শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

সাংবাদিক দম্পতি হত্যা তদন্তে অগ্রগতি নেই


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টা পেরোলেও দৃশ্যত সাংবাদিক দম্পতির খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার দাবি করেছেন, ‘তদন্তের প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ’
গতকাল সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে দুই দিনব্যাপী ত্রৈমাসিক অপরাধ-সংক্রান্ত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলা হয়।
অপরাধীদের খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা গতকাল বেলা একটায় শেষ হয়েছে। গত রোববারও পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছিলেন, এই সময়ের মধ্যেই ঘটনা উদ্ঘাটন সম্ভব। অথচ গতকাল সকাল থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা কেউ কিছু বলছেন না। খুনি শনাক্ত হয়েছে কি না, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কি না, খুনের উদ্দেশ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে কি না—দিনভর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ঘুরেফিরে সাংবাদিকেরা এসব প্রশ্ন করে গেছেন। জবাবে পুলিশ কর্মকর্তারা ‘মন্তব্য নেই’ অথবা ‘খবর নেই’জাতীয় কথা বলেছেন, অথবা বলেছেন তদন্তের স্বার্থে তাঁরা কিছু বলবেন না। মতবিনিময় সভায় আইজিপির বক্তব্যেও ছিল একই সুর। গত শনিবার সকালে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সরওয়ারকে অসংখ্য ছুরিকাঘাতে ও মেহেরুনকে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। বাবা-মাকে প্রথম রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে ওই দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার। শনিবার দুপুরে বাসায় গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন পুলিশকে।
আইজিপির বক্তব্য: গতকাল দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক দম্পতি হত্যা নিয়ে আইজিপি কিছু বলবেন এই আশায় ভিড় করেন অনেক সাংবাদিক। জনাকীর্ণ মতবিনিময়ের শুরুতেই আইজিপি বলেন, এটা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভা, সংবাদ সম্মেলন নয়। তবুও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সভাজুড়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশ সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ও আন্তরিকতার সঙ্গে হত্যাকারীদের ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যেই প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময় নিয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সব সময় সব কাজ করা সম্ভব না। তবে আমি খুব আস্থা নিয়ে বলতে চাই, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো কাজটা দ্রুত করার জন্যই সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। আমরা বলব খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ভালো খবর বা আরও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে। থানা-পুলিশ, ডিবি, সিআইডি, র‌্যাব সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।’ কেউ গ্রেপ্তার আছে কি না, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আমি পুরোটা বলতে পারছি না।’
খুনিদের শনাক্ত করা গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তদন্তের কয়েক দিন হয়ে গেছে, একটা ধারণা ইতিমধ্যেই পাওয়া সম্ভব হয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে আমরা কিছু শব্দ এড়িয়ে যাচ্ছি, তদন্ত চলছে। এ সময় আমাদের এমন কোনো কথা বা মন্তব্য করা ঠিক হবে না, যা বিভ্রান্তি ছড়াবে, তদন্তে সমস্যা করবে।’ পুলিশ বিভ্রান্ত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদম এ রকম না। সবকিছু বিধি মোতাবেকই চলছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ ব্যর্থ হয়নি। তদন্তকারীরা পেশাদারির সঙ্গে কাজ করছে। এ কারণে আমি আস্থা নিয়ে বারবারই বলছি তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।’
মাহিরকে নিয়ে ফ্ল্যাটে পুলিশ: হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মাহির বারবারই বলছিল, সে আগেও খুনিদের পিকনিকে দেখেছিল। এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে গত রোববার পুলিশ কর্মকর্তারা মাহিরকে তাঁর মা-বাবার ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। এ সময় মাহিরের নানি ও মামারা সঙ্গে ছিলেন। মাহির পুলিশকে দেখিয়েছে, খুনিরা চলে যাওয়ার পর সে কীভাবে দরজা বন্ধ করেছে, মায়ের ফোন থেকে নানিকে ফোন করেছে এবং নানি আসার পর দরজা খুলে দিয়েছে। চলে যাওয়ার সময় খুনিরা মাহিরের গলা টিপে ধরে ভয় দেখিয়েছে বলেও জানায় মাহির।
মাহিরের ছবিতে লাশ: গতকাল মাহির মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেছে, খেলেছে। মাহিরের মামা নওশের আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল মাহির। তবে তার সবকিছু জুড়েই এখন মা-বাবার মৃত্যু। কিছুক্ষণ কথা বলার পরপরই সে মা-বাবার মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুলছে। গতকাল কিছু ছবি এঁকেছে, সেখানেও লাশ আর কবর এঁকেছে সে। গ্রামীণ দৃশ্যের মাঝে পড়ে রয়েছে একটা মানুষ বুকে-পেটে রক্ত। আর একটা ছবিতে গাছের পাশে উঁচু ঢিবি বানিয়ে কবর এঁকেছে সে। গতকাল তাকে কোনো পত্রিকা দেখতে দেওয়া হয়নি, টিভির খবর থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।
দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী: গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে সাগরের মা সালেহা মনির ও মেহেরুনের মা নুরুন্নাহার মির্জা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি মাহিরের দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (প্রেস) মাহবুবুল হক শাকিল প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী জানান, যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তত দিন এই সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান যাতে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, পড়াশোনাসহ সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারে, সে দায়িত্ব তিনি নেবেন।
এ সময় মাহিরের তিন মামা ও এক ফুপাও উপস্থিত ছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ