রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

রাজনৈতিক সংঘর্ষে গত ৪০ বছরে দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে প্রাণ হারান ১২৯ জন ছাত্র। এর মধ্যে ২৫ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪ জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ছয়জন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই ৫৫টি ঘটনার মধ্যে মাত্র একটির বিচার হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ চলাকালে নাসরুল্লাহ নাসিমকে মারধর করে হলের দোতলা থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। নয় দিন পর নাসিম মারা যান। ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও নাসিম হত্যার বিচার হয়নি। মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে ২৫ জন সম্প্রতি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্রশিবির ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। এ ঘটনায় দুবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হলেও এখনো অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ ছাত্রসংঘর্ষ হয়েছে শিবিরের সঙ্গে। ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ শিবির ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য কর্মসূচি দিয়ে আয়োজন করে নবীনবরণ অনুষ্ঠান। এ ঘটনায় অন্যান্য ছাত্র সংগঠন বাধা দিলে সংঘর্ষে শিবিরের চারজন কর্মী মারা যান। আর শিবিরের হামলায় মারা যান ছাত্রলীগের নেতা মীর মোশতাক এলাহী। ১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বর মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসলাম হোসেন। পরদিন ১৮ নভেম্বর সংঘর্ষে মারা যান আজগর আলী। ১৯৮৯ সালের ১৮ এপ্রিল মারা যান শফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষে ১৯৯০ সালের ২২ জুন খলিলুর রহমান, ১৯৯২ সালের ৭ মে আজিবর রহমান, ১৯৯৩ সালের ১৭ জানুয়ারি মুহাম্মদ ইয়াহিয়া, ৬ ফেব্রুয়ারি মুস্তাফিজুর রহমান ও রবিউল ইসলাম, ১৯৯৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন মারা যান। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী ইয়াসির আরাফাত। ১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রী নেতা জুবায়ের হোসেন, ১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি খুন হন ছাত্র মৈত্রীর আরেক নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য। সোহরাওয়ার্দী হল দখলকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শিবিরের হামলায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কর্মী বিশ্বজিৎ ও নতুন। একই দিন শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী তপন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিবির ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমানকে। এই পাঁচটি হত্যার কোনোটিরই বিচার হয়নি। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের সামনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের হামলায় নিহত হন শিবিরকর্মী সাইফুদ্দিন। ওই ঘটনায়ও কারও বিচার হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্যের রাজনীতির জের ধরে গত ২৪ বছরে খুন হয়েছেন ১৭ জন ছাত্র। এর মধ্যে মাত্র একটি ঘটনার বিচার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা আবদুল হামিদের হাত কেটে উল্লাস করার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে সহিংস রাজনীতির শুরু করে ইসলামী ছাত্রশিবির। এর পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সহিংস রাজনীতির বলি হন ১২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আটজনের মৃত্যু হয় ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী পরিচয়দানকারী সন্ত্রাসীদের হাতে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, শিবিরের হাতে ১৯৯৮ সালে নিহত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ও চারুকলা বিভাগের ছাত্র সঞ্জয় তলাপাত্রের প্রত্যেক মৃত্যুবার্ষিকীতে ছাত্র ইউনিয়ন বিচারের দাবি করে আসছে। কিন্তু হত্যাকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ১৯৮৮ সালে মারা যান পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুল হক। এই একটি ঘটনারই কেবল তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের মিছিলে শিবির হামলা চালালে মারা যান ছাত্র মৈত্রীর নেতা ফারুকুজ্জামান। ১৯৯৪ সালে শিবিরের হামলায় মারা যান ছাত্রদলের নেতা নুরুল হুদা, ১৯৯৭ সালে ছাত্রলীগের কর্মী বকুল এবং ১৯৯৮ সালে নিহত হন বরিশাল থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্র আইয়ুব আলী। ওই বছরেই ১৮ মে শহরতলির বটতলী এলাকায় শহরগামী শিক্ষকবাসে শিবিরের সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করলে মুসফিকুর সালেহীন নিহত হন। ২০০১ সালে শিবিরের হাতে নিহত হন ছাত্রলীগের নেতা আলী মর্তুজা। এর আগে ১৯৯৯ সালে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন তিন ছাত্র। কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর: এ বছরের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় মারা যান ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। এর ১৫ বছর আগে ১৯৯৭ সালের ২ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান ছাত্রলীগের নেতা আনন্দ কুমার। ১৯৯৪ সালের ২৩ নভেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান শওকত কবীর। নব্বই-পরবর্তী সময়ে এটাই ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হত্যাকাণ্ড। এর আগে ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রোকন। ১৯৭৪ সালের ১২ নভেম্বর সে সময়ের নির্বাচিত ভিপি মোজাম্মেল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১৯৮৯ সালের ২৬ আগস্ট ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান। তবে একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতগুলো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল, একটিরও বিচার হলো না। অথচ একটি ঘটনার বিচার হলে অন্য একটি ঘটনা কখনোই ঘটত না।’ Click This Link নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত রাখার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগের। বাস্তবতা হলো, মহাজোট সরকারের গত তিন বছরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন ছাত্র। সর্বশেষ গত শুক্রবার ছাত্রলীগের হামলায় মারা গেলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ছাত্র আবদুল আজিজ খান। ক্যাম্পাস ও হলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণের মতো ঘটনায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৪০ বছরে দেশের চারটি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন সব মিলিয়ে ১২৯ জন ছাত্র। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৪ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়জন ছাত্র মারা যান। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রথা মেনে তদন্ত কমিটি করেছিল। থানাতেও মামলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ডামাডোলে হারিয়ে গেছে এসব মামলা। তাই বিচারের অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের আহাজারি কখনোই শেষ হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে দেখিনি, একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার হয়েছে।’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নাট্যকার মলয় ভৌমিক বলেন, ‘আমি আমার ৩৫-৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটি হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। ঠিকমতো বিচার চাওয়াও হয়নি, বরং লাশের রাজনীতি হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘটনা ঘটেছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর নিহত হন। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ঘটনার বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও বিচার পায়নি আবু বকরের পরিবার। বকরের বাবা রুস্তম আলী (৭০) আক্ষেপ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা মারামারি করল, তারা ক্লাস করে, রাজনীতি করে। কিন্তু আমার সোনার ছেলে মইর‌্যা গেল, কোনো বিচার নাই। আমি একটা দিনমজুর। আমার জজ-ব্যারিস্টার, এমপি-মিনিস্টার নাই। আমি ক্যামনে তাদের সাথে পারমু?’ এর আগে ২০০৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রদলের নেতা মাহাবুবুল ইসলাম খোকন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। শাহবাগ থানায় মামলা হলেও এর বিচারকাজ শেষ হয়নি। খুনিরা এখন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের নেতা পার্থপ্রতিম আচার্যকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জগন্নাথ হলে একজন মারা যান। ১৯৯৭ সালের ১১ জুলাই কার্জন হল এলাকায় খুন হন ছাত্রলীগের কর্মী তনাই। একই বছর শাহীন নামে এক ছাত্রের মৃতদেহ পাওয়া যায় কার্জন হলে। ১৯৯৭ সালে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বঙ্গবন্ধু হলে গুলি করে হত্যা করা হয় আরিফকে। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ডগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেও সংরক্ষিত নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে ৬৬টি হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল মুহসীন হলের ‘সেভেন মার্ডার’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানসহ অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাঁরা মুক্তি পান। এ ছাড়া ১৯৭৭ সালে হনু ও গোপা, ১৯৮৩ সালে জয়নুল, ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাউফুন বসুনিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১৯৮৬ সালে ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মারা যান আসলাম। ১৯৮৭ সালের মার্চে মুহসীন হলের ৪২৬ নম্বর কক্ষে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ছাত্রদলের নেতা বাবলু এবং তাঁর দুই সহযোগী মইনুদ্দীন ও নূর মোহাম্মদ। একই বছরের ১৪ জুলাই ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রদলের কর্মী হালিম নিহত হন। এ ঘটনার পরের দিন এস এম হলে ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের বন্দুকযুদ্ধে জাসদের মুন্না মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মারা যান বজলুর রশিদ। ১৯৮৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদল ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে মধুর ক্যানটিনের সামনে জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী কফিল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর এস এম হলে ফিন্যান্সের ছাত্র আরিফকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সূর্য সেন হলে আলমগীর কবীর মারা যান। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ ও মুহসীন হল শাখা ছাত্রদলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি চুন্নু। একই দিন ফজলুল হক হলে শাহীন নামে আরেক ছাত্রের লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনাবহুল নব্বইয়ের ২৭ নভেম্বর ছাত্রদল ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ক্রসফায়ারে পড়ে নিহত হন ডা. মিলন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে মারা যান আরও অন্তত ৩০ জন ছাত্র। কিন্তু একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তদন্ত করতে পারে, কিন্তু শাস্তি দিতে পারেন আদালত। তদন্ত করবে পুলিশ। কিন্তু রাষ্ট্র এই কাজগুলো শেষ পর্যন্ত করে না। এ কারণে কেউ শাস্তি পায় না। আমি মনে করি, শাস্তি পায় না বলেই পরবর্তী হত্যাকাণ্ড ঘটে। যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া যেত, তাহলে এমন ঘটনা আর ঘটত না।’


মুটিয়ে যেতে চান না বলে ডায়েট কোলা খাচ্ছেন? বিশ্বাস করুন ড্যারেন জোন্সও তাই ভাবতেন। আর তাই তিনি প্রতিদিন ডায়েট কোক খেতেন ১৮ ক্যান। সম্প্রতি বৃটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল-এ জোনসের ছবি ছাপা হয়েছে। তার ওজন এখন ৫০০ পাউন্ড বা প্রায় ২২৭ কেজি।
শুধু জোনস নন, ডায়েট সোডায় আসক্ত আরো কিছু তারকার নাম পাওয়া যায়। এ তালিকায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সঙ্গীত শিল্পী ভিক্টরিয়া বেকহাম, এলটন জন, মুভি মোগল হার্ভি উইনস্টাইন এবং জেফরি কাজেনবার্গ। নিউ ইয়র্ক টাইমসে তাদের এ আসক্তি নিয়ে খবরও ছাপা হয়েছে। খ্যাতিমান ডায়েটিশিয়ান আলিশা জায়েডও গতবছর টুইটারে ডায়েট কোকের প্রতি নিজের আসক্তির কথা জানিয়েছেন। গবেষকরা সোডা মেশানো ডায়েট পানীয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রমাণ পেয়েছেন। এর ক্ষতিকর প্রভাবে হৃদরোগ, স্ট্রোক কিংবা কিডনিতে সমস্য হতে পারে। এছাড়া ওজন বৃদ্ধি এবং নারীদের ক্ষেত্রে অপরিণত শিশু জন্মদানের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। ডায়েট পানীয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এটি নিয়মিত গ্রহণে আসক্তি তৈরি হয়, যেমনটা হয়েছিল ড্যারেন জোন্স-এর বেলায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সোডাযুক্ত পানীয় খাচ্ছেন এমন কেউ যদি একদিন পানীয় না খান তবে তার ওজন ২৬ আউন্স কমে যায়। আসক্তির কারণ হিসেবে সোডাযুক্ত কোলায় ক্যাফেইনকে দায়ী করা হচ্ছে। আট আউন্স কোকে ৪৭ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। জার্নাল অফ জেনারেল ইন্টারনাল মেডিসিন মানবদেহে সোডার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছে। আড়াই হাজার প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের ওপর চলে এ গবেষণা। প্রতিদিন সোডা খাওয়ানোর ফলে সেখানকার ৪৩ শতাংশ লোকের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে হারভার্ডের একদল গবেষক জানিয়েছিলেন, প্রতিদিন দুইয়ের বেশি ক্যান কোলা খেলে এর প্রভাবে কিডনি ৩০ শতাংশ অকেজো হয়ে যায়। কাজেই সোডা জাতীয় পানীয় সেটি ডায়েট হোক বা প্রচলিত ধরনেরই হোক, সাবধান!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ