বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

চট্টগ্রামে স্ত্রী হত্যা: টিভি, ফ্রিজ না দেয়ায় ঘুমন্ত স্ত্রীকে পুকুরে নিক্ষেপ

৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল ইয়াসমিন। তবুও মন গলেনি পাষণ্ড স্বামী দিদারের। যৌতুকের জন্য লোভ ছিল তার। আর তাই টাকার জন্য রোজ রাতে মারধর করতো স্ত্রীকে। বিয়ের ৩ মাসের মধ্যে সে চেয়ে বসে টিভি, ফ্রিজ, দামি গহনা, ফার্নিচার আর কয়েক লাখ টাকা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেষমেশ লাশ হতে হলো গৃহবধূ ইয়াসমিনকে। তাকে হত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেয়া হলো বাড়ির পাশের পুকুরে। 
এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে চট্টগ্রামের হালিশহরে হত্যা করা গৃহবধূ ইয়াসমিনের মৃত্যুর ঘটনায়। মঙ্গলবার ভোরে মেয়েটির লাশ উদ্ধারের পর এই বিষয়ে কথা হয় তার ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি বোনের ওপর চালানো নৃশংস নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরেন। 
বেশ ধুমধামের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল ট্রাকচালক দিদারুলের সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ি ছিল চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ হালিশহর চাঁদমালুম রোডের নিউমুরিং এলাকায়। প্রায় রাতে সেখানকার আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনতো ইয়াসমিনের। যৌতুকের জন্য রাতভর হতো স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ। দিদারুল স্ত্রীকে প্রায় সময় ছোট লোকের মেয়ে বলে গালাগাল করতো। ক’দিন আগেও সে তার স্ত্রীকে বলেছিল ‘দুই লাখ টাকা আর এক ভরি সোনা না দিলে সোজা বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবো। তোকে বিয়ে করে কিছুই পাইনি।’ বিয়ের এক মাসের মাথায় দিদার ইয়াসমিনকে বলেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি তোমার ভাইদের টাকা দেয়ার জন্য বোঝাও। তাদের বলো কিছু নগদ টাকা হাতে পেলে ছোটখাটো ব্যবসা করতে পারবো।’ জবাবে ইয়াসমিন বলেছিল ‘আমার বাবার পরিবারের পক্ষে এই মুহূর্তে দুই লাখ টাকা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ বাবা বেঁচে নেই। আমি সবার বড়। তুমি সব জেনেই আমাকে বিয়ে করেছো।’ 
স্বামী দিদারের এসব কথাবার্তা এক পর্যায়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেনের কাছে বলেছিল ইয়াসমিন। আরও বলেছিল- ‘ভাই আমরা ভুল করেছি। দিদার একজন যৌতুকলোভী খারাপ মানুষ। তার সঙ্গে সংসার কিভাবে করবো জানি না।’
এসব কথা-বার্তার কিছুদিন পরই শুরু হয় নির্যাতন। সে নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, পরিবারের সবাই কষ্ট পাবে শুনে মুখ বুজে থাকতো ইয়াসমিন। 
সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিয়ের এক বছরও হয়নি। আমার বোন ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার স্বামী দিদারুল টিভি, ফ্রিজের জন্য খোঁটা দিতো। শেষমেশ সহ্য করতে না পেরে তাকে মেরে পুকুরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আমরা থানায় মামলা করেছি। তিনি আরও বলেন, ধারণা করছি ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে পুকুরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। তার স্বামী পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার করলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। আমরা ঘটনার বিচার চাই। আর যাতে কোন মেয়ে যৌতুকের জন্য এইভাবে মারা না যায় তার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সরজমিনে গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোর ৫টায় স্থানীয়রা পুকুরে তার লাশ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। এরপর তারা পুলিশকে খবর দিলে পরে লাশ উদ্ধার করা হয়। 
তবে পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াসমিনের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। ঘুমন্ত অবস্থায় তার মুখ চেপে ধরে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সে আত্মহত্যা করতে পারে কিনা তা-ও তারা খতিয়ে দেখছেন। কিন্তু স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘটনার পরপরই পলাতক থাকায় তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াসমিনের ছোট ভাই বাদী হয়ে ইপিজেড থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় স্বামী দিদারুল আলম, তার ছোটভাই মো. আজিজ, ছোটবোন মনোয়ারা বেগম ও পাখি বেগমকে আসামি করা হয়েছে। 
ইপিজেড থানার ওসি আবুল মনসুর বলেন, মাত্র ৫ মাসের মাথায় একটি মেয়ে এভাবে মারা যাবে- তা বিশ্বাস করা যায় না। থানায় মামলা হয়েছে। স্বামী পলাতক রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ