রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২


'হিন্দুরাও মসজিদ আক্রমন করেছে' এই সংবাদ স্পর্শকাতর বলে এর কম প্রচার করে হিন্দুদের উপকার করা - এমন ধারণা সংখ্যালঘুদের জন্য বাড়তি নিপীড়ন। কারণ সংখ্যালঘুরা প্রথম নির্যাতনের শিকার - এই সত্য এতে চাপা পড়ে যায় এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মননশীলতার চর্চা ও প্রতিক্রিয়া সংগঠন বাধাগ্রস্থ হয়। 

এখন এটা ভাবার কোনো অবকাশ নাই যে এই সংবাদ কেবল মিডিয়ার মাধ্যমেই ছড়াবে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও দাঙ্গা/সাম্প্রদায়িক সংঘাতের খবর ছড়ানোর জন্য মোবাইলই যথেষ্ট। তবে সংবাদটি স্পর্শকাতর বলেই এর উপস্থাপন বিস্তারিত ও গভীর অনুসন্ধানমূলক হওয়া উচিত, ফলে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে বরঞ্চ এই সাম্প্রদায়িক উসকানি বন্ধের জন্য পজেটিভ ক্যাম্পেইন মুহূর্তে সংগঠিত হবে এবং সেটার উপরে এখন বেশী আস্থা রাখা যাবে বলে আমি মনে করি। 

ফলে মিডিয়াকে অবশ্যই স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে, বিশেষভাবে প্রচার ও সার্বক্ষণিক সংবাদ দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

ইত্তেফাক ও বিডিনিউজের সংবাদে ভিন্নতা
ইত্তেফাক: পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নন্দীরহাটে নামাজ চলাকালে একটি মসজিদের সামনে লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারী সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ঢোল বাদ্য বাজানোকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে মসজিদে... ইটপাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি উভয় পক্ষের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার জন্য শুক্রবার বাদ জুমা সময় নির্ধারণ করা হয়। 

বিডিনিউজ: নঘটনার শুরু হয় বৃহস্পতিবার। সকালে নন্দীর হাট এলাকায় লোকনাথ সেবাশ্রম মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। এই উপলক্ষে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন ও মন্দিরের ভক্তরা একটি শোভাযাত্রা বের করে। এতে উৎসবের অংশ হিসেবে মাইকের পাশাপাশি ঢোলও বাজানো হচ্ছিল। স্থানীয়রা জানায়, শোভাযাত্রা স্থানীয় একটি মসজিদ অতিক্রমের সময় মসজিদের মুসল্লিরা ঢোল বাজাতে নিষেধ করে। এক পর্যায়ে মিছিলের পেছন দিকে ঢিল ছোড়া হয়। তখন শোভাযাত্রা থেকে পাল্টা একটি ঢিল ছুড়লে তর্কাতর্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। 

দুই নিউজে পরিষ্কারভাবে বিপরীতমুখী বক্তব্য। ইত্তেফাকে হিন্দুরা আগে ঢিল ছুড়েছে বলেছে, বিডিনিউজ বলছে মুসলমানরা আগে। স্বাভাবিকভাবেই দেখা যাচ্ছে মিডিয়ার চরিত্র ঠিক নাই। 



নন্দীরহাট লোকনাথ বাবার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ

 

 

 

 

 

 

 



আগামী বৃহস্পতিবার রাতে আমরা কজন চট্টগ্রাম যাবার প্লান করছি। সাম্প্রদায়িক উসকানি থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কথা আমাদের ইতিহাস জুড়ে বিরাজমান। ২০১২ সালে এসে এমন ঘটনা ঘটবে এটা মানা যায় না। এটা আমরা ঘটতে দেবো না। যে ক্ষত গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হাটহাজারীতে সৃষ্টি হয়ে গেছে সেটা সহজে উবে যাবে না।

দুটো সম্প্রদায় পাশাপাশি বাস করে এসেছে হাজার বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে। আমরা দেখেছি অতীতে কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণেই হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে নীল নকশা করে দাঙ্গা সংগঠন করা হয়েছে।

আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের জায়গায় বড় ধরণের চিড় ধরিয়ে এসেছে সবসময় সাম্প্রদায়িক শক্তি। কিন্তু তারপরেও এই দেশের মাটি সবসময় ধারণ করেছে সহাবস্থানের শান্তিপূর্ণ আবাস।

মানুষের পারস্পরিক ধর্মবোধের জায়গায় ঘৃণার বিচ্ছুরণ সম্প্রদায়গুলোকে অবিশ্বস্ত করে তোলে। সমাজে এর প্রভাব ভয়াবহ হয় সর্বদাই।

এই নাজুক পরিস্থিতিকে আমাদের মননশীলতা দিয়ে বিচার করতে হবে। সেজন্য আগামী শুক্রবার আমরা হাটহাজারী ঘুরে দেখবো। লাইভ ব্লগিং করবো আর মানুষের কথা শুনবো। যারা যেতে চান মোস্ট ওয়েলকাম। তবে অবশ্যই আপনার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা থাকতে হবে।

নাম লেখাতে পারেন, ধর্মবোধে আহত মানুষদের মানসিক অবস্থা জাগ্রত করার জন্য আমাদের হাত বাড়িয়ে দেয়া এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য। মিডিয়া ভুলে যায় যাক - আমরা ভুলতে দিতে পারি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ