রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১২

রাজধানীতে গড়ে উঠছে কুকুরের অভয়ারণ্য

ঢাকা: রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জলাতঙ্ক রোগের অন্যতম বাহক কুকুরের মাধ্যমে জলাতঙ্ক ছাড়ানোর ঘটনাও বাড়ছে। এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিবেশবান্ধব কুকুর নিধন না করে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কুকুরের অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার কাজও চলছে।

ঢাকা সিটি করপোরেশন(ডিসিসি) দক্ষিণ সূত্রে জানা  গেছে, রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক কুকুর জন্মলাভ করছে। 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর অঞ্চলসহ যেসব অঞ্চলে ময়লা, হোটেল, টং দোকান রয়েছে সেসব অঞ্চলে  বেওয়ারিশ কুকুরের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। 

ঢাকা সিটি করপোরেশন(ডিসিসি) দক্ষিণ সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রæয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খানের সভাপতিত্বে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কুকুর নিধন বন্ধ করার কার্যক্রম বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

সভায় ডিসিসি দক্ষিণের স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক জানান, কুকুর পরিবেশের বন্ধু বলে এদের না মেরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণের মাধ্যমে সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তিনি আরও জানান, এক্ষেত্রে কুকুরের অভয়ারণ্যের ভূমিকাও অগ্রগণ্য হতে পারে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আহমেদ । তারা কুকুরের অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।   

গুলশানের বাসিন্দা ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আহমেদের উদ্যোগে অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি ফেসবুকে ‘অভয়ারণ্য-বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি পাতা প্রকাশের মাধ্যমেও এ কাজ দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে  রুবাইয়া আহমেদের পালিত কুকুর, ‘কুকুর নিধন প্রক্রিয়া’য় মারা হলে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনে এসে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন এবং এরপর থেকেই তিনি কুকুরের  অভয়ারণ্য করার বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও, তিনি সাংগঠনিকভাবে কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকাসহ বন্ধ্যাত্বকরণের কাজ করে আসছেন।  

এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ১০ থেকে ১৫টি কুকুরকে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন এবং ২০ থেকে ২৫টি কুকুরকে বন্ধ্যাত্বকরণ করিয়ে থাকি।’ 

ফেসবুকের ওই পাতায় লেখা রয়েছে, ‘স্টপ ডগ কালিং ইন বাংলাদেশ বাই ২০১৫’। অর্থাৎ তিনি ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি কুকুরের অভয়ারণ্যে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন।   

কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন গড়ে ১০০টির ওপরে কুকুর জন্ম নিলে এবং ওই হারে কুকুরকে জলাতঙ্ক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ  করালে রাজধানীতে কুকুরের সংখ্যা বাড়বেই। 
   
ঢাকা সিটি করপোরেশন(ডিসিসি) দক্ষিণ সূত্রে জানা  গেছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কুকুর নিধন করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৫১৫টি এবং ১৬৯টি কুকুরের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে কুকুর নিধন করা হয়েছিল ২০ হাজার ২৭৪টি এবং ৩৭৬টি কুকুরের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ২২ হাজার ৪৬টি কুকুর নিধন করা হয় এবং লাইসেন্স পায় ৪৫০টি কুকুর। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৬ হাজার ২৫৬টি কুকুর নিধন এবং ২৮৪টি কুকুরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে লাইসেন্স পায় ১৯৩টি কুকুর এবং নিধন করা হয় ২১ হাজার কুকুর। ২০১০-১১ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১৪ হাজার ৬৮৩টি কুকুর নিধন করার পর থেকে কুকুর নিধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।  

এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি করপোরেশন(ডিসিসি) দক্ষিণের পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আজমত আলী বলেন, ‘অভয়ারণ্য কার্যক্রম চলার কারণে ঢাকা সিটিতে এখন কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। পোষা কুকুরের লাইসেন্স দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। একটি মাদি কুকুর প্রতিবছর ২ বার বাচ্চা দেয়। তাই কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সেই হারে কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নগর পরিষ্কার থাকলে কুকুরও কম থাকে। ঢাকা শহরে কমপক্ষে দেড় লক্ষাধিক বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। কুকুর বন্ধ্যাত্বকরণের এ উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।’ 

এছাড়াও, ‘কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়ার দায়িত্বও সরকারকেই নিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা এনজিও এ কাজ সম্পূর্ণভাবে পালন করতে পারবে না। এজন্য প্রথমে দরকার সরকারের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা। এ বিষয়ে আইন করাও অত্যন্ত জরুরি।’ 

তিনি আরও জানান, ‘কুকুরের মাধ্যমে জলাতঙ্ক(র‌্যাবিস) ছাড়াও চুলকানি, কৃমিরোগ, লিভার ও লান্সের রোগ(এলভিওলারসিস্ট), ব্রোসেলসিস, টিউবারকোলাসিসসহ ডগবাইট স্ক্র্যাসডিজিজ এবং প্ল্যাগও হতে পারে। পরোক্ষভাবে মুরগি থেকে কুকুর, কুকুর থেকে মানুষেরও বার্ড ফ্লু হতে পারে।’ 

তিনি জানান, ‘মহানগরে প্রতিদিন গড়ে ১০০টিরও বেশি কুকুর জন্ম নেয়। এতে করে ঢাকায় কুকুরও বাড়ছে, জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ