রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

ডেসটিনি গ্রাহকরা আতঙ্কে, বন্ধ হচ্ছে একের পর এক শাখা


মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের গ্রাহকদের মধ্যে চলছে আতঙ্ক। বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে আশঙ্কা। এদিকে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির অনেক শাখা। গ্রাহকরা ধর্না দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে। প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন তারা। ফেরত চাইছেন বিনিয়োগ করা অর্থ। এসব কারণে গ্রাহকদের পাশাপাশি ডেসটিনির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন আতঙ্কে ও অনিশ্চয়তায়। সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেসটিনি গ্রুপের অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি অবৈধ ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারের পর এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও ও গাজীপুরে ডেসটিনির বেশ কয়েকটি শাখা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা অফিসে আসছেন না। তাদের অনেকেই এখন লাপাত্তা। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানতে পারে, এটি একটি ‘হায় হায় কোম্পানি’। কোম্পানির সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা গ্রাহকদের জমানো হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যে কোন সময় চম্পট দিতে পারেন। এ কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রণালয় ও সমবায় অধিদপ্তরকে এ ব্যাপারে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত টিম। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে ডেসটিনির অবৈধ কার্যক্রমের কিছু অংশ জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ডেসটিনির কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তি এরই মধ্যে বিনাশ্রমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০০ সালে ‘ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড’ নাম নিয়ে যাত্রা শুরুর পর ১১ বছরের ব্যবধানে  কোম্পানিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ৩৭টি। ডেসটিনি ২০০০-এর মুনাফা দিয়েই এই প্রতিষ্ঠানগুলো করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকসংখ্যা ৭০ লাখ। চলতি বছরের মধ্যে এক কোটি ছাড়িয়ে যাওয়া তাদের লক্ষ্য। এদিকে কাগজে-কলমে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে গুটি কয়েক ব্যক্তির নামে। তারা হলেন: ডেসটিনির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন, ডেসটিনির সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ গোফরানুল হক, পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ সাইদ-উর রহমান, পরিচালক (ক্রয়) মেজবাহ উদ্দীন স্বপন, পরিচালক (প্রশাসন) সাকিবুজ্জামান খান প্রমুখ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়া। এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই আমানত সংগ্রহ করেছে। একই ভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হয়েও শেয়ার বিক্রি করে ১৪০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের জন্য ডেসটিনির মতো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলোর যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের মতো চলতি, স্থায়ী, সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ, মাসিক মুনাফা, শেয়ার মূলধন ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ করছে। এর জন্য কমিশন এজেন্টদের ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শহরের আনাচে-কানাচে ও গ্রামগঞ্জে। ২০০১ সালে সমবায় সমিতি আইনে অনুমোদন নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করেছে ২০০০ কোটি টাকা। সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির যোগসূত্র থাকায় অনেক সাধারণ মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরের শাখাওয়ারী সঞ্চয় সংগ্রহ, শেয়ার মূলধন, আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব নেই। ওই বছর অনুমোদনবিহীন ব্যয় হয়েছে ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সঞ্চয় ও শেয়ার মূলধন আহরণে কমিশন বাবদ ব্যয় হওয়া ২০০ কোটি টাকাকে গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় দেখানো হয়েছে। এছাড়া স্থিতিপত্রে প্রাপ্তি ও প্রদানে কোন মিল নেই এবং প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চিত্র এতে প্রতিফলিত হয় না। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি জনগণের কাছ থেকে যে পরিমাণ সঞ্চয় ও শেয়ার মূলধন সংগ্রহ করেছে বলে নিরীক্ষা দলকে জানিয়েছে, তা-ও সঠিক নয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ডেসটিনির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডেসটিনিসহ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, এদের কার্যক্রম এখন যেন আমাদের কালচার হয়ে গেছে। এসব কালচার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ