মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

ছিনতাইকারি পুলিশ




রাজধানীর লালবাগ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে দেহ তল্লাশির নামে ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। পরে থানার ওসির মধ্যস্থতায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে এ অপকর্মের হোতা সিভিল টিমের দারোগা মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা ফেরিওয়ালা লোকমান হোসেন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তিনি আজিমপুরের ভাট মসজিদ এলাকার একটি দোকানে চা খেয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় লালবাগ থানার সিভিল টিমের দারোগা মুজিবুর রহমান ও সোর্স স্বপন ওরফে কুত্তা স্বপন তাকে আটক করেন এবং মুজিবুর তার দেহ তল্লাশি করে পকেটে থাকা পাঁচ হাজার টাকা কেড়ে নেন। পরে দারোগা মজিবুর তাকে বলেন, ‘তুই গাঁজার ব্যবসা করিস। চল থানায় চল।’ তিনি এর প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। এসময় স্বপন পুলিশের সঙ্গে মধ্যস্থতার নাটক সাজান। তিনি পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে দুই হাজার টাকা মুজিবুরকে দেন এবং নিজের পকেটে ঢোকান ৫শ টাকা। বাকি টাকা লোকমানকে ফেরত দিয়ে তাকে চলে যেতে বলা হয়। লোকমান তখনই তার জামাতা আমির হোসেন বাবুকে বিষয়টি জানান। বাবু লালবাগ রোড এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলে তারা সবাই মিলে থানায় গিয়ে ওসির কাছে নালিশ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরমধ্যে বাবু লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিজুল হককে ফোন করলে তিনি থানায় যেতে বলেন। বাবু স্থানীয়দের নিয়ে লালবাগ থানায় যান। তবে থানায় বেশি লোক ঢুকতে দিতে আপত্তি করায় শেষপর্যন্ত বাবু তার স্ত্রী শিমু ও শ্বশুরকে নিয়ে ওসির কাছে যান। সেখানে প্রথমে দারোগা মুজিবুরের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এসময় মুজিবুর পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে বাবুকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তখনই টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি ওসিকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু বাবু তার কথা না শুনে ওসির কক্ষে যান। বাবু বলেন, ‘ওসি স্যার খুব ভালো মানুষ। লগে লগে ঝামেলা মিটাইয়া দিছে। ঘটনা শুইনা দারোগা মজিবুরের (এসআই) ডাইক্যা টাকা ফেরত দিতে কইলেন। এরপর ওসির রুমের সামনেই দারোগা দুই হাজার টাকা আমার হাতে দিছে।’ বাকি টাকা স্বপনের কাছ থেকে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় বলেও জানান বাবু। পরে বাবু তার শ্বশুরকে নিয়ে স্বপনের কাছে টাকা চাইতে গেলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। এ সময় স্থানীয়রা লোকমানের পক্ষ নিলে স্বপন লোকমানের কাছে মাপ চেয়ে ৫শ টাকা ফিরিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালবাগ থানার ওসি আজিজুল হক সোমবার রাতে বলেন, লোকমান গাঁজাসেবী। তার কাছে এক পুরিয়া গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু দারোগা মজিবুর ও সোর্স স্বপন তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তা জানতেন না। পরে তা জেনে টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে দারোগা ও সোর্সের বিরুদ্ধে তার আর কিছু করার এখতিয়ার নেই বলে জানান তিনি। এদিকে উপ-পরিদর্শক মুজিবুর রহমান বলেন, দায়িত্ব পালনকালে লোকমানকে তল্লাশি করেছেন। তার কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি। কিন্তু সোর্স স্বপন তার পকেট থেকে যে টাকা নিয়েছে তা তিনি জানতেন না। লোকমানের কাছ থেকে নিজে টাকা কেড়ে নেয়ার কথা অস্বীকার করে মুজিবুর বলেন, ও গরিব মানুষ, ওর টাকা নেবেন কেন। তাহলে লোকমান কেন ওসির কাছে নালিশ করলেন- জানতে চাইলে মজিবুর বলেন, তল্লাশি করেছেন বলেই নালিশ করেছেন। একজন সাধারণ ফেরিওয়ালাকে শুধু তল্লাশি করলে ওসির কাছে নালিশ করার সাহস পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিনি আপনার বিরুদ্ধে কোন সাহসে নালিশ করতে গেলেন_ এ প্রশ্নের জবাবে দারোগা মজিবুর বলেন, ‘বোঝেন না, ঢাকা শহরের মানুষ এ রকমই। কেউ হয়তো তাকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ