বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১২

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ মতে সাইয়্যিদুল খুলাফা, আস সাফফাহ মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অবশ্য অবশ্যই খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ প্রতিষ্ঠা করবেন ইনশাআল্লাহ

উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শেষ যামানায় একজন খলীফা উনার বিছাল শরীফ-এর (ইন্তিকালের) সময় (নেতৃস্থানীয়) লোকদের মধ্যে আর একজন খলীফা মনোনিত করার ব্যাপারে ইখতিলাফ তথা মতোবিরোধ দেখা দিবে। তখন এক ব্যক্তি (হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি) নিজেকে গোপন রাখার উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন। এই সময় মক্কাবাসীগণ উনার নিকট এসে উনাকে জোরপূর্বক ঘর থেকে বের করে আনবেন। কিন্তু তিনি তা পছন্দ করবেন না। (প্রকৃতপক্ষে ইনি হলেন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। তিনি নিজেকে গোপন রাখতে চাইবেন। কিন্তু উনার কর্মকা-ে এবং চেহারার নূরানী জ্যোতির্ময় আলোকে লোকেরা চিনে ফেলবেন যে, ইনিই ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম।) অতঃপর হাজারে আসওয়াদ ও মাক্বামে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর মধ্যবর্তী স্থানে লোকেরা উনার কাছে বায়াত গ্রহণ করবেন। এরপর সিরিয়া হতে একটি সৈন্যবাহিনী উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হবে। কিন্তু মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর মধ্যবর্তী ‘বাইদা’ নামক স্থানে তাদেরকে ভূগর্ভে পুঁতে ফেলা হবে। অতঃপর যখন চতুর্দিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়বে এবং লোকেরা চাক্ষুষ এই অবস্থা দেখতে পাবে, তখন সিরিয়ার আবদালগণ এবং ইরাকের একটি বিরাট জামাত উনার নিকট আসবেন এবং উনার হাতে বায়াত হবেন। অতঃপর কুরাইশের এক ব্যক্তি যার মামার বংশ হবে ‘বনুকালব’ সেও ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠবে। উনার সেনা বাহিনী তাদের উপর বিজয়ী হবে। এটা ‘ফিতনায়ে কালব’। হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের মাঝে তাদের নবী তথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুতাবিক কাজ- কর্ম পরিচালনা করবেন এবং পুনরায় পৃথিবীতে ইসলাম পুরাপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বৎসর এই অবস্থায় অবস্থান করবেন এবং মুসলমানগণ উনার জানাযা পড়বেন।
(আবূ দাউদ, আহমদ, আবূ ইয়ালা, তিবরনী, ইবনে আবী শায়বা, ছহীহ ইবনে হিব্বান, আব্দুর রাজজাক, মাজমাউয যাওয়াইদ, আস সুনানুল ওয়ারিদা ফিল ফিতান, আখবারিল মাহদী লিছ সুয়ূত্বী, জামিউল আহাদীছ লিছ সুয়ূত্বী, জামউল জাওয়ামি’ লিছ সুয়ূত্বী, কানযুল উম্মাল, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, মিশকাত শরীফ- ১০ম খ- ৪১ নং পৃষ্ঠা (বঙ্গানুবাদ), এমদাদিয়া লাইব্রেরী ইত্যাদি)

এই হাদীছ শরীফ-এর মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে অবশ্যই অবশ্যই খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবে। সুতরাং যারা বলে থাকে যে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথায়ও নেই যে, ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে খিলাফত কায়িম হবে, তাদের এই কথা ভুল, অশুদ্ধ এবং কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ বলে প্রমাণিত হলো। এখন কথা হলো যে, ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে খিলাফত কায়িম যদি নাই হয়, তাহলে ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় খলীফা আসবেন কোথা থেকে? অথচ উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, একজন খলীফা উনার বিছাল শরীফ-এর সময় (নেতৃস্থানীয় লোকদের মধ্যে) ইখতিলাফ দেখা দিবে যে, উনার পরে কে খলীফা হবেন। তখন ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এর দিকে রওয়ানা হবেন। 
অর্থাৎ হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ হওয়ার পূর্বে মুসলমানরা খুব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। ইহুদী, খ্রিস্টান, বিধর্মীরা এবং মুনাফিক্ব ও উলামায়ে ছূ’রা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে। এমতাবস্থায় মুসলমানরা এই কঠিন পরিস্থিতির মুকাবিলা করার জন্য একজন বিশেষ খলীফার প্রয়োজন অনুভব করবে। ওই সময় মুসলমানদের মধ্যে যিনি খলীফা থাকবেন উনার বিছাল শরীফ-এর সময় সভাসদগণ উনাদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিবে যে, এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাকে খলীফা হিসেবে মনোনীত করা যায়। 
তখন হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা উনাদের মধ্যে সর্বশেষ খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি নিজেকে গোপন রাখার জন্য মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ-এ যাবেন। ওই সময় যিনারা ওলীআল্লাহ থাকবেন উনারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত বিভিন্ন আলামত দেখে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে চিনে ফেলবেন এবং উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করবেন। এমতাবস্থায় গায়েবী নিদা হবে যে, “ইনিই মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম। আপনারা উনার কথা মতো চলুন এবং উনার ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ করুন।

যেটা আমরা বলতেছিলাম যে, উপরোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার প্রকাশ হওয়ার পূর্বে পৃথিবীতে খিলাফত কায়িম থাকবে এবং খলীফাও থাকবেন। যদি হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার পূর্বে আর খিলাফত কায়িম না-ই হয়, তাহলে উনার পূর্বে খলীফা আসবেন কোথা থেকে? অথচ তখন যে একজন খলীফা থাকবেন এই বিষয়টি হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এই হাদীছ শরীফ থেকে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার সময় মদীনা শরীফ, মক্কা শরীফ এবং ক্বাবা শরীফ এ কোনো সিসিটিভি থাকবে না। তাহলে উনার পূর্বে সেই সিসিটিভিগুলো ধ্বংস করবেন কে? সমস্ত ফিতনা-ফাসাদ মিটিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ প্রতিষ্ঠা করবেন কে? 
অবশ্য অবশ্যই সেই মহান কাজটি হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ১২ জন মহান খলীফা উনাদের মধ্যে থেকে অন্যতম একজন বিশেষ খলীফা তিনি করবেন। আর সেই আখাচ্ছুল খাছ বিশেষ খলীফাই হচ্ছেন সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদুল খুলাফা, আবুল খুলাফা, আস সাফফাহ মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। অতিশীঘ্রই উনার মুবারক উসীলায় দুনিয়ার যমীনে যাহিরীভাবে খিলাফত আলা মিনহাজিন নুবুওওয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবে। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, উনার মুবারক দোয়ার বদৌলতে এক সময় মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ এবং ক্বা’বা শরীফ-এর সমস্ত সিসিটিভিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। উনি ছবি ছাড়াই মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ হজ্জ করতে যাবেন। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং প্রত্যেকের উচিত উনার মুবারক হাতে আনুগত্যতার বাইয়াত গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

অন্য হাদীছ শরীফ-এ বলা হয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন। উনার প্রত্যেকেই হবেন একজন খলীফা উনার বংশধর। অর্থাৎ উনারাও খলীফা হবেন। তবে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে যে খাছভাবে ১২ জন মহান খলীফা উনাদের কথা বলা হয়েছে উনারা সেই ১২ জন মহান খলীফা উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন; কিন্তু উনারা সৎ ও ইনসাফগার খলীফা হবেন। উনরাও মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কর্তৃক মনোনীত। তবে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ১২ জন আখাছছুল খাছ তথা বিশেষ খলীফাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন। অতঃপর হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম তিনি প্রকাশ পাবেন।
হাদীছ শরীফখানা হচ্ছে- “হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান, (হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনার প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে) আপনাদের এই কেন্দ্রের নিকট তিনজন ব্যক্তি শহীদ হবেন। উনারা প্রত্যেকেই হবেন একজন খলীফা উনার আওলাদ বা সন্তান। খলীফা তিনি উনাদের একজনের নিকটও পৌঁছাতে পারেবেন না।
প্রাচ্য দেশ থেকে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। তারা তোমাদেরকে এমনভাবে শহীদ করবে, যেমনটি ইতঃপূর্বে কোনো জাতি করেনি। অতঃপর তোমরা যখন উনাকে (হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম) দেখতে পাবে, তখন উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, যদিও তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়। কেননা তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার খলীফা হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম।”
(বিঃদ্রঃ এখানে এই হাদীছ শরীফ-এর শাব্দিক বা সরাসরি অর্থ দেয়া হলো। পরবর্তীতে ইনশাআল্লাহ আমরা এই হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করবো)
(বিদায়া-নিহায়া ৬ষ্ঠ খ- ২৪৬ পৃষ্ঠা, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাক্কী ৬ষ্ঠ খ- ৫১৫ পৃষ্ঠা, জামিউল আহাদীছ ৯ম খ- ৩৩৩ পৃষ্ঠা হাদীছ শরীফ নম্বর ২৮৬৫৮, তারিখে দিমাশক্ব আল কাবীর ৩২তম খ- ২৮১ নম্বর পৃষ্ঠা হাদীছ শরীফ নং ৬৬৭৯, খছাইছুল কুবরা লিস সুয়ূতী ২য় খ- ২০২ পৃষ্ঠা, ইযালাতুল খফা ১ম খ- ৬০৭ পৃষ্ঠা, নিহায়া ফিল ফিতান ২৬ নম্বর পৃষ্ঠা, মুছান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, মুস্তাদরাকে হাকিম, ইবনে মাজাহ শরীফ ইত্যাদি)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ