রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১২

২৫শে মার্চ রাতেই মহল্লার যে মাস্তান লোকটি যুদ্ধ শুরু করেছিলো

২৫শে মার্চ ১৯৭১ সাল। সকালবেলা।
নুরু মহল্লার সবার বড় ভাই। নুরুর চাচার বয়সী মানুষেরাও ওনাকে ভাই বলে ডাকে। তবে শুনেছি আড়ালে সবাই বখাটে/মাস্তান/গুন্ডা এইসব নামেই ডাকতে পছন্দ করে। নুরুর সাগরেদ হলো মামুন। নুরুভাই যেখানে মামুন সাহেবও সেখানে। ভাইয়ের কখন কি লাগে সেদিকে সদা জাগ্রত দৃষ্টি মামুনের। তো ওনাদের বর্তমান লোকেশন মহল্লার চায়ের দোকানের সামনে।
মামুন:
ভাই!! দেখো...দেখো!!! তোমার জান আইতাছে!!!!
আস্তে করে নুরু নগদ ৫টাকা দিয়ে কেনা সানগ্লাসটি চোখে দিয়ে দিলো।
নুরু(সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে):
আইছে তো কি হইছে?? অত ফাল মারিছ না। চুপচাপ দাড়াইয়া থাক।
মুখে এই কথা বললেও নুরুর মনের ভিতর এখন তোলপাড় চলছে।
নুরু:
কেমন আছ সোনিয়া?? কই গেছিলা এই সকালবেলা??? দিনকাল ভালা নাতো। রাস্তায় কেমন আর্মি নামছে দেখছো!!!
সোনিয়া(রাগত স্বরে):
নুরুভাই আপনারে না বলছি দয়া করে আমারে মুক্তি দেন। আপনারে না বললাম আমার বিয়া ঠিক হইছে।
মামুন:
ভাবীসাব চেইতেন না। বিয়া ঠিক হইছে। এখনো হইনায়। ভাইরে ছাড়া আপনের বিয়া আর কারো লগে হইবো না।
সোনিয়া:
এই চামচা চুপ। তোকে কিছু বলতে বলেছি। নুরুভাই আমারে আল্লা মাফ করেন।
বলেই আর অপেক্ষা করলো না। সোনিয়া বাসার গেইটের ভিতর ঢুকে গেল। নুরুভাই আর মামুনের জন্য এটা প্রতিদিনকার সাধারণ ব্যাপার। তাই ওদের কিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না। নুরুভাই আবার আরেকটা সিগারেট ধরালো।
মামুন:
ভাই বিড়ি ফালান। আজগর চাচা আইতাছে।
নুরু বেশ বিরক্ত হয়ে গেলো। শালার সিগারেটটাই মাটি।
নুরু:
স্লামালাইকুম চাচা!!! ভাল আছেন নি??? কই যান???
আজগর চাচা(বেশ বিরক্ত):
তোদের মতোন আকামা নাতো আমরা। আমাদের কাজ করতে হয়। মহল্লার সবগুলা পুলার একটা গতি হইলো। তোরা ২টা কোন কাম করতে পারোছ না। সারাটাদিন চায়ের দোকানে বইয়া বিড়ি আর আড্ডা আর মাস্তানী!!!!
মামুন:
চাচারে এইজন্য মান্য করতে মন চায় না। দেখলেই উপদেশ। যান চাচা যান। কামে যান।
আজগর চাচা:
ফাজিলের মতো কথা কইস না। থাপ্পড় দিয়া কান গরম কইরা ফেলামু। বেয়াদপ।
নুরু:
এই মামুন থাম। চাচা....আপনে যান। এই ছাগলটার কথা কিছু মনে কইরেন না।
আজগর চাচার প্রস্হান। এখনো রেগে আছেন। মনে মনে এই দুটারে গাল দিতে দিতে সামনে এগিয়ে গেলেন।
মামুন:
ভাই তুমি মুরুব্বীগুলারে লাই দেও বেশী। কত বড় সাহস!!! তোমার সামনে আমারে থাপ্পড় মারার ভয় দেহায়!!!! তুমিও কিছু কইলা না।
নুরু:
থাম তো। মুরুব্বী মানুষ। বাদ দে। তুইও কথা বেশী কস।
মামুন:
আর মুরুব্বী। আচ্ছা ভাই আজকা শুনলাম পুরা শহরে মিলিটারী ভইরা গেছেগা!!! কাহিনী কি??? শেখ মুজিবরে ক্ষমতা দিবো নাকি???
নুরু:
আরে না। মিলিটারী কঠিন জিনিস। এত সহজে ক্ষমতা ছাড়বো না। আমরা তো ঝামেলার জাত। ঝামেলা যাতে না হয় হেইজন্যই মিলিটারী নামাইছে। আর কিছু না।

২৫শে মার্চ ১৯৭১ সাল। রাত ১১:৪৫।

নুরু থাকে মহল্লার মাঝেই ৩তলা একটি বিল্ডিং এর ছাদে একটা ছোট্ট রুমে। দিনের শেষ সিগারেটটি খেয়ে শুয়েই পড়বে এমন সময় বেশ কয়েকটি গাড়ির শব্দ শুনতে পেলো। ছাদের রেলিং এর সামনে এসে দাড়ালো নুরু। ২টা গলির রাস্তার শেষ মাথায় গাড়ির আলো দেখা যাচ্ছে। ঐযে সামনেই ক্লাব ঘর যে গলিতে সেইখানে। নুরু রূম থেকে বাইনোকুলারটা এনে চোখে লাগায়। আরে বাপরে!!! এলাকার সব মুরুব্বী এখনো বসে তুমল আড্ডা দিচ্ছে। আজগর চাচা, হাসান চাচা, ফরহাদ চাচা বাপরে বাপ!!! আজকে দেখি সব আছে। বুড়োরা কি নিয়ে যে এত রাত পর্যন্ত গল্প করে কে জানে??
সেই গলির মাঝখানে এসে গাড়িটা থামলো। বেশ কয়েকজন আর্মি নামলো গাড়ি থেকে। আস্তে আস্তে একদম শব্দ না করে ওদের গলিতে ঢুকে পড়েছে। শব্দ শুনে ক্লাব ঘরের উঠান থেকে মুরুব্বীরা উকি মারছে। নুরু ছাদ থেকে সব দেখছে।
মনে মনে খুশি হলো নুরু। এইবার মনে হয় এত রাতে আড্ডা দেবার জন্য বুড়া মিয়ারা প্যাদানী খাবে। আর্মি কঠিন জিনিষ। নুরু চায়ই যাতে বুড়া মিয়াদের চরম ঝাড়ি দেয় আর্মি। সারাদিন আমাকে আর মামুনকে ঝাড়ি!!!! বলতে বলতে ক্লাব ঘরের সামনে এসে পড়লো আর্মিরা।
কিন্তু একি একি !!!!! পিস্তল তাক করছে কেন ওনাদের দিকে!!!!! আরে আরে!!!!!
ঠাস ঠাস ঠাস ঠাস!!!! মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গেলো ব্রাশ ফায়ারের শব্দে।
ছাদের মাটিতে বসে পড়লো নুরু। প্রচন্ড বমি আসছে। চোখের সামনে একি দেখলো??? কোন কথা নেই কিছু নেই এতগুলো মানুষকে গুলি করে মেরে ফেললো!!! প্রচন্ডভাবে ফাপাচ্ছে নুরু।
পুরো এলাকায় যেন কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। প্রচন্ডভাবে গুলির শব্দ আর অসহায় মানুষদের চিৎকার শুনা যাচ্ছে। উঠে দেখার সাহস নেই নুরুর। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তার মহল্লায় কি ঘটছে।
২৫মিনিট পরের ঘটনা। শুয়োরের বাচ্চা আর্মিরা আস্তে আস্তে ওদের গলির সামনে এসে পড়েছে। এই মহল্লার ভালমন্দ সবসময় নুরু দেখে এসেছে। সবাই যেকোন সমস্যার জন্য সবসময় নুরুর কাছে এসেছে। নিজের মহল্লার মানুষদের জন্য কি নুরু কিছুই করতে পারবে না???
হঠাৎ ওর ছাদের কোণায় ধুপ করে শব্দ হলো!! পাশের বাসার ছাদ থেকে কে যেন লাফ মেরেছে। মামুন।
মামুন(প্রচন্ড হাপাচ্ছে):
ভাই একি কেয়ামত শুরু হইলো!!! কুত্তার বাচ্চাগুলা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি???
এবার কেদেই ফেললো মামুন।
মামুন:
ভাইরে সব মানুষগুলারে চোখের পলকে মাইরা ফেললো। আমি কোনমতে এইছাদ ওইছাদ পার হয়ে তোমার কাছে আসলাম।
মামুন আর কথা বললো না। বসে কাদতে লাগলো। তার নিজের মহল্লার সব মানুষ। ছোটথেকে সবার সাথে বড় হয়েছে। আর সবাইকে মেরে ফেলছে!!!!

নুরু উঠে দাড়ালো। মনে প্রচন্ড রাগ জমে উঠেছে। আস্তে আস্তে খুব সাবধানে ছাদের রেলিং এর ফাকে চোখ রাখলো। দেখেই চমকে গেল! তাদের এই বিল্ডিংয়ের নিচেই আর্মিরা। এইতো গেট ভেঙ্গে ঢুকে পড়লো।

নুরু সাথে সাথে উঠে দাঢ়িয়ে মামুনের সামনে আসলো। যেকোন সময় ছাদে আর্মিরা এসে পড়বে। এই ছাদের পিছনের রেলিং এর নীচে বড় ঢাল আছে। সেখানে বসে পড়লে রাতের অন্ধকারে দেখা কষ্ট। আপাতত সেখানে লুকাতে হবে তাড়াতাড়ি।
নুরু:
মামুন। উঠ....তাড়াতাড়ি উঠ। উঠতো।
মামুনকে হাত ধরে টেনে তুললো নুরু। বিল্ডিংয়ে গুলির শব্দ, মানুষের চিৎকার খুব বাজেভাবে শুনা যাচ্ছে।
টানতে টানতে মামুনকে নিয়ে প্রায় দৌড় দিয়ে ছাদের পিছনে চলে গেলো। যাবার আগে নিজের ছুরি আর একটা দা নিয়ে নিলো রূম থেকে। সিড়িতে বুটের শব্দও ভেসে আসছে। আর দেরী করলো না। নুরু ও মামুন রেলিং এর ঢালে বসে পড়লো।

"ইধার মে তো কই হারামী নেহি হ্যায়!!! শালা পেরেশান কারকে রাখা থা হারামী বাঙ্গালী", একজন সেনার গলা শুনা গেলো।

"আবে ইয়ার ইয়ে সব গাদ্দার কি জাত হ্যায়। জেনারেল সাব নে বহুত আচ্ছা ডিশিসান নিয়া। খতম করদো সব গাদ্দার কো!!!! শালা....," আরেকজন সেনার গলা।
"ইয়ার এক বিড়ি জ্বালাকে দেতো। থোরাসা আরাম হো যাক।"

নুরু ও মামুন আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকালো। মাত্র ২জন সেনা। ছাদের সামনের রেলিং এ দাড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বিড়ি টানছে।

ফিসফিস করে কথা বলা শুরু করলো নুরু ও মামুন।
নুরু:
মামুন। এখনই সময়। হারামীগুলা সামনের দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। তুই দা নে আর আমি ছুরীটা নিলাম। পিছন থেকে আগেই মুখ চেপে ধরবি। তারপর কোপ মারতে থাকবি। পারবি না????
মামুন:
পারি আর না পারি। আমি যামু ভাই। কুত্তার বাচ্চাগুলারে শেষ করুম আজকে। যতটা পারি।
নুরু:
দেখিস সাবধানে। চল আস্তে আস্তে।
নুরু আর মামুন সেনা দুইটার পিছনে দাড়িয়ে। নুরুর চোখের ইশারার সাথে সাথে দুজনে একইসাথে সেনা দুটার মুখ চেপে ধরে দা ও ছুরী চালাতে লাগলো।
সেনা দুটার রক্তে ভাসা লাশ পড়ে আছে সামনে। নুরু ও মামুনের গায়ে আর্মির পোশাক। জানোয়ারগুলোর পোশাক পড়ে থাকতেও ঘৃণা করছে।
মামুন:
ভাই। এখন কি করবা???
নুরু:
একসাথেই নিচে চল। হেলমেটটা দিয়ে মুখের অংশ ঢেকে রাখিস। যাতে চিনা না যায়। তুই ফাক পেলেই আলাদা হয়ে সরে পড়িছ। তারপর পালিয়ে যাস। কিন্তু খুব সাবধানে।
মামুন:
আর তুমি???, জিজ্ঞাস করলেও মামুন বুঝে গেছে ভাই কি করতে যাচ্ছে।
নুরু:
তুই চলে যাস। আমি সোনিয়াদের বাসায় যাবো। ওদের ফেলে আমি যাবো না।
মামুন:
ভাই.....ছোটবেলা থেকে তোমার সাথে। আর তুমি আমারে এমন ভাবলা!!! তুমারে ফালাইয়া আমি যাবো না। আমিও তোমার সাথে ভাবীসাবের বাসায় যাবো।
মামুনকে ফেলে রেখে নুরুরও যেতে ইচ্ছা করছে না। যাক ওর সাথে ছেলেটা। দেখা যাবে পরের ঘটনা। ২জনে খুব সাবধানে নিচে নামতে লাগলো।

সোনিয়াদের বাসার ভিতর নুরু ও মামুন বসে আছে। ৫/৬মিনিট ধরে দুজনের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। খালা, খালু, সোনিয়ার ৭বছরের ছোট ভাইয়ের লাশ সামনে পড়ে আছে। আর সোনিয়ার লাশ...........সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

মামুন হতবাক হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবীর লাশ চাদরে ঢেকে ভাই লাশের মাথা নিজের কোলে রেখে চুপচাপ বসে আছে। মামুনের চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। কষ্ট আর রাগে ভয়ংকর কিছু একটা করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভাই এত নীরব কেন??? ভাইয়ের চোখে শুধু পানি দেখা যাচ্ছে........
নুরু আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো। শেষবারের মতো লাশগুলোর দিকে তাকালো। ভয়ংকর হয়ে আছে ওর চোখের দৃষ্টি। মনে শুধু একটাই শব্দ প্রতিশোধ।
নুরু:
মামুনরে!!! আমি এখন ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটাতে যাবো। একলা যেতে ইচ্ছে করছে না। তুই কি যাবি শেষবারের মতো আমার সাথে????
ভাইয়ের কথায় মামুন অবাক হয়ে গেলো!!!! খুব ভালো করেই জানে ভাই এখন কি করতে যাবে। কিন্তু ভাইতো তাকে করবে আদেশ।
মামুন:
ভাই তুমি কেমনে আমারে এই কথা বললা!!! সারাজীবন তোমার সাথে আছি আর থাকবো। ভাবীসাবরে কুত্তার বাচ্চাগুলা এভাবে মাইরা ফেললো!!! জানি কি করবা এখন। চলো......রওনা দেই। কুত্তার বাচ্চাগুলারে যইটা পারি আজকে শেষ করবো।
নুরু সামনে এসে মামুনকে শেষবারের মতো জড়িয়ে ধরলো।
নুরু:
তোকে কখনো বলা হয়নি। আমার কেউ নেই। যদি কোন ভাই থাকতো তাহলে তোকে মনে হয় তার থেকে বেশী ভালোবাসতে পারতাম না।
মামুনের চোখ দিয়ে পানি এসে পড়লো।
বাসার ভিতরে থেকেই দুজনে আর্মি দুটার কাছ থেকে নেয়া পিস্তল ২টা লোড করলো। নুরু ছুরীটা প্যান্টের পিছনে রাখলো। আর মামুন দাটা প্যান্টের পিছনে শার্ট কিছুটা নামিয়ে গুজিয়ে রাখলো। জীবনে শেষবারের মতো নুরু একটা সিগারেট ধরালো। খুব কাদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন কাদা যাবে না। সিগারেট শেষ করে দুজন বেরিয়ে পড়লো।

মেজর রায়হান ওয়ারল্যাসে কার সাথে জানি কথা বলছে। তার পিছনেই ২জন সেনা। বাকি সেনারা সামনেই আছে। কেউ মানুষ মারছে, কেউ হাসতে হাসতে তা দেখছে। মেজরের উপর হাই কমান্ড থেকে কড়া আদেশ ঢাকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। কাজটা করে সে বেশ মজা পাচ্ছে। মানুষ মেরে সে সবসময় মজা পায়। কেমন অসহায়ের মতো আচরণ করে তখন হারামিগুলা!!!

দুজন সেনা এমন সময় সামনে এগিয়ে এসে স্যালুট মারলো। অন্ধকারে চেহারাও বুঝা যাচ্ছে না। বিরক্ত হলো মেজর। সেনা ২টার ড্রেসআপ একেবারে যাচ্ছেতাই হয়ে আছে।
এই দুজন সেনাকে আমরা চিনি। একজন আমাদের নুরুভাই। অপরজন আমাদের মামুন।
মেজর(ধমক দিয়ে):
ক্যায়া বাত হ্যায়????
নুরু:
স্যার কুচ জরুরী খবর ল্যাকে আয়া হু......আপকো ক্যাহনা চাতা হু।
বলতে বলতে নুরু মেজরের কিছুটা সামনে এসে পড়লো। তার হাত পেছনে ছুরীর উপর রাখলো। মামুন আস্তে আস্তে চলে গেল পিছনে দাড়িয়ে থাকা ২জন সেনার কাছে। সেও দায়ের উপর হাত রাখলো। অন্ধকারে বুঝা গেল না ব্যাপারটা।
মেজর:
ক্যাহতে কিয়ো নেহি?? টাইম বরবাদ মাত করো।
নুরু:
জি স্যার....বাত ইয়ে হ্যায়।
নুরু মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মামুনও হেসে দিলো। দুভাই দুজনকে শেষবারের মতো জীবিত দেখে নিলো।
শুয়োরের বাচ্চা!!! জানোয়ারের বাচ্চা!!!!! এই কথাটি বলেই নুরু ছুরি নিয়ে মেজরের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
পিছনে মামুনও তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। দা দিয়ে সেনা ২টাকে ভয়ংকর হিংস্রভাবে কোপাতে লাগলো। মেজর ও সেনা ২টা ঘটনা বুঝার আগেই লুটিয়ে পড়লো। মেজর মনে হয় ৭/৮টা ছুরীর পোজ খেয়ে এফোরওফোর হয়ে গেলো। লাথি দিয়ে মেজরকে নিচে ফেলে দিয়ে নুরু পিস্তলটি দিয়ে মামুনের সাথের একটা সেনাকে গুলি করলো। তারপর মেজরকে বুক বরাবর ৩টা গুলি করলো। মামুন এদিকে সেনা ২টার উপর বসে কোপাতেই আছে।
অন্ধকারে আর প্রচন্ড গুলির শব্দে বাকি সেনাদের ঘটনা বুঝতে কিছুটা সময় লাগলো। চোখের সামনে দেখলো মাত্র হেটে যাওয়া ২জন সেনা তাদের মেজর ও আরো ২জন সেনাকে মেরে ফেলছে। ঘটনা বুঝতে কিছু সময় লাগলো ওদের। হতবাক হয়ে গেলো ওরা। সাথে সাথে সবাই নুরু ও মামুনের দিকে গুলি করতে লাগলো।

পরদিন সকালবেলা আতঙ্কিত মানুষরা দেখতে পেলো দুজন গুলিবিদ্ধ আর্মির লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। কোন বাংলাদেশির এত বড় সাহস হলো যে এমন নরকীয় রাতে কিভাবে ২জন সেনাকে মেরে ফেলতে পারে এটা তাদের মাথাতেই ঢুকলো না। মহল্লার যেসব মানুষ প্রাণে বেচে রইলো এমন কিছু মানুষ সাহস করে সামনে এসে দেখলো.....এতো নুরুভাই ও মামুনের গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত লাশ।


আমি যতটুকু জানি এরকম আরো ঘটনা আছে বাংলাদেশে। যাদের কথা আমরা জানি না। কিন্তু সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় অসীম সাহসী এইসব মানুষ পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে লড়েছিলো। কিন্তু এরা কখনো স্বীকৃতি পায় নি। স্বীকৃতি তো দূরের কথা.....মানুষ এদের অসাধারণ বীরত্বের কথাও জানে না। জাতির এইসব অসামান্য সাহসী শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে আমি আমার এই পোষ্টটির মাধ্যমে বুকভরা গর্বের সালাম জানাচ্ছি। সালাম তোমাদের এই বিজয়ের দিনে।


(নুরুভাইয়ের এই ঘটনাটি আমি আমার বাবার কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি। মনে আছে ছোটবেলায় অনেক কেদেছিলাম নুরুভাইয়ের জন্য। মহল্লার মানুষ আর নিজের ভালবাসার নির্মম হত্যার প্রতিশোধ নিতে যে ২৫শে মার্চ রাতেই ১জন সেনাকে মেরে তার পোশাক পড়ে আরো ২জন সেনাকে হত্যা করে শহীদ হয়েছিলো। আমাদের চিত্রনায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক এর নিজ যুদ্ধের ঘটনা একবার পড়েছিলাম। সেটাও মনে গেথে গিয়েছিলো। ওখান থেকেও কিছু নিয়েছি। বলা যায় দুটি অসামান্য সত্যি ঘটনার মিশ্রনে এই গল্পটি রচিত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ