শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বিশ্বাস ,সতীত্ব এবং একটি পরীক্ষা

বৃষ্টি অরুপের পা ধরতে বাধ্য হল।অরুপ তখন ১১ তম সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে উদাস হয়ে ভাবছে।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি সিগারেট ভিজিয়ে দিয়ে অরুপের মেজাজ আরও খারাপ করে দিচ্ছে।বৃষ্টির এক ঘন্টার ক্রমাগত কান্নার জল শুকিয়ে এখন শুধু শব্দ উৎপাদন করছে।কান্নার গোঁ গোঁ শব্দ অরুপের কান অবধি পোছাচ্ছে না,পৌছাচ্ছে না বৃষ্টির “সত্যিই আমি কিছু করিনি,বিশ্বাসটা কর” কথাটিও।গত এক ঘন্টা যাবত বৃষ্টি এর বাইরে কোন কথা বলতে পারেনি,অরুপ শুনেওনি।
সিগারেটে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে একটা টান দিল অরুপ,ধোঁয়াগুলো গলায় বিঁধে গিয়ে শুস্ক কাশি বের হল।সিগারেটের বাকি অংশ টোকা দিয়ে ফেলে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল “যা তোরে আমি মাফ করে দিছি,তবে তোর সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই”। বৃষ্টি পা ছেড়ে দিয়ে অবাক হয়ে অরুপের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
অরুপ আরেকটি সিগারেট জ্বালিয়ে টান দিয়ে ধীরে ধীরে চলে গেল।গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে বৃষ্টি মাটিতেই বসে রইল।হয়ত কিছুক্ষন পর সেও অন্যদিকে চলে যাবে।অনিবার্য কারন বশত সতীত্ব পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় বৃষ্টির চোখে বৃষ্টি নয় কেবল হারিয়ে যাওয়া এক গোলকা ধাঁধায় আচ্ছন্ন।

আড়াই বছরের সম্পর্কের শুরুটা হয়েছিল টিএসসিতে,আড়াই বছরে মাত্র তারা ধানমন্ডি পর্যন্তই আসতে পেরেছে।লেকের পাড়ে শেষ হয়ে যায় তাদের যাত্রা।
গতকাল অরুপ নিজের কাজে গিয়েছিল মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে বন্ধুর মেসে।সে বিল্ডিংয়ে সবগুলোই ছেলেদের মেস।মেসে আ্ড্ডা শেষে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিল বিল্ডিংয়ের সামনে চায়ের দোকানে।হঠাৎ খেয়াল করল বৃষ্টি অন্য একটি ছেলের সাথে সে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।না ডাক দেয়নি অরুপ।বন্ধু পাপ্পুও বৃষ্টিকে দেখেছে।অরুপ নিজের হতভম্ব অবস্থা লুকোতে চেষ্টা করল।পাপ্পু অরুপের কাছে জানতে চাইল কি ব্যাপার বৃষ্টি এখানে কেন?
হাতে চায়ের কাপ কাঁপাতে কাঁপাতে অরুপের মুখ থেকে কেবল জানিনা শব্দটিই বের হল।কিছুতেই মন টিকছে না অরুপের। পা্প্পুর সামনে নিজেকে লুকনোও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।পাপ্পুকে কিছু না বলেই হনহন করে হেঁটে বের হয়ে গেল অরুপ।আকাশ পাতাল অনেক কিছুই ভাবছে।কিছুদূর যাওয়ার পর অরুপ মোবাইল বের করল।না বৃষ্টির নম্বরে না পাপ্পুর নম্বরে ডায়াল করল “দোস্তা কারো সাথে শেয়ার করিস না প্লিজ” বলেই রেখে দিল।কিছুদুর আবার হাঁটল অরুপ। আবার মোবাইল হাতে নিল।বৃষ্টির নম্বর ডায়াল করল,রিং হওয়ার আগেই আবার কেটে দিল।এরকম কয়েকবার করল অরুপ।নিজেই বুঝতে পারছে না বৃষ্টিকে ফোন দিয়ে কি জিজ্ঞেস করবে? কি বা জিজ্ঞেস করার আছে? এভাবেই ভাবতে ভাবতে পার হয়ে গেল ঘন্টাখানেক।এরমধ্যে আরও দুবার পাপ্পুকে ফোন দেয়া হয়ে গেছে।শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিকে ফোন দিল।প্রথমবার রিং পড়ে কেটে গেল,ধরল না।অরুপের সন্দেহ আরও বেশী প্রকট হল।যদিও অরুপ এখনও জানেনা সে আসলে কি সন্দেহ করছে।হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠল অরুপের।
অরুপ ফোন রিসিভ করে কোন কথা বলল না।ওপাশ থেকে বৃষ্টি শুরু করল “কিরে এতক্ষনে তোর ফোন করার সময় হল” অরুপ চুপ।নিজের শরীরটা কেঁপে উঠল অরুপের।
-কিরে কথা বলিস না কেন? কই ছিলি সকাল থেকে?
অরুপ তখনও চুপ।লাইনটা কেটে দিল। বৃষ্টির করা প্রশ্নটা অরুপের করার কথা ছিল।ভাবনার কোন স্তর নেই,বিষয়ও নেই।অনেক কিছু নিয়েই ধারনা করা যায়।কিন্তু এখানে অরুপ ব্যর্থ।আবার রিংটোন বেজে উঠল।ফোন রিসিভ করে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল “কই ছিলি তুই?
-লুবনার সাথে মার্কেটে গিয়েছিলামরে,জানিস কি হইছে…………
বৃষ্টিকে শেষ করতে না দিয়ে অরুপ রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে বেশ জোর গলায় বলল “বৃষ্টি তুই ওই মেসে কেন গেছিলি?
এবার বৃষ্টি চুপ।ওপাশ থেকে সুনশান নীরবতা।একটা নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া গেল।অরুপ আবার একই প্রশ্ন আগের চেয়ে আরও জোরে জিজ্ঞেস করল।এবারও বৃষ্টি চুপ।আবার লাইন কেটে দিল অরুপ।এবার অরুপ সব বুঝতে পেরেছে।আর বাকি নেই।মোবাইল পকেটে রেখে দিল অরুপ।

রাত দুইটা।

সন্ধ্যা থেকে কয়েকশবার ফোন দিয়েছে বৃষ্টি।অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে। অরুপ চুপ ছিল।এখন চুপ।ঘুম আসবে না আজ। মোবাইল নিয়ে বৃষ্টির নম্বরে ফোন দিল।বৃষ্টি ফোন রিসিভ করে ধরা গলায় বলল “অরুপ আমার সব কথা একবার শোন তারপর তোর কথা বলিস”
-তোর কোন কথাই শুনতে চাই না।কোন মেয়ে একা কোন ছেলের মেসে কেন যায়? আমি জানিনা? বুঝি না? পাগল পাইছিস আমারে?বৃষ্টি তোর শরীরে আমি কোন দিন হাত দেই নি।কত সুযোগতো ছিল
টানা কথাগুলো বলেই চুপ করে যায় অরুপ।বৃষ্টির কান্নার শব্দ আসে।অরুপ চুপ থাকে।অরুপের কান্নার শব্দ নেই,তবে কান্না আছে।কিন্তু বৃষ্টির কান্না ক্রমশই বাড়ছে,সেই সঙ্গে শব্দও।অরুপ আবার রেগে যায় “বৃষ্টি ন্যাকা কান্না কাঁদবিনা।তুই আরেকজনরে শরীর দিছস।তুই আমার না।তুই অন্য কারো,তোকে আমার গালি দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।খারাপ গালি।কেবল ভালবাসি বলেই দিতে পারছিনা।বৃষ্টি তোকে আমি ভালবসাতাম”
এবার আর অরুপ কান্না লুকাতে পারেনি।বৃষ্টিও হাউমাউ করে কান্না শুরু করল।কান্নার শব্দ নেটওয়ার্ক ভেদ করে দুজনের কান হয়ে বুকেই বাজছে।বৃষ্টি নিজেকে একটু সামলে নিয়ে কিছুটা রাগ নিয়ে বলল “অরুপ আই এ্যম স্টিল নাউ ভার্জিন”
-বিশ্বাস করিনা
-তুই পরীক্ষা করতে পারিস।
-না আমি পরীক্ষা করবো না।আড়াই বছর যে শরীরে হাত দিইনি,সে শরীরে আমি পরীক্ষা করবো না।
-না তুই পরীক্ষা করবি।কালই করবি,তারপর তুই যা খুশী করিস।
সতীত্ব পরীক্ষা বোধহয় সবচে বড় পরীক্ষা।নিজের রাগ চেপে অরুপ সিদ্ধান্ত নিল বৃষ্টির সতীত্ব পরীক্ষা করবে।তাকে করতেই হবে।আড়াই বছরে একবারের জন্য না করা সন্দেহ একদিনেই এভারেষ্ট হয়ে গেছে।এভারেষ্ট পাড়ি না দিলে রহস্যই থেকে যায়।


সতীত্ব পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য দুজনেই ধানমন্ডির এক আত্নীয় ফ্ল্যাটে আসল।ফ্ল্যাটে কেউ নেই।সতীত্ব পরীক্ষায় তৃতীয় ব্যাক্তির উপস্থিতি থাকে না।সিগারেটের পর সিগারেট জ্বলছে অরুপের মুখে। খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।বৃষ্টি ঘরের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে গত ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।বৃষ্টি এগিয়ে আসল।
-অরুপ তোর পরীক্ষা শুরু করতে পারিস।আমি প্রস্তুত।
অরুপ কোন সাড়া দিল না।বৃষ্টি আরও কয়েকবার অরুপকে তাড়া দিল,তাতে অবশ্যই অরুপ তেমন পাত্তা দিল না।অরুপের মাথায় হাত রাখল বৃষ্টি,চুপচাপ কেবল বৃষ্টির হাতটি সরিয়ে দিল অরুপ।এভাবে দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল।
হঠাৎ অরুপ বৃষ্টিকে বলল চল
-কোথায়
-চল

এর বেশী জিজ্ঞেস করার সাহস ছিল না বৃষ্টির।অরুপের পিছু পিছু হাঁটতে থাকল।অরুপ আগে আগে হেঁটে ধানমন্ডি লেকে গিয়ে লেকের ধারে বসল।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।বৃষ্টি গিয়ে পাশে বসল।বৃষ্টির কারনে লেকে কপোত কপোতীর সংখ্যা একেবারেই কম।চুপচাপ কিছুক্ষন বসে থাকার পর অরুপ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল “দেখ বৃষ্টি আমি তোর শরীর ছুঁতে পারবো না,তোকে পরীক্ষা করেই বা কি লাভ? পরীক্ষায় যদি তুই জিতে যাস তাহলে তুই ভার্জিন থাকবি।কিন্তু আমার বিশ্বাসের ভার্জেনিটি যে তুই নষ্ট করেছিস সেটা কিভাবে পরীক্ষা করবো বলতে পারিস?
-কিন্তু তুই ঘটনাটা শোন…
বৃষ্টির কান্না ভেজা কন্ঠের আকুতি থামিয়ে দিয়ে অরুপ আবার আগের প্রশ্নটি করল।
বৃষ্টির কাছে এর কোন উত্তর ছিল না।তাই সে চুপ থাকল।বৃষ্টির নিস্তব্দতা দেখে অরুপ উঠে দাড়াল। বৃষ্টি উঠে অরুপকে বুঝানোর চেষ্টা করল।কিন্তু অরুপ সাড়া দিল না।অরুপ শান্ত কন্ঠে বলল “তোর শরীর টেষ্ট করে তোর উপর বিশ্বাস অর্জন করতে আমি চাচ্ছি না।তুই ভাল থাক,তুই আমার না”

বছর খানেক পর

এই এক বছরে বৃষ্টির কোন ফোন রিসিভ করেনি অরুপ।এমনকি মেসেজ,মেইল সব না পড়েই ডিলিট করে দিয়েছে অরুপ।আজ কি মনে করে আজকে আসা বৃষ্টির মেইলটি খুলে বসল অরুপ।

অরুপ কেমন আছিস জানিনা।আগামি ২৩ তারিখ আমার বিয়ে।তোকে জানানো উচিত না তবু্ও জানাচ্ছি।আমি সত্যিই তোর না।তোর হলে সেদিন আমার কথা শুনতি।তোর আসার দরকার নাই।আর কখনই তোর সাথে যোগযোগ করবো না।তবে আবার বলছি সেদিন লুবনার বয়ফ্রেন্ড রিমনের মেসে গিয়েছিলাম লুবনাকে নিয়ে।লুবনা একা যেতে চাচ্ছিল না।লুবনাকে রিমনের বাসায় রেখে আমাকে এগিয়ে দিতে এসেছিল রিমন।আমি এখনও ভার্জিন।ভাল থাকিস। বৃষ্টি

অরুপের নতুন করে ভাবার কোন সুযোগ নেই।সুযোগ শেষ করেই অরুপ ভাবতে বসেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ