আমাদের এবং ভারতের জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার । কিন্তু জাতীয় পশু
বাঘ আজ বিপন্ন। বেচে থাকাই মুশকিল কয়ে দাড়িয়েছে বাঘের। দ্রুত কমে
আসছে বাঘের সংখ্যা পৃথিবীতে। অনেকে এমন আশঙ্কাও করছেন যে এখনকার হারে চলতে
থাকলে আগামী বিশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বন জংগল থেকে চির বিদায় নেবে বাঘ।
বিগত শতাব্দীতে যেখানে লক্ষাধিক বাঘ বাস করত বনে জঙ্গলে, এখন বনে জঙ্গলে
তার সংখ্যা মাত্র তিন হাজার দু শ’ মত -১
বাঘের প্রাপ্তিস্থান।
গত একশ বছরে বাঘের সঙ্খ্যা কমেছে ৯৩% , এখন টিকে আছে মাত্র ৭%-২,৫
পৃথিবীতে মোট ৯ উপপ্রজাতির বাঘ পাওয়া যেত। এখন আছে ৬ উপপ্রজাতি- ১)রয়াল
বেংগল টাইগার, (P. t. tigris)২)সাইবেরিয়ান টাইগার(P. t. altaica)
৩)মালয়ান টাইগার(P. t. jacksoni) ৪)সুমাত্রা টাইগার(P. t. sumatrae) ৫)
ইন্দোচাইনিজ টাইগার(P. t. corbetti) ৬) দক্ষিন চীন টাইগার,(P. t.
amoyensis) তিন উপপ্রজাতি ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে বিগত শতাব্দীতে।
বিলুপ্ত বাঘেরা -১) বালি টাইগার(P. t. balica) ২) জাভা টাইগার(P. t.
sondaica) এবং ৩) কাস্পিয়ান টাইগার (P. t. virgata)। জাতিসঙ্ঘের অংগ
সঙ্গঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কঞ্জার্ভেশান অফ নেচার (International
union for conservation of nature=IUCN)-৩ , এর ভাষায় অত্যন্ত বিপন্ন (
Critically endangered) ১০ প্রানীর অন্যতম সাউথ চায়না টাইগার। এ বাঘ
এখন আর বনে জঙ্গলে দেখা যায় না যদিও চিড়িয়াখানায় এখনো টিকে আছে অল্প
কিছু-৩ । ধারনা করা হয় দক্ষিন চীন উপপ্রজাতি থেকে অনান্য উপপ্রজাতির
উৎপত্তি। অন্য সব বাঘ উপপ্রজাতিই IUCN এর endangered বা বিপন্ন প্রানীর
তালিকাতে। বালি টাইগারের শেষ দেখা মেলে ১৯৩৭ সালে, ১৯৫০ সালে চিরতরে হারায়
কাস্পিয়ান টাইগার, এবং জাভা টাইগার শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮০ সালে। আকারে
সবচে বড় না হলেও সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীতে সবচে’ বেশী হল রয়াল বেঙ্গল
টাইগার। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এক দশকে প্রায় ১০০০ বাঘ নিধন
হয়েছে-৫ বাংলাদেশে গড়ে তিনটে বাঘ প্রতিবছর মারা যায় মানুষের আক্রমনে-১১।
বাঘের বিপদ।
যে সমস্ত কারনে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে তা হল ১)বনজঙ্গল কমে যাওয়া- কৃষি,
বসবাস এবং কাঠের প্রয়োজনে বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে আর বাঘের বসবাস উপযোগী
এলাকা যাচ্ছে কমে।
২) খাবার থাকছে না বাঘদের- ফুড চেইনের সবচে, উপরে হল বাঘ , যেমন মাঠে
ঘাস জন্মায়, সে ঘাস খায় হরিনে আর হরিন খেয়ে বাচে বাঘ। একটা হরিনের বেচে
থাকতে মাসে যদি ১০ একরের ঘাস প্রয়োজন হয় আর একটা বাঘের প্রতিমাসে যদি
দশটা হরিন খাওয়ার দরকার পড়ে তা হলে একটা বাঘের জন্য দরকার পড়বে ১০০ একর
এলাকার। হরিনের মাংশ সুস্বাদু, মানুষ থাকতে তা বাঘে খাবে কেন? একবার
বন্ধুর বাসায় ঈদের দিনে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে বন্ধুর গর্বভরে বলা
সুন্দরবন থেকে হরিনের মাংশ সংগ্রহের গল্প শুনেছিলাম । কাকড়া, কচ্ছপ, এবং
বন্য শুয়োর শিকারের কারনে ও বাঘ থাকছে অভুক্ত। খাদ্যের অভাবে বাঘ চলে আসছে
লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে পৃহপালিত পশু এবং মানুষজনের উপর আর পিটীয়ে মারা
হচ্ছে বাঘদের। অনেকটা প্রতিহিংসা বশেই বাঘকে খুজে বের করে মারা হচ্ছে।
পচাব্দি গাজীর বাঘ শিকারের ধারাবাহিক গল্প পড়েছিলাম ছাত্রজীবনে রোববার
পত্রিকায়।
বাঘের পানি পান।
৩) পানির অভাব- পরিবেশ বিপর্যয় এবং আরো অনেক কারনে বাঘের জন্য পানের উপযোগী মিঠা পানির উৎস যাচ্ছে কমে। ফারাক্কা বাধের ফলে লবনের পরিমান বাড়ছে সুন্দরবন এলাকাতে ফলে পানের উপযোগী পানি পাচ্ছে না বাঘ।
৪) সবার উপরে কীটনাশক বিষ প্রয়োগ এবং চোরা শিকারীর ফাদে পড়ে জীবন হারাচ্ছে বাঘ। বাঘের চামড়া বিক্রি হয় অনেক দামে, বাঘের হাড় ব্যবহার হয় যৌনশক্তি বর্ধক ঔষধ তৈরীতে বিষেষ করে চীনদেশে। বিশ্বব্যাঙ্কের এক হিসাবমতে বাঘ ব্যবসার পরিমান বছরে ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার-৯।
বাঘ শিকার
৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মারা যাচ্ছে বাঘ, যেমন ঘুর্নিঝড় আইলা এবং সিডরের ধাক্কাও পড়ে বাঘের উপর।
৬) পরিবেশ বিপর্যয় এবং তাপমাত্রা বাড়ার কারনে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখনকার হারে চলতে থাকলে সুন্দরবনে ২০৭০ নাগাদ উচ্চতা বাড়বে ২৮ সেঃমিঃ ফলে সুন্দরবনের ৫০% এলাকা বিলীন হয়ে যাবে সমুদ্র গর্ভে।
পরিচয়- বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার এবং লিওপার্ড ( চিতাবাঘ নয়) এই চার জন্তুকে বলা হয়ে থাকে বড় বিড়াল বা Big Cat. Felidae ফ্যামিলির সদস্য বাঘের জেনাস হল Panthera , বৈজ্ঞানিক নাম হল Panthera Tigris।২০ লক্ষ বছরের পুরান বাঘের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে চীন দেশে। সে থেকেই হিসেব করা হয় যে কমপক্ষে ২০ লক্ষ বছর আগে পৃথীবিতে বাঘের পদার্পন। টাইগার শব্দ এসেছে গ্রীক শব্দ টাইগ্রিস থেকে যা আবার পার্সীরা ব্যাবহার করতো তীর বোঝাতে। এই প্রানীর ক্ষিপ্রগতিকে তীরের সাথে তুলনা করেই এই নাম।
প্রাপ্তি স্থান – এশিয়ার প্রানী বাঘ। এক সময় তুরস্ক থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতবর্ষ, উত্তরে সাইবেরিয়া, চীন হয়ে দক্ষিনের ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ন এলেকায় বাঘ দেখা যেত। এখন মাত্র তেরটা দেশের বিচ্ছিন কিছু এলাকায় বাঘ দেখা যায়। দেশগুলো এবং বাঘের সংখ্যা হল – বাংলাদেশ(৪৪০) ভারত(১৭০৬), নেপাল,(১৫৫) ক্যাম্বোডিয়া,(২০) ভুটান(৭৫), লাওস(১৭),থাইল্যান্ড(২০০), ভিয়েতনাম(২০) , মিয়ানমার(৮৫), মালয়েশিয়া(৫০০) , ইন্দোনেশিয়া(৩২৫), চীন(৪৫), রাশিয়া(৩৬০)-৩ । ১৯৯০ সাল থেকে এদের রাজত্বের আয়তন কমে গেছে ৪১% এই তের দেশের বাঘের বিচরন এলাকার সম্মিলিত আয়তন দাড়িয়েছে ১১লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে। -
বর্ননা- খুবই সুন্দর দেখতে বাঘ। এনিম্যাল প্লানেটের এক সমীক্ষায় সবচে বেশী ১০টি প্রিয় প্রানীর তালিকায় বাঘের স্থান-৬, পূর্নবয়স্ক বাঘের শরীর ১১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর লেজ লম্বা হতে পারে ৩ ফুট পর্যন্ত । বাঘিনীরা একটু ছোট হয়ে থাকে । সবচে বড় বাঘ হল সাইবেরিয়ার বাঘ আর সবচে ছোট হল সুমাত্রার বাঘ। ওজন সর্বোচ্চ ৭২০ পাউন্ড বা ৩৬৩ কিলোগ্রাম-৪ এদের শরীরের উপরের দিকের রঙ কমলা লাল, পেটের দিক সাদা এবং গায়ে লম্বা কালো কালো ডোরা কাটা দাগ। মজার ব্যাপার হল, মানুষের হাতের ছাপের মতই এক বাঘের ডোরা অন্য বাঘের ডোরা থেকে আলাদা। কমলা লাল রঙের পরিবর্তে সাদা রঙের শরীরের উপর কালো লম্বা ডোরা কাটা বাঘও দেখা যায়। সাদা বাঘের অধিকাংশ চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম প্রজননের ফলে জন্ম নেওয়া। এটা ঘটে থাকে বাঘের জীন এর মিউটেশানের কারনে। মাল্টিজ টাইগার নীল এবং কালোর মিশ্রন হলেও এই বাঘ সাউথ চায়না উপপ্রজাতির সদস্য।
সাদা বাঘ।
শঙ্কর- পুরুষ বাঘ এবং স্ত্রী সিংহের প্রজনের ফলে জন্ম নেয় টাইগন(Tigon / Tiglon) , আর এর বিপরীত অর্থাৎ পুরুষ সিংহ এবং বাঘিনী’র শঙ্কর হল লাইগার (liger)
খাবার দাবার- বাঘ মাংশ খেয়ে বাচে।শুধুমাত্র মাংশের উপর নির্ভর শীল বৃহত্তম স্তনপায়ী প্রানী হল বাঘ । হরিন, শুয়োর, গাউর, বুনো মোষ ইত্যাদি প্রধান শিকার।অনেক সময় গৃহপালিত পশু যেমন গরু, ছাগল এবং মানুষের উপরও হামলা চালায়। সিংহ দলবেধে শিকার করলেও বাঘ কিন্তু একা শিকার করে থাকে। এক রাতে বাঘ ১০০ পাউন্ড বা ৪০০টা বার্গারের সম পরিমান মাংশ খেতে পারে। পেট ভরে যাওয়ার পর এরা খাবার লুকিয়ে রাখে এবং পরে ফিরে আসে আবার খেতে। বাঘের থুতু এন্টিসেপ্টিক আর একারনেই বাঘ তার ক্ষত চেটে সারিয়ে তোলে। শিকার করার পদ্ধতি হল এরা দূর থেকে চুপি চুপি শিকারকে অনুসরন করে। কাছাকাছি আসার পর লাফ মেরে গিয়ে ধরে ঘাড় মটকায়।
বাঘের শিকার।
গায়ে ডোরা থাকায় এরা ঘাস, জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে চলাফেরা করতে পারে। এক লাফে এরা সর্বোচ্চ ৩৩ ফুট পর্যন্ত যেতে পারে। বাঘের শক্তিশালী চোয়াল এ রয়েছে বেশ বড় বড় দাত। সামনের বড় দাঁত গুলো ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
বাঘের দাঁত।
স্বভাব প্রকৃতি- বাঘ নিভৃত চারী প্রানী, একা একা নিজের মত করে থাকতেই পছন্দ করে।প্রত্যেক বাঘের আলাদা রাজত্ব আছে। রাজত্বের সীমানা এরা চিহ্ন দিয়ে রাখে। দেশের সীমানায় যেমন পিলার থাকে এদের সীমানা এরা চিহ্ন দিয়ে রাখে পায়খানা প্রস্রাব দিয়ে।বাঘের মলমুত্রের গন্ধ অনেকটা রান্না করা বাসমতি চালের মত-৭ রাজত্বের আয়তন নির্ভর করে বাঘের ঘনত্বের উপর, সাইবেরিয়ায়তে এদের ঘনত্ব কম সেই কারনেই এদের রাজত্ব এলাকাও বড়। তবে বাঘিনীদের রাজত্ব বাঘের চেয়ে ছোট। সপ্তাহান্তে সীমানা ঘুরে দেখে নেয় তা রক্ষিত কিনা? অন্য বাঘ গন্ধ শুকে বুঝতে পারে যে সে অন্য কোন রাজত্বে ঢুকে পড়েছে। অনধিকার প্রবেশকারী বাঘের সাথে বাদানুবাদ হলেও যুদ্ধ বাধে কম। পরাজয় স্বীকার করে নিলেই হল। চিত হয়ে শুয়ে পেট দেখিয়ে দেওয়ার মানে হল বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া।
হার মেনে নেওয়া।
বাঘের গর্জন ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত শোনা যায়। এরা খুব দক্ষ সাতারু, এমনকি ৪ মাইল পর্যন্ত সাতার কেটে চলে যায় এরা, হ্রদের মধ্য দিয়ে শিকার টেনে নিতে দেখা গেছে বাঘদের।। পানি খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে পানিতে নেমে গোসল করে থাকে। হিংস্র স্বভাবের বাঘ খুব লাজুক ও বটে।
বাঘের শিকার।
খাবারের প্রয়োজনে এবং আক্রান্ত না হলে এরা আক্রমন করে না। এরা বাসা তৈরী করে ঘাস, গাছের নীচে, জলাভুমির কাছাকাছি গভীর বনজঙ্গলে। শীত এবং গরম উভয় জলবায়ুতেই এরা মানিয়ে চলতে পারে। সাইবেরিয়ার বাঘের আকার যেমন বড় এদের গায়ের লোমের কোটও বেশী পুরু, ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানিয়ে চলার উপযোগী। বন্য পরিবেশে বাঘের আয়ুস্কাল ১৫/২০ বছর হলেও চিড়িয়াখানার পরিবেশে সর্বোচ্চ ২৬ বছর পর্যন্ত বেচেছে বাঘ।
প্রজনন – পুরুষ বাঘ ৪-৫ বছরে এবং স্ত্রীবাঘ ৩-৪ বছরে প্রজননের সক্ষম হয়। সাধারনত প্রতি দুই বছরে বাঘিনী একবার বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাঘই প্রথম ডেকে খোজে প্রজনন উপযোগী বাঘিনী । প্রজননের সময় হলে বাঘিনী সঙ্গীকে ডেকে নেয় বিশেষ ধরনের উত্তর দিয়ে। দু তিন দিন বাঘ এবং বাঘিনী একসাথে সংসার করে-৮, তারপর বাঘ চলে যায় নিজের কাজে।প্রজননের নির্দিস্ট ঋতু নেই তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে এরা বেশী মিলিত হয়। প্রতিবার ২-৪ টা বাচ্চা জন্ম নেয়। জন্মের সময় এদের চোখ ফোটে না অর্থাৎ এরা থাকে অন্ধ আর বাচ্চার ওজন হয় ২-৩ পাউন্ড মত। বাঘিনী বনজঙ্গলে, গুহায় বাসা করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের সব সময় পাহারা দেওয়ার দরকার পড়ে কারন হল পুরুষ বাঘেরা বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাচ্চা খেয়ে ফেলার কারন হল বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বাঘিনীর প্রজনন সক্ষমতা থাকে না। বাচ্চা না থাকলে, বুকের দুধ না খাওয়ালে, বাঘিনী দ্রুত প্রজননক্ষম হবে, সুতরাং বাচ্চা খেয়ে ফেলা। বাঘের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার খুব বেশী- ২ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০%। ১ বছর বয়সের থেকে এরা নিজেরাই শিকার করতে থাকে। বাচ্চারা মা’র সাথে ১-২ বছর কাটানোর পর নিজেরাই খুজে নেয় আলাদা রাজত্ব। বাঘিনীরা তাদের মায়ের কাছাকাছি রাজত্ব বেছে নেয়।
বাঘ বাচাও আন্দোলন- বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাচাতে এগিয়ে এসেছে বাঘ টিকে থাকা ১৩ দেশের বাঘ সরকার। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ প্রোগ্রাম(UNEP ) এর অধীন Convention on International Trade in Endangered Species(CITES) এগিয়ে এসেছে বাঘ বাচাতে-১০। CITES দেশগুলো বাঘ শিকার এবং বাঘ ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে ইতিমধ্যেই। বাঘকে নিয়ে ১৩ তম সম্মেলন হল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে । সে সম্মেলনে সদস্য দেশ গুলো অঙ্গীকার করে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুন করতে। ওয়ার্ল্ড কনজারভেশান সোসাইটি(WCS= World Conservation Society ) এসম্মেলনে বাঘ বাচাতে আগামী দশ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষনা করে। বিশ্বব্যাঙ্ক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক দেন একই পরিমান অর্থ। হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে দেন ১ মিলিয়ন ডলার। কৃতজ্ঞতার নিদর্শস্বরুপ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে প্রকৃত মানুষ বা রুশ ভাষায় “ মুজিক” হিসেবে সম্বোধন করেন। ভারতে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজেক্ট টাইগার। আশার কথা হল এই প্রজেক্টের অবিরাম চেস্টার ফলে ভারতে বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে । ২০১০ সাল চীনে পালিত হয় “ বাঘ বর্ষ” বা year of the Tiger হিসেবে। নোবেলজয়ী বুদ্ধ নেতা দালাইলামা বাঘ এবং বন্যপ্রানী হত্যা থেকে বিরত থাকতে আহবান জানান। কিছুটা আশার খবর হল যে চিড়িয়াখানা এবং বন্দী অবস্থায় এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ টিকে আছে যেমন আমেরিকাতে বন্দী অবস্থায় বেচে আছে ১২, ০০০ বাঘ।
বাঘ ও বাংলাদেশ।
আমাদের জাতীয় পশু বাঘ। ছেলেবেলার গল্প, সিনেমা, উপন্যাসে,দুস্টু বাচ্চাদের ভয় দেখাতে, ইত্যাদি অনেক জায়গা জুড়ে আছে বাঘ । সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক বাঘ( বাঘের বাচ্চা) আমাদের নিকট আত্মীয় ও বটে (বাঘ মামা) বাঘ এসেছে গানে( গাজীর গান, বনবিবির কথা) এবং নেতৃত্বের মানদন্ডে – (বাংলার বাঘ, শেরে বাংলা ইত্যাদিতে) প্রতীক হিসেবে বাঘ এসেছে আমাদের মুদ্রায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, জাতীয় ক্রিকেট দলে এবং আরো অনেক যায়গায়। ভারত এবং বাংলাদেশ জুড়ে থাকা সুন্দরবনের ১১ হাজার বর্গ কিলো মিটার এলাকায় দুই দেশ যৌথভাবে বাঘের জরীপ চালায় ২০০৪ সালে। সেবার পায়ের ছাপ দিয়ে যে বাঘসুমারী হয় সে হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪১৯ টি ( ১২১ বাঘ এবং ২৯৮ বাঘিনী সনাক্ত করা হয় ) বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বন্য প্রানী আইন ১৯৭৩ এর আওতায় বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৯ সালে Convention on International Trade in Endangered Species(CITES) এর প্রস্তাব অনুমোদন করে বাংলাদেশ। খুশির খবর হল বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত “টাইগার একশান প্লান” ঘোষনা করে-১১।
বাঘ বাচাতে সমস্যা পর্বত প্রমান। বাসস্থান রক্ষনাবেক্ষন, খাবার দাবার, চোরা শিকারী ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই। এর উপর আছে বাঘের রোগ শোক। কোন ব্যবস্থা নেই বাঘের চিকিৎসার।
পরিশেষে জনসচেতনতাই হল বাঘকে বাচিয়ে রাখার রক্ষাকবচ। আমার লেখার উদ্দেশ্য ও তাই। আমাদের জাতীয় পশু, আমাদের দেশের গর্ব এ প্রানীকে বাচাতে হবে যে কোন মুল্যে।
১) http://www.worldwildlife.org
২) http://www.environmentalgraffiti.com
৩)http://www.iucn.org/
৪)http://kids.nationalgeographic.com
৫)http://www.bbc.co.uk/nature/life/Tiger
৬)http://animal.discovery.com
৭)http://www.wii.gov.in/
৮)http://www.tigers-world.com/tiger-reproduction.html
৯)b Black, R. (2010). Tiger decline is 'sign of world's failure'. BBC
১০)http://www.cites.org/eng/disc/sec/index.shtml
৩) পানির অভাব- পরিবেশ বিপর্যয় এবং আরো অনেক কারনে বাঘের জন্য পানের উপযোগী মিঠা পানির উৎস যাচ্ছে কমে। ফারাক্কা বাধের ফলে লবনের পরিমান বাড়ছে সুন্দরবন এলাকাতে ফলে পানের উপযোগী পানি পাচ্ছে না বাঘ।
৪) সবার উপরে কীটনাশক বিষ প্রয়োগ এবং চোরা শিকারীর ফাদে পড়ে জীবন হারাচ্ছে বাঘ। বাঘের চামড়া বিক্রি হয় অনেক দামে, বাঘের হাড় ব্যবহার হয় যৌনশক্তি বর্ধক ঔষধ তৈরীতে বিষেষ করে চীনদেশে। বিশ্বব্যাঙ্কের এক হিসাবমতে বাঘ ব্যবসার পরিমান বছরে ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার-৯।
বাঘ শিকার
৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মারা যাচ্ছে বাঘ, যেমন ঘুর্নিঝড় আইলা এবং সিডরের ধাক্কাও পড়ে বাঘের উপর।
৬) পরিবেশ বিপর্যয় এবং তাপমাত্রা বাড়ার কারনে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এখনকার হারে চলতে থাকলে সুন্দরবনে ২০৭০ নাগাদ উচ্চতা বাড়বে ২৮ সেঃমিঃ ফলে সুন্দরবনের ৫০% এলাকা বিলীন হয়ে যাবে সমুদ্র গর্ভে।
পরিচয়- বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার এবং লিওপার্ড ( চিতাবাঘ নয়) এই চার জন্তুকে বলা হয়ে থাকে বড় বিড়াল বা Big Cat. Felidae ফ্যামিলির সদস্য বাঘের জেনাস হল Panthera , বৈজ্ঞানিক নাম হল Panthera Tigris।২০ লক্ষ বছরের পুরান বাঘের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে চীন দেশে। সে থেকেই হিসেব করা হয় যে কমপক্ষে ২০ লক্ষ বছর আগে পৃথীবিতে বাঘের পদার্পন। টাইগার শব্দ এসেছে গ্রীক শব্দ টাইগ্রিস থেকে যা আবার পার্সীরা ব্যাবহার করতো তীর বোঝাতে। এই প্রানীর ক্ষিপ্রগতিকে তীরের সাথে তুলনা করেই এই নাম।
প্রাপ্তি স্থান – এশিয়ার প্রানী বাঘ। এক সময় তুরস্ক থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতবর্ষ, উত্তরে সাইবেরিয়া, চীন হয়ে দক্ষিনের ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ন এলেকায় বাঘ দেখা যেত। এখন মাত্র তেরটা দেশের বিচ্ছিন কিছু এলাকায় বাঘ দেখা যায়। দেশগুলো এবং বাঘের সংখ্যা হল – বাংলাদেশ(৪৪০) ভারত(১৭০৬), নেপাল,(১৫৫) ক্যাম্বোডিয়া,(২০) ভুটান(৭৫), লাওস(১৭),থাইল্যান্ড(২০০), ভিয়েতনাম(২০) , মিয়ানমার(৮৫), মালয়েশিয়া(৫০০) , ইন্দোনেশিয়া(৩২৫), চীন(৪৫), রাশিয়া(৩৬০)-৩ । ১৯৯০ সাল থেকে এদের রাজত্বের আয়তন কমে গেছে ৪১% এই তের দেশের বাঘের বিচরন এলাকার সম্মিলিত আয়তন দাড়িয়েছে ১১লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে। -
বর্ননা- খুবই সুন্দর দেখতে বাঘ। এনিম্যাল প্লানেটের এক সমীক্ষায় সবচে বেশী ১০টি প্রিয় প্রানীর তালিকায় বাঘের স্থান-৬, পূর্নবয়স্ক বাঘের শরীর ১১ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আর লেজ লম্বা হতে পারে ৩ ফুট পর্যন্ত । বাঘিনীরা একটু ছোট হয়ে থাকে । সবচে বড় বাঘ হল সাইবেরিয়ার বাঘ আর সবচে ছোট হল সুমাত্রার বাঘ। ওজন সর্বোচ্চ ৭২০ পাউন্ড বা ৩৬৩ কিলোগ্রাম-৪ এদের শরীরের উপরের দিকের রঙ কমলা লাল, পেটের দিক সাদা এবং গায়ে লম্বা কালো কালো ডোরা কাটা দাগ। মজার ব্যাপার হল, মানুষের হাতের ছাপের মতই এক বাঘের ডোরা অন্য বাঘের ডোরা থেকে আলাদা। কমলা লাল রঙের পরিবর্তে সাদা রঙের শরীরের উপর কালো লম্বা ডোরা কাটা বাঘও দেখা যায়। সাদা বাঘের অধিকাংশ চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম প্রজননের ফলে জন্ম নেওয়া। এটা ঘটে থাকে বাঘের জীন এর মিউটেশানের কারনে। মাল্টিজ টাইগার নীল এবং কালোর মিশ্রন হলেও এই বাঘ সাউথ চায়না উপপ্রজাতির সদস্য।
সাদা বাঘ।
শঙ্কর- পুরুষ বাঘ এবং স্ত্রী সিংহের প্রজনের ফলে জন্ম নেয় টাইগন(Tigon / Tiglon) , আর এর বিপরীত অর্থাৎ পুরুষ সিংহ এবং বাঘিনী’র শঙ্কর হল লাইগার (liger)
খাবার দাবার- বাঘ মাংশ খেয়ে বাচে।শুধুমাত্র মাংশের উপর নির্ভর শীল বৃহত্তম স্তনপায়ী প্রানী হল বাঘ । হরিন, শুয়োর, গাউর, বুনো মোষ ইত্যাদি প্রধান শিকার।অনেক সময় গৃহপালিত পশু যেমন গরু, ছাগল এবং মানুষের উপরও হামলা চালায়। সিংহ দলবেধে শিকার করলেও বাঘ কিন্তু একা শিকার করে থাকে। এক রাতে বাঘ ১০০ পাউন্ড বা ৪০০টা বার্গারের সম পরিমান মাংশ খেতে পারে। পেট ভরে যাওয়ার পর এরা খাবার লুকিয়ে রাখে এবং পরে ফিরে আসে আবার খেতে। বাঘের থুতু এন্টিসেপ্টিক আর একারনেই বাঘ তার ক্ষত চেটে সারিয়ে তোলে। শিকার করার পদ্ধতি হল এরা দূর থেকে চুপি চুপি শিকারকে অনুসরন করে। কাছাকাছি আসার পর লাফ মেরে গিয়ে ধরে ঘাড় মটকায়।
বাঘের শিকার।
গায়ে ডোরা থাকায় এরা ঘাস, জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে চলাফেরা করতে পারে। এক লাফে এরা সর্বোচ্চ ৩৩ ফুট পর্যন্ত যেতে পারে। বাঘের শক্তিশালী চোয়াল এ রয়েছে বেশ বড় বড় দাত। সামনের বড় দাঁত গুলো ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
বাঘের দাঁত।
স্বভাব প্রকৃতি- বাঘ নিভৃত চারী প্রানী, একা একা নিজের মত করে থাকতেই পছন্দ করে।প্রত্যেক বাঘের আলাদা রাজত্ব আছে। রাজত্বের সীমানা এরা চিহ্ন দিয়ে রাখে। দেশের সীমানায় যেমন পিলার থাকে এদের সীমানা এরা চিহ্ন দিয়ে রাখে পায়খানা প্রস্রাব দিয়ে।বাঘের মলমুত্রের গন্ধ অনেকটা রান্না করা বাসমতি চালের মত-৭ রাজত্বের আয়তন নির্ভর করে বাঘের ঘনত্বের উপর, সাইবেরিয়ায়তে এদের ঘনত্ব কম সেই কারনেই এদের রাজত্ব এলাকাও বড়। তবে বাঘিনীদের রাজত্ব বাঘের চেয়ে ছোট। সপ্তাহান্তে সীমানা ঘুরে দেখে নেয় তা রক্ষিত কিনা? অন্য বাঘ গন্ধ শুকে বুঝতে পারে যে সে অন্য কোন রাজত্বে ঢুকে পড়েছে। অনধিকার প্রবেশকারী বাঘের সাথে বাদানুবাদ হলেও যুদ্ধ বাধে কম। পরাজয় স্বীকার করে নিলেই হল। চিত হয়ে শুয়ে পেট দেখিয়ে দেওয়ার মানে হল বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া।
হার মেনে নেওয়া।
বাঘের গর্জন ২-৩ কিলোমিটার পর্যন্ত শোনা যায়। এরা খুব দক্ষ সাতারু, এমনকি ৪ মাইল পর্যন্ত সাতার কেটে চলে যায় এরা, হ্রদের মধ্য দিয়ে শিকার টেনে নিতে দেখা গেছে বাঘদের।। পানি খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে পানিতে নেমে গোসল করে থাকে। হিংস্র স্বভাবের বাঘ খুব লাজুক ও বটে।
বাঘের শিকার।
খাবারের প্রয়োজনে এবং আক্রান্ত না হলে এরা আক্রমন করে না। এরা বাসা তৈরী করে ঘাস, গাছের নীচে, জলাভুমির কাছাকাছি গভীর বনজঙ্গলে। শীত এবং গরম উভয় জলবায়ুতেই এরা মানিয়ে চলতে পারে। সাইবেরিয়ার বাঘের আকার যেমন বড় এদের গায়ের লোমের কোটও বেশী পুরু, ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানিয়ে চলার উপযোগী। বন্য পরিবেশে বাঘের আয়ুস্কাল ১৫/২০ বছর হলেও চিড়িয়াখানার পরিবেশে সর্বোচ্চ ২৬ বছর পর্যন্ত বেচেছে বাঘ।
প্রজনন – পুরুষ বাঘ ৪-৫ বছরে এবং স্ত্রীবাঘ ৩-৪ বছরে প্রজননের সক্ষম হয়। সাধারনত প্রতি দুই বছরে বাঘিনী একবার বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাঘই প্রথম ডেকে খোজে প্রজনন উপযোগী বাঘিনী । প্রজননের সময় হলে বাঘিনী সঙ্গীকে ডেকে নেয় বিশেষ ধরনের উত্তর দিয়ে। দু তিন দিন বাঘ এবং বাঘিনী একসাথে সংসার করে-৮, তারপর বাঘ চলে যায় নিজের কাজে।প্রজননের নির্দিস্ট ঋতু নেই তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে এরা বেশী মিলিত হয়। প্রতিবার ২-৪ টা বাচ্চা জন্ম নেয়। জন্মের সময় এদের চোখ ফোটে না অর্থাৎ এরা থাকে অন্ধ আর বাচ্চার ওজন হয় ২-৩ পাউন্ড মত। বাঘিনী বনজঙ্গলে, গুহায় বাসা করে বাচ্চা দেয়। বাচ্চাদের সব সময় পাহারা দেওয়ার দরকার পড়ে কারন হল পুরুষ বাঘেরা বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বাচ্চা খেয়ে ফেলার কারন হল বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বাঘিনীর প্রজনন সক্ষমতা থাকে না। বাচ্চা না থাকলে, বুকের দুধ না খাওয়ালে, বাঘিনী দ্রুত প্রজননক্ষম হবে, সুতরাং বাচ্চা খেয়ে ফেলা। বাঘের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার খুব বেশী- ২ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০%। ১ বছর বয়সের থেকে এরা নিজেরাই শিকার করতে থাকে। বাচ্চারা মা’র সাথে ১-২ বছর কাটানোর পর নিজেরাই খুজে নেয় আলাদা রাজত্ব। বাঘিনীরা তাদের মায়ের কাছাকাছি রাজত্ব বেছে নেয়।
বাঘ বাচাও আন্দোলন- বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাচাতে এগিয়ে এসেছে বাঘ টিকে থাকা ১৩ দেশের বাঘ সরকার। জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ প্রোগ্রাম(UNEP ) এর অধীন Convention on International Trade in Endangered Species(CITES) এগিয়ে এসেছে বাঘ বাচাতে-১০। CITES দেশগুলো বাঘ শিকার এবং বাঘ ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছে ইতিমধ্যেই। বাঘকে নিয়ে ১৩ তম সম্মেলন হল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে । সে সম্মেলনে সদস্য দেশ গুলো অঙ্গীকার করে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুন করতে। ওয়ার্ল্ড কনজারভেশান সোসাইটি(WCS= World Conservation Society ) এসম্মেলনে বাঘ বাচাতে আগামী দশ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষনা করে। বিশ্বব্যাঙ্ক প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক দেন একই পরিমান অর্থ। হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে দেন ১ মিলিয়ন ডলার। কৃতজ্ঞতার নিদর্শস্বরুপ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে প্রকৃত মানুষ বা রুশ ভাষায় “ মুজিক” হিসেবে সম্বোধন করেন। ভারতে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রজেক্ট টাইগার। আশার কথা হল এই প্রজেক্টের অবিরাম চেস্টার ফলে ভারতে বাঘের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে । ২০১০ সাল চীনে পালিত হয় “ বাঘ বর্ষ” বা year of the Tiger হিসেবে। নোবেলজয়ী বুদ্ধ নেতা দালাইলামা বাঘ এবং বন্যপ্রানী হত্যা থেকে বিরত থাকতে আহবান জানান। কিছুটা আশার খবর হল যে চিড়িয়াখানা এবং বন্দী অবস্থায় এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ টিকে আছে যেমন আমেরিকাতে বন্দী অবস্থায় বেচে আছে ১২, ০০০ বাঘ।
বাঘ ও বাংলাদেশ।
আমাদের জাতীয় পশু বাঘ। ছেলেবেলার গল্প, সিনেমা, উপন্যাসে,দুস্টু বাচ্চাদের ভয় দেখাতে, ইত্যাদি অনেক জায়গা জুড়ে আছে বাঘ । সাহস এবং বীরত্বের প্রতীক বাঘ( বাঘের বাচ্চা) আমাদের নিকট আত্মীয় ও বটে (বাঘ মামা) বাঘ এসেছে গানে( গাজীর গান, বনবিবির কথা) এবং নেতৃত্বের মানদন্ডে – (বাংলার বাঘ, শেরে বাংলা ইত্যাদিতে) প্রতীক হিসেবে বাঘ এসেছে আমাদের মুদ্রায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, জাতীয় ক্রিকেট দলে এবং আরো অনেক যায়গায়। ভারত এবং বাংলাদেশ জুড়ে থাকা সুন্দরবনের ১১ হাজার বর্গ কিলো মিটার এলাকায় দুই দেশ যৌথভাবে বাঘের জরীপ চালায় ২০০৪ সালে। সেবার পায়ের ছাপ দিয়ে যে বাঘসুমারী হয় সে হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৪১৯ টি ( ১২১ বাঘ এবং ২৯৮ বাঘিনী সনাক্ত করা হয় ) বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বন্য প্রানী আইন ১৯৭৩ এর আওতায় বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৯ সালে Convention on International Trade in Endangered Species(CITES) এর প্রস্তাব অনুমোদন করে বাংলাদেশ। খুশির খবর হল বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত “টাইগার একশান প্লান” ঘোষনা করে-১১।
বাঘ বাচাতে সমস্যা পর্বত প্রমান। বাসস্থান রক্ষনাবেক্ষন, খাবার দাবার, চোরা শিকারী ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই। এর উপর আছে বাঘের রোগ শোক। কোন ব্যবস্থা নেই বাঘের চিকিৎসার।
পরিশেষে জনসচেতনতাই হল বাঘকে বাচিয়ে রাখার রক্ষাকবচ। আমার লেখার উদ্দেশ্য ও তাই। আমাদের জাতীয় পশু, আমাদের দেশের গর্ব এ প্রানীকে বাচাতে হবে যে কোন মুল্যে।
১) http://www.worldwildlife.org
২) http://www.environmentalgraffiti.com
৩)http://www.iucn.org/
৪)http://kids.nationalgeographic.com
৫)http://www.bbc.co.uk/nature/life/Tiger
৬)http://animal.discovery.com
৭)http://www.wii.gov.in/
৮)http://www.tigers-world.com/tiger-reproduction.html
৯)b Black, R. (2010). Tiger decline is 'sign of world's failure'. BBC
১০)http://www.cites.org/eng/disc/sec/index.shtml
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন