নগরীতে দুই গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। দক্ষিণ হালিশহর ও গোসাইলডাঙ্গায় গতকাল এ ঘটনা দুটো ঘটে। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ইপিজেড থানাস্থ ৩৯নং দক্ষিণ হালিশহরে চান মালুম রোডের আলী মিয়া সারাংয়ের বাড়িতে নিহত হন চার মাসের অন্ত:স্বত্তা গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তার (২২)। গতকাল ভোরে তার নিথর দেহ পাওয়া যায় স্বামীর বাড়ির পাশের একটি পুকুরে। ঘটনার পর থেকে ইয়াসমিনের স্বামী ট্রাক চালক দিদারসহ পরিবারের অন্যান্যরা পালিয়ে গেছেন । ইয়াসমিন আগ্রাবাদ ছোট পুলস্থ কালামিয়ার বাড়ী মৃত শাহ আলমের প্রথম কন্যা।পরিবারের অভিযোগ যৌতুকের বলি হয়েছেন ইয়াছমিন। ইপিজেড থানার ওসি আবুল মুনসুর জানান নিহতের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তার স্বামী দিদারুল আলমসহ শশুরবাড়ির কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রতিবেশি ফয়সাল ঘটনার বিবরণে জানান, ভোররাতে লোকজনের চিৎকার শোনে ঘুম থেকে উঠে দেখি এক মহিলার লাশ পুকুরে ভাসছে । তবে কেন বা কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলতে পারছি না । নিহতের চাচাত ভাই আবু জানান যে, ভোর ৬টায় স্বামী দিদারুল আলম মোবাইল ফোনে খবর দেন যে,ইয়াসমিন পানিতে পড়ে মারা গেছেন। খবর পাওয়া মাত্রই তিনি,ইয়াসমিনের ফুফু ফাতেমা, এবং ছোট বোন লুৎফা আক্তার ঘটনাস্থলে এসে দেখেন ইপিজেড থানার পুলিশ ভাসমান অবস্থায় পুকুর থেকে লাশ তুলে নিচেছন । তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন যাবত ১লাখ টাকা ,স্বর্ণের আংটি, কালার টিভি ও ফ্রিজের জন্য ইয়াছমিনকে নির্যাতন করেছে শ্বশুর পক্ষের লোকেরা ।
ইয়াসমিনের ফুফু ফাতেমা বেগম আজাদীকে বলেন, সে ৪ মাসের অন্ত:স্বত্তা ছিল । ২০১৩ সনের ১১ ডিসেন্বর তার বিয়ে হয়েছিল। তিনি বলেন, ইয়াসমিনকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন স্বামী দিদার ও পরিবারের সদস্যরা। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি । এ ব্যাপারে নারী- শিশু, হত্যা- নির্যাতন এবং যৌতুক আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে বন্দর থানাধীন গোসাইল ডাঙ্গা এলাকায় সঞ্চিতা চৌধুরী (২২) নামে অপর এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শ্বশুরপক্ষের লোকজন বলছেন, সঞ্চিতা আত্মহত্যা করেছে। আর সঞ্চিতার পরিবারের লোকজন বলছেন, পরিকল্পিতভাবে সঞ্চিতাকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর গোসাইলডাঙ্গাস্থ সঞ্চিতার স্বামীর ভাড়া বাসায় পুলিশ গিয়ে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় পায়। ঘটনার পর ভিকটিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে তারা পালিয়েছে বলে জানা গেছে।
সঞ্চিতার সাথে সাতকানিয়ার চরতি এলাকার রিগ্যান চৌধুরীর বিয়ে হয় তিন বছর আগে। তাদের ঘরে চারমাসের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে সঞ্চিতা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সঞ্চিতার ভাই জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পৌনে তিনটার দিকে রিগ্যানের পরিবার থেকে ফোনে জানানো হয় সঞ্চিতা স্ট্রোক করেছেন, তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফোন পেয়ে সঞ্চিতার ভাই ও আত্মীয়-স্বজন দ্রুত মেডিকেলে গিয়ে তার লাশ দেখতে পায়। এসময় ডাক্তাররা জানান, ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরে তারা এ নিয়ে বন্দর থানায় গিয়ে একটি জিডি দায়ের করেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় ভিকটিমকে চমেক হাসপাতালের মর্গে পোস্ট মর্টেমের জন্য রাখা হয়েছে। কৃষ্ণপদ চৌধুরীর ছেলে রিগ্যান সিএন্ডএফ ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন