রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

সরকারি কর্মচারীর বাসা যখন ইয়াবার গোডাউন


দীর্ঘদিন ধরেই মরণনেশা ইয়াবার ব্যবসা করছিলেন সরকারি কর্মচারী আমির হোসেন। কঠোর গোপনীয়তায় দামি এ মাদকের নিষিদ্ধ ব্যবসা করছিলেন তিনি। এ জন্য নিজ বাসাকেই ব্যবহার করতেন গোডাউন হিসেবে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ইয়াবার বিশাল মজুতসহ তিনি শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন ডিবি পুলিশের হাতে। দুর্ধর্ষ এই ইয়াবা ব্যবসায়ী আমির হোসেন গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী। শুক্রবার গভীর রাতে তাকে আগারগাঁওয়ের সরকারি কোয়ার্টার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোয়ার্টারে অভিযান চালিয়ে ১৬ হাজার ৫০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার মূল্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে ডিবি পুলিশ। পরে আমির হোসেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার জাল নোটও উদ্ধার করা হয়। ডিবি কর্মকর্তারা জানান, আমিরের স্ত্রী ময়নাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। অভিযানের বিষয়টি আগেই টের পাওয়ায় পালিয়ে যায় সে। ডিবি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার গভীর রাতে আমির হোসেনের সরকারি কোয়ার্টারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ১৬ হাজার ৫০০টি ইয়াবা বড়ি ও সাত হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৯৫০৩ নম্বরের একটি প্রাইভেট কার ও ১০ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। আমিরের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলো কাজী শাহ রিয়াজ টুইন, আক্তার হোসেন ও জহির উদ্দিন ভূঁইয়া। গতকাল মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে গ্রেপ্তারকৃতদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গণপূর্ত বিভাগের মেকানিক ফিডার পদে ৩০ বছর ধরে চাকরি করে আসছেন আমির। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় ২০০২ সালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা শুরু করেন। মোহাম্মদপুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সুহূদ ও তুহিনের হাত ধরে মাদক ব্যবসায় নামেন আমির।  সংঘবদ্ধ একটি চক্রের মাধ্যমে আমির টেকনাফ ও চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় পাইকারি বিক্রি করতেন। তার চক্রে আরও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা, গৃহনির্মাণ ব্যবসায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, ইয়াবা বেচাকেনায় আমিরকে সহায়তা করতো তার স্ত্রী ময়না। তিনি জাতীয় সংসদ ভবনে চাকরি করেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর জানান, আমির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এর আগেও ইয়াবা বিক্রির ঘটনায় সে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় টাকা-পয়সা দিয়ে সে চাকরি বাঁচাতে সক্ষম হয়। আমিরের গ্রামের বাড়ি সিলেটে। গণপূর্ত বিভাগে চাকরি করার পাশাপাশি রাজধানীতে আমিরের একটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। ওই দোকানে কাজ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েক ইয়াবাসেবী ছাত্রের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রথমে আমির ইয়াবায় আসক্ত হন। এরপর নিজেই খুচরা ব্যবসায়ী হিসেবে আবির্ভূত হন। একপর্যায়ে দুই রাজনৈতিক নেতার সহায়তায় আমির মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে পাইকারিভাবে ব্যবসা আরম্ভ করেন। তদন্তের স্বার্থে ওই দুই রাজনৈতিক নেতার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি ডিবি কর্মকর্তা মশিউর। ইয়াবার চালান আটকের ঘটনায় শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া অপর আসামি কাজী শাহ রিয়াজ ওরফে টুইন এআইইউবিতে পড়াশোনার সময় ইয়াবা আসক্ত হন। পরে নিজেই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি এসটিডিএল হাউজিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও  আমিরের ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম পার্টনার। ওদিকে শুক্রবার রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের ছাত্রাবাস থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে নারকোটিক্স। সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো উদ্ধার করা হয়। এ সময় সেখান থেকে ৩ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নদ্দা এলাকা থেকে আরও ২ নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের সবাই উপজাতি। লুৎফর রহমান জানান, উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটগুলো পাইকারি প্রতি পিস বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। খুচরা মূল্য প্রতি পিস ৪০০ টাকা। সে হিসেবে উদ্ধারকৃত ইয়াবার মূল্য অন্তত ৮ লাখ টাকা। 
জাল টাকা: ওদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ৪ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রকারের জাল নোটসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।) গ্রেপ্তারকৃতরা হলো কামাল হোসেন (২৮) ও হুমায়ুন কবির (৩৬)। গত শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর বীরউত্তম এ টি এম হায়দার সড়কে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় জালনোট ব্যবসায়ী কামাল হোসেন ও হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার পাঁচ শ টাকার প্রায় ১০ লাখ ৪ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত কামাল জানায়, প্রায় ৯ মাস আগে তিনি এ ব্যবসায় জড়িত হয়েছে। কামাল কাওরানবাজারের স্টার হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। ৯ মাস আগে হোটেলে কাজ করার সময় ওই  হোটেলে খেতে আসে আলম নামে এক ব্যক্তি। আলম তাকে তার মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। পরে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এ কাজে তাকে নতুন বাজারের রহিম ও বসুন্ধরা এলাকার সুমন সহযোগিতা করে বলে জানায় সে।   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ