মঞ্জুর নতুন সিল বানিয়ে এবং কম্পিউটার আনলক করে অৈবধ ব্যবসা শুরু করে এবং মানুষের কাছ েথকে টাকা নেয়। এখন যে সব অভিযোগ আসছে তার কারণেই। তার কাছে যারা টাকা িদয়েছেন আিম তার কোন দায়-দায়িত্ব নিতে পারি না।'' তিনি ইিতমধ্যে মঞ্জুরের িবরুেদ্ধ প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানালেন। 
এদিকে মঞ্জুর বলেন, দৌলত খান নিজেই আমাকে বলেছেন টাকা নেয়ার জন্য। এ টাকা দিয়ে অফিস ভাড়া, ফোন বিল দেয়া হতো। তিনি বলেন, দৌলতের একাউন্ট তো আগেই ক্লোজড করা হয়েছিল তারপরও তিনি টাকা নেন কিভাবে? এছাড়া আমি বসার পরও তিনি মানুষের কাছ েথকে টাকা নিয়েছেন এ প্রমাণ আমার কাছে আছে। গত ঈদে তিনি নিজে অফিসে বসে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। যার অধিকাংশ ছিল কোরবানীর টাকা। টাকা না পাওয়ার ফলে ঐসব লোকের কারো বাড়িতে কোরবানী হয়নি। মঞ্জুর স্বীকার করেন, কিছু টাকা তার দায়িত্বে তিনি নিয়েছেন এবং এগুলো তিনি পাওনাদারদের ফেরৎ দেবেন। 
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে একই ভাবে জনতা এক্সচেঞ্জ এবং তারও আগে প্লাসিড নামে আরেকটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানী বন্ধ হয়ে যায়। সে সময়ও কোম্পানী দুটোর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল। তারপর আর কিছু জানা যায়নি। 
সম্প্রতি পরিচালিত দেেশ িবদেশের একটি টিম টরন্টোর বাংলােদশী মালিকানাধীন মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে একটি গোপন অনুসন্ধান চালায়। এেত েদখা গেছে অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকের অনুমোদিত এেজন্সী হিসেবে সাইনবোর্ড রাখলেও এর আড়ালে মুলতঃ হুিণ্ড ব্যবসা করে থাকেন। হুিণ্ডতে রেট বেশি থাকায় অনেকে অবৈধ জেনেও এভাবে টাকা পাঠাতে উৎসাহবোধ করেন। দেশ ও কমিউনিটির স্বার্থে দেশে িবদেশে শিগগিরই এসব হুিণ্ড ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রকাশ করবে। দেেশ িবদেশের পাতায় চোখ রাখুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ