সোমবার, ২ এপ্রিল, ২০১২

গোয়েন্দা রিপোর্ট

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের নির্দেশে একটি গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে জরিপ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তরে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা ১৬ জন। এর মধ্যে দক্ষিণে ৯ জন আর উত্তরে ৭ জন মেয়র প্রার্থী হবেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৮ জন, বিএনপির ৩ জন, জাতীয় পার্টির ২ জন, জাসদের একজন এবং এবং স্বতন্ত্র প্রাথী হবেন দুইজন। এছাড়া ঢাকা সিটির দক্ষিণ ও উত্তরে মোট ৯২টি ওয়ার্ডে ৪শ'র বেশি কাউন্সিলর (ওয়ার্ড কমিশনার) প্রার্থী হবেন।
গোয়েন্দা সংস্থাটি একমাস জরিপ করে এসব তথ্য পেয়েছে। তারা নির্বাচনে সম্ভাব্য ১৬ জন মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলরের জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সরকারের উচ্চপর্যায়ে ইতিমধ্যে রিপোর্ট পেশ করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম, আওলাদ হোসেন ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, নাগরিক কমিটির ব্যানারে তুহিন মালিক নির্বাচনে লড়বেন বলে গোয়েন্দা জরিপে জানানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন পেলে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে। তবে যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সাদেক হোসেন খোকা অথবা মির্জা আব্বাস_ এ দু'জনের একজনকে প্রার্থী করা হতে পারে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করবেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং অপর নেতা আবদুল কাইয়ুম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকে ১৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ১০২ জন মেয়র পদে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকেই সমর্থন করবেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ২১ জন সাঈদ খোকনকে, ১৭ জন আওলাদ হোসেনকে, ১৭ জন ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে, ৯ জন হাজী সেলিমকে এবং ৩ জন সাবের হোসেন চৌধুরীকে সমর্থন দিবে বলে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ঢাকা দক্ষিণে ৭৩ জন প্রার্থী কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এর মধ্যে ৪৮ জন দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিবেন। বাকি কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ১৯ জন সাদেক হোসেন খোকাকে, ৬ জন মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিবেন বলে জানা গেছে। প্রচার-প্রচারণা শুরু না হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সাদেক হোসেন খোকার জনপ্রিয়তা মির্জা আব্বাসের তুলনায় ১৫ ভাগ বেশি।
ঢাকা দক্ষিণে ৫৬টি ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টি থেকে ১৩ জন মহাজোটের প্রার্থী হতে চাইবেন। এছাড়াও কাজী ফিরোজ রশিদকে মেয়র প্রার্থী করবে জাতীয় পার্টি। ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কাজী ফিরোজ রশিদ প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের বাইরে জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার মহাজোটের প্রার্থী হতে মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়াও নাগরিক কমিটির ব্যানারে ড. তুহিন মালিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে। তার কোন দলীয় পরিচয় নেই।
গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাঈদ খোকন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে হাজী সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তবে মনোনয়ন পেলে সাঈদ খোকনের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি।
নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারেও জরিপ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ঢাকা দক্ষিণে ৫৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ২৩টি, বিএনপি ২৯টি, জাতীয় পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩টি পদে জয়লাভ করবে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ঢাকা-উত্তর : ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, এখলাস উদ্দিন মোল্লা এমপি, কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। প্রার্থীরা ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি থেকে বাহাউদ্দিন বাবুল মনোনয়ন চাইবেন। তিনিও প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করবেন বলে গোয়েন্দরা জানিয়েছে। বিএনপি নির্বাচন করলে ঢাকা-উত্তরে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে দলীয় প্রার্থী করা হতে পারে। তবে এসএ খালেকও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন।
ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকে ১৬৮ জন প্রার্থী হতে চাইবেন। এর মধ্যে ১২৪ জন দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন। বাকিদের মধ্য থেকে ৩৮ জন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে এবং ৬ জন অন্যান্য প্রার্থীকে সমর্থন করবেন বলে গোয়েন্দারা রিপোর্টে জানিয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রচারণায় ও জনসমর্থনের ভিত্তিতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া অনেক এগিয়ে আছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ঢাকা-উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি ওয়ার্ডে এই দল থেকে প্রায় ৬৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে ৫৮ জন দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যে কোন মেয়র প্রার্থীকে, ৩ জন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে এবং ৩ জন অন্যান্য প্রার্থীকে সমর্থন করবে বলে জানা গেছে।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি থেকে বাহাউদ্দিন বাবুল দলীয় মনোনয়ন পাবেন মনে করে প্রচারণা শুরু করেছেন। উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি থেকে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে সবাই দলীয় মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন করবেন বলে জানা যায়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা-উত্তরে মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ ভাগ ভোট তিনি পাবেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে এই জোটের ভোটের অন্তত ৪০ ভাগ মান্নার পক্ষে যাবে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে মেয়র পদে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে গোয়েন্দারা জানায়। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে মান্নার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ৩৬টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ২০টি, বিএনপি ১৫টি এবং স্বতন্ত্র ১ জন প্রাথী জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ