শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১২

‘ঢাকা চলো’ র্কমসূচি বানচালে পরবিহন চলাচল বন্ধ!

পূর্বঘোষণা ছাড়াই ১০ মার্চ রাত থেকে দু’দিনের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সোহাগ পরিবহন। অন্যান্য পরিবহন কর্তৃপক্ষও একই পদক্ষেপ নিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচিতে বিঘœ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে শুরং হয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান। সরকার ও প্রশাসনের এই তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, এতো কিছুর পরও ১২ তারিখে রাজধানীতে জনতার ঢল নামবে।
শুক্রবার সকালে হঠাৎ করেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে সোহাগ পরিবহনের সমস্ত অফিস ও কাউন্টারে ঢাকা থেকে খবর পাঠানো হয় যে, ১০ মার্চ রাত থেকে ১২ মার্চ রাত পর্যন্ত সংস্থাটির সব গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
নির্দেশনা পাওয়ার পর টিকিট কাউন্টারগুলো থেকে যাত্রীদের কাছে ফোন করে এ খবর জানানো হয়। বিপুল সংখ্যক যাত্রী দুপুর থেকেই টিকিটের টাকা ফেরত নিতে আসেন কাউন্টারে। সোহাগ পরিবহন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী পরিবহন সংস্থাগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। যশোরের নেতাজী সুভাষচন্দ্র সড়কের সোহাগ কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক নাজিমউদ্দিন দু’দিন গাড়ি বন্ধ রাখা ও ফোনে ডেকে নিয়ে যাত্রীদের টিকিট ফেরত দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
সোহাগ পরিবহন ছাড়া শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত অন্য কোনো পরিবহন কর্তৃপক্ষ গাড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে, এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পরিবহন সংস্থা ঈগল পরিবহনের অফিস থেকে জানানো হয়, শেষ সময়ে কোনো নির্দেশনা এলেও আসতে পারে।
হানিফ পরিবহনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপক দীন ইসলাম জানান, বিশেষ কোনো চাপ না এলে গাড়ি বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে যশোর রেল জংশনে পুলিশ ঢাকাগামী ট্রেনে ব্যাপক তল্লাশ চালায়। একইভাবে তল্লাশ চালানো হয় ঢাকাগামী বাসগুলোতে।
এর ফলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা আতঙ্কিত হওয়া তো দূরের কথা তাদের মধ্যে ঢাকা পৌঁছানোর আকাক্সক্ষা আরও বেড়েছে বলে দাবি করেন যশোর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন। তিনি বলেন, প্রশাসনিক চাপ ও হয়রানির কারণে আগেভাগেই কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশকে ঢাকা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার রাতের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কর্মী ঢাকা চলে যাবেন বলে তিনি জানান।
হঠাৎ করে গাড়ি বন্ধ ঘোষণা করা ও পুলিশি হয়রানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাপে পরিবহন মালিকরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সরকার মাত্র একদিনের একটি সমাবেশই সহ্য করতে পারছে না। এরা গণতন্ত্রের লেবাস নিলেও কখনও গণতান্ত্রিক আচরণ করে না। এদের মস্তিষ্কজুড়ে এখনও একদলীয় বাকশালী ভূত।
তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকার নিজেই গণতন্ত্র হত্যা করতে চাইছে। যার জন্য নিজদলীয় কর্মসূচিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের যোগ দিতে বাধ্য করছে। আর বিরোধীদলের সমাবেশে যাতে জনসমাগম না হয় তার জন্য প্রশাসনকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করছে। এতো কিছুর পরও ১২ মার্চ রাজধানীতে জনতার ঢল নামবে বলে তিনি আশাবাদী।
অন্যদিকে, যশোরে রাতভর অভিযান চালিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে এদের আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে মণিরাপুরের চার, বেনাপোলের দুই ও অভয়নগরের তিনজন ছাত্রদল-যুবদল কর্মী। অন্যদিকে, যশোর শহরের একটি মেস থেকে চারজন এবং বাঘারপাড়া থেকে একজন শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আশরাফ হোসেন বলেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে আশঙ্কায় এদের আটক করা হয়েছে।
তবে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু দাবি করেন, ১২ মার্চের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি বানচাল করতেই পুলিশ ধরপাকড় করছে। বৃহস্পতিবার সারারাত তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি-মেসে হানা দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ