রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

বঙ্গবন্ধুর ৯২তম জন্মদিবস আজ

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯২তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আজন্ম সংগ্রামী এ নেতা সময়ের পরিক্রমায় হয়ে ওঠেন একটি জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তার সাহসী, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে একটি নিপীড়িত পরাধীন জাতি। দেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির অদম্য সপৃহায় তিনি ঐক্যের সুতোয় এক করেছিলেন। দিয়েছিলেন মরণপণ লড়াইয়ের মূলমন্ত্র। তার নেতৃত্বেই দীর্ঘ নয় মাস লড়াইয়ের পর আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন স্বভূমি, বাংলাদেশ। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পালন করা হবে বিস্তারিত কর্মসূচি। জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছে। বাণীতে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম, নির্যাতিত জনতার অধিকার আদায় ও জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যে ক’জন নন্দিত নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের প্রথম সারির একজন। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালিরা আসলে প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। এ উপলব্ধি থেকে ১৯৪৭ সালে কোলকাতা থেকে দেশে ফিরে তিনি সহকর্মীদের নিয়ে ছাত্রলীগ গঠন করেন। লক্ষ্য ছিল অধিকারহারা বাঙালিকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করা। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করেন তিনি। এটাই ছিল  তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের একমাত্র বিরোধী দল। তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ছাত্র-জনতা তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। এরপর তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। তবে পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনের বিপুল জয় মেনে নেয়নি। বঙ্গবন্ধু নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন ও চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলন এ নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা ঘোষণা ও বিদ্রোহের অপরাধে সেখানে তার গোপন বিচার হয়। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিশ্ব জনমতের চাপে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে দেশে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তান থেকে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন বাঙালির প্রিয় এ নেতা। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন তিনি। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর বেঁচে ছিলেন। ঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তিনি জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন।
বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিনের কর্মসূচি: দিনটিতে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সকাল সাড়ে ৬টায় দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে, সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ এডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য শেখ হারুন-অর-রশিদ, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বিপুল ঘোষ, আবদুর রহমান, ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। ১৮ই মার্চ  রোববার দুপুর সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা,  এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে দলের সব কর্মসূচি যথাযোগ্য পালনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শেখ আইয়ুব আলীর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমী, সোনারবাংলা যুব পরিষদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ