রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

নিরাপত্তাহীন আতঙ্কে আছি, র‌্যাবের নির্যাতনে আহত ঢাবি শিক্ষক সাইফুদ্দিন


র‌্যাব সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খান গতকাল পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি। নির্মম নির্যাতনে তার হাত ভেঙে গেছে। এখন ভয় আর ভীতির মধ্যে দিন কাটছে। তিনি বলেন, আমি এখন নিরাপত্তাহীন, আতঙ্কে আছি। বিভিন্নভাবে আমি এবং আমার পরিবারকে ফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার প্রশ্ন- দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরা যদি নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? সাইফুদ্দিন খান গত বুধবার র‌্যাব-এর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ওইদিন সন্ধ্যায় গাওয়াইরের বাসা থেকে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে গলির মুখে থাকা র‌্যাব’র গাড়ি সরানোর জন্য গাড়িচালক ল্যান্স করপোরাল নূরুল আমিনকে অনুরোধ করতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘তোর এত বড় সাহস, র‌্যাব’র গাড়ি সরাতে বলিস’-এ বলেই আমাকে মারতে থাকেন। গাড়ি পার্কিংয়ের মতো তুচ্ছ কারণে এভাবে নির্যাতন করা হবে- ভাবতে পারিনি। বুকে-পিঠে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি আর লাথির কারণে ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছি না। সাইফুদ্দিন খান আরও বলেন, আমার অপরাধ হলে র‌্যাব সদস্যদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু এরপরেও আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর এলোপাতাড়ি লাথি মারা হয়। আমি বুকের ব্যথায় কথা বলতে পারছি না। হাত, পিঠ ও মাথাসহ বিভিন্ন অঙ্গে নির্যাতনের কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। হাতের কনুই ভেঙে ফেলা হয়েছে। ডাক্তাররা এর জন্য অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছেন। এখন হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে বেশি বাড়াবাড়ির পরিণাম ভাল হবে না। র‌্যাব’র ল্যান্স কর্পোরাল নূরুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই খারাপ বলায় আমি এর প্রতিবাদ করি। তখন আমাকে আরও বেশি মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি স্বীকার করেছেন কর্তৃপক্ষ। র‌্যাব’র গাড়িচালক নূরুল আমীন মিয়া বলে র‌্যাব কি করতে পারে তা তো জানেন। এ কথা বলতে বলতেই তারা আমার কপালে ঘুষি মারে। বুকে লাথি মারে। তিনি বলেন, র‌্যাব’র লেফটেন্যান্ট আলিম মিয়া গতকালও আমার পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন। সাইফুদ্দিন এ ঘটনা রাতেই ভিসি, প্রো-ভিসি ও শিক সমিতিকে জানান। তিনি জানান, মারধর করার পর র‌্যাব’র ওই ড্রাইভার আমার পরিবারকে ফোনে হুমকিধমকি দিচ্ছে। আহত শিক্ষক সাইফুদ্দিন অস্ট্রেলিয়ান সরকারের বৃত্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নে দু’বছর উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন।  মাত্র ক’দিন আগে তিনি বিদেশ থেকে এসেছেন। এদিকে গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন আহত শিক্ষকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সান্ত্ব্তনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে আহত ওই শিক্ষক এখনও মামলা করেননি। তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় এই ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে ঢাবি ভিসি অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এখনও মামলা হয়নি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এএম আমজাদ বলেন, আমি সন্ধ্যায় কাগজ হাতে পেয়েছি। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষক র‌্যাব’র হাতে নির্যাতনের দু’দিন পরও মামলা না হওয়ায় আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। এ শিক্ষকের যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে তার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই বহন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। আমরা শিক্ষকদের ওপর এ ধরনের নির্যাতনের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় হতবাক।
র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: র‌্যাব সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাটি ঘটেছে দু’জন ব্যক্তির মধ্যে। এখানে র‌্যাব কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে টেনে আনা ঠিক হবে না। তারা দু’জনে একই এলাকার বাসিন্দা। একই গলি দিয়ে চলাচলের কারণে গাড়ি পার্কিং নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে দু’জনেই হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম. সোহায়েল বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তও শুরু করেছি। শিগগিরই অনাকাঙিত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
সংগঠনের নিন্দা: এদিকে ঢাবি’র শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খানকে র‌্যাব কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা ও প্রতিাদ জানিয়েছে। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী অরাজনৈতিক সংস্থা হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট রাইটস সোসাইটি (হারস্‌)’র নির্বাহী পরিচালক আলী আকবর এক বার্তায় নির্যাতনকারী র‌্যাব সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে এ সংস্থা মনে করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা অভিযুক্ত র‌্যাব সদস্যের শাস্তি দাবি করেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ