বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১২

প্রধানমন্ত্রীর বাবুর্চীর কন্যাও ছিল, তাই খুলে গেল ১২৫ বালিকার ভাগ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবুর্চীর কন্যা সন্তানকে ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনেছে সরকার, যে কি না নারী ও শিশু পাচারকারীদের কবলে পরেছিল। প্রধানমন্ত্রীর বাবুর্চী কন্যাকে ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে ভারতের ওই রাজ্যটির অন্যান্য পতিতালয়ে পাচার হয়ে আসা বাংলাদেশী দুর্ভাগা বালিকাদের বাড়ি ফেরার দরজা খুলে গেছে। এ নিয়ে বুধবার প্রতিবেদন করেছে মুম্বাইয়ের শীর্ষস্থানীয় মধ্যদিনের পত্রিকা ‘মিড ডে’।



রাজ্যটির বিভিন্ন পতিতালয়ে গত চার বছর ধরে পাচার হয়ে আসা বাংলাদেশী বালিকাদের মধ্যে ১২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, এদের ৬০ জনের ভাগ্য ফিরেছে- ২৭ জন ইতিমধ্যেই দেশে ফিরেছে, আরো ৩৫ জন শিগগিরই ফিরবে। তাদের এই ভাগ্য বদল এবং বাংলাদেশ সরকারের মানসিকতার বদল; দুটোই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্বুচীর কন্যা খুশিকে (ছদ্মনাম) ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে। যাদের উদ্ধার করা হয়েছে ও দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাদের মধ্যে হাসিও রয়েছে।



অন্য শিশুদের মত হাসিকেও উদ্ধার করেছিল মুম্বাই ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশন’। ভারতীয় প্রশাসন গত বছরের নভেম্বরে সংস্থাটিকে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ অনুযায়ী খুশির প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে। রেসকিউ ফাউন্ডেশন ভারতীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়, সে বছরই পাচার হয়ে আসা হাসিকে ফিরিয়ে নিতে হলে একইসঙ্গে তাদের উদ্ধার করা ১২৫ জন বাংলাদেশী নারী ও শিশুকেই দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকে। এ নারী ও শিশুরা চার বছর ধরে বেসরকারি সংস্থাটির আশ্রয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে।



সে মাসেই একটি মহারাষ্ট্রের মাজগাঁও-এর একটি বিশেষ আদালতও বাংলাদেশ সরকারের আবেদন অনুযায়ী খুশিকে বাংলাদেশে পাঠাতে নির্দেশ দেয় রেসকিউ ফাউন্ডেশনকে, কিন্তু ফাউন্ডেশনের প্রধান জনাব আচার্য সে নির্দেশ প্রত্যাখান করেন। কারণ, আচার্য বুঝেছিলেন চার বছর ধরে চেষ্টা করেও যাদের নিয়ে যেতে বাংলাদেশ সরকারকে তিনি রাজি করাতে পারেননি, সেই হতভাগা ১২৫ জনের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে হলে এছাড়া তার সামনে আর উপায় নেই। সরকার ও আদালতের আদেশ পালনে রেসকিউ ফাউন্ডেশনের এ অস্বীকৃতি বিষয়ে ‘মিড ডে’ সে মাসের ২১ তারিখে এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল। শিরোনাম; শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাবুর্চী কন্যাকে ফেরত পাঠাবে না বেসরকারি সংস্থাটি (এনজিও ওন্ট সেন্ড ব্যাক অনলি বাংলা পিএম’স কুক’স ডটার)।



পরে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ রাজি হয় খুশির সঙ্গে আরো ২৬ জন বালিকাকে ফিরিয়ে আনতে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় বাকিদেরও ফিরিয়ে আনা হবে। রেসকিউ’র ত্রিবেণী আচার্য ‘মিড ডে’কে বললেন, ‘‘বাংলাদেশ হাইকমিশন-এর ওপর চাপ প্রয়োগের ফল অবশেষে মিললো। প্রত্যেকের পাচার হওয়াকে আলাদা ঘটনা আকারে মেনে নিয়ে সবাইকে ফেরতে নিতে রাজি হয় তারা। তাদের কারোর কাছেই জাতীয়তার কোনো প্রমাণপত্র ছিল না।’’ তার একমাসেরও কম সময়ের মধ্যেই আরো ৩৫ জন বালিকাকে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধপত্র পৌঁছে বেসরকারি সংস্থাটির কাছে। যারা সবাই রেসকিউর আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিল।



আচার্য বললেন, ‘‘এ সব বালিকারাই আইনত অবৈধ অভিবাসী এবং তাদের জাতীয়তা প্রমাণ করার মত কোনো কাগজপত্রই নেই। এ কারণে বাংলাদেশ হাইকমিশন তাদের দেশে ফেরার পথ বন্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু এখন তারা সবাই বাড়ি ফিরতে পারবে।’’ তিনি জানান, ‘‘যদিও বালিকাদের খুশির সীমা নেই এখন, তারা বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছে কিন্তু এখন তাদের অনেকেই বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি আছে যেগুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে। তাছাড়া কয়েকজনের কিছু চিকিৎসার কাজও বাকি আছে। এসব কাজ শেষ হয়ে গেলেই আমরা তাদের ফেরত পাঠাবো।’’



রাজ্যটির নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের ডেপুটি কমিশনার রবি পাতিল বললেন, ‘‘পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধারকৃত বালিকাদের দেশে ফিরিয়ে নেবার ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অবস্থানের বদল হয়েছে কিছু দিন ধরে। এ ব্যাপারে আমাদের গঠিত একটি টাস্ক ফোর্সও প্রধান ভূমিকা রেখেছে।’’



প্রত্যাবর্তনের পথে মুশকিল

বাংলাদেশীদের উদ্ধারে জড়িত কর্মকর্তারা ২০০৭ সাল পর্যন্তও এমন বালিকাদের ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসফের (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) হেফাজতে তুলে দিতেন দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য। এভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর পথেও আবার পাচার হবার আশংকা থেকে যাওয়া দুই দেশের বেসরকারি ও সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করার কথা ভাবলেন। চুক্তির সব শর্তাদিতে দুপক্ষ রাজি হয়ে যাবার পর তখন দেশে জরুরি অবস্থার সরকার থাকার কারণে আর চুক্তিটি হয়নি।



এবার সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উদ্ধারকৃত ২৭ বালিকার তালিকা রেসকিউ ফাউন্ডেশনের আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইন্টারপোলকে জানায় তাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে যাকে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অনুরোধ করা হয়।



নয়া দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিবরণ পাঠায় এবং বালিকাদের জাতীয়তা যাচাই করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর অনুরোধ করে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবার পর হাইকমিশন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এ বালিকাদের জন্য ভ্রমণ ভিসা পাঠায়- যেন বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হিসেবে এরা ভারত থেকে ভ্রমণ ভিসায় দেশে ফিরতে পারে।



কিন্তু রেসকিউ ফাউন্ডেশন খুশির প্রত্যাবর্তনে হস্তক্ষেপ করার পর এ ১২৫ বালিকার বাইরে অন্যদের ফেরত আনার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি বাংলাদেশ হাইকমিশন; যারা মুম্বাইর নানা জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে। এরা এখনো রেসকিউ’র আশ্রয় কেন্দ্রে অপেক্ষায় রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ