রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১২

পুতুল নাচের ইতি কথা



আমি শুয়ে আছি একটানা বহু দিন, চির গুমট এই পড়ে থাকা, ভালো লাগেনা কিছুতেই তবুও থাকতে থাকতে হয়। সময় চলে। প্রবাহমান রাতের

বিস্তৃন্য গভীর গাড়ো নির্ঘুম আধারে নিথর নিস্তব্ধ পড়ে থাকি আমি, ইট কাঠ

সিলিং ফ্যান কোল বালিস এদেরও বয়স বাড়ে, বয়স বাড়ে আমারো। বুকের বা পাশের ব্যাথাটা মাঝে মাঝে জানান দেয় রাতের পুরটাই নির্ঘুম কেটে যায়। শত ক্লন্তিতেও ঘুম আশেনা, আর আসলেও ঘুমাতে ইচ্ছেও করেনা, চোখ মুদলেই সেই ডানা ভাংয়া কৈশর,


রক্তাক্ত দেহ, মৃত মানুষ, পচা লাশ, ভান্গা চোড়া বাড়ী, পোরা ঘর, ধবংশ স্তুপ,

ধর্ষিতা কন্যা, মা বোন বালিকা। নত মুখ, অহোছানো চুল, ছেড়া শাড়ী। পোড়া আচল।, বিভৎষ বিস্তৃন্য মানচিত্র,

খোলা জানালা,

সাদা শাড়ী, রুমি এসব কিছু একে একে এসে সামনে দ্বাড়ায়। এর মধ্যে রুমিকেই ভিষন আপন লাগে, ওই কেবল আয় আয় বলে কাছে ডাকে, এক অজানা ভয়ে কিছু তেই ওর কাছে যেতে ইচ্ছা করেনা। অথচ এই রুমির ডাকেই পড়া ফাকিদিয়ে কত দিন ওকে নিয়ে যখন তখন নদীতে ঝাপিয়ে পড়েছি, সাতার কেটেছি এপার থেকে ওপার। ওর সাথে কতযে ঘরকান্যা কেখেলেছি তার কোন হিসেব মেলেনা, ঐ একদিন ওর উশ্নতায় আমাকে ভিজিয়ে জানিয়ে দিল আমারা বড় হয়েছি, বয়স বেড়েছে।
সেই ছোট ঘরকান্যা খেলাকে যখন বড় ঘর বানাব ভাবছি তখন শুরু হল মুক্তি যুধ্ব,

চার পাশে বীর বাংয়ালী অশ্র ধর, রক্ত গরম করা গান শ্লোগান। আমার বয়সী পাড়ার অনেক চেনা চেনা মুখ হঠাৎ উধাও হয়ে গেল।
একদিন সকালে

সবুজ গাড়ী চাদ তারা পতাকা নিয়ে আমাদের পাড়ায় ঢুকল মিলিটারি, ঢুকেই আহম্মদ স্যারের বাড়ী রেট, স্যার কে সহ যাকে পেল তাকেই পিছমোড়া করে করে বেধে নিয়ে গেল, রাস্তায় কার্ফিউ দিল, পথের কুকুর অন্ধ ভিখারি কাউকেই ক্ষমা করলানা সিসার বুলেট। সহপাঠি নাজিমের মুখে শুনলাম আহম্মদ স্যার নাকি মুক্তি বাহীনিতে লোক পাঠাচ্ছিলো তাই ওরা এভাবে স্যারকে নিয়ে গেলো।
মুক্তি বাহিনী নতুন নাম, মাথায় আগুন লেগে গেল, আমিও যাবো কিন্তু কোন দিকে? নাজিমই সমাধান। পালালাম বাড়ী থেকে। টেবিলের উপর একটা চিঠি রেখে,
বাবা, মা, পালাচ্ছি দোয়া করো সাথে ক্ষমা, একটা স্বাধীন দেশের জন্য অপেক্ষা করো


রুনি বেদম কেদে ছিলো, বলেছিলাম ফিরে আসছি খুব শীঘ্রই তোর জন্য একটা স্বাধীন লাল সূর্য নিয়ে, তুই অপেক্ষায় থাকিস।

চলে গেলাম কুমিল্লায় ওখান থেকে বর্ডার পার হয়ে ভারত।



দু মাস ট্রেনিং,

যশোর রোডে গিয়েছিলাম একদিন, কিছু করতে পারিনি কেদেছি অঝোরে, চাটার লোক সবখানেই আছে, রিফিউজি দের ত্রান চলে যাচ্ছে সরকারী গুদামে, আর মারা যাচ্ছে আমাদের দেশের প্রান।
ফিরে এলাম বাংলায় হাতে আগুন বুকে জ্বালাময়ী স্বাধীনতা।

পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে গেরিলা ফাইট।

রাস্তায় মৃত মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শিশু দেখে প্রতিগ্যা করেছিলাম ছাড়বনা সালাদের সাথে ওদের দোশর দের,

গলা কেটে নামিয়েদেবো যদি হাতে পাই, নয় মাসের অন্তসত্যা দেশ হঠাৎ স্বাধিন হয়ে গেল। রেডিওতে একটা ঘোষনা সবাইকে কাপিয়ে দিল। "হাতিয়ার ডালদে"।

বহু দিনের বুকবন্ধি জয় বাংলা আকাশ বাতাস ভেংয়ে চৌচির করে দিল।

ফিরে লাম গ্রামে আমাদের পাড়ায়, বাড়ীতে। কিন্তু সেখানে বাড়ী বলে কিছু নেই কেবল একটা পোড়া স্তুপ ছাড়া।
আর বাবা মা কে খুজে পাইনি কোন দিন। রূমি কে পেয়েছিলাম আর্মি ক্যাম্পে, আমাদের সেই জির্ন স্কুল ঘরে ওকে ওরা ওর পরনের সাদা শাড়ি টা গলায় জড়িয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো মাচার সাথে।
নাজিম টা মরে গিয়েছিলো যুদ্বক্ষেত্রে,

কাধে করে নিয়ে এশেছিলম বহু দুর, পকেটে একটা চিঠি পেয়েছিলাম, লেখা ছিলো,
মা, আমি ভালো আছি, তুমি ভালো থেকো।


ওটাকে ওর কবরেই রেখে দিয়েছিলাম থাক ওটা ওর বুকেই থাক।


এর পর বহু উথ্থান পতন,


হানাদার দের রেখে যাওয়া বিজ ফুটতে লাগল ঘরে ঘরে। শত শত বেয়রিশ বাচ্চা পড়ে রইলো এখানে সেখানে, অনেক মেয়েই মরে গেলো গলায় দড়ি দিয়ে, কিন্তু আমি বেচে থাকলাম।

অতঃপর আমারা যুদ্ব ক্লান্ত জেনারেশন, মাথায় ঝাকড়া চুল পরনে বেলবটম প্যান্ট ভাবটা এমন যে সবাই মাস্তান, ক্ষমতা দখল বেদখল চলতে থাকে পুর দমে, আমরা তবু দিব্যি বেচে থাকি।


লালা সার্ট গায়ে তার বুক খোলা গান শুনি ছবি দেখি "রংবাজ"। চারদিকে আধুনিকতা কোন পিছুটান হীন পাশ্চাত্য সভ্যতার ব্যাস্ত এ নাগরে আসি, বয়স বাড়ে। এক সময় অবক্ষয় নামে দেশের বুকে, মুক্তি যোদ্বা এক যুবক মদ খায় গাজা টানে, অবশেষে যকৃতে পচন । হায় স্বাধীনতা!

রূমি তবু কাছে ডাকে, আয় আয় বলে। কিন্তু আমার কেবল ভয় হয় আমি ওকে যে সুর্যটা এনে দেবি বলে ছিলাম সেটা হারিয়ে ফেলেছি।

ওর কাছে যেতে হলে আমার আর একটা সূর্য়ের প্রয়জন বা পাশের ব্যাথাটার উপর হাতরেখে পড়ে থাকে।

মাঝে মাঝে নিজেকে বড় একা মনেহয়, মনেহয় আমাবস্যার কালো অন্ধকারে আমি তলিয়ে যাচ্ছি, যেখানে প্রদীপ জ্বালাবার মতন কেউ নেই। জেগে জেগে প্রহর গোনা কখন সকাল হবে? কান পেতে থাকি দেয়ালে যদি দূরে কোথও গ্রেনেট চার্যের শব্দ শোনা যায়।


**************

মুখ বন্ধঃ গল্পটি এখানেই শেষ, এটি একজন মুক্তি যোধ্বার বলা ঘটনা, আমি ওনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, ইদানিং লেখা গুলো খুব বড় হয়ে যায়, অনেকে পড়তে চায়না তাই ছোট করে লিখলাম, ফাকিস্তান পন্থি কিছু মানুষ এখনও আমাদের দেশে আছে, তেমনি আছে ভারত পন্থিও, আমাদর ক্রিকের টিম এদের কাছে হেরে গেলে তারা দাত কেলিয়ে হাসে, কিন্তু আমাদের কষ্ট হয়, পাকিস্তান পন্থিরা বলে ভারত নাকি দুই পাকিস্তানের ভাতৃত্য নষ্ট করেছিলো ৭১এ, তারাই নাকি যুদ্ব বাদিয়ে দিয়েছিলো পুর্ব আর পস্চিমের সাথে, তাহলে আমার প্রশ্ন সেই সব ফাকিস্তান পন্থিদের কাছে তাহলে -২৬ মার্চের কিলিং করলো কারা? এটও কি ভারত শিখিয়ে দিয়েছিলো? ফাকিস্তানি দের। আর যারা ভাদা তারা মনে করে ৭১এ ভারতের দানে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, যদি তাই হয় তাহলে আমাদের মুক্তি বাহীনি কি করলো? ৭ জন বিরশ্রষ্ঠ কি তাহলে কিছুই করেনাই? যে মুক্তি যোদ্বার কথা লিখেছি তিনি আমার খুব কাছের মানুষ, তিনি মাঝে মাঝে ক্ষোভ ঝারেন এই দেশ কি আমরা চেয়েছিলাম? যে দেশে ভোর রাতে মারা যায় ধর্ষিতা ইয়াসমিন, নারীরা হয়ে ওঠে পন্য,

কি সেটা হাইপ্রফাইল,

কি নিন্ম শ্রেনী।
সে আমার হাত ধরে বলেছিলো আমরা এমন দেশ চাইনি, সত্যি বলছি খোকা এমন দেশ চাইনি।

যাহোক, অনেকে মনে করেন যে স্বাধিনতা যুধ্বে পাকিস্তানীরা কেবল হিন্দু স্প্রদায়ের লোকদের হত্যে করতে এসে ছিলো, এবং এটার একটা অবিচল প্রমান বহন করছে


এই ছবিটা, যেটা দিয়ে দেখানো হয়েছে একজন সৈন্য সাধারন মানুষের খাতনা হয়েছে কিনা তা দেখছে, তাদের কে বলছি, পাকিস্তানিরা শেষের দিকে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের লোক কে হত্যে করার যন্য গুলি চালায় নি, যাকে পেয়েছে তাকেই মেরেছে, যুদ্বটা ছিলো সব বাংয়ালীর অদিকার আদায়ের যুধ্ব।
যাহোক ছবিটার কথায় আশি,

ছবিটি তুলে ছিলো ভারতিয় ফটোগ্রাফার কিশোর পারেখ, পরে তিনি ছবিটি তার

বাংলা দেশ এ ব্রটাল বার্থ
নামে বইয়ে প্রকাশ করেন।

এই ছবিটি তে দেখা যাচ্ছে ভারতিয় কিছু সৈন্যের হাতে ধরা পরা কিছু রাজাকার কে জিগ্যাসা বাদ করা হচ্ছে, এখানর ১,২,৩ লেখা জায়গাটা খেয়াল করুন,

এবার দেখুন এই ছবিটায় দেখুন ১,২,৩ লেখা জায়গার সথে মিলান তাহলেই বুঝবেন সৈন্যটি খাতনা নয় অস্র আছে কিনা চেক করছে। এটিই ছবিটার আসল সাইজ।

যাহোক অনেকে ভাবতে পারেন ছবিটি ভারতিয় সৈন্যের প্রমান করে ফাকিস্তানি দের সফাই গাইছি। তাদের কে বলছি, আমার ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে, বাংয়ালী জাতী যেনো একটা বড় ভুলের মধ্যে না থাকে তার জন্য এই ক্ষুদ্র প্রয়াস, যদি কেউ ব্যাপার টা ভুল প্রমান করতে পারেন সাথে সাথে আমি পোষ্টের এই অংশ মুছে ফেলব, আমি চিরদিন চাই যুদ্ব অপরাধি দের বিচার হোক। হোকসে পাকিস্তানী বা বাংলদেশী যেমনটা আমার বাবা চান।


চলুন আমরা সবাই মিলে সুস্হ সুন্দর দেশ গড়ি।
ভালো কথা বরা বরের ছবি গুলো কেবল ভিজুয়ালাইজেসনের সুবিধার জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে, বর্নিত ঘটনার সাথে ছবির পাত্র পাত্রির কোন মিল নেই। আর পোষ্ট টির নাম পুতুল নাচের ইতি কথা হবার কারন হলো, আমরা যারা আম জনতা তারাতো সবাই পুতুল নাচের পটভুমির চরিত্র, এখানে কেউ রাজা সাজে কেউ উজির, তবুও সময় কেটে যায় আমরা সুতর টানে নাচি। স্বাধীনতার ৪০ বছরে তো আর আমরা কম নাচলাম না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ