রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার বাংলাদেশির তিন শিশু কন্যার আকুতি

‘আমাদের বাবাকে বিতাড়ন করো না। আমরা আমাদের বাবাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো।’ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আনোয়ারুল ইসলামের ছোট্ট তিন শিশু কন্যা ফাইজা, ফারাহ ও জারাহ এই আকুতি জানিয়েছে মার্কিন সরকারের কাছে। দেশটি থেকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বাহিনী গ্রেফতার করে তাদের বাবা আনোয়ারুল ইসলামকে। তার গ্রেফতারের ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর নিউজার্সির এসেক্স কাউন্টির ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। যে কোন মুহূর্তে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। এই মুহূর্তে দেশে পাঠালে তিন শিশু কন্যাকে নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়বেন আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী লিপি আরা বেগম। তবে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা সদয় হলে স্থগিত হতে পারে বিতাড়ন প্রক্রিয়া। আর এজন্য তিনি তার স্বামীর বিতাড়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তা চেয়েছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানিয়েছেন।

আনোয়ারুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং কমিউনিটি সংগঠক। তার স্ত্রী লিপি আরা বেগম সদ্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিন কন্যাও জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিক। তারপরও আইনের মারপ্যাঁচ ও কঠোর নিয়মের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেবার পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু তার আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিলও করেন তিনি। কিন্তু তাও প্রত্যাখাত হয় এবং এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ কুড়িটি বছর। সর্বশেষ ২০১০ সালের ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনোয়ারুল ইসলামকে বিতাড়নের চূড়ান্ত আদেশ জারি হয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রিনকার্ডধারী স্ত্রীর মাধ্যমে বৈধ হওয়ার আবেদন করতে পারতেন আনোয়ারুল ইসলাম। কিন্তু তা না করে স্ত্রীর নাগরিকত্ব গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন  তিনি। স্ত্রী লিপি আরা বেগম সম্প্রতি নাগরিকত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন শপথ গ্রহণের। কিন্তু তার আগেই আনোয়ারুল ইসলামের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের ছায়া নেমে আসে।

সাংবাদিক সম্মেলনে আনোয়ারুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি মঈন চৌধুরী জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা সদয় হলে বিতাড়ন প্রক্রিয়া সাময়িক স্থগিত হতে পারে। এটি হলে স্ত্রীর মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের জন্য (স্ট্যাটাস অ্যাডজাস্টমেন্ট) আবেদন করতে হবে। তবে বিতাড়ন ঠেকানোর বিষয়টি নির্ভর করছে স্থানীয় কংগ্রেসম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের উপর। বাংলাদেশ ককাসের চেয়ারম্যান ও কংগ্রেসম্যান জোসেফ ক্রাউলিকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছেন। এটর্নি মঈন চৌধুরী জানান, গ্রেফতারের পর আনোয়ারুল ইসলামকে দেখকে তিনি নিউজার্সির ডিটেনশন সেন্টারে গিয়েছিলেন। এসময় নিজের প্রসঙ্গ ছাড়াও আনোয়ারুল ইসলাম তাকে জানিয়েছেন যে, সেখানে আরো ১৫-১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা হবে।

গত বছরের শেষের দিকে কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকলে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়ন না করার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওবামার এই নির্দেশের পরও একের পর এক অবৈধ ইমিগ্রান্টকে বিতাড়নের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ