বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

আত্মহনন! বর্তমান! পুলিশ! খবর!

একটি ছাঁদ। তার কিনারায় দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ। ছাঁদটা ১০ তলার উপরে। এই মানুষগুলো একে একে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়বে। একজনের উপরে একজন করে। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। দিগন্তে দেখা মেলে লালচে মেঘের! এই ছায়াবৃত্তেই নাকি সমাধি হবে এক এক করে কয়েকজন মানুষের।

এ বড় আজব ঘটনা। পৃথিবীর কোথাও কি এমনটি হয়েছে আগে? না! কেউ বলতে পারবে না হয়তো। সাত'শ কোটি মানুষের সাত'শ কোটি ধরণের ইচ্ছা। কত মানুষের কত রকম সমস্যা। আজ এই খানে, এই নির্জনে আত্মাহুতি দিতে চলেছে এই ক'জন মানুষ।

দলটির মধ্যে একজন বলে উঠল, চলো, শুরু করি। পাশের জন অকুতোভয়ে বলল, মাথা ঠিক মত কাজ করছে না!

আরেকজন বলল, এখন দৃষ্টি শক্ত করো, মনোবল দৃঢ় কর। আমরা সবাই মৃত্যুর স্বাদ পেতে যাচ্ছি।

কম বয়সী এক ছেলে ছিল। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। আকাশে উঠেছে সন্ধ্যার চাঁদ। লালচে রঙের আধখাওয়া চাঁদ! সে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে, এই চাঁদ আর পূর্ণ হবে না বোধহয়।

সবাই বলে উঠে, এই চাঁদ আমাদের জন্য অপূর্ণই থেকে যাবে। সবার গায়ে সাদা জামা। সবার চোখে কালো রঙ। সবাই ধীর স্থির, কেউ টু শব্দটি করছে না।

পেছনে এক লোক উঠে এলেন। ময়লা সবুজ রঙের পুলিশি পোশাকে ঢাকা দেহ! উনার হাতে একখানা চিঠি। আপনাদের দাবী সরকার মেনে নিয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে যান। কেউ কোন কথা বলল না। এক মুহুর্তের জন্য শান্ত হয়ে গেল পুরো পরিবেশ। "সরকার, আমাদের দাবী মেনে নিয়েছে"! অর্থাৎ সরকার চায় আমরা আত্মহত্যা করি! অস্ফুটে একটা শব্দ দূর থেকে উবে গেল।

পুলিশ, নির্বাক হয়ে এতগুলো লোকের মৃত্যু মিছিলের দিকে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না, এতগুলো লোক কি সত্যি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে?

ধীরে ধীরে মেঘ ধেয়ে আসে আকাশের চারিদিকে। সরকারী গাড়ির সাইরেন বেজে উঠে। নিচে অনেক মানুষের ভিড় জমে। সাংবাদিকরা ব্যাস্ত খবর সংগ্রহের কাজে, এটা ওদের পেটের ভাত, পুলিশরা ব্যাস্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, সেটা তাদের পেটের ভাত, আর সবাই ব্যাস্ত সবার কাজে। বড্ড বেশি গোলমেলে লাগছে সব।

"একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে, শিশু ও মহিলা সহ ১২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বাসটি উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সাথে সজোড়ে ধাক্কা খেয়ে পাশের খাদে ছিটকে পড়ে যায়..." "সরকার সমর্থক ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অনেক লোক আহত হয়েছে"...একটি বাড়িতে টিভিতে খবর চলছে।

ইতো মধ্যে শব্দ অনে বেশি হতে শুরু করল। ঘরের মালিক চেচাতে শুরু করল। "মরার জন্য আমার বাড়ি পাইলি তোরা? ঢাকা শহরে আর বাড়ি নাই"...

এক, দুই, তিন, এ যেন এক সত্যি অবাক করা দৃশ্য! একে একে ঝাপ দিয়ে দিলো মানুষের দল। পেছনের পুলিশ অফিসার অসার হয়ে যেমনটি দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠিক তেমনি দাঁড়িয়ে রইলেন! দাবীগুলো কাগজে ছাপা হওয়া অক্ষরে অক্ষরে যেন কালো বিগ্রোহের মত ঠেকে। সাইরেনের শব্দ মেলায় যায় দূরে।

কতগুলো প্রাণ এক সাথে যায় চলে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ