গত ১৫ই মার্চ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের ক্যাডারদের মধ্যে রাত
তিনটা পর্যন্ত কয়েক ঘন্টাব্যাপী বন্দুকযদ্ধে ১২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। শুধু বন্দুকযুদ্ধ নয়,
ইট-পাটকেল ছোঁড়াসহ ককটেল বিস্ফোরণও ঘটেছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৯০জন এবং ঢাকা কলেজের ৩০জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হয়েছেন। অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। হোটেলে এক দল ফাও খেয়েছিল, অন্য
দলের ছাত্ররা সেটার সমালোচনা করার কারণে ফাও খাওয়া দল তাদের উপর চড়াও হয়। ফলে
উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষে বাঁধে।
ঘটনা তদন্তের জন্য এখন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি নিযুক্ত হয়েছে। একইরকম তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মার্চ
মাসেই রাজধানীর দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ আশেপাশের বিল্ডিং-
এ গাড়ি ভাংচুর করে। এ রকম ঘটনা প্রায়শই সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে লেগেই আছে।
অতীতে এবং বর্তমানেও গ্রামে-গঞ্জে এক গ্রাম বা এক পাড়ার বাসিন্দারা অন্য পাড়া বা অন্য গ্রামের
মানুষকে তুচ্ছ কারণে লাঠিসোঁটা,বল্লম,ও মাছ ধরার টেঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। তাতে হতাহতের
সংখ্যা শততে উন্নীত হয়, পুলিশ আসে, মামলা হয়, পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালায়। পুরুষশূন্য গ্রাম খাঁ
খাঁ করে, স্ত্রী, কন্যা, মাতাগণ উদ্বিগ্ন জীবন যাপন করে। একই ঘটনা বছরের পর বছর পুনরাবৃত্তি
ঘটে। গ্রামের বাসিন্দারা না হয় অশিক্ষিত। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা তো কিছুটা
হলেও শিক্ষার আলো পেয়েছে। এতটুকু শিক্ষার প্রভাব তো ওদের অন্তকরণে কোন পরিবর্তন আনেনি।
সামান্য ও তুচ্ছ ঘটনা যা আলোচনা বা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে পারে তা নিয়ে দু’দল
লাঠিসোঁটা ও বন্দুক নিয়ে নেমে পড়ে। এ কিসের আলামত। মনোবিজ্ঞানী ছাড়াও সাধারণ জ্ঞানী
ব্যক্তি বলে দিতে পারেন এখানে ছাত্রদের সর্বনাশা নৈতিক অবক্ষয় দায়ী। ছাত্ররা ধৈর্য, সহিষ্ণুতা,
শিষ্টাচারের শিক্ষা পায় না, কিংবা পেলেও তা গ্রহণ করে না। কারণ শিক্ষাঙ্গনে সে পরিবেশ নেই।
ছাত্ররাজনীতি, ছাত্র নামধারী কিছু বহিরাগতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মূল রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি,
ক্যাডারগিরি, কিংবা আর্থিক ফায়দা অর্জনের জন্য, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, ভর্তি ও হলে সীট
বন্টন বাণিজ্য,এ সবের মধ্যে কিছু ছাত্র নিমজ্জিত আছে। এরাই ফাও খেতে চায়, বিনা টিকেটে বাসে
যাতায়াত করতে চায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের এ
অবক্ষয় বন্ধ করতে হলে পরিবেশ উন্নত করতে হবে। শুধু শিক্ষকগণ একা এটা করতে পারবেন না।
মা-বাবা থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেরই শিক্ষকের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবার,
সমাজ ও দেশ এক বৃন্তের ৩ ফুল। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী একটি পরিবার থেকে এসেছে। পরিবারের প্রধান
বা গুরুজন হলেন মা-বাবা ,চাচা-চাচী, মামা-মামী, দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি এবং তাদের
মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ, সাংসদ, মন্ত্রী এমনকি
প্রধানমন্ত্রী। পরিবারের প্রধান ও গুরুজনরা যদি স্ব স্ব বিচরণ ক্ষেত্রে আচরণের
ধৈর্য,সহিষ্ণুতা,সততা,শিষ্টাচার, ইত্যাদি গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটান, তাহলে দেশে
অস্থিরতা,দুর্নীতি,অবক্ষয় থাকতে পারবে না। কারণ গুরুজনদের কর্মকাণ্ড এবং আচরণ দেখে ঐ
পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের গুণাবলীর অনুশীলন করা শিখবে। আর যদি ছাত্র-ছাত্রীরা না শিখতে
চায় তখন গুরুজনদের দায়িত্ব হবে শাসনের মাধ্যমে তাদেরকে শিখানো।
একথা অনস্বীকার্য যে এ অবক্ষয়ের সৃষ্টি গুরুজনদের আচরণ থেকে। যেমন ব্যবসায়ী হয়ে তিনি যদি
শুল্ক কর ফাঁকি দেন, অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে পণ্য মজুত করনে, একক উত্পাদনকারী বা
আমদানীকারী হিসাবে বাজার দখল করে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাদের অর্থ লুটে নেন,
তাহলে তার সন্তানগণ কি একই আচরণ শিখবে না? যে শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট কোচিংদ্বারা
অর্থোপার্জন করেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অবাঞ্ছিত বা অনৈতিক আচরণ করেন, রাজনৈতিক দলের
লেজুড়বৃত্তি করেন, তার আচরণ থেকে সন্তানরা বা ছাত্র-ছাত্রীরা কি শিখবে। তেমনি সরকারি বা
বেসরকারি চাকরিজীবীগণ যারা ঘুষ, দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েন, তাদের সন্তানরা-মা-
বাবার আচরণ থেকে কি শিক্ষা নেবে, আলস্য, অপব্যয়,অনাচার ছাড়া কিছুই শিখবে না। তেমনি যে
রাজনৈতিক নেতা বা সাংসদ ভোটের সময় জনগণকে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখান, কিন্তু ভোটের পরে
টিকিটিও দেখান না, ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে দুর্নীতি করতেও দ্বিধা করেন না, দলের জনপ্রিয়তা লাভ
করতে বিপক্ষের সাংসদ ও নেতা নেত্রীকে অশ্লীল ভাষায় পার্লামেন্টে গালাগালি করেন, তাদের সন্তানরা
কি একই আচরণ শিখবে না। তেমনি যে সব মন্ত্রিগণ মূল্যস্ফীতির ভোগান্তি, আইন-শৃঙ্খলার
অভাবজনিত অশান্তি থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে চেষ্টা না করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে ব্যস্ত থাকেন
তারা তাদের সন্তানকে কি শিক্ষা দেবেন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা
আঁকড়ে থাকার প্রতিযোগিতা, দেশের ও জনগণের উন্নতি সাধনের কোন প্রতিযোগিতা নেই।
রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে সরকার ও দলের প্রধানের মন যোগানোর প্রাণান্ত চেষ্টা আছে, কিন্তু দেশের
অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এবং অত্যাচারিত নিপীড়িতদের সুবিচার
পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, আইনভঙ্গকারীর শাস্তির নিশ্চয়তা ও
ভুক্তভোগীর সুবিচার প্রদান করার গ্যারান্টি না থাকলেই সমাজে অপরাধ বাড়ে। ছলেবলে-কৌশলে
অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের প্রাণান্তকর চেষ্টাই অপরাধ করার দুষ্ট প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ে
কয়েকগুণ মুনাফা বা সম্পদ অর্জনের দূরাকাঙ্ক্ষাই দুর্নীতির জন্ম দেয়। যে একবার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত
হয় সে কখনও সত্ভাবে অর্থোপার্জন করতে পারে না। ব্যবসা হোক, চাকরি হোক বা যে কোন পেশা
হোক, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি বিধান নিশ্চিত করতে পারলে, দুর্নীতি কখনও হ্রাস পাবে না। আর
দুর্নীতি কমাতে না পারলে এবং আইনের শাসন ও সময়মতো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে
দারিদ্র্য ও অপরাধ করার প্রবণতা দূর হবে না। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যত বৃদ্ধি পাবে, আর্থিক
অভাব-অনটন যত বাড়বে দরিদ্র শ্রেণীর যুবক-যুবতীদের নৈতিক অবক্ষয় যেমন চুরি-চামারি,
ছিনতাই, সন্ত্রাস, খুন-খারাবি, মাদকাসক্ত ইত্যাদি অপরাধ বাড়বে, বর্তমান অবস্থা তাই হয়েছে।
ছিন্নমূল,বেকার,দরিদ্র যুবক-যুবতীরা, চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তিতে নিমগ্ন হয়েছে। তাতে
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমছে।
একদিকে মূল্যস্ফীতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি করছে, ক্ষুধার্ত দরিদ্র, বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানবিক
মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে অতি মুনাফালোভী, ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ,অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ার
দুর্বার নেশায় দুর্নীতি, পণ্যদ্রব্য মজুত, একচেটিয়া ব্যবসা, খাদ্য ও ওষুধে জীবননাশী ভেজাল মিশ্রণ,
ভূমিদস্যুতা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের অর্থ লুটে নিচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে
অপরাধীরা যামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা পার পেয়ে বারংবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে।
এই যে সর্বনাশা অবক্ষয়, এর প্রতিকার করতে পারে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং
সর্বশেষে বিচার বিভাগ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই জনগণের শান্তি ও স্বস্তিতে বাঁচার পন্থা নিহিত
। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি দুর্নীতিতে আকণ্ঠ মগ্ন থাকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি রাজনৈতিক বা
ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহূত হয়, কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক শৃঙ্খলা-বিহীনভাবে পরিচালিত হয় তাহলে
কোনদিনও“দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন” হবে না। অপরাধী অন্যায় করে পার পেয়ে গেলে সমাজ ও
দেশে অন্যায়, অনাচার, অত্যাচার বৃদ্ধি পাবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক অঙ্গনে নৈতিক
অবক্ষয় ও অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা দূর করা আবশ্যক এবং সে দায়িত্ব সরকারের। আশাকরি
সরকার এ বিষয়ে মনযোগ দেবেন।
তিনটা পর্যন্ত কয়েক ঘন্টাব্যাপী বন্দুকযদ্ধে ১২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। শুধু বন্দুকযুদ্ধ নয়,
ইট-পাটকেল ছোঁড়াসহ ককটেল বিস্ফোরণও ঘটেছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৯০জন এবং ঢাকা কলেজের ৩০জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি
হয়েছেন। অতি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। হোটেলে এক দল ফাও খেয়েছিল, অন্য
দলের ছাত্ররা সেটার সমালোচনা করার কারণে ফাও খাওয়া দল তাদের উপর চড়াও হয়। ফলে
উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষে বাঁধে।
ঘটনা তদন্তের জন্য এখন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি নিযুক্ত হয়েছে। একইরকম তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মার্চ
মাসেই রাজধানীর দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ আশেপাশের বিল্ডিং-
এ গাড়ি ভাংচুর করে। এ রকম ঘটনা প্রায়শই সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে লেগেই আছে।
অতীতে এবং বর্তমানেও গ্রামে-গঞ্জে এক গ্রাম বা এক পাড়ার বাসিন্দারা অন্য পাড়া বা অন্য গ্রামের
মানুষকে তুচ্ছ কারণে লাঠিসোঁটা,বল্লম,ও মাছ ধরার টেঁটা নিয়ে আক্রমণ করে। তাতে হতাহতের
সংখ্যা শততে উন্নীত হয়, পুলিশ আসে, মামলা হয়, পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালায়। পুরুষশূন্য গ্রাম খাঁ
খাঁ করে, স্ত্রী, কন্যা, মাতাগণ উদ্বিগ্ন জীবন যাপন করে। একই ঘটনা বছরের পর বছর পুনরাবৃত্তি
ঘটে। গ্রামের বাসিন্দারা না হয় অশিক্ষিত। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্ররা তো কিছুটা
হলেও শিক্ষার আলো পেয়েছে। এতটুকু শিক্ষার প্রভাব তো ওদের অন্তকরণে কোন পরিবর্তন আনেনি।
সামান্য ও তুচ্ছ ঘটনা যা আলোচনা বা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে পারে তা নিয়ে দু’দল
লাঠিসোঁটা ও বন্দুক নিয়ে নেমে পড়ে। এ কিসের আলামত। মনোবিজ্ঞানী ছাড়াও সাধারণ জ্ঞানী
ব্যক্তি বলে দিতে পারেন এখানে ছাত্রদের সর্বনাশা নৈতিক অবক্ষয় দায়ী। ছাত্ররা ধৈর্য, সহিষ্ণুতা,
শিষ্টাচারের শিক্ষা পায় না, কিংবা পেলেও তা গ্রহণ করে না। কারণ শিক্ষাঙ্গনে সে পরিবেশ নেই।
ছাত্ররাজনীতি, ছাত্র নামধারী কিছু বহিরাগতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মূল রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি,
ক্যাডারগিরি, কিংবা আর্থিক ফায়দা অর্জনের জন্য, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, ভর্তি ও হলে সীট
বন্টন বাণিজ্য,এ সবের মধ্যে কিছু ছাত্র নিমজ্জিত আছে। এরাই ফাও খেতে চায়, বিনা টিকেটে বাসে
যাতায়াত করতে চায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের এ
অবক্ষয় বন্ধ করতে হলে পরিবেশ উন্নত করতে হবে। শুধু শিক্ষকগণ একা এটা করতে পারবেন না।
মা-বাবা থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেরই শিক্ষকের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবার,
সমাজ ও দেশ এক বৃন্তের ৩ ফুল। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী একটি পরিবার থেকে এসেছে। পরিবারের প্রধান
বা গুরুজন হলেন মা-বাবা ,চাচা-চাচী, মামা-মামী, দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি এবং তাদের
মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ, সাংসদ, মন্ত্রী এমনকি
প্রধানমন্ত্রী। পরিবারের প্রধান ও গুরুজনরা যদি স্ব স্ব বিচরণ ক্ষেত্রে আচরণের
ধৈর্য,সহিষ্ণুতা,সততা,শিষ্টাচার, ইত্যাদি গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটান, তাহলে দেশে
অস্থিরতা,দুর্নীতি,অবক্ষয় থাকতে পারবে না। কারণ গুরুজনদের কর্মকাণ্ড এবং আচরণ দেখে ঐ
পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের গুণাবলীর অনুশীলন করা শিখবে। আর যদি ছাত্র-ছাত্রীরা না শিখতে
চায় তখন গুরুজনদের দায়িত্ব হবে শাসনের মাধ্যমে তাদেরকে শিখানো।
একথা অনস্বীকার্য যে এ অবক্ষয়ের সৃষ্টি গুরুজনদের আচরণ থেকে। যেমন ব্যবসায়ী হয়ে তিনি যদি
শুল্ক কর ফাঁকি দেন, অতি মুনাফার উদ্দেশ্যে পণ্য মজুত করনে, একক উত্পাদনকারী বা
আমদানীকারী হিসাবে বাজার দখল করে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাদের অর্থ লুটে নেন,
তাহলে তার সন্তানগণ কি একই আচরণ শিখবে না? যে শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট কোচিংদ্বারা
অর্থোপার্জন করেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অবাঞ্ছিত বা অনৈতিক আচরণ করেন, রাজনৈতিক দলের
লেজুড়বৃত্তি করেন, তার আচরণ থেকে সন্তানরা বা ছাত্র-ছাত্রীরা কি শিখবে। তেমনি সরকারি বা
বেসরকারি চাকরিজীবীগণ যারা ঘুষ, দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েন, তাদের সন্তানরা-মা-
বাবার আচরণ থেকে কি শিক্ষা নেবে, আলস্য, অপব্যয়,অনাচার ছাড়া কিছুই শিখবে না। তেমনি যে
রাজনৈতিক নেতা বা সাংসদ ভোটের সময় জনগণকে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখান, কিন্তু ভোটের পরে
টিকিটিও দেখান না, ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে দুর্নীতি করতেও দ্বিধা করেন না, দলের জনপ্রিয়তা লাভ
করতে বিপক্ষের সাংসদ ও নেতা নেত্রীকে অশ্লীল ভাষায় পার্লামেন্টে গালাগালি করেন, তাদের সন্তানরা
কি একই আচরণ শিখবে না। তেমনি যে সব মন্ত্রিগণ মূল্যস্ফীতির ভোগান্তি, আইন-শৃঙ্খলার
অভাবজনিত অশান্তি থেকে দেশের জনগণকে বাঁচাতে চেষ্টা না করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে ব্যস্ত থাকেন
তারা তাদের সন্তানকে কি শিক্ষা দেবেন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা
আঁকড়ে থাকার প্রতিযোগিতা, দেশের ও জনগণের উন্নতি সাধনের কোন প্রতিযোগিতা নেই।
রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে সরকার ও দলের প্রধানের মন যোগানোর প্রাণান্ত চেষ্টা আছে, কিন্তু দেশের
অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার এবং অত্যাচারিত নিপীড়িতদের সুবিচার
পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, আইনভঙ্গকারীর শাস্তির নিশ্চয়তা ও
ভুক্তভোগীর সুবিচার প্রদান করার গ্যারান্টি না থাকলেই সমাজে অপরাধ বাড়ে। ছলেবলে-কৌশলে
অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের প্রাণান্তকর চেষ্টাই অপরাধ করার দুষ্ট প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ে
কয়েকগুণ মুনাফা বা সম্পদ অর্জনের দূরাকাঙ্ক্ষাই দুর্নীতির জন্ম দেয়। যে একবার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত
হয় সে কখনও সত্ভাবে অর্থোপার্জন করতে পারে না। ব্যবসা হোক, চাকরি হোক বা যে কোন পেশা
হোক, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি বিধান নিশ্চিত করতে পারলে, দুর্নীতি কখনও হ্রাস পাবে না। আর
দুর্নীতি কমাতে না পারলে এবং আইনের শাসন ও সময়মতো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে
দারিদ্র্য ও অপরাধ করার প্রবণতা দূর হবে না। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যত বৃদ্ধি পাবে, আর্থিক
অভাব-অনটন যত বাড়বে দরিদ্র শ্রেণীর যুবক-যুবতীদের নৈতিক অবক্ষয় যেমন চুরি-চামারি,
ছিনতাই, সন্ত্রাস, খুন-খারাবি, মাদকাসক্ত ইত্যাদি অপরাধ বাড়বে, বর্তমান অবস্থা তাই হয়েছে।
ছিন্নমূল,বেকার,দরিদ্র যুবক-যুবতীরা, চুরি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তিতে নিমগ্ন হয়েছে। তাতে
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমছে।
একদিকে মূল্যস্ফীতি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি করছে, ক্ষুধার্ত দরিদ্র, বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানবিক
মূল্যবোধ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে অতি মুনাফালোভী, ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ,অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ার
দুর্বার নেশায় দুর্নীতি, পণ্যদ্রব্য মজুত, একচেটিয়া ব্যবসা, খাদ্য ও ওষুধে জীবননাশী ভেজাল মিশ্রণ,
ভূমিদস্যুতা ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের অর্থ লুটে নিচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে
অপরাধীরা যামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপরাধীরা পার পেয়ে বারংবার একই অপরাধ করে যাচ্ছে।
এই যে সর্বনাশা অবক্ষয়, এর প্রতিকার করতে পারে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং
সর্বশেষে বিচার বিভাগ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেই জনগণের শান্তি ও স্বস্তিতে বাঁচার পন্থা নিহিত
। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি দুর্নীতিতে আকণ্ঠ মগ্ন থাকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি রাজনৈতিক বা
ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহূত হয়, কিংবা রাষ্ট্র কর্তৃক শৃঙ্খলা-বিহীনভাবে পরিচালিত হয় তাহলে
কোনদিনও“দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন” হবে না। অপরাধী অন্যায় করে পার পেয়ে গেলে সমাজ ও
দেশে অন্যায়, অনাচার, অত্যাচার বৃদ্ধি পাবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক অঙ্গনে নৈতিক
অবক্ষয় ও অর্থনৈতিক শোষণ-বঞ্চনা দূর করা আবশ্যক এবং সে দায়িত্ব সরকারের। আশাকরি
সরকার এ বিষয়ে মনযোগ দেবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন