রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই হাতিয়ার তিন ইউনিয়নে




নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার তিন ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপ, হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নে সরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এই তিন ইউনিয়নে প্রায় দেড় লাখ লোক বসবাস করে। সেখানে বেড়ে ওঠা শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া তিন ইউনিয়নে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে নেই লেখাপড়ার পরিবেশ।সাধারণত ৬-১০ বছরের সকল শিশুকে স্কুলে পাঠানো বাধ্যতামূলক হলেও উপজেলার তিন ইউনিয়নে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। হরণী ইউনিয়নের বাসিন্দা রশিদ মিয়া জানান, মেঘনার গ্রাসে হাতিয়া দ্বীপের এ ইউনিয়নটি ভেঙে যায়। পরে আবার নদী থেকে হরণী এবং পার্শ্ববর্তী চানন্দী ইউনিয়ন জেগে উঠে। এখানে মাত্র পাঁচটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। স্থানীয় লোকজন চাঁদা দিয়ে এ স্কুলগুলো পরিচালিত করছে। নোয়াখালী ৬ হাতিয়া আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম বলেন, 'আমি তিন ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোকে এমপিওভুক্ত করার জন্য বহুবার আবেদন জানিয়েছি। সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় হাতিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে সরকারের অঙ্গীকারও রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।'
জানা গেছে, এখানে বসবাসকারী বেশির ভাগ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার। নদী ভাঙনের কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে হাতিয়া দ্বীপের বহু পরিবার শেষ আশ্রয় নিয়েছে মেঘনার পাড়ে নতুন জেগে ওঠা হরণী ও চানন্দী ইউনিয়নে।
হরণী ইউনিয়নের প্রশাসক ও হাতিয়ার জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম সরকারি স্কুল না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, 'এখানে শিশুই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে যে কটি বই দেওয়া হয় তা দিয়েই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন শিক্ষকরা।'
নিঝুমদ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ হোসেন জানান, তার এই ইউনিয়নে ২৬ হাজার লোকের বসবাস। এখানে প্রায় ৫ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তিনি দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসলেও এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় একটি জুনিয়র বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও পাঁচটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার অভাবে এ সকল স্কুল পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রঞ্জন দাস বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী হরণী, চানন্দী ও নিঝুমদ্বীপে প্রায় ২৫ হাজার শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু এ তিন ইউনিয়নে কমপক্ষে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে যে কয়টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোতে পড়াশোনার জন্য বই সরবরাহ করা হয়। তবে তাদের অবকাঠামোগত পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়নি।'
নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকী বলেন, 'উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিশুরই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারপরও আমরা যে সকল বেসরকাররি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোতে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যেত।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ