শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১২

ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি -পর্ব ৫(ভোল্টেজ ডিভাইডার + কারেন্ট ডিভাইডার)


দুপুরে রেজিস্টর সিরিজ প্যারালাল নিয়া পুস্ট দিসিলাম। এই পর্বে ভোল্টেজ আর কারেন্ট ডিভাইডার নিয়া পোস্ট দিমু। এইখানে শুরুতেই দিতাম, কিন্তু চিন্তা কইরা দেখলাম, যে আগে কিছু জিনিস শিখানো বাকি, ওইগুলা না শিখলে, পোলাপাইন পরে কিছুই বুঝবনা। :P

আইচ্ছা উপরের জিনিশগুলার বাংলা মানে হইল বিভব বিভাজক আর প্রবাহ বিভাজক। কাজ বুঝতেই পারতেছেন, কোন লাইনের ভোল্টেজ অথবা কারেন্টকে কাইট্যা কুইট্যা ভাগ কইরা ফেলা। :-*
কি নাম শুইন্যা কি মনে হইতেছে এডভান্সড জিনিস? অবশ্য কইতে পারেন। তয় জিনিস খুবই সোজা। আসলে নতুন কিছু না, আগের টিউটোরিয়াল এর জিনিসগুলাই। হে হে, ভাবতেছেন মজাক মারতেছি?

না রে ভাই সত্যই। আসলে রেজিস্টরের কোন সিরিজ কম্বিনেশন দিয়ে ভোল্টেজ ডিভাইড করা যায় আর প্যারালাল কম্বিনেশন দিয়ে কারেন্ট ডিভাইড করা যায়। এই বার বুঝলেন তো? ;)
কিভাবে এইডা করা যায়, তা বুঝতে হইলে আগে কিছু জিনিস জানতে হবে। 

১।নোডঃ কোন সার্কিটের বিভিন্ন পার্টস এর মধ্যকার সংযোগ কে নোড বলে। কোন নোড এ সর্বনিম্ন ২ বা ততোধিক পার্টস এর সংযোগ থাকতে পারে। নোড মানে সংযোগ বিন্দু। 
২।ব্রাঞ্চঃ কোন সার্কিটের যেকোন ২ টা নোডের মাঝে সংযুক্ত একটি যন্ত্রাংশ বা একাধিক যন্ত্রাংশের সিরিজ কম্বিনেশনকে ব্রাঞ্চ বলে। 

এইখানে কিন্তু ভাই একটা কথা মাথায় রাখতে হইব। ২ টা নোডের ভিতর এক বা একাধিক ব্রাঞ্চ থাকতে পারে। কিন্তু ২ বা ততোধিক ব্রাঞ্চের ভিতর কিন্তু ১ টাই নোড থাকবে। বেশি হইতে পারবেনা। তাই সার্কিটে উল্টা পালটা কইরেন না আবার। :|নিচের ছবিখানা সোন্দর করিয়া দেখেন। বুইঝ্যা যাইবেন। 

এইবার খুব দরকারি জিনিস। এইটা ভুললে কিন্তু সার্কিট শিখা আপনার কম্ম না। :P:P

১। সিরিজ কানেকশনে সবগুলা পার্টসের ভিতর দিয়ে বা ব্রাঞ্চের ভিতর দিয়ে সমান কারেন্ট যাইব।
কারন, এইখানে যেহেতু রাস্তার কোন শাখা প্রশাখা তৈরি হয়নি তাই সবগুলা ইলেকট্রন একসাথেই যাবে। 
২। প্যারালাল কানেকশনে কোন নোডে সবগুলা পার্টসের সংযুক্ত প্রান্তের ভোল্টেজ সমান হইব।
কারন, একটা নোড মানে একটা ইলেকট্রিক্যাল বিন্দু। আর সংযোগ তারের রোধ খুবই নগণ্য তাই এইখানে আসলে শক্তির কোন অপচয় হইতেছেনা তাই ভোল্টেজ সমান থাকব।

এইবার একটুখানি ওহমের সূত্র। (বিভব = প্রবাহ * রোধ)
এইটা এইবার বিশেষ কাজে লাগবে। সেইটা হইল কোন রোধের ভিতর বিভব পতন বের করার জন্য। কি বিভব পতন নাম শুনেন নাই?? নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। আমি আছি কি জন্যে?B-)B-)

ঘটনা হইতেছে যে, কোন রোধের ভিতর দিয়ে কারেন্ট চললে, ওর ভিতরে কিছু ভোল্টেজ হারায় যায়। কারন কারেন্টের প্রবাহ ঘটাইতে কিন্তু কিছু শক্তি ব্যয় হয়ে যাবে। কোন কাজ ত আর শক্তি ছাড়া আজাইরা হয়না। তাইনা??
আর ভোল্টেজ ত শক্তিই নাকি। এইটাকেই বলে বিভব পতন। 

যার জন্যেই কারেন্ট চলাকালে, কোন রোধের ২ প্রান্তের ভোল্টেজ আর এক থাকবনা। একটা পার্থক্য তৈরি হইবই। সেইটা ওহমের সূত্র থেইক্যাই বের করা যাইব। ঠিক এই সিস্টেমেই ভোল্টেজ ডিভাইডার বানানো হয়। চিত্র দেখেনঃ

বামেরটা হইল ব্যাটারি। এর এক প্রান্তের ভোল্টেজ v , আরেক প্রান্তের ০ , তাইলে পার্থক্যও হইল v । R1, R2 রেজিস্টর ২ টা সিরিজে লাগান হইছে। তাইলে মোট রেজিস্ট্যান্স R1+R2। এদের ভিতর দিয়া কারেন্ট যাইতেছে, 
I= v/(R1+R2)
ধরি R1, R2 এর সংযোগ নোড এর ভোল্টেজ v1। এর মান বাইর করতে হইব। 
প্রথমে, R1 এর ভিতর বিভব পতন দেখি। এইডা হইতেছে, v-v1 = I*R1
আর, R2 এর ভিতর বিভব পতন হইতেছে, (I*R2) আর এইটাই হইল v1 ।
v1 = (I*R2).............................................(১) 
একটু অংক করতে হইব, ২ বিভব পতনকে যোগ করেন এইবার, তাইলে হইতেছে,
(v-v1+v1) = v = (I*R1) + (I*R2) = I*(R1+R2)........................(২)
দেখছেন কি, টোটাল টা আবার ব্যাটারির ভোল্টেজ ফিরা আসছে?? 
(১) আর (২) নং সূত্র হইতে এখন আমরা পাই, v1/v = (I*R1) / I*(R1+R2)
বা, V1/V = R1/R
বা, V1 = V *(R1/R).......................(৩)

এত কাহিনী কেন করলাম?? কারন সবসময় তো কারেন্ট মাপার উপায় নাও থাকতে পারে। বেশিরভাগ সময়ই থাকেনা। তখন (৩) নং দিয়েই ডাইরেক্ট কাজ করা যায়। ;)

তাইলে ঘটনা কি দাঁড়াইল, সিরিজ কানেকশনে একই কারেন্ট যায় বইলা, প্রত্যেক রেজিস্টরের ২ মাথায় নিজ নিজ মান অনুযায়ী বিভব পতন হইতেছে। এইটাকে ‘ভোল্টেজ ড্রপ’ ও বলে। তখন আমরা প্রত্যেক রেজিস্টরের প্রান্ত থেকেই বিভিন্ন ভোল্টেজ পাইতে পারি। কি একদম সোজা না? 

অংকঃ উপরের ছবিতে ব্যাটারির ভোল্টেজ ১০ ভোল্ট , R1=১কিলো ওহম, R2 = ৪ কিলো ওহম ধরেন। এইবার v1 বাইর করেন। মন্তব্যের ঘরে উত্তর কত পাইলেন লেখবেন। দেখুম ঠিক আছে কিনা। এইডা হোম ওয়ার্ক। 

এখন কারেন্ট ডিভাইডারে আসেন। এইডা কিছুইনা, জাস্ট প্যারালাল সার্কিট। নিচে দেখেনঃ


এইখানে R1, R2 প্যারালাল করা আছে। এক মাথায় ভোল্টেজ v আরেক মাথায় ০। ভোল্টেজ পার্থক্যও v । এখন মোট রেজিস্ট্যান্স, 
Req= 1 / {(1/R1) + (1/R2)}= (R1*R2) / (R1+R2)
কিন্তু, V = I * {(R1*R2) / (R1+R2)}
সুতরাং, R1এর ভিতর এর কারেন্ট I1 = V/R1 = I*R1*R2/{(R1+R2)*R1}
=(I*R2)/(R1+R2)
একইভাবে, R2 এর ভিতরের কারেন্ট I2 = V/R2 = I*R1*R2/{(R1+R2)*R2}
=(I*R1)/(R1+R2)
এইবার I1 আর I2 যোগ করেন, নিশ্চিত রুপে মোট কারেন্ট I পাইবেন। 
তাইলে ঘটনা দাঁড়াইল যে, সমান বিভব পার্থক্যের ফলে এবং ২ টা আলাদা পথ পেয়ে যাওয়ায়, প্রত্যেক রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে মোট কারেন্ট ভাগ হয়ে গেল। 
অংকঃ উপরের ছবিতে ব্যাটারির ভোল্টেজ ২০ ভোল্ট , R1=২কিলো ওহম, R2 = ১ কিলো ওহম ধরেন। এইবার I1 আর I2 বাইর করেন। মন্তব্যের ঘরে উত্তর কত পাইলেন অবশ্যই লেখবেন। এইডাও হোম ওয়ার্ক। 
:P:P

আপনেরা কিন্তু খুউউউব ফাঁকি মারেন। আগের কোন পর্বের কোন কাজই কেউই করেন নি। X(এইভাবে চললে ত মহা সব্বনাশ। এরপর থেইক্যা হোম ওয়ার্ক না করলে কিন্তু এক্কেবারে দেশি বেতের ব্যাবস্থা রাখুম। :P

ফাইনালি একটা জিনিস না কইলেই না। এতক্ষন যা পড়লাম তা ব্যবহার হয় কিসে? :)
শুনেন তাইলে, ভোল্টেজ ডিভাইডার বিভিন্ন সার্কিটে ভোল্টেজ বা সিগন্যাল এর মান বদলাইতে কাজে লাগান হয়। আপনের রেডিওর ভলিউম কমান যেইডা দিয়া সেইডাও এই জিনিস। ভিত্রে থাকে কার্বনের রিঙের মত রোধ। বাইরে আপনি একটা দণ্ড ঘুরান, ওইটা ভিতরে কার্বনের সাথে স্লাইডিং কানেকশন করা থাকে। ফলে বিভিন্ন পজিশনের জন্যে R1, R2 পরিবর্তন হয়, আর আপনি বিভিন্ন মানের সিগন্যাল পান। কারেন্ট ডিভাইডার বাজারে দেখিনি। এই সংক্রান্ত সুত্রগুলা সাধারনতঃ কোন প্যারালাল সার্কিটের বিভিন্ন লোড বা রোধ এর মধ্যে কে কত পাওয়ার বা শক্তি নিচ্ছে তার হিসাব করার জন্য কাজে লাগে। এইগুলা নিয়া পরে কমু। :)

লেখতে লেখতে, হাত লাইগ্যা গেছে। :( টিউটোরিয়াল দেয়া বহুত কষ্টের কাম। তয় আপনে গো উপকার হইলেই আমি খুশি। কিন্তু আসলে বেগার খাটতেসি কিনা বুঝতেসিনা। ফিডব্যাক নাই বললেই চলে। :((:((

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ