রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশীরা বিনিয়োগ করেন না


আগামী নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও সমঝোতা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। গতকাল রাজধানীতে ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পদ্ধতি খোঁজার পরামর্শ দেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছরের কম সময় বাকি। এখনও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন সমঝোতা হয়নি কিভাবে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশীদারীমূলক হবে। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট অত্যন্ত অনিশ্চিত। মজিনা বলেন, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকলে তারা অর্থ বিনিয়োগে দ্বিতীয় চিন্তা করতে পারে। তবে বাংলাদেশের এসব সমস্যাকে সমাধানযোগ্য বলে মন্তব্য করে মজিনা বলেন, বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মিলে সরকার ভাল সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সমাধানের পথে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে মজিনা বলেন, এ দেশের প্রকৃতি, পরিবেশ সবই দ্রুত উন্নয়নের অনুকূলে। তাই শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই সত্যিকারের উদীয়মান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরা সম্ভব। বাংলাদেশে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে দ্বিতীয় চীন হতে বেশি সময় লাগবে না বলে মন্তব্য করেন মার্কিন দূত। ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে অনেকে বিদেশী ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করতে চান।  কিন্তু দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তারা এখানে বিনিয়োগ করেন না। ব্যবসায়ীদের ভীতি কাটানো এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরির্বতনেরও আহ্বান জানান তিনি। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ, আমেরিকান চেম্বারের প্রেসিডেন্ট আফতাব-উল ইসলাম, সেফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান তরফদার মো. রুহুল আমিন প্রমুখ। মজিনা বলেন, আমি বাংলাদেশে আগেও কাজ করে গেছি। সেসময় বিভিন্ন পেশার লোকজনের সঙ্গে আমি মিশেছি, তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করে গবেষণা করেছি এবং তাতে আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা। এই দেশের মানুষের কাজ করার স্পৃহা দারুণ। রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে মার্কিন দূতাবাসের হয়ে কাজ করেছি।  কিন্তু কোন দেশকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখিনি; অথচ বাংলাদেশকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি। আমি বিশ্বাস করি, আমার স্বপ্ন সত্যিই একদিন বাস্তবে রূপ নেবে। আমি এটাও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে বেশি সময় লাগবে না। তার মতে,  তৈরী পোশাক শিল্পে বিশ্বের পছন্দের জায়গা হচ্ছে বাংলদেশ। তাই এ পোশাক খাতের সম্ভাবনা ও প্রশংসা না করে পারা যায় না। বাংলাদেশ চাইলে গার্মেন্টস, পাট, চামড়া এবং ওষুধ সামগ্রীর ক্ষেত্রে বিশ্বের বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে। এ কে আজাদ বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি চলছে-  প্রয়োজনে টেবিল টকিং-এর মাধ্যমে তা সমাধান করার জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের ভাল বন্ধু। আমি চাই বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের দূরত্বটা ঘুচে যাক। বিশ্বব্যাংক আমাদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়,  যা আমাদের দেশের অবকাঠামো, শিল্প উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখে। আজাদ বলেন, হরতাল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ক্ষতি করে।  তাই সব ব্যবসায়ীকে হরতালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ