শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধে বিপদে শিল্প-কারখানা

বাংলাদেশে সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য সন্ধ্যা ৬ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ রাখার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ রাখলে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে; কিন্তু ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, সরকার এটিকে একটি আহ্বান বললেও বাস্তবে হঠাৎই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এতে শিল্প-কারখানাগুলো বিপদে পড়বে, বিশেষ করে রফতানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো।

সরকারের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে বলা হলেও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর নেতারা বলেছেন, বাস্তবে সরকার তাদের ওপর একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের কাছে চিঠিও পৌছে গেছে। এদিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কল-কারখানা মালিকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া গেলে এতে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। গরমের কারণে এ মৌসুমে বাড়তি চাপ তৈরি হওয়াতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানালেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবির চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর। তিনি বিবিসিকে আরও বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এ পদক্ষেপ কল-কারখানার উৎপাদনে তেমন একটা

প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, এটা আমরা বিগত বছরগুলোতেও করেছি। এবার এর পরিধি একটু বাড়িয়ে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছি আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। তিনি বলেন, এক দেড় মাসের মধ্যে এ অবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করব। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য একমত নয় বিভিন্ন কল-কারখানার মালিকদের সংগঠন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের হঠাৎ পদক্ষেপ বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট এ. কে. আজাদ বলেন, এতে বিশেষ করে চাপ পড়বে ক্ষুদ্র শিল্পের ওপর। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এ সিদ্ধান্ত দেওয়ায় আমরা খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়েছি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্প, সমস্যায় পড়বে। কারণ ক্ষুদ্র শিল্পের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। মাঝারি শিল্পের বিকল্প ব্যবস্থা আছে, তারা জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারবে। এ ছাড়া ছোট ছোট কারখানা, যারা রফতানির সঙ্গে যুক্ত তারাও সমস্যার মধ্যে পড়বে। কারণ তাদেরও ডিজেল জেনারেটর নেই। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে স্বল্প সময়ের জন্য আমরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেব; কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। তিনি আরও বলেন, এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক দেড় মাস আগে যদি আমাদের জানানো হয়, তাহলে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা একই ধরনের মত প্রকাশ করলেন, সময় মতো পণ্য পৌছে দিতে না পারলে বিপদে পড়বে এ শিল্প বলে জানান তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিজেএমইএর সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তে রফতানি শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মন্দার মধ্যে সময়মতো শিপমেন্টের কারণে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছি আমরা। একদিন দেরি হলে তারা একটা অজুহাত পেয়ে যায়। দেরিতে ডেলিভারির কথা বললেই তারা ডিসকাউন্ট চায়। সবমিলিয়ে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

পিডিবির হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট ঘাটতির কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে বাড়ছে লোডশেডিং। সভায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বক্তব্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানিসংকট, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব, ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যবহার বেশি হওয়া, বিতরণব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার বিষয়টি উঠে আসে। একই সঙ্গে তাঁরা এই খাতের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ওপর জোর দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ