বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে বিদ্যালয় মূখী হচ্ছে সুবিধাবন্চিত শিশুরা


‘আমার যহন খিদা লাগে, তহন খালি মাথা ঘুরায়, কিছুই মনে থাহে না। সকালে পানিবাত খাইয়্যা ইসকুলে আই, আর বারিত যাই সইন্দার আগে। এত সময় কি না খাইয়্যা থাহুন যায় ? হের লাইগ্যা ইসকুলঅ আইতাম না। কিন্তু অহন ইসকুল কামাই করি না।’
(ছবিটি ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডার একটি বিদ্যালয় থেকে নেয়া)

কথাগুলো বলছিল, ভালুকা উপজেলার ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডা শিক্ষালয় ধলিয়ার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী শাপলা রানী। সমপ্রতি তাকে নিয়মিত স্কুলে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষকরাও সন্তুষ্ট। ওই স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু হওয়ার পর এখন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্রদের সন্তানের স্কুলমুখী করা, শিক্ষার হার ও মান বজায় রাখা ও ক্ষুধামুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনজিও ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডার উদ্যোগে উপজেলার মেহেরাবাড়ী রেজি: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত অক্টোবর থেকে ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম শুরু করে। এতে ভালুকা উপজেলার ১০টি রেজি: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২হাজার ১শত ৮জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম চালু হয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ৩দিন দুপুরে টিফিন পিরিয়ডে বিনামূল্যে খাবার দেয়া হয়। 

এ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে স্কুল এলাকায় শিশুদের মাঝে এক ধরনের উত্সবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। যার ফলশ্রুতিতে শিশুরা দল বেঁধে প্রতিদিন স্কুলে আসছে। শিশু শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার হার ও গুণগত মান ঠিক রাখা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত করার উদ্যোগকে সামনে রেখে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম লোকমান ১ জানুয়ারি এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় অন্যান্যের মাঝে ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডা কো-অর্ডিনেটর এটিএম রফিকুল ইসলাম, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অফিসার বিমল ভিনমেন্ট ম্রংসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

মেহেরাবাড়ী রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, স্কুল ফিডিং চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্সবের আমেজ বিরাজ করছে। এখন আর কেউ স্কুল পালায় না। আগে হোম ভিজিট করেও ছাত্রছাত্রী পেতাম না। এখন আর আমাদের হোম ভিজিট করতে হয় না। অসুখ বিসুখ না হলে প্রায় প্রতিদিন শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।

ভালুকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ ফারুক জানান, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণে অবসাদ ও ক্লান্তি দূর হয়েছে। উল্লেখ্য, ফুনডাসিয়ন ইন্টারভিডা এনজিওটি ভালুকা উপজেলা রেজি: বেসরকারি ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২হাজার ১শত ৮জন শিক্ষার্থী ছাড়াও ২০০৭ সাল থেকে তাদের এনজিও কর্তৃক পরিচালিত আরো ৯টি বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬ শত ৫৩ জন শিক্ষার্থীর স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে আসছে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ