রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

অনন্যা’র উপেক্ষায় আত্মহত্যা অলি’র


অনন্যাকে বিয়ে করে অত্যন্ত আনন্দিত, গর্বিত হয়েছিলেন অলি। পারিবারিকভাবে বিয়ে হলেও বিয়ের আগে থেকেই চেনা-জানা ছিল তাদের। বিয়ের পর বিভিন্ন ফ্যাশন স্টুডিওতে গিয়ে ফটোসেশানও করেছেন তারা। মিডিয়ার অনেকের সঙ্গে অলি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন স্ত্রী অনন্যাকে। তখন অনেকেই অনন্যাকে অফার দিয়েছেন অভিনয়ের। আর ওই সময় থেকেই হঠাৎ করে অলিকে অপছন্দ করতে শুরু করেন অনন্যা। বারে বারে অলির বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছেন। গিয়ে উঠেছেন বাবার বাড়িতে। অলি তাকে সেখান থেকে কয়েকবার নিজ বাসায় ফিরিয়ে আনলেও আবার একটু কোন কারণেই অনন্যা আবার চলে যেতেন বাবার বাসায়। এমনিভাবে মঙ্গলবার বিটিভির একটি নাটকের শুটিং শেষে অলি বাসায় ফেরার আগে শ্বশুরবাড়িতে যান এবং স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে আসার জন্য বলেন। কিন্তু স্ত্রী বাসার দরজা না খুলেই অলিকে জানিয়ে দেন, কাল-ই সে অলিকে ডিভোর্স করবে। আর স্ত্রীর ডিভোর্স করা বা এ বিষয়টিই সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি অলি। এ কারণেই অলি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী, থিয়েটার কর্মী, মডেল ও অভিনেতা অলি মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মালিবাগ-মৌচাকস্থ নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তার সহধর্মিণী অনন্যার সঙ্গে সাংসারিক জীবন নিয়ে গত প্রায় দুই বছর ধরে কলহ চলছিল। এ কারণে মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্থ ছিলেন অলি। গতকাল রাত ৩টায় বাড়ির নিচতলায় অলির রুম থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরিয়ে এলে পরিবারের সদস্যরা তার রুমে ছুটে যান এবং তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। অলির বড় ভাই জানিয়েছেন, অলি’র হাতের জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন থেকে জামাকাপড়ে আগুন লাগে তার। ওই কাপড়  পোড়ার গন্ধ ছড়িয়ে গেলে বাবা ও মা তার রুমে ছুটে যান। ভোরে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল দুপুর ১টায় লাশের পোস্টমর্টেম করা হয়। সেখানে অলি আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদেরকে নিশ্চিত করা হয়। বেলা ২টায় অলির মরদেহ মৌচাকস্থ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়, বেলা আড়াইটায় সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদে অলির প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তিন ভাই-বোনের মধ্যে অলি ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই পেশায় একজন ডাক্তার। আর একমাত্র বোন আমেরিকা প্রবাসী। 
২০০৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর অলি ও অনন্যা বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পরেই অলির বাসা থেকে চলে যান। অনন্যা এরপর বারবার অনন্যাকে অলি ফিরিয়ে আনলেও তিনি অলির সঙ্গে থাকতে রাজি ছিলেন না। আর এ পারিবারিক কলহের কারণে অলি কয়েকবার আত্মহত্যা পথ বেছে নেন। কিন্তু তার বন্ধু ও সহকর্মীরা তাকে প্রতি বারই ফিরিয়ে আনেন। সর্বশেষ রোববার ও সোমবার ধানমন্ডিতে অলি একটি নাটকে অভিনয় করেন। রাবেয়া খাতুনের ‘টুকরো ছবির অ্যালবাম’ উপন্যাস অবলম্বনে নাটকটি পরিচালনা করছেন বেণুকা হাসান। অলি এ নাটকে অভিনয়ের সময়ে মানবজমিনকে বলেছেন, আসলে আমার জীবনের গল্প-ও এ নাটকের গল্পের মতো। স্ত্রী থেকেও নেই। মা এসে রান্না করে খাওয়ায়। স্ত্রী শুধু বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকতে পছন্দ করে। অলির মৃত্যুর পর এ বিষয়ে স্ত্রী অনন্যার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ও তার পরিবার বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে অলির মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন অনন্যা এবং তার বাবা-মা। গতকাল বাদ জোহর সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদে অলি’র প্রথম জানাজা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। সেখানেই দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। অলি অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটু রোদের ছোঁয়া, নীরব পথের যাত্রী, হিজাব (বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী নাটক), ঊনমানুষ, আকাশছোঁয়া, নীল রক্ত প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনচিত্রের মধ্যে রয়েছে- লাইফবয় সাবান, ক্লোজ আপ টুথপেস্ট, লিজান হারবাল প্রভৃতি। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি ও শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অলির এই অকস্মাৎ আত্মহত্যাকে ‘শোকাবহ’ অভিহিত করে বলেন, অলি খুব সাদা মনের মানুষ ছিল। আমার  লোক নাট্যদলের নাট্যকর্মী সে। কিন্তু তার এভাবে আত্মহত্যা করার বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। আমরা সত্যিই একজন প্রতিভাবান শিল্পীকে হারালাম। অলির মা বলেন, বর্তমানে আমার ছেলের মতো ছেলেই হয় না। ও আমার এমন কোন চাওয়া নেই যা পূরণ করেনি। আমি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই ও আমাকে খুশি করে ফেলতো। আজ আমার সে ছেলে নেই?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ