রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

আবার বাড়লো বিদ্যুতের দাম


লোডশেডিং ভোগান্তির মধ্যেই আবারও বাড়লো বিদ্যুতের দাম। এবার পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিটে ২৮ পয়সা ও গ্রাহক পর্যায়ে ৩০ পয়সা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। গড় হিসাবে পাইকারি দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর পাইকারি দাম বেড়েছে ছয় দশমিক ২৫ শতাংশ। ১লা মার্চ থেকেই এই বর্ধিত দাম কার্যকর হবে। এ নিয়ে চলতি বছরে দ্বিতীয়বারের মতো সব ধরনের বিদ্যুতের দাম বাড়লো। বর্তমান সরকারের সময়ে এ নিয়ে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়লো। চলতি শুষ্ক ও সেচ মওসুমে তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অধিক হারে বিদ্যুৎ কেনার কারণে অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে গত ১২ই মার্চে দাম বাড়ানোর আবেদন করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এ নিয়ে ১৯শে মার্চ গণশুনানি করে বিইআরসি। গতকাল বিকালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এটি আসলে মূল্য বৃদ্ধি নয়, তরল জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে মূল্য সমন্বয়। আর দাম বাড়ানোর ঘোষণার আগের সময় থেকে বর্ধিত দাম কার্যকর করার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি’র চেয়ারম্যান জানিয়েছেন- বিদ্যুৎ সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 
এর আগে গত বছরের ২৪শে নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম দুই ধাপে বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বিইআরসি। ওই ঘোষণা অনুযায়ী গত বছরেই তৃতীয় দফা এবং চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে দাম বাড়ানো হয়। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি ও ২০১০ সালের মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।
গতকাল দাম বাড়ানোর পর পাইকারি বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি গড় দাম তিন টাকা ৭৪ পয়সা থেকে বেড়ে চার টাকা দুই পয়সা হয়েছে। 
এর মধ্যে সর্বনিম্ন হারে মূল্য বেড়েছে কম পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিটে দাম বেড়েছে ১৮ পয়সা করে। এ পর্যায়ের গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটে মূল্য দিতে হবে তিন টাকা পাঁচ পয়সা। দ্বিতীয় ধাপে ১০০ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিটে বেড়েছে ২৫ পয়সা। এখন প্রতি ইউনিটে মূল্য হবে ৪ টাকা ২৯ পয়সা। ৪০০ ইউনিটের বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে দাম বেড়েছে ৪৬ পয়সা করে। এখন মূল্য হবে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা। 
সেচ পাম্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে খুচরা দাম হবে দুই টাকা ২৬ পয়সা। এক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে দাম বেড়েছে ১৩ পয়সা করে। ক্ষুদ্র শিল্পে সংযোগের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট মূল্য হবে প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ২ পয়সা। এক্ষেত্রে দাম বেড়েছে ৩৫ পয়সা করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ অনাবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ২৩ পয়সা করে দাম বেড়ে হয়েছে তিন টাকা ৯২ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিক আওয়ারে প্রতি ইউনিট ৬০ পয়সা এবং অফ পিক আওয়ারে ৪৬ পয়সা করে। এক্ষেত্রে ফ্ল্যাট মূল্য হবে প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৮৯ পয়সা। মধ্যচাপ সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৩৫ পয়সা এবং উচ্চচাপ সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ৩৩ পয়সা করে দাম বেড়েছে। 
সংবাদ সম্মেলনে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন, সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক ও ড. সেলিম মাহমুদ।
দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিদ্যুতে সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে তরল জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে। দেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ক্রমে  তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচও বাড়ছে। এসব কারণে দাম বাড়ানো প্রয়োজন হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তাহলে বিদ্যুতের খরচ কম হতো। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধিই একমাত্র সমাধান নয়। এর সঙ্গে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় বাড়াতে হবে। যেসব কেন্দ্র অনেক পুরনো উৎপাদন ক্ষমতার ৪০ ভাগও উৎপাদন হচ্ছে না সেসব ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। 
এখনও সরকারি খাতে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। রাতে অল্প সময়ের জন্য এগুলো থেকে বিদ্যুৎ নেয়া হয়। তারপরও জ্বালানি দামের সমন্বয়ের নামে মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন বন্ধ থাকলেও সামনে এসব কেন্দ্র থেকে আরও বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনতে হবে। এদিক বিবেচনা করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 
এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওজিপাডিকোর সর্বনিম্ন সিস্টেম লস ১১ ভাগকে মূল ভিত্তি করে পাইকারি গড় দামের সঙ্গে সমন্বয় করে খুচরা প্রতি ইউনিটের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বিদ্যুতের বর্তমান মূল্যবৃদ্ধি মূলত তরল জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে। 
এদিকে দাম বাড়ানোর আদেশে বিইআরসি কিছু শর্ত দিয়েছে। শর্তের মধ্যে আছে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের বেশির ভাগ গ্যাস যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে আর কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায়- সে সম্পর্কে বিইআরসিকে ৩০শে জুনের মধ্যে জানাতে হবে। গ্যাস এবং কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও একই সঙ্গে দাখিল করতে হবে। একই সময়ে বিদ্যুৎ প্লান্টের উৎপাদন ক্ষমতা, ব্যবহৃত জ্বালানির পরিমাণ মাসিক ভিত্তিক সংরক্ষণ করে তা কমিশনে জমা দিতে হবে। এছাড়া আগেরবার দাম বাড়ানোর সময় পিডিবিকে দেয়া শর্তগুলোর অসম্পাদিত অংশ পূরণেরও শর্ত  দেয়া হয়েছে বিইআরসি’র আদেশে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ