বুধবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিরোধে যাচ্ছে ব্ল্যাকহ্যাট

সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে চলমান সাইবার যুদ্ধ আপাতত বন্ধ করে এখন ভারতীয় সংস্কৃতি ও টেলিভিশনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কী ধরনের অভিযান পরিচালনা করা যায় তার কর্মপন'া ঠিক করছেন বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস।
ফেসবুকে তাদের পেজটিতে মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাডমিন বিডি থেকে এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তবে সেখানে মন্তব্য করা একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজেকে ‘অচেনা পথিক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ঢাকায় হ্যাকারদের শনাক্ত করতে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্ল্যাকহ্যাট এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
ব্ল্যাকহ্যাটের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য গ্রহণ বা বর্জন কোনোটিই করা হয়নি। অচেনা পথিকের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে তার প্রোফাইলে ‘পুরুষ’ পরিচয় ছাড়া আর কিছু জানা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার বলছে, সমপ্রতি বাংলাদেশ-ভারত মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে হত্যা বন্ধের আশ্বাসের ভিত্তিতে নিজেদের জয় মনে করে ব্ল্যাকহ্যাট সাইবার যুদ্ধ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফেসবুকে তাদের পেজটিতে দুপুরে এ বক্তব্য তুলে ধরা হলে এর বিপরীতে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন মন্তব্য করেন। বেশির ভাগই ব্ল্যাকহ্যাটের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তাদের একজন বলেন, সরকার যা পারেনি তা ব্ল্যাকহ্যাট দেখিয়ে দিয়েছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কেউ কেউ তাদের পুরস্কৃত করার কথাও বলেছেন।
ফেসবুকে ব্ল্যাকহ্যাটের পেজে গত সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পেজটি পছন্দ করেছেন প্রায় ৪৪ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। প্রতিদিনই বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য বা এটি দেখছেন গড়ে ২০ হাজার থেকে ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী।
ফেসবুক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ভারতবিরোধী সাইবার অভিযানে ব্ল্যাকহ্যাট ইতোমধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে। তারা হ্যাক করা ওয়েবসাইটের পর্দায় বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্তে গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী গুণ্ডা বিএসএফের হাতে খুন হওয়া ফালানীর ছবিসমেত পোস্টারটি লাগিয়ে দিচ্ছে। যাতে লেখা হয়েছে, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধ করো’। নিচের দিকে লেখা রয়েছে, ‘ফালানী ঝুলছে না, ঝুলছে বাংলাদেশ।’ এ সংলাপগুলো ইংরেজিতে লেখা। ব্ল্যাকহ্যাট ও তাদের সহযোগী সাইবার আর্মিরা বলছেন, ওয়েবসাইট হ্যাক করাটা হলো একটা প্রতিবাদের ভাষা। কারণ এর আগে অনেক রকম প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই তারা এ ভাষাটি ব্যবহার করছেন।
বিপরীতে ভারতীয় সাইবার যোদ্ধারা ‘ইন্ডিশেল’ গঠন করে বাংলাদেশের ওয়েবসাইট হ্যাক করছেন। এ যাবৎ তারা তিন শতাধিক ওয়েবসাইটে আক্রমণ করেছেন। আর সাইবার দুনিয়ার এ মল্লযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যবসায়ীরাও মাঠে নেমেছেন। ‘নোরটন’ নামে একটি এন্টি ভাইরাস কোম্পানি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তারা ওয়েবসাইট হ্যাক করা ঠেকাতে পারে এ রকম নিরাপদ এন্টিভাইরাস সেল করছেন।
এসব নিয়ে এখন ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন বিকল্প গণমাধ্যম সচেতন। প্রতিদিনই তারা এসব নিয়ে খবর প্রকাশ করছেন। তরুণরা উৎসাহ দিচ্ছেন সাইবার যোদ্ধাদের। তারা সবাই এক বাক্যে এটাকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। বিরোধিতা করার মতো এখন পর্যন্ত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত বছরের ১৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার। চার হ্যাকার মিলে গ্রুপটি গঠন করেন বলে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে। ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকাররা জানান, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাইবার স্পেসে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে, নেতিবাচক সংবাদ ছড়ানো হয়েছে। এসব গ্রুপ ধ্বংস করার জন্যই আমরা ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপটি গঠন করি। চারজন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরুর পর হ্যাকার দলটিতে নতুন সদস্য যুক্ত হতে থাকে। জানুয়ারির প্রথম দিকে ভারতের ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২৫ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার সদস্যরা ভারতীয় অর্ধশত ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ভেঙে সেগুলোর হোমপেইজ কনটেন্ট পরিবর্তন করে ফেলে। অধিকাংশ সাইটের হোমপেইজ পরিবর্তন করে সেখানে লেখা হয়, বিএসএফের বাংলাদেশী হত্যার প্রতিবাদে সাইটগুলো হ্যাক করা হলো।
ভারতীয় হাইওয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটের ‘অ্যাবাউট আস’ পেজে ফালানির ছবি যুক্ত করে সেখানে লেখা হয়, ‘সীমান-রক্ষী বাহিনী কর্তৃক ১৫ বছরের কিশোরী ফালানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি আমরা কখনো ভুলব না, কখনো ক্ষমা করব না এবং তাদের ছেড়ে দেবো না। সীমানে- হত্যাকাণ্ড বন্ধ করো অথবা আমরা তোমাদের সাইবার স্পেস ধ্বংস করে দেবো।’
মূলত এর পরই আলোচনায় আসে বাংলাদেশী এ হ্যাকার গ্রুপ। ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপটির এ ঘোষণার পর তাদের সাথে যুক্ত হয় অপর বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশ সাইবার আর্মি। তারা এক সাথে আক্রমণ চালাতে থাকে ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে। তারা সীমান- হত্যা বন্ধসহ টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করা, তিস-ার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন করা এবং ভারতে বাংলাদেশী গণমাধ্যমের প্রচার নিশ্চিত করা ছাড়াও সাতটি দাবিতে আক্রমণ চালাতে থাকে। বিষয়টি নজরে আসে ভারতীয় হ্যাকারদেরও। এর পর ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলো হ্যাকিংয়ের প্রতিবাদে বাংলাদেশী ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণের ঘোষণা দেয়। ভারতীয় এ হ্যাকা গ্রুপগুলোর নেতৃত্বে থাকে স'ানীয় হ্যাকার গ্রুপ ইন্ডিশেল। এর পর একে একে হ্যাক হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ট্রেড কমিশন অব বাংলাদেশ এবং ইস্টার্ন ব্যাংকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট। এর পর দুই দেশের হ্যাকারদের এ আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণকে ‘সাইবার যুদ্ধ’ বলে সংবাদ প্রকাশ করে গণমাধ্যম। হ্যাকারদের এ যুদ্ধ এখনো চলছে। কেন হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধমূলক একটি কর্মকাণ্ডকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নেয়া হলো? এ ব্যাপারে ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকার গ্রুপের অ্যাডমিন বিডি জানান, ‘একটি দেশের নাগরিককে প্রতিবেশী দেশের সীমান-রক্ষী বাহিনী নির্বিচারে পাখির মতো গুলি করে মারবে, এটি মেনে নেয়া্ যায় না। আর শত প্রতিবাদেও যখন কাজ হয়নি, তখন আমরা সাইবার আক্রমণের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা ভারতীয় ওয়েবসাইটগুলোতে আক্রমণের মাধ্যমে একটি বার্তাই কেবল তুলে ধরতে চাচ্ছি, সেটি হলো সীমান- হত্যা বন্ধ করো। এছাড়া তাদের আর্থিক কোনো ক্ষতি আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ