রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

৩৩ ভুয়া বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে

ভুয়া ৩৩টি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কয়েক দিনের মধ্যেই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপরই এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী ডিগ্রির নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন অস্তিত্ব নেই আবার থাকলেও অনুমতি নেই। প্রতরণার মাধ্যমে চালাচ্ছে শিক্ষা ব্যবসা। সমপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তাতে ৫৬টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টির কোন অস্তিত্ব খোঁজে পায়নি ইউজিসি। এছাড়া ২৩টির প্রতিষ্ঠান বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে টিউশন প্রভাইডার হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর ৭টি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১১টি যুক্তরাজ্য বা বৃটেনভিত্তিক, ৩টি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক, ১টি কানাডাভিত্তিক ও ১টি মালেয়শিয়াভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত। অস্তিত্ববিহীন ৩৩ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- লালমাটিয়ায় নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, বনানীতে ম্যানট্রাস্ট ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, পশ্চিম রাজাবাজারে  গ্রীনভ্যালি ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডিতে হেডওয়ে ইনস্টিটিউট অব বায়লাদেশ, গ্রীন রোড়স্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স (এনআইবিএআইএস), মতিঝিল দিলকুশা বা/এ বলিয়াদী ম্যানশনের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত জিইএসএ বাংলাদেশ, ধানমন্ডিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি স্টাডি সেন্টার, উত্তরায় ইএল-ডেরাডো, মোহাম্মদপুরস্থ নিউরাল ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট (সিএমডি), ধানমন্ডির    পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৭
ম্যাপেল লিফ ইন্টারন্যাশণাল সেন্টার ফর হায়ার স্টাডিজ ইনস্টিটিউট অব ল, ধানমন্ডির এনভারনমেন্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড, ধানমন্ডির ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (ডব্লুআইবিটি), খিলগাঁও রেলগেটস্থ দক্ষিণ শাহজাহানপুরের ফরেন এডুকেশন সার্ভিস বাংলাদেশ, বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউস্থ অস্ট্রেলিয়া ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ধানমন্ডিতে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (জিআইআরএম), উত্তরা এলাকায় অবস্থিত দি প্রগ্রেসিভ ম্যারিটোক্রেসি লিমিটেড, বনানীর বরীন্দ্র সরণিতে দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, জেমস কুক ইউনির্ভাসিটি ইন্টারফেস এডুকেশন সেন্টার ঢাকা, গুলশান দুই নম্বর সার্কেলে কেমিব্রিয়ান কলেজ কানাডা, ধানমন্ডির দি ল টিউটরস, ধানমন্ডিতে সফট-ইডি লিমিটেড, তোপখানা রোডে এজাম্পশন ইউনির্ভাসিটি (এবিএসি) থাইল্যান্ড, ধানমন্ডিতে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে নিউরাল সিস্টেম লিলিটেড, ধানমন্ডির ১৩ নম্বরে আইবিসিএস প্রাইমেক্স লিমিটেড, উত্তরায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব আর্টস ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, নিউ ইস্কাটনে এসআরজিবিএইসি সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, ধানমন্ডির ৯ নম্বরে এডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ, ধানমন্ডিতে ঢাকা সেন্টার ফর ল অ্যান্ড ইকোনোমিক্স, ধানমন্ডিতে ডেল্টা স্কুল অব বিজনেস, গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ধানমন্ডি চার নম্বরে চ্যান্সেরি একাডেমী অব ইংলিশ ল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে স্থাপিত বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্টাডি সেন্টার বা টিউশন প্রভাইডার হিসেবে কাজ করেছেন অনেকে। তারা সংশ্লিষ্ট বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করছেন। তারা শুধু স্টাডি সেন্টার পরিচালনা করেন। পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও বিদেশী প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোন আইন না থাকায় তারা অনুমোদন দিতে পারেনি। কিন্তু অনেকে বিভিন্ন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে অবৈধভাবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। অথচ ওইসব বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সংশ্লিষ্ট দেশেই নেই। কেউ কেউ আবার ইন্টারনাল শাখাও দাবি করে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। ইউজিসির মতামতে বলা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২ ও সংশোধিত আইন ১৯৯৮ এর ধারা ৬ অনুযায়ী লঙ্ঘনপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে দেশে অবৈধভাবে স্থাপিত ও পরিচালিত বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব চিহ্নিত করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ২০০৭ সালের ১৮ই মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩৯(২) অনুযায়ী বাংলাদেশে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিধিমালা (খসড়া) ২০১১ প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ইউজিসি লিখেছে, কমিশনের জানামতে, এসব প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফামর্সের রেজিস্ট্রারের নিকট থেকে নিবন্ধনপূর্বক ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সূত্র জানায়, এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ভুয়া প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ইউজিসি’র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে দেয়া তথ্যানুসারে তদন্ত কমিটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এর একটি টিমের চিত্র হচ্ছে, তারা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠান কমিটির চাওয়া সকল তথ্য প্রদান করেছে এবং ৬টি প্রতিষ্ঠান কোন তথ্যই দেয়নি। ৬টি প্রতিষ্ঠানের ২টিকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাওয়া যায়নি। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে ভুয়া বলে মন্তব্য করা হয়। এগুলো হচ্ছে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ, নর্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, চ্যান্সেরি একাডেমী অব ইংলিশ ল, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। তদন্ত কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সরজমিনে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খোঁজে পাইনি। কয়েকটি আমাদের কাছে ভুয়া মনে হয়েছে। বিস্তারিত যাচাই-বাছাই করেই আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। সরকার পরে কোন পদক্ষেপ নিতে বললে আমরা তা নেবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ