রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১২

৮ ইস্যু নিয়ে বিরোধী দল সংসদে যোগ দিচ্ছে

আট ইস্যু নিয়ে আজ সংসদে যোগ দিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় বিরোধী জোট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালে বিল উত্থাপনের দাবি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে একীভূতকরণ, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর মামলা, হামলা ও নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। বিরোধীদলীয় নেত্রী  বেগম খালেদা জিয়া এসব ইস্যু পয়েন্ট অব অর্ডারে তুলে ধরবেন। এর আগে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের কারণ তুলে ধরে বক্তব্য রাখবেন। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের পরই সংসদ থেকে ওয়াকআউট করবে বিরোধী দল। তাদের সঙ্গে শরিক দল জামায়াত ও বিজেপির এমপিরাও যোগ দেবেন। গতকাল বিরোধীদলীয় বেশ কয়েক এমপির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে তারা টানা তিন অধিবেশন বর্জন করেন। সর্বশেষ গত ২৪শে মার্চ অষ্টম অধিবেশনে যোগ দেয় বিরোধী দল। এদিকে একদিনের জন্য বিরোধী দল সংসদে যোগ দিচ্ছে কিনা এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান এমপিরা। বলেন, বিষয়টি বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদের পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বলেন, বিকাল ৪টায় জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। সে সময়ই সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবো কিনা। তিনি বলেন, যে ক’দিন সংসদ চলে সে ক’দিনই আমরা অংশ নিতে চাই। আমরা দেখতে চাই সরকারি দল তাদের আচরণ পাল্টেছে নাকি আগের মতোই আছে। বিএনপির সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম আশরাফউদ্দিন নিজান জানান, বৈঠকের পরই সংসদে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা অধিবেশনে যোগ দেবো। আশা করি, সরকারি দল আন্তরিকভাবে আমাদের গ্রহণ করবে। ওয়াকআউট প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা সংসদেই থাকতে চাই। তবে সরকারি দল এমন সব অসংসদীয় ভাষায় বিরোধী দলকে গালি-গালাজ করে যে সেখানে থাকাই মুশকিল। এদিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখতেই সংসদে যোগ দিচ্ছে বিরোধী দল। কারণ, এরই মধ্যে দলের চেয়ারপারসনসহ দুই এমপির অনুপস্থিতি ৮৩ কার্যদিবস পেরিয়েছে। সরকারদলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে নয় সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে তারা যোগ দিচ্ছেন। জনগণ এসব বোঝে। এদিকে সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ চলে যাওয়ার বিধান রয়েছে। গত ২৫শে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দ্বাদশ সংসদ অধিবেশন গত ৮ই মার্চ শেষ করার কথা ছিল। তবে হঠাৎ করেই অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোয় বিরোধী দলকে সংসদে ফিরতে হচ্ছে। ২৯শে মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন চলবে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া (ফেনী-১) এখন পর্যন্ত ৮৩ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত রয়েছেন। একই সময় ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ (কুমিল্লা-৩) ও মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন (ফেনী-৩)। এদের মধ্যে কায়কোবাদ অসুস্থ থাকায় স্পিকারের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছেন। সে হিসেবে ৯০ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও অনুপস্থিতির জন্য তার সদস্যপদ শূন্য হবে না। এছাড়া মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-২) আটক থাকায় তিনিও স্পিকারের অনুমতি নিয়েছেন। এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান (লক্ষ্মীপুর-৪) অনুপস্থিত রয়েছেন ৮২ কার্যদিবস। একই সময় ধরে অনুপস্থিত আছেন মোস্তফা কামাল পাশা (চট্টগ্রাম-১৬)। মোজাহার আলী প্রধান (জয়পুরহাট-১) ৭৯ ও গোলাম মোস্তফা (জয়পুরহাট-২) ৭৮ কার্যদিবস অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়া ৭৭ কার্যদিবস করে অনুপস্থিতি রয়েছেন একেএম হাফিজুর রহমান (বগুড়া-২), আবদুল মোমিন তালুকদার (বগুড়া-৩), জেড আই এম মোস্তফা আলী (বগুড়া-৪), জমির উদ্দিন সরকার (বগুড়া-৬), মওদুদ আহমদ (বগুড়া-৭), রুমানা মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), আমজাদ হোসেন (মেহেরপুর-২), নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা-২), মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ (বরিশাল-৪), মজিবর রহমান সরওয়ার (বরিশাল-৫), এম কে আনোয়ার (কুমিল্লা-২), শেখ সুজাত মিয়া (হবিগঞ্জ-১), হারুনুর রশিদ (চাঁদপুর-৪), জয়নাল আবদিন (ফেনী-২), জয়নুল আবদিন ফারুক (নোয়াখালী-২),  এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন (নোয়াখালী-১), বরকত উল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), নাজিম উদ্দিন আহমেদ (লক্ষ্মীপুর-১), আবুল খায়ের ভূঁইয়া (নোয়াখালী-২), শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী (লক্ষ্মীপুর-৩), জাফরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫), হাসিনা আহমেদ (কক্সবাজার-১), লুৎফুর রহমান (কক্সবাজার-৩)। সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আক্তার, রাশেদা বেগম হীরা ও রেহানা আক্তার রানু প্রতেকে ৭৭ কার্যদিবস ধরে অনুপস্থিত। আর চারদলীয় জোটের শরিক বিজেপির একমাত্র সদস্য পার্থ আন্দালিবও ৭৭ কার্যদিবস অনুপস্থিত। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর শামসুল ইসলাম ৭৯ ও হামিদুর রহমান আযাদ ৭৭ কার্যদিবস অনুপস্থিত রয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ