শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

যাহা বলিবো, সত্য বলিব ৪ হাসিনার সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।



২০০৩ সালে যুক্তরাস্ট্রের একটি ঘটনা পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে তোলপাড় করে দেয়। আমেরিকা তো বটেই বিশ্বে এমন একটি ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। সে বছরের ১৪ই জুলাই তৎকালিন স্বরাস্ট্রমন্ত্রি রিচার্ড আর্মিটেজের উদ্বৃতি দিয়ে প্রভাবশালি দৈনিক ওয়াশিংটন পোষ্টের বাঘা সাংবাদিক রবার্ট নোভাক, ভ্যালেরি পাম নামের একজন সি আই এর এজেন্ট এর পরিচয় ফাঁস করে দেন।

নিজ দেশের গোয়েন্দাদের নাম ফাঁস করে দেবার ফলে সারা যুক্তরাস্ট্রে হই চৈ পড়ে যায়। রাস্ট্রিয় গোপণীয়তা ফাঁসের অভিযোগে নোভাককে আদালত পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয়। যেহেতু যুক্তরাস্ট্রের সংবিধানে প্রকাশিত সংবাদের উৎস না দেবার ব্যাপারে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দেয়া আছে, তাই সে যাতার‍্য নোভাক পার পেয়ে গেলেও, স্বরাস্ট্রমন্ত্রি আর্মিটিজের প্রতি সমালোচনার ঝড় উঠে। সেই সুত্র অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, ইরাকে পারমানবিক অস্র আছে, বুশ চেনির সেই মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রমান হিসাবে, ভ্যালেরি পামের স্বামীকে নাইজারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মিসেস পামের স্বামি বুশ চেনির ফরমায়েসি কোন ধরণের মিথ্যা প্রমান যোগাড় করতে অসম্মত বা অসমর্থ হবার কারণে, ভ্যালিরি পামের ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়া হয়। যা ঘটেছিল তৎকালিন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেনির প্রত্যক্ষ সম্মতিতে। 

বিস্তারিত জানতে নীচের লিংক দেখুনঃ

http://en.wikipedia.org/wiki/Valerie_Plame

অর্থাৎ কর্তার ইচ্ছায় কর্ম সাধন না হলে, অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। 

কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে হাসিনার বিরুদ্ধে সেনা বিদ্রোহের কথা আই এস পি আরের তথ্য বিবরণি থেকে দেশবাসি জেনেছিলেন। অবশ্য এর আগেই দৈনিক আমার দেশ এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ছাপিয়েছিল। তারও আগে কিন্তু যারা নিয়মত বগ্লস্ফিয়ারের বাসিন্দা, তারা একটি ইমেইলের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত অনেক তথ্যই জেনে গিয়েছিলেন। 

তথাকথিত এই সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাটি যখন আমাদের স্মৃতিশক্তি থেকে প্রায় মুছে যাবার উপক্রম, ঠিক সেই সময়ে গত ২৮শে জানুয়ারি ভারতের ইন্ডীয়া টুডে নামের একটি পত্রিকা এই মর্মে রিপোর্ট করে যে, হাসিনা এবং আওয়ামি লিগের গুরুত্বপুর্ণ সদস্যদের রক্ষা করে ভারতে নিয়ে যাবার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল। 



রিপোর্টের বিস্তারিত দেখুন এখানে

Click This Link

গত সংবাদ নির্বাচনে "জেতার" পর পর হাসিনা যেভাবে উচ্ছসিত হয়ে ওপারের দাদাবাবুকে ফোন করে "সুখবর"টা দিয়েছিলেন, ভারতের আচার আচরণে বিতশৃদ্ধ জনগণ সেটা সহজভাবে মেনে নেয়নি। তারা এ কর্মটি একজন একান্ত বংশতবদ ভৃত্যের আচরণ বলেই গণ্য করেছিল। কারণ একটী স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রি তার দেশের মান সম্মানকে ধুলায় লুটিয়ে আত্মসম্মানবোধহীনের মত আচরণ করতে পারেন না। বাংলাদেশের সংবিধান বা জনমত তাকে সেই অধিকার দেয়নি।

দেশ চালানো তো দূরে থাক, আওয়ামি লিগের মত বড় একটি রাজনৈতিক দল চালানোও যার মেধা ও প্রজ্ঞার বাইরে, সেই শেখ হাসিনা, তা থেকে মোটেও শিক্ষা নেননি। উলটো করদ রাজ্যের নাম সর্বস্ব রাণির মত একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বার্থের সাথে রীতিমত সাংঘর্ষিক, কিন্তু ভারতের পক্ষ্যে চরম অনুকুল। 

প্রধানমন্ত্রি হিসাবে শেখ হাসিনা, ভারত সফরের প্রথম যাত্রায় এমন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করলেন, যা সংসদে আলোচনা করে পাশ করাতেও তিনি সাহস করেননি। অথচ এ ধরণের চুক্তি হবার আগে প্রস্তাবগুলি সংসদে আলোচনা পরিক্ষা নীরিক্ষার বিধান আছে খোদ সংবিধানে। 

সংসদের ২/৩ংশ আসনে আসীন খোদ আওয়ামি লিগের এম পিদের সাথে তার কেন এই লুকোচুরি? তবে কি তিনি এমন চুক্তি করেছেন, যার বিরোধীতা আসতে পারে তার নিজের দলের এম পিদের কাছ থেকেই?



যদিও গণতন্ত্রে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতার বিধান রয়েছে, এর পরেও সেই জবাদিহিতা এড়াতে তিনি প্রথমেই ৫ম সংশোধনি বাতিল করে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে গেলেন। অথচ তার পিতার আমলে পাশ করা ৪র্থ সংশোধনিটি ওভাবেই রেখে দিলেন। ৭২ এর সংবিধানটি কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৪র্থ সংশোধনি দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। তাই ৪র্থ সংশোধনি বাতিল না করে ৭২ এর সংবিধান পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। 

হিসাব পরিস্কার করে দেই। হাসিনার গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এখন বাকশাল কায়েম করেছেন। (যেহেতু ৪র্থ সংশোধনি বাতিল হয়নি, তাই বাকশালতন্ত্র আবার কায়েম হয়েছে।)

আর সেই বাকশালকে নতুন করে গিলাবার জন্য তথ্য আইন, সাইবার আইন ইত্যাদি আইন করে হাসিনা বা তার দলের কুকীর্তি ঢাকার জন্য এবং বিরোধী মতকে দমন করার জন্য আইনের অপপ্রয়োগ ঘটানো হচ্ছে। 

প্রথমেই চরম নিন্দিত সাঃ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে দিয়ে ব্লগিংকে পর্ণগ্রাফি বলে আখ্যায়িত করার অপচেস্টা করা হয়েছে। এর পর মেজর জিয়াউলের বিবৃতি প্রকাশের অজুহাত তুলে ব্লগে গোয়েন্দা নজরদারি করা হয়েছে। আর অন্তর্জালে প্রতিবাদ প্রকাশের ধারাটিকে অংকুরেই বিনাশ করার জন্য ফেস বুকে একটি উক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত একজন শিক্ষকের নামে মামলাও ঠুকে দেয়া হয়েছে। 

বিভিন্ন ব্লগের মালিকদের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এজন্যই সামুতে দেখছি লেখা বা সংক্লিস্ট ছবি বা অন্য কিছুর দায়িত্ব থেকে নিজেদের অব্যাহতি দেবার ঘোষনা দিয়েছেন।এবং সব দায় লেখকের উপর দিয়েছেন। 

বিরোধি মত দলন ও রোধে আইনকে পাশে পাবার লক্ষ্যে খোদ বিচার বিভাগকেই দলীয়করণ করা হয়েছে। যারা ভিন্নমত পোষন করেন, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে চাই সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারটি। এই দুইজনের একজন ছিলেন খুনের মামলার আসামি ( নিয়োগ দেবার আগের দিন যার মামলাটি আইন প্রতিমন্ত্রির অদ্ভুত তৎপরতায় অবিশ্বাস্য গতিতে তুলে নেয়া হয়েছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে) আরেকজন ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাস ভাংচুরের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। 



এহেন দলীয় লোক দিয়ে বিচার বিভাগ নিরপেক্ষভাবে চলবে, একথা চরম আশাবাদি মানুষও আশা করে না। তাই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ডের ইচ্ছায় কর্ম সাধন করা হচ্ছে। তাতে আইন শৃংখলতা পরিস্থিতির কি হাল হয়েছে, সেটা অন্ধ না হলে সবারই দেখার কথা। 

এতদিন শুনতাম বি এন পির লোকেরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমুল্যের দাম বাড়িয়েছে। বি এন পি আমলে রোজার সময় একবার কাচা মরিচের দাম ৮০ টাকা কেজি হওয়াতে আওয়ামি লিগ আর তার পোষ্যমিডিয়ার কি লম্ফ ঝম্ফ ! বি এন পির লজ্জা শরম ছিল। তৎকালিন বানিজ্যমন্ত্রি আমির খস্রু মাহমুদ চৌধুরি পদত্যাগ করেছিলেন। 

এর বিপরীতে আওয়ামি বাণিজ্যমন্ত্রি ফারুক খান পদত্যাগ তো দুরের কথা, বরং ভারতের নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রির উপদেস্টা গওহর রিজভির পরিবারের সাহে মিলে দু হাতে আয় করছেন। (সামিট গ্রুপটি খান-রিজভির যৌথ প্রযোজনায়)

তাছাড়া ফারুক খানের মুখে বিধাতা কি মধু দিয়েছিলেন জানি না। তিনি মুখ খুললেই দেখা যেতো পরদিনই জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গিয়েছে। 

আইন শৃংখলার চরম অবনতি, ভিনমত রোধ ও দলনে বাকশালি পন্থা অবলম্বন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জনমতকে তোয়াক্কা না করা, শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাস কবলিত করা, এবং প্রকাশ্যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরপীতে নির্লজ্জভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা (হাসিনা ও তার একান্ত বাধ্যগত গওহর, ইমাম, আশরাফ, মুহিত এব্যাপারে চুরি এবং সিনাজুরির ভুমিকায় অবতীর্ণ) এসব কারণে এখন সাধারণ মানুষের চক্ষুশুল। 

আগামি নির্বাচনে আওয়ামি লিগের জন্য চরম বিপর্যয় অপেক্ষা করছে, তার সব লক্ষণ সুস্পস্ট। যদিও দাদারা মাঝে মধ্যে হুমকি দিচ্ছেন, হাসিনার জন্য এই করবো সেই করবো ইত্যাদি।

কিন্তু সেগুলি সব কথার কথা। 

আগ্রাসি শক্তি বিশেষ করে চানক্যের নীতি নিয়ে চলা ভারত চেয়েছিল, চুপিচুপি নিজের স্বার্থ হাসিল করে ফেলতে। কিন্তু হাসিনা আর তার দলের লোকদের চোয়ালবাজি এবং দাসত্ব প্রকাশে কৌশলি হতে ব্যার্থ হবার কারণে, ভারত হাসিনার উপর আস্থা হারিয়েছে। 

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুই চোখের বিষ হয়ে আখের নস্ট করার মত অবিবেচক ভারত নয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে যদি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়, তবে সুদুর ভবিষ্যতে সেটা ভারতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। 

আরেকটা উপায় হচ্ছে হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখার জন্য বাকশালের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। যা বর্তমান যুগে অসম্ভব। কেননা আমেরিকা বা ইউরোপ এধরণের সরকারকে নৈতিকভাবেই সমর্থন জানাতে পারবে না। তাছাড়া ডঃ ইউনুসের প্রতি উন্মত্ত আচরনের কারণে আমেরিকা এবং ইউরোপ হাসিনার উপর বেশ নাখোশ রয়েছে।

ভারত এখন চাইছে, হাসিনার মত আপদ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদায় নিক। কিন্তু চরম ফন্দিবাজ ভারত নিজে থেকে কিছু তো করবে না। ( নেপালের রাজ পরিবারকে নির্বংশ ভারতই করেছিল, তাতে সাপও মরেছে, লাঠিও ভাঙ্গেনি।)

এতদিন আওয়ামি লিগ আর ভারত বিরোধী পত্রিকা বা কলাম লেখকদের মাধ্যমে হাসিনার ভারতপ্রেমের কথা শুনে, যাই হোক কিছুটা হলেও সংশয়ের ধোয়া তুলা সম্ভব ছিল। এখন খোদ ভারতের পত্রিকায়ই যখন হাসিনার ইন্ডিয়াপ্রীতির নমুনা তুলে ধরা হলো, তখন সেই সংশবাদিদের সংশয়ের অবকাশ আর থাকলো না। ফলে সাধারণ মানুষের চোখে হাসিনা ও আওয়ামি লিগ আরো ক্ষেপে যাবার সুযোগ তৈরি হলো।

যার প্রতিক্রিয়ায় একটি অভ্যুত্থান কিংবা গণ অভ্যুত্থানের ঝুকিতে ফেলে হাসিনাকে বিদায় দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত। 

ইতিমধ্যে যা যা দরকার ছিল, প্রায় সবই নেয়া হয়ে গিয়েছে। এখন চোখের বালিকে ধুয়ে ফেলার নিমিত্তেই ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের চরম গোপণীয় খবরটি পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে।

যাতে হাসিনা ও আওয়ামি লিগের উপর ইতিমধ্যেই অগ্নিশর্মা হয়ে উঠা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলে। 

ডিক চেনি আর দাদাদের আচরনের মধ্যে অপ্রত্যক্ষ কিছু মিল খুজে পাচ্ছেন তো?

ইতিহাসের পাতায় দেশদ্রোহিরা থাকে আস্তাকুরে নিক্ষিপ্ত। বোধ করি ইতিহাসের আস্তাকুরে ইতিমধ্যেই নিক্ষিপ্ত কিছু মানুষের তালিকায় নতুন কিছু নাম যুক্ত হতে যাচ্ছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ