মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

ধর্ষণ বাড়াচ্ছে ‘ফ্যাশনেবল’ জামাকাপড়’





ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ, সর্বত্রই। এ নিয়ে ভারতের একটি পত্রিকা লিখেছিল-”বছরান্তে নীতি-পুলিশিয়ানার নতুন নজির গড়লেন খোদ এক পুলিশ কর্তাই। রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনার বাড়বাড়ন্ত প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজিপি) বি দীনেশ রেড্ডি বলে ফেললেন, সালোয়ার-কামিজের মতো ‘ফ্যাশনেবল’ জামাকাপড় পরার জন্যই নাকি বাড়ছে ধর্ষণ!
রেড্ডির মন্তব্য ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড়। বিভিন্ন মহিলা সংগঠন তো বটেই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম পর্যন্ত কড়া ভাষায় রেড্ডির বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। বলেছেন, “নীতি-পুলিশ হয়ে ওঠার অধিকার কারও নেই। পুলিশেরও না।” বিপাকে পড়ে এখন অন্ধ্র পুলিশের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে, রেড্ডি ঠিক ওই কথাটা বলতে চাননি। সংবাদমাধ্যম তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করেছে।
শুক্রবার অন্ধ্র পুলিশের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে রেড্ডি মেনে নেন, রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ২০১১ সালের নভেম্বরের মধ্যেই ১,২৯১টি ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়েছে। এর পরই তিনি বলেন, খুন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা পুলিশের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। “সবাই এখন খুব ফ্যাশন সচেতন। এমনকী গ্রামেও মেয়েরা সালোয়ার কামিজ পরে ঘুরছে। এগুলোই অপরাধীদের ইন্ধন জোগায়। পুলিশের পক্ষে এ সব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।” ঘটনাচক্রে এই অনুষ্ঠানে সালোয়ার কামিজ পরেই এসেছিলেন আইপিএস অফিসার তেজদীপ কৌর মেনন।
দীনেশ রেড্ডি
ডিজিপি-র এই মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন মহলে। খোদ চিদম্বরম বলেন, ‘‘কে কোথায় কেমন পোশাক পরবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। ফুটবল বা টেনিস খেলার সময়ে নিশ্চয়ই কেউ এক গাদা জামাকাপড় পরবেন না। আবার কেউ ককটেল পার্টিতে যাওয়ার সময় নিশ্চয় সুইমস্যুট পরবেন না। এই বিষয়ে পুলিশের হস্তক্ষেপ কখনওই কাম্য নয়।” রেড্ডি একা নন। এ বছরেই জানুয়ারি মাসে এই জাতীয় কথা বলে বিপাকে পড়েছিলেন টরন্টোর পুলিশ অফিসার মাইকেল সানগুইনেট্টি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘নিরাপদে থাকতে চাইলে মহিলারা অবিলম্বে যৌনকর্মীদের মতো পোশাক পরা বন্ধ করুন।” তাঁর কথার প্রতিবাদে প্রথমে টরন্টো এবং পরে সারা বিশ্বে শুরু হয় ‘স্লাটওয়াক’। এই প্রতিবাদ মিছিল এখানেও যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল।
এখানে অবশ্য পোশাক-বিতর্ক বারবারই তাড়া করেছে মেয়েদের। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পোশাকবিধি সংক্রান্ত বিতর্কের নমুনা রয়েছে ভূরি ভূরি। কলকাতায় আশুতোষ কলেজে ছাত্রীদের শাড়ি পরে আসার জন্য ফরমান জারির চেষ্টা হয়েছিল। মুরলীধর কলেজে আবার বলা হয়েছিল, শুধু সালোয়ার-কামিজই পরতে হবে। শহর ও শহরতলির একাধিক স্কুল বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে, শিক্ষিকাদের সালোয়ার-কামিজ পরাকে কেন্দ্র করে। বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়, লখনউয়ের অওধ কলেজ এবং চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েদের জিনস এবং স্কার্ট জাতীয় পোশাক পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার উদ্যোগ নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ