রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় পথ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ -সায়মা ওয়াজেদ


দোহা, জানুয়ারি ২৩ - প্রতিবন্ধীদের অধিকারের বিষয়টিতে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া শেখ সায়মা ওয়াজেদ বলেছেন, জাতিসংঘ সনদের আলোকে কাজ করে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

কাতারের রাজধানী দোহায় তিন দিনের পঞ্চম সাফাল্লাহ ফোরামের এক ফাঁকে সোমবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা মনে করেন, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে সামনে আনা উচিত। আর এই বিষয়টির ‘রাজনীতিকরণ’ ঠিক হবে না।

যুদ্ধ ও দুর্যোগকালীন সময়ে বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন- এমন ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিতের পদ্ধতি ও করণীয় নিয়ে দোয়ায় এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের মুখপাত্র সায়মা।

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকন্যা বলেন, “আমরা শুধু ওই সনদে সই করিনি, তা অনুসমর্থনও করেছি। এ সনদ অনুসমর্থন করেছে এমন কয়টি দেশ পাবেন আপনি? আমরা তা করেছি। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে আমাদের নীতিমালা রয়েছে, যা যুগোপযোগী করা হচ্ছে।”

“আমরা ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। অনেক দেশই এটুকুন অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। অটিজমের ওপর আমরা একটি দক্ষিণ এশীয় নেটওয়ার্কও চালু করেছি,” তুলে ধরেন তিনি।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশহ বিশ্বের ১৫৩টি দেশ জাতিসংঘ সনদে সই করলেও এর মধ্যে ১০৯টি দেশ এতে অনুসমর্থন জানিয়েছে। এই সনদে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকারের কথা বলা হয়েছে।

মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা গত বছর জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে প্রথম দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন সায়মা। ওই সম্মেলনে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীসহ অনেকে অংশ নেন।


দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় না গেলে এই কাজটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সায়মা বলেন, “এটা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এক্ষেত্রে আমরা অনেক দেশকে পথ দেখিয়েছি। একে ব্যাহত করা উচিত হবে না।”

রোববার দোহায় এই বিশ্ব সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে আয়োজক প্রতিষ্ঠান সাফাল্লাহ সেন্টারের চেয়ারম্যান হাসান আলী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন দেশ প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে জাতিসংঘ সনদ মেনে চলছে না।

সায়মা বলেন, “যে কোনো দুর্যোগে প্রতিবন্ধীদের জন্য করণীয় নিয়ে এবার আমরা আলোচনা করেছি। দুর্যোগ ও সঙ্কটে মানুষ তাদের কথা ভুলে যায়। তারা ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারে না।”

এই সম্মেলনে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও তা রক্ষায় করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

সায়মা বলেন, “আমাদের দেশ দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় এবং আমাদের প্রতিবন্ধী মানুষ থাকায় এটা খুবই প্রাসঙ্গিক সম্মেলন।”

দুর্যোগের সময় সাহায্য প্রার্থীদের তালিকায় প্রতিবন্ধীরা সবার আগে আসে, বলেন তিনি।

বাংলাদেশের সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেখা গেছে, দেশে মোট ১ কোটি ৬০ লাখ প্রতিবন্ধী আছে এবং তা মোট জনসংখ্যার নয় দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

“তারা যাতে সব জায়গায় চলাচল করতে পারে, সে জন্য হুইলচেয়ারবান্ধব ভবন তৈরির নীতি নেওয়া উচিত আমাদের,” বলেন সায়মা।

তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখা দরকার যে, বিশ্বে তারা সংখ্যায় ১০০ কোটি। তাই তাদের মূল স্রোতে আনতে পারলে তারাও ভূমিকা রাখতে পারে।”

সম্মেলনে প্যানেল আলোচনার বাইরে বিভিন্ন দেশের ফার্স্ট লেডি একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকের বিস্তারিত জানতে না পারলেও জানা গেছে, সেখানে সায়মার বক্তব্য শোনা হয়।

সাফাল্লাহ সেন্টারের চেয়ারম্যান হাসান আলী বলেন, বাংলাদেশে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারে তারা।

সায়মা বলেন, বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণের জন্য গ্লোবাল সেন্টারের সঙ্গেও তিনি কথা বলছেন।

এর অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে করা তিনটি বিশেষায়িত স্কুলের তিন অধ্যক্ষকে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। সৌদি আরবের একটি সেন্টারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

সায়মা বলেন, “আমাদের যেতে ও শিখতে হবে। প্রতিটি সম্ভাবনা ধরে আমাদের কাজ করতে হবে।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ