রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

একটি গনসচেতনতা মুলক পোষ্ট। আপনি সচেতন হউন, অন্যকে সচেতন করুন। নিজে বাচুন, আপনার পরিবারকে বাচান।



আজকে পত্রিকায় দেখলাম মোটর সাইকেল এক্সিডেন্টে একজন মারা গেছেন। এমন ১০টা পত্রিকা খুললে হয়ত দেখা যাবে ১০ টা এক্সিডেন্ট হয়েছে। ১০টা এক্সিডেন্টে কমপক্ষে ১০ জন মারা গেছেন। হিসাব করলে প্রতি মাসে ৩০০ জন আর বছরে ৩৬০০জন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এসব মোটরসাইকেল চালক আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপার্জনক্ষম একজন ব্যাক্তি, চাকুরিজীবি অথবা কোন ছাত্র যার মোটর সাইকেল চালানোর বয়সই হয়নি। যে উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিটি মারা যায় তার উপর কমপক্ষে পরিবারের আরও ৪ জন সদস্য নির্ভরশীল থাকে। তাই তাদেরকে পড়তে হয় অবর্ণনীয় দুঃখ, দূর্দশায়। যার স্বামী মারা যায় অকালে সে বোঝে স্বামী হারানোর কষ্ট, সন্তান বোঝে বাবাকে হারানোর কষ্ট, যার সন্তান মারা যায় তিনি বোঝেন সন্তান হারানোর কষ্ট।


কেন এভাবে প্রতিদিন এত লোক মারা যাবে এক্সিডেন্টে??? এটাতো একটা জীবন কেড়ে নেয়া তথা হত্যা করার মত। আসলে এই সব মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার জন্য দায়ী আমাদের সরকার, বিভিন্ন গনপরিবহনের চালক, পরিবহন সংস্থা, সরকারি লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আর বাবা মা। কেউ ক্ষেপে যাবেন না প্লিজ পড়ুন, আমি ব্যাখ্যা করছি।


আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে মোটামুটি ভাল। সাধারণ একজন চাকুরীজীবি বা ব্যবসায়ী খুব সহজে ইচ্ছে করলেই একটি মোটর সাইকেল কিনে ফেলতে পারেন। আবার কিছু ব্যাংক ও শুনেছি এই ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। কিছু মোটর সাইকেল কোম্পানী ও স্বল্পমূল্যে মোটর সাইকেল উৎপাদন করে বাজার জাত করছে। সেটা বা আমদানী করা মোটর সাইকেল কিনে যে কেউ সহজেই মোটর সাইকেলের মালিক বনে যান। মোটর সাইকেল কিনে নিজে নিজেই চালাতে শিখে যান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি শুধু মেশিনটি চালাতে শেখেন। কোন নিয়ম কানুন শিখেন না। রাস্তায় বের হতে হলে যে সব নিয়ম কানুন জানা দরকার, নিজের চালানোর পারদর্শিতা প্রমান করে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হয় তাও অনেকে জানেন না। গ্রামাঞ্চলে এখনও লাইসেন্সবিহীন মোটর সাইকেল চালানো হয়, চালকের লাইসেন্স তো দুরে থাক। যখন মোবাইল কোর্ট বসে তখন গাড়ি ঘরে তুলে রাখে। আবার এমনও আছে থানায় মাসোহারা দিয়ে বিনা লাইসেন্সে মোটর সাইকেল চালায় কিছু চালক। আর সরকারী দলের লোক হলে তো কথাই নাই। তাদের আবার কিসের লাইসেন্স!!!!!

প্রায় একলক্ষ টাকা খরচ করে যে মোটর সাইকেলটি কিনলেন দ্রুত ও আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য। তার লাইসেন্সটি কেন করছেন না?? একটা মোটরবাইক কিনতে পারছেন তার চালনার জন্য যে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স দরকার সেটা তো জানেন???? তবে কেন লাইসেন্সটা করছেন না?? সব নিয়মকানুন জেনে যদি মোটর সাইকেল / গাড়ি চালানো হয় তবে দূর্ঘটনা ৯৫% কমিয়ে আনা সম্ভব। অন্তঃত নিজের জীবনটা বাচানো তো সম্ভব।
একটু আগে বলেছিলাম দূর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী। সরকার প্রত্যেক্ষভাবে দায়ী। সরকার যদি কঠোর নিয়ম করে মোটর সাইকেল/ বাস/ ট্রাক চালনার উপর, রাস্তা-ঘাটের আর একটু উন্নয়ন করেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকিকরণ করেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি দূর্নীতি না করে সেই আইন বাস্তবায়ন করে, সভা সেমিনার করে জনগনের দুয়ার পর্যন্ত পৌছানো যায়, বড় গাড়ীর চালকেরা যদি সতর্ক হয় ছোট গাড়ি চালকদের প্রতি, পরিবহন সংস্থা বা মালিকপক্ষ যদি অভিযুক্ত ড্রাইভার কে কাজ না দিয়ে আইনের হাতে সোপর্দ করে, লাইসেন্স প্রদান কর্তৃপক্ষ যদি সবাইকে লাইসেন্স নেয়ার জন্য মিডিয়া মাধ্যমে গনসচেতনতা সৃষ্টি করে, চাপ সৃষ্টি করে আইন প্রয়োগে আর সর্বোপরি যদি সকল চালক নিজের জীবনের প্রতি মায়াশীল হয় তবেই এই মহামারী এক্সিডেন্টের রেশিও কমিয়ে আনা সম্ভব।
আর বাবা মাকে বলছি, যারা আপনার আদরের ছেলেটিকে মোটর সাইকেল কিনে দিচ্ছেন, তার আগে তার চালনার লাইসেন্স করিয়ে নেন। অবৈধ নয়, বৈধ লাইসেন্স। তাহলে আর আপনাদেরকে কাদতে হবে না। যারা আমার এই লেখাটি পড়বেন, তাদের অনেকেই মোটর সাইকেল চালান, আমার সেই সব ভাইদের বলছি, আপনার বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে, প্রিয়তমা বা বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও কিছু সময় নিয়ে বৈধ লাইসেন্স করুন, রাস্তার নিয়মকানুন মেনে চলুন, মা বাবা, প্রিয়তমার কান্নার কারণ হবেন না। আপনার নিজের জীবনের দায়িত্ব আপনার। নিজে বাচুন, আপনার পরিবারকে বাচান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ