রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

বেসামাল বাজার


বেসামাল পণ্যের বাজার। দামের ঊর্ধ্বগতিতে সব শ্রেণীর ক্রেতাদের নাভিশ্বাস। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যর্থতায় কাঁচাবাজার, মাছ-মাংসের বাজার, মসলার বাজার- সর্বত্রই অস্থিরতা। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব এর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ সালে পণ্যের দর বাড়ার হার ১২ দশমিক ৭৭ টাকা। চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনেক পণ্য এক বছরের তুলনায় বেড়েছে অনেক। ট্রেডিং করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী প্রায় সবগুলো পণ্যের দাম অল্প হলেও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ডিমের হালিতে। আছে লবণ, ডাল, ময়দা, সয়াবিন তেল, মুরগি, চিনি। অস্থির সবজির দামও। ক্যাবের প্রেসিডেন্ট কাজী ফারুক বলেন, বাজার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারকে প্রাইস কমিশন গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ‘প্রতিযোগিতা আইন’ চূড়ান্ত করে সংসদে পাস করতে হবে। তবেই সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 
সবজির যোগান ভাল, দামও বেশি: বাজারে সবজির যোগান ভাল। শীতের অনেক সবজি এখনও বাজারে। প্রতিদিনই ক্ষেত থেকে তুলে আনা হচ্ছে ঢাকায়, পৌঁছানো হচ্ছে জেলা শহরগুলোতে। যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন উপজেলা শহরেও। তবুও কমছে না দাম। বরং এখন আগের চেয়ে আরও বাড়ছে। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার গতি বাড়তে শুরু করে। এখন অনেক পণ্যের দামই আকাশছোঁয়া। বেশির ভাগ সবজির কেজিই ২৫ টাকার বেশি। কাওরান বাজারে বৃদ্ধ এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে সবজি আছে তবুও দাম কমছে না। কারণ, আমরা মুনাফা চাইছি। সবাই শুধু মুনাফার পেছনে দৌড়াচ্ছি। ফলে সবজির প্রচুর যোগানের পরও দাম কমছে না। তার সঙ্গে মাপে ফাঁকি দেয়া তো রয়েছেই। 
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সাক-সবজির প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। গতকাল পিয়াজের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা থেকে ২৮ টাকা। রসুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আদা ৪০ থেকে ৫২ টাকা। কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। আলু ১৫ থেকে ১৮ টাকা। শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টমেটো ২০ থেকে ৩৫ টাকা। ভেন্ডি ২০ থেকে ৩৫ টাকা। বেগুন ২০ থেকে ২৮ টাকা। মাঝারি আকারের লাউ প্রতিটি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। করলার প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। ঝিঙ্গা ২৫ থেকে ৩২ টাকা। চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হয়। রাজধানীর কাওরান বাজারের সবজি আড়তে লাউ নিয়ে আসা সাভারের কৃষক আবুল মনাফ জানান, খরচ বেশি। কিন্তু সেই অনুপাতে দাম নাই। তার ওপর রাস্তায় রাস্তায় পুলিশি চাঁদাবাজি আর চাঁদাবাজদেরও দৌরাত্ম্য। সব মিলিয়ে কৃষকরা বাজারে সবজি নিয়ে এসে মূলধনও তুলতে পারেন না। তিনি জানান, তারা যে দামে সবজি খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন তা ক্রেতার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা টাকা না পেলেও ব্যবসায়ীরা ঠিকই মুনাফা বাড়িয়ে নেন। 
ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির: সরকার না বাড়ালেও কোম্পানিগুলো ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে তাদের বাড়ানো দামেই পাইকারি ও খুচরা মার্কেটে সয়াবিন তেল ও পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য মতে, গত এক বছরে তেলের দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে বাস্তব হিসাবে এ দাম আরও বেশি। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট কাজী ফারুকের মতে, দাম এতটাই বেড়েছে যে সাধারণ ক্রেতার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে সরকার ব্যর্থ। আবার কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সুযোগগুলোও কাজে লাগাচ্ছে না তারা। কাওরান বাজারের সোনালী ট্রেডার্সের আবুল কাশেমের মতে, সঙ্কট তৈরি করেই কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়েছে। তবে কোম্পানিসূত্র জানিয়েছে, বাজারে ডলারের দাম বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশে প্রভাব পড়ছে। ফলে দাম বাড়ানো হয়েছে। খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসেই তেলের দাম বেড়েছে ৪ টাকা। ১২৫ টাকা গায়ের মূল্য থেকে নেয়া হয়েছে ১২৯ টাকায়। তবে ১ লিটার তেলের ক্ষেত্রে সেটিও মানা হচ্ছে না। পাইকারি বাজারেই বিক্রি হচ্ছে ওই দামে। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে তা বেড়ে গিয়ে কোথাও ১৩২ কোথাও ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ঠিক এই সময়ে ভোজ্যতেল অর্থাৎ সয়াবিন বিক্রি হয় ১০৯ টাকা প্রতি লিটার। এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫ টাকা। আর এক বছরে তা বেড়েছে প্রায় ২৫ টাকা। সয়াবিন তেলের মধ্যে খোলা তেল প্রতি এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। পামওয়েল গত বছর বিক্রি হয় ৯৩ টাকায় প্রতি লিটার। আর গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা।  
এদিকে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারি ভাবে দাম বাড়ানোর কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি বা সরকার থেকে কিছু বলাও হয়নি। কিন্তু কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ, মোস্তফাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তেলের গায়ের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয় গত সপ্তাহেই। তবে তখন বাজারে সরবরাহ করা হয়নি। চলতি সপ্তাহ থেকে ওই তেল ছাড়া হয়েছে বাজারে। বাজারে এখন বোতলবদ্ধ তীর ব্র্যান্ডের প্রতি ৮ লিটার সয়াবিনের গায়ের মূল্য ১০৩১ টাকা। ৫ লিটার ৬৫০ টাকা। ২ লিটার ২৫৬ টাকা। রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের প্রতি ৫ লিটার ৬৫৫ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যান্যগুলো একই রকম। ২ লিটারের তেল গায়ের মূল্য থেকে কোথাও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৬০ টাকা নিচ্ছেন কেউ কেউ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ